আর যদি পৃথিবীর বেশিরভাগ মানুষের অনুসরণ করো তারা তোমাকে আল্লাহর পথ থেকে সরিয়ে দেবে; তারা অনুমান ছাড়া কিছু অনুসরণ করে না এবং তারা শুধুমাত্র ধারণা করে।{৬:১১৬}
তাই কুর’আন অধ্যয়ন করতে হবে। আমরা যা জানি তা অনুসরণের আগে যাচাই করতে হবে। যাচাই বাছাই ছাড়া কোনও পথ ও মত অনুসরণ করাকে বলা হয় অন্ধভাবে অনুসরণ। যৌক্তিকভাবে বুঝেই আমল/ইবাদত/ কাজ করতে হবে। তা নাহলে অন্য ধর্মের মানুষের সঙ্গে আমাদের কোনও পার্থক্যই থাকল না। আসলে, সত্যিই কোনও পার্থক্য নেই।
কারণ, আর তাদের বেশিরভাগ অনুমান/ধারণা (ظَنًّاۗ) ছাড়া অনুসরণ করে (يَتَّبِعُ) না; নিশ্চয়ই সত্যের (ٱلْحَقِّ) ক্ষেত্রে অনুমান/ধারণা (ٱلظَّنَّ) কোনো কাজ করে না…{১০:৩৬}
বরং, সুস্পষ্ট নির্দেশ হলো- যে বিষয়ে তোমার জ্ঞান নেই তার অনুসরণ করো না…{১৭:৩৬}
আল্লাহ্ আরও জিজ্ঞাসা করছেন, ওই লোকের ব্যাপারে তোমার কি মনে হয়, যে তার কামনা বাসনাকে নিজের ইলাহ্ (উপাস্য) বানিয়ে নিয়েছে? তুমি কি তার উকিল হবে? তুমি কি মনে করো যে তাদের অধিকাংশ লোক শুনে এবং বুঝে? আসলে তারা তো হলো পশুর মতো, বরং তার চাইতেও বেশি পথভ্রষ্ট। {২৫:৪৩, ৪৪}
দুনিয়ার কোনও কাজ আপনি অন্ধের মতো করেন না। বরং শত-সহস্রবার চিন্তাভাবনা করে তারপর কিছু টাকা বিনিয়োগ করেন। এমনকি দান-খয়রাত করার সময়ও চিন্তা করেন- এই ভিক্ষুক তো শক্ত-পোক্ত, তাকে ভিক্ষা দেওয়াও দরকার নেই। অথবা একজন রিকশাওয়ালা কষ্ট করে মানুষ টেনে নিয়ে যাচ্ছে- তাকে ১০/২০ টাকা বাড়িয়ে দেই।
সেই আপনিই যখন আল্লাহর সঙ্গে ডিলিংস/কথাবার্তা/ইবাদত করতে যান, তখন নিতান্তই অন্ধ হয়ে যান।কোনও ধরনের চিন্তাভাবনা করেন না; কী বলছেন, কী করছেন, কেন করছেন- তা বোঝেন না। কোনও ধরনের যুক্তি বোধ-বিবেচনা কাজে লাগান না। বরং মনের চাওয়া/খাহেশ/ইচ্ছা অনুসরণ করেন। যে তার কামনা বাসনাকে নিজের ইলাহ (উপাস্য) বানিয়ে নিয়েছে……আসলে তারা হলো পশুর মতো বরং তার চাইতেও বেশি পথভ্রষ্ট। {২৫:৪৩, ৪৪}
এমন বেশিরভাগ মানুষকে রক্ষা করার কেউ নাই। মোহাম্মদ, তুমি কি তার উকিল হবে? এসব অধিকাংশ লোক শোনে না ও বোঝে না।
ধর্মান্ধদের বিষয়ে আল্লাহ পবিত্র কুর’আনে সুস্পষ্টভাবে কথা বলেছেন-
যারা বিবেক বুদ্ধি খাটায় না, আল্লাহ তাদের উপর গুমরাহী চাপিয়ে দেন/ অপবিত্রতা স্থাপন করে দেন/ আযাব চাপিয়ে দেন। {১০:১০০}
আল্লাহ মানুষকে তৈরি করেছেন, মানুষের জন্য নিয়ম স্থাপন করেছেন। তিনিই বলেছেন, মন-মগজ না খাটালে তাদের উপর রিজিসা (অপবিত্রতা) চাপিয়ে দেবেন।
আমরা দেখি, কুর’আনে আল্লাহ বার বার বুদ্ধিমান/আকল খাটানো লোকদের কথা বলেছেন। এই আকল খাটানো লোক দুই প্রকার।
১.
যারা শোনে ও উত্তম কথা গ্রহণ করে।
যারা মনোযোগ দিয়ে কথা শোনে এবং তাতে যা উত্তম তা গ্রহণ করে। এরাই সেসব লোক, যাদের আল্লাহ্ হিদায়াত করেছেন এবং তারাই বুদ্ধিমান লোক। {৩৯:১৮}
২.
যারা আয়াত পড়ে, গবেষণা করে ও অনুধাবন করে
এই কল্যাণময় কিতাব (আল কুর’আন) আমরা তোমার প্রতি নাযিল করেছি, যেন মানুষ এর আয়াতসমূহ অনুধাবন করে এবং বুদ্ধিমান লোকেরা গ্রহণ করে উপদেশ। {৩৮:২৯}
তাই জানার ও বোঝার চেষ্টা করতে হবে।
বুদ্ধিমানের মতো কল্যাণ অর্জনের দু’টি মৌলিক শর্ত হলো ‘শোনা’ ও ‘পড়ার’ ক্ষমতা। সেই সঙ্গে যে ‘লেখার’ যোগ্যতা রাখে, সে/তারা মূলত কুর’আন গবেষণা করার যোগ্যতা লাভ করে। এই তিনটি গুণ মানুষকে শক্তিশালী করে তোলে। অবশ্যই স্বীকার করবেন যে, লিখতে পারার যোগ্যতা মানুষকে অনেক বেশি জাগতিক কল্যাণ এনে দেয়।
তরবারির চেয়ে বিদ্বানের কলম বেশি শক্তিশালী- আমরাই বলি। যার চিন্তা ও কলম বেশি চলে—সে চাইলেই মানুষের নজর কাড়তে পারে ও বেশি পয়সা কামাতে পারে।
তাহলে, যারমধ্যে পড়া, শোনা ও লেখার সমন্বিত যোগ্যতা আছে- সে নিঃসন্দেহে আল্লাহর কাছ থেকে শক্তিশালী নিয়ামত প্রাপ্ত হলো। অথবা, যে এসব যোগ্যতাকে শানিত করলো, সে মূলত বুদ্ধিমান লোকদের দলভুক্ত হলো। উল্লেখ্য, আমরা বেশিরভাগ মানুষই কিন্তু কম-বেশি পড়া, শোনা ও লেখার যোগ্যতা রাখি। তাই কুর’আন বোঝার জন্য আপনি অবশ্যই সক্ষম।
আল্লাহ বলছেন-
এটি এমন একটি কিতাব, যার আয়াতসমূহ বিশদ বিবরণ সম্বলিত। এটি আরবি ভাষায় (অবতীর্ণ) কুর’আন, যেসব লোক জানে/জ্ঞান চর্চা করে তাদের জন্যে। {৪১:০৩}
এখানে কিন্তু বলা হয়নি, আরবদের জন্য কুর’আন দেওয়া হয়েছে। বরং বলা হচ্ছে- কুর’আন তাদের জন্য যারা জানে। কারা জানে?
কীভাবে জানে? মানুষকে আগে থেকেই মগজ/কমন-সেন্স দেওয়া হয়েছে। মানুষ আগে থেকেই জ্ঞানচর্চা করে, আকল খাটায়, তাদের মন-মনন, যুক্তি বুদ্ধি চর্চা করে। কুর’আন তাদের জন্য।
আল্লাহ বলছেন-
যারা আল্লাহ ও আখিরাতের প্রতি ঈমান রাখে……তাদের সাহায্য করেন তাঁর রূহ (অহির জ্ঞান, কুর’আন) দিয়ে।
দেখুন…
যারা আল্লাহর প্রতি ও আখিরাতের প্রতি ঈমান রাখে তুমি তাদের কাউকেও এমন পাবেনা, যে আল্লাহ্ ও তাঁর রসুলের বিরোধিতাকারীর সাথে বন্ধুত্ব ও ভালোবাসা রাখে; বিরোধিতাকারীরা তাদের বাবা-মা, ছেলে-মেয়ে, ভাই-বোন ও আত্মীয়-স্বজন হলেও। এদের অন্তরে আল্লাহ্ লিখে দিয়েছেন ঈমান এবং তাদের সাহায্য করেছেন তাঁর পক্ষ থেকে রূহ (অহির জ্ঞান, কুর’আন) দিয়ে। তিনি তাদের দাখিল করবেন জান্নাতে, যার নিচে দিয়ে বহমান থাকবে নদ নদী নহর, চিরকাল থাকবে তারা সেখানে। আল্লাহ্ তাদের প্রতি রাজি হয়ে গেছেন এবং তারাও তাঁর প্রতি রাজি হয়েছে। এরাই আল্লাহর দল। আর জেনে রাখো, আল্লাহর দলই হবে সফল। {৫৮:২২}
এবার আমরা শির্ক নিয়ে কথা বলব।
শির্ক কি?
শির্ক শব্দটির অর্থ জানতে হলে প্রথমে এর মৌলিক অক্ষর ও অর্থ জানতে হবে। একে বলে- ‘রুট ওয়ার্ড’ যা দিয়ে যে কোনও আরবি শব্দের অর্থ বোঝা যায়।
তারপর, সেই অর্থ কুর’আন দিয়ে যাচাই করতে হবে। কারণ, একমাত্র কুর’আনই হলো ভুল-শুদ্ধ যাচাইকারী ও পথ প্রদর্শক। {দেখুন ৪:৫৯}
আমরা দেখি, লুকমান আ. বলেছিলেন, শির্ক করোনা আল্লাহর সঙ্গে; কারণ, শির্ক তো বিরাট যুলুম/ অন্যায়/ মন্দ কাজ! {৩১:১৩}
শিরকের দুটি অর্থ করা হয়; আক্ষরিক ও প্রাসঙ্গিক অন্য অর্থ।
কুর’আনে বলা হয়েছে, কুর’আনের আয়াতগুলো দুই ধরণের। একটি হলো সুস্পষ্ট-আক্ষরিক-মুহকামাত (definite signs/ lawgiving revelations)।
অন্য ধরণের আয়াত হলো মুতাশাবিহা-সিমিলার টু সামথিং (multiple-meaning/ similitude/ allegorical)।
যেমন কিতাব মানে সবসময় বই অথবা কুর’আন নয় নয়। সালাত/সালাহ্- নামায বা প্রচলিত প্রার্থনা পদ্ধতি নয়।
এই কিতাব নাযিল করেছেন যার কিছু আয়াত ‘মুহ্কাম’, এগুলো কিতাবের মূল; আর অন্যগুলো ‘মুতাশাবিহ্’…{৩:৭}
তেমনি শির্কা মানে সবসময় খোদার সঙ্গে শরিক করা নয়; মূর্তি পুজা নয়। যেমন, শয়তানকে আল্লাহ বলেছেন, ‘…যাকে পারিস পথভ্রষ্ট কর্- ধন মাল ও সন্তান-সন্ততিতে তাদের শরিক হয়ে যা…’ {১৭:৬৪}
এখানে পৃথিবীতে আদম সন্তানদের সঙ্গে পার্টনার/শরিক করার কথা বলা হয়েছে।
আবার মহান রব বলেছেন, …আল্লাহ্র কর্তৃত্বে কোনো শরিক নেই। {১৭:১১১}
তাঁর সাম্রাজ্যে তাঁর কোনও পার্টনার/অংশীদার/শরিক নাই।
তাই, কুর’আন বোঝার জন্য প্রচলিত ডিকশনারি খুঁজতে গেলে কখনও কখনও বিপদ হতে পারে। কারণ, অভিধানে একটি শব্দের কয়েকটি অর্থ থাকে। তবে, কোন অর্থটি ওই বাক্যের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ—তা বোঝা যায় বাক্যের গঠন ও বিষয়বস্তু থেকে। আর এ বিষয়গুলো বুঝতে পারলেই কেবল অভিধান থেকে সঠিক শব্দটি বাছাই করা যায়।
অর্থাৎ, কুর’আন দিয়েই কুর’আনের শব্দের প্রকৃত অর্থ বুঝতে হবে।
বাস্তবতা হলো, কোনো আরব দেশই কুর’আন-এর ভাষায়/ ভঙ্গিতে/ ডায়াল্যাক্টে কথা বলে না। আরবদের মৌখিক ভাষা অন্যান্য ভাষার মতোই সময়ের কারণে পরিবর্তন হয়েছে। এটাই নিয়ম। কিন্তু কুর’আনের ভাষা/ প্রকাশভঙ্গি কুর’আন দিয়েই স্থির বা নির্ধারণ করে দেওয়া হয়েছে। কুর’আনের ভাষা হলো ক্লাসিক অ্যারাবিক- যা সুউচ্চ মানদণ্ডে উন্নীত।
শিরকের বিষয়ে নবী মোহাম্মদকে সতর্ক করে বলা হয়েছে যে—তুমি যদি শরিক কর, তাহলে তোমার কর্ম অবশ্য অবশ্যই নিষ্ফল হয়ে যাবে, আর তুমি অবশ্য অবশ্যই ক্ষতিগ্রস্তদের অন্তর্ভুক্ত হবে। {৩৯:৬৫}
· if you should associate [anything] with Allah, your work would surely become worthless, and you would surely be among the losers.
এখানে, মহান আল্লাহ্র সঙ্গে শরিক করার কথাই বলা হয়েছে। এটা ব্যবসা-বাণিজ্য বা জগতের অন্যান্য কাজে শরিক করার কথা বলে নি। সৃষ্টিকর্তার সঙ্গে শরিক করা মহাপাপ; তবে জগতের অন্য কাজে পার্টনার/অংশীদার/শরিক করলে তাতে কল্যাণই রয়েছে।
এই সতর্কতা মোহাম্মাদের পূর্বে অন্যান্য নবী-রসুলগণের প্রতিও করা হয়েছিল।
এ হলো আল্লাহর হিদায়াত, তিনি তাঁর বান্দাদের যাকে চান এর ভিত্তিতে পরিচালিত করেন। তারা যদি শিরক করতো, অবশ্যই নিষ্ফল হয়ে যেতো তাদের সব আমল। এরা ছিলো সেইসব লোক, যাদেরকে আমরা দিয়েছিলাম কিতাব, প্রজ্ঞা ও নবুয়্যত। {৬:৮৮,৮৯}
· That is the guidance of Allah by which He guides whomever He wills of His servants. But if they had associated others with Allah, then worthless for them would be whatever they were doing. {6:88,89}
প্রাসঙ্গিক আরেকটি বিষয় তুলে ধরি।
কিতাবে আল্লাহ বলেছেন, মসজিদসমূহ আল্লাহর, সুতরাং তোমরা আল্লাহর সাথে কাউকেও ডেকো না। {৭২:১৮}
এখানে সহজেই বোঝা যাচ্ছে যে, মসজিদে আল্লাহকে ডাকার সময় বা আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করার সময় অন্য কারও কথা বলা মহান রবের নির্দেশ-বিরুদ্ধ কাজ।
কিন্তু, মসজিদে আমরা কী শুনি? হুজুর-আলেম-ওলামাগণ কী বলেন?
মসজিদের দেয়ালগুলোতে আমরা কী দেখতে পাই? কী লেখা থাকে?
মনে করুন, আপনি একটি বাড়ি তৈরি করলেন। তারপর সেই বাড়ির দেয়ালে/গেটে আপনি লিখলেন- ‘এই বাড়ির মালিক…’। তার পাশে, ওপরে, নিচে- কোথাও কি আপনার কর্মচারী, চাকর, দাস-দাসীর নাম লিখবেন? আপনার বাড়ির দেয়ালে মালিকানার শরিক করবেন?
এ বিষয়ে আল্লাহ রব্বুল আলামিন একটি উদাহরণ দিয়েছেন।
তিনি তোমাদের জন্যে তোমাদের নিজেদের থেকেই একটি দৃষ্টান্ত পেশ করছেন: তোমাদেরকে আমরা যে রিযিক দিয়েছি, তোমাদের অধিকারভুক্ত দাস-দাসীদের কেউ কি তাতে অংশীদার? এবং তোমরা এই অংশীদারিত্বের ব্যাপারে কি সমান অধিকারী? তোমরা কি তাদেরকে সে রকম ভয় করো যে রকম তোমাদের পরস্পরকে ভয় করো? এভাবেই আমরা আয়াত বর্ণনা করি সমঝদার লোকদের জন্যে। {৩০:২৮}
যুগে যুগে যেসব মানুষের সঙ্গে আল্লাহ যোগাযোগ করেছিলেন, তাঁরাই হয়েছেন নবী ও রসুল। তাঁরা ছিলেন, আমাদের মতো মানুষ। আর, আল্লাহর দৃষ্টিতে…তারা সম্মানিত দাস…honored servants. {২১:২৬.২৭}
আল্লাহ বরং বলছেন তিনি– কুফুওয়ান আহাদ। তাঁর সমকক্ষ কেউ নেই। {১১২:৪}
সব কিছুর একটা নিয়ম আছে। আমরা কেন খোদায়ী নিয়ম ভেঙে চরম স্বেচ্ছাচারী আচরণ করে চলেছি শত-হাজার বছর ধরে!
রোজ কিয়ামত আল্লাহর সামনে আল্লাহর সামনে শতভাগ একনিষ্ঠ দীন নিয়ে উঠতে হবে। এর অন্যথা হলে তা মহাবিপদের কারণ হবে!
…বল রব নির্দেশ দিয়েছেন ন্যায়বিচারের; তোমাদের মুখ নির্ধারিত করো (আকিমু ওযুহাকুম) প্রত্যেক মসজিদে এবং আন্তরিকভাবে তাঁকে ডাকো আদ-দীনে (ওয়াদউহু মুখলিসিনা লাহুদ্দিন);…। {৭:২৯}
মনে করুন, আপনি কোনও এক দেশে অভিবাসী হয়ে আছেন। কিন্তু, আপনার ওয়ার্ক ভিসা/ ওয়ার্ক পারমিট নেই। আপনি কী বৈধভাবে চাকরি-কাজ-ব্যবসা করতে পারবেন? গোপনে কাজ করতে পারেন; আর পুলিশের কাছে ধরা পড়লে- আপনার সব কাজ ও উপার্জন অবৈধ বলে বিবেচিত হবে; সবকিছুই বাতিল বলে গণ্য হবে; আর আপনিও কোনও প্রতিবাদ করবেন না।
আমরা নবী মোহাম্মদকে দিয়েই উদাহরণ দেই। কারণ, তিনিই আমাদের আদর্শ/ স্ট্যান্ডার্ড বা উসুয়াতুন হাসানা হলে- তিনি যেভাবে আল্লাহর ইবাদত করেছেন, আমাদেরও সেভাবেই করা উচিত।
মোহাম্মদ রসুলুল্লাহ যখন মহাপ্রভুর আহ্বানে সাড়া দিয়ে ইসলামের পথে যাত্রা করলেন, তখন আল্লাহ তাঁকে সতর্ক করে বললেন, দীনের ক্ষেত্রে আল্লাহর সঙ্গে কাউকে শরিক কোরো না; তাহলে তোমার সব কাজ বাতিল হয়ে যাবে।
তুমি যদি শরিক কর, তাহলে তোমার কর্ম অবশ্য অবশ্যই নিষ্ফল হয়ে যাবে, আর তুমি অবশ্য অবশ্যই ক্ষতিগ্রস্তদের অন্তর্ভুক্ত হবে। {৩৯:৬৫}
সেখানে আমি-আপনি, হুজুর, মাওলানা, ডক্টর ওমুক-তমুক—তারা কে? সেদিন তাদের ও অনুসারীদের কী হবে- ধারণা করতে পারছেন!
এটা খুবই ভয়ঙ্কর বিষয়। যা আমরা সম্পূর্ণ উপেক্ষা করে চলেছি।
আমরা ‘ইসলামি সীমানার’ মধ্যে কাজ করছি অথচ আমাদের কোনও ওয়ার্ক পারমিট বা জব ভিসা নাই। তাই, আমাদের সব কাজ বাতিল হয়ে যাবে। পাশাপাশি, ক্ষমার অযোগ্য শিরকের অপরাধে অভিযুক্ত হবো।
আগের যুগের নবী রসুলদের প্রতিও একই হুঁশিয়ারি দেওয়া হয়েছিল।
- তোমার প্রতি ও তোমার পূর্ববর্তী (রসুলদের) প্রতি এই ওহিই করা হয়েছিল যে- ‘তুমি যদি আল্লাহর সাথে শরিক সাব্যস্ত করো, তোমার সব আমল নিষ্ফল হবে এবং তুমি অবশ্যই ক্ষতিগ্রস্তদের অন্তর্ভুক্ত হবে।’ {৩৯:৬৫}
- And it was already revealed to you and to those before you that if you should associate [anything] with Allah, your work would surely become worthless, and you would surely be among the losers. {39:65}
খেয়াল করুন, আল্লাহ কিন্তু অন্য কোনও অপরাধের কথা বলছেন না। বরং আল্লাহর সঙ্গে (প্রার্থনা, ইবাদত, তুলনা) যে কোনও কাজে শরিক করার কথাই বলছেন।
মহান আল্লাহ বার বার বলে দিচ্ছেন তাঁর নবীকে, যাতে নবী আমাদের শেখাতে পারেন। আর, আমরা যাতে ভুল করে নবী মোহাম্মদকে আমাদের প্রার্থনার মধ্যে টেনে না আনি- সেজন্য নবী করীম সা. কী করেন, তাও উল্লেখ করে দিয়েছেন আল্লাহ।
ঘোষণা করো- নিশ্চয়ই আমি শুধুমাত্র আমার প্রভুকেই ডাকি এবং তাঁর সঙ্গে কাউকে শরিক করি না। {৭২:২০}
“I only invoke my Lord and do not associate with Him anyone.”
ঘোষণা করো- আমি তোমাদের মতো একজন মানুষ; যার কাছে ওহি আসে যে- তোমাদের ইলাহ একক ইলাহ; তাই যে তার প্রভুর সাক্ষাতের আশা করে, সে যেন আমলে সালেহ করে এবং তার প্রভুর ইবাদতে কাউকেই শরিক না করে। {not associate in the worship of his Lord anyone.} {১৮:১১০}
- নিশ্চয় আল্লাহ তাঁর সাথে শরিক করা ক্ষমা করবেন না। এটা ছাড়া অন্য সব যাকে ইচ্ছা মাফ করবেন; এবং যে আল্লাহর সঙ্গে শরিক করল, সে এক মহা অপবাদ আরোপ করল। {৪:৪৮}
- যারা কুফরি করেছে আর বাড়াবাড়ি করেছে, আল্লাহ তাদেরকে ক্ষমা করবেন না, তাদেরকে কোন পথও দেখাবেন না; তাদেরকে কোনও পথও দেখাবেন না। {৪:১৬৮}
ওপরের দুই আয়াত পাশাপাশি রাখলে আমরা দেখি যে—কুফর ও শিরক এই দুই ধরনের অপরাধ মূলত ক্ষমার অযোগ্য মহাপাপ।
বহু-দেবতার আরাধনা বা মূর্তি পূজাই শুধু শিরক নয়, বরং ধর্মীয় ও সামাজিক নেতার অন্ধ অনুসরণও শিরকের কারণ হতে পারে। যাদের নির্দেশে ভুলভাবে ধর্মচর্চা হয় ও ভুল পথে চলে যায় মানুষ।
জাহান্নামের অধিবাসীরা তাদের নেতা ও প্রভাবশালীদের প্রতি অভিযোগ করে বলবে-
- আর তারা বলবে- হে আমাদের রব! আমাদের নেতা ও আমাদের প্রধান/ প্রভাবশালীরা আমাদেরকে গুমরাহ করেছিল। আমাদের প্রভু! তুমি তাদের দ্বিগুণ শাস্তি দাও, আর তাদের লা’নত করো গুরুতর লা’নত। {৩৩:৬৭, ৬৮}
And they will say: “Our Lord, we have obeyed our leaders and our learned ones, but they misled us from the path.” Our Lord, give them double the punishment and curse them with a great curse.” {33:67,68}
আসলে, কুফর ও শিরক একই রোগের দুটি ভিন্ন উপসর্গ মাত্র। এটি একটি সুনির্দিষ্ট গন্তব্যের দুটি ভিন্ন পথ। তা হলো চুড়ান্ত সর্বনাশ!
এক কথায়, প্রত্যেক মুশরিক কুফরির আশ্রয় নেয় ও কাফিরে পরিণত হয়।
এমন মুসলিম নামধারী কাফির-মুশরিকদের সতর্ক করে আল্লাহ বলেছেন—হে ঈমানদার লোকেরা! তোমাদের মধ্য থেকে কেউ (বা কোনো গোষ্ঠী) তার দীন থেকে ফিরে গেলে অচিরেই আল্লাহ এমন একদল লোককে (দীনের মধ্যে) আনবেন, যাদের তিনি ভালোবাসবেন এবং তারাও তাঁকে ভালোবাসবে। তারা হবে মুমিনদের প্রতি কোমল, কাফিরদের প্রতি কঠোর। {৫:৫৪}
মনে রাখতে হবে, যে শিরক করবে- তার ইবাদত ও আমল গ্রহণ করা হবে না। ঠিক ওপরে দেওয়া উদাহরণের মতো। অবৈধ অভিবাসী পুলিশের হাতে পড়লেই যেমন তার সব কিছু বাতিল ও অপরাধ হয়ে যায় এবং অবৈধভাবে (বৈধ) কাজ করার অপরাধে তাকে কারাগারে নিক্ষেপ করা হয়।
তাই, মহান আল্লাহর ইবাদতের মধ্যে কাউকে শরিক না-করে একনিষ্ঠভাবে শুধু তাঁরই ইবাদত করার নির্দেশ দিয়েছেন আল্লাহ। তাঁর এসব নির্দেশনা নিজে বাস্তবায়ন করার পর মুসলমানদের জানিয়ে দিয়েছেন নবী মোহাম্মদ।
হজের বিধান উল্লেখ করে এক উপমা দিয়ে আল্লাহ বলেন- আল্লাহর প্রতি একনিষ্ঠ হও এবং তাঁর সাথে কোনো শরিক কর না। যে কেউ আল্লাহর সাথে শরিক করবে, সে যেন আকাশ থেকে ছিটকে পড়ল আর পাখি তাকে ছোঁ মেরে নিয়ে গেলো; কিংবা প্রবল বাতাস তাকে উড়িয়ে নিয়ে দূরে কোথাও নিক্ষেপ করল। {২২:৩১}
অর্থাৎ, সে হারিয়ে গেল চিরতরে!
পবিত্র কুর’আনে জিন ও মানুষকে সৃষ্টির উদ্দেশ্য সুস্পষ্টভাবে জানা যায়। মহান আল্লাহ জানিয়েছেন, অন্য সব সৃষ্টির মতো মানুষ সৃষ্টিরও সুনির্দিষ্ট উদ্দেশ্য আছে।
- আমরা জিন ও মানুষকে এজন্যেই সৃষ্টি করেছি যে, তারা একমাত্র আমারই ইবাদত করবে। {৫১:৫৬}
- তাদেরকে এ ছাড়া অন্য কোন হুকুমই দেয়া হয়নি যে- তারা আল্লাহর ‘ইবাদত করবে খাঁটি মনে একনিষ্ঠভাবে- তাঁর আনুগত্যের মাধ্যমে। {৯৮:৫}
এছাড়া আল্লাহ জানালেন-
- আমি যমিনে খলিফা (প্রতিনিধি) নিয়োগ করতে যাচ্ছি। {২:৩০}
- তিনিই তোমাদের বানিয়েছেন যমিনের খলিফা (প্রতিনিধি)। {৩৫:৩৯}
প্রথমত, এই আয়াতগুলোতে আল্লাহর কাছে মানুষের মর্যাদা ও দায়িত্বের কথা বলা হয়েছে। মানুষের র্যাংক বা পদমর্যাদা হলো ‘খলিফা’ বা মহান রবের প্রতিনিধি।
প্রতিনিধির এই মর্যাদা শুধু পৃথিবীর জীবনে নয়। বরং, এই মর্যাদা দিয়ে আদম আ.-কে তৈরি করা হয়েছিল; তিনি জান্নাতে ছিলেন এবং (ٱلۡأَرۡضِ) ফিল আরদ বা যমিনে সেই মর্যাদা বহাল থাকবে। পৃথিবীর বাইরের যমিনেও (চাঁদে) মানুষের পা পড়েছে। পাশাপাশি, কিয়ামতের পর ভিন্ন যমিন তৈরি করা হবে।
এটা ভাবার কোনও কারণ নেই যে, জগতের মুসলিমরাই শুধু আল্লাহর প্রতিনিধি! বরং মানুষ মাত্রই স্রষ্টার প্রতিনিধি।
দ্বিতীয়ত, প্রতিনিধির প্রধান ও একমাত্র দায়িত্ব হলো- (لِيَعۡبُدُونِ) লিয়া’বুদন বা স্রষ্টার ইবাদত/দাসত্ব করা।
স্বাভাবিক প্রশ্ন আসতে পারে—অন্যসব ধর্ম, বর্ণ, গোত্রের মানুষই যদি আল্লাহর প্রতিনিধি মর্যাদা পায়, তাহলে সব মানুষ কি আল্লাহর ইবাদত বা দাসত্ব করে? উত্তর হলো—হ্যাঁ।
কীভাবে? সে জবাব ভিন্ন প্রবন্ধে দেওয়া হবে, ইনশা’আল্লাহ।
প্রতিনিধিত্বের মর্যাদা নিয়ে মানুষ যখন কুফরি করে তখন সে পদমর্যাদার অবমাননা করে। যার পরিণতিতে যমিনে বিশৃঙ্খলা, রক্তপাত ছড়িয়ে পড়ে। যে আশঙ্কা ফেরেশতারা করেছিলেন।
ফেরেশতারা কিছুটা অবাক হয়ে বলেছিলেন, তারাই আল্লাহর গুণগান করে এবং পবিত্রতা ও মহিমা বর্ণনা করে; সেখানে মানুষ কেন দরকার!
জবাবে, আল্লাহ বলেছিলেন- আমি যা জানি, তোমরা তা জানো না।
আয়াতগুলো এই ইঙ্গিত দেয় যে, (لِيَعۡبُدُونِ) লিয়া’বুদন বা ইবাদত মানে শুধু মুসলিমদের প্রার্থনা পদ্ধতি নয়। বরং, তার অর্থ আরও ব্যাপক।
- …আপনি কি সেখানে এমন কাউকে নিয়োগ করবেন, যারা সেখানে ফাসাদ সৃষ্টি করবে ও রক্তপাত ঘটাবে? আমরাই তো আপনার প্রশংসা এবং কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে তাসবিহ করছি আর আপনার পবিত্রতা ঘোষণা করছি।‘ তিনি বলেছিলেন: ‘আমি জানি যা তোমরা জানো না। {২:৩০}
পাশাপাশি, আল্লাহ সংশ্লিষ্ট আয়াতে এটাও বলে দিলেন যে, খলিফা বা প্রতিনিধিত্বের মর্যাদা দেওয়ার পরও …যে কুফুরি করবে- এজন্য সে নিজেই দায়ী হবে। কাফিরদের কুফর তাদের রবের ঘৃণাই বৃদ্ধি করে। কাফিরদের কুফর তাদের ক্ষতিই বৃদ্ধি করে। {৩৫:৩৯}
অর্থাৎ, বোঝা যাচ্ছে যে, (خَلِيفَةٗۖ) খলিফা বা প্রতিনিধি মর্যাদার বিপরীতধর্মী কাজ হলো কুফর বা অস্বীকার করা। মানুষ যখন স্রষ্টার আয়াত/নিদর্শনের স্বীকৃতি দেয়, তখন খলিফার দায়িত্ব পালন করে।
আর কুফরির পরিণতি নিশ্চিত জাহান্নাম। পাশাপাশি, ঈমানদার মানুষ শিরক বা শরিক করে মুশরিকে পরিণত হয় এবং পরিণামে কাফির হয়ে সর্বনাশা গন্তব্যে চলে যায়।
মনে রাখতে হবে যে, অধিকাংশ মানুষ আল্লাহতে বিশ্বাস করে, কিন্তু সেই সঙ্গে শিরকও করে। {১২: ১০৬}
- কিতাবধারীদের মধ্যে যারা কুফুরি করে তারা- আর মুশরিকরা জাহান্নামের আগুনে স্থায়ীভাবে থাকবে। এরাই সৃষ্টির অধম। {৯৮:৬}
- যারা কুফরি করেছে আর বাড়াবাড়ি করেছে, আল্লাহ তাদেরকে ক্ষমা করবেন না, তাদেরকে কোন পথও দেখাবেন না। {৪:১৬৮}
এই বিপর্যয় থেকে বাঁচার উপায় কী?
এক কথায় কুর’আনের দিকে ফিরে আসা। কুর’আনকে যারা মেনে নেবে তারাই সত্যের অনুসারী এবং আল্লাহর নির্দেশ পালনকারী। তাদের জন্যই রবের ক্ষমা ও মহা পুরস্কার।
তুমি তো সতর্ক করতে পারো তাকে, যে আয্ যিকির এর অনুসরণ করে এবং না দেখেও দয়াময় রহমানকে ভয় করে। তাকে সুসংবাদ দাও মাগফিরাতের আর সম্মানজনক পুরস্কারের। {৩৬:১১}
অবশ্যই মনের মধ্যে বদ্ধমূল কোনও ধারণা নিয়ে কুর’আনের কাছে আসা যাবে না। অবশ্যই কুর’আনকে বুঝতে হলে, সবার আগে উদ্দেশ্য একনিষ্ঠ করতে হবে। আর তা হলো- আপনার আমার জন্য আল্লাহ যা বলেছেন, তাই জানতে ও মানতে চাই। ধর্ম-কর্ম যে কোনও বিষয়ে কুর’আনের মত ও পথই অনুসরণ করতে হবে। কোনও ব্যক্তির বা বইয়ের মতামত নয়। আর আন্তরিকভাবে আখিরাতের ও আল্লাহর সামনে দাঁড়ানোর ব্যাপারে ভয় করতে হবে। তা নাহলে কুর’আনের বাণী আপনার অন্তরে পৌঁছাবে না।
তিনি সুস্পষ্টভাবে বলেছেন, তুমি যখন কুরআন পাঠ করো, তখন আমরা তোমার ও আখিরাতের অবিশ্বাসীদের মধ্যে একটি গোপন পর্দা লাগিয়ে দেই। {১৭:৪৫}
পরিশেষে আবারও মুশরেকি থেকে সবাইকে সতর্ক হওয়ার আহ্বান জানাই। স্বয়ং আল্লাহ তাঁর নবীকে বলছেন-
মহাসত্য হওয়ার পরও তোমার কওম তা অস্বীকার করছে। বলো, আমি তোমাদের উকিল নই। {৬:৬৬}
অথচ, আমরা কিন্তু নবী মোহাম্মদ সা.-কে আমাদের শাফায়াতকারী ভেবে বসে আছি। বরং, আল্লাহ বলে দিচ্ছেন মোহাম্মদ তোমাদের উকিল/অভিভাবক/পাহারাদার নয়। শুধু কি তাই? তিনি অনেকটা অভিযোগ করে রসুল বলবেন- হে আমার রব, আমার লোকেরাই এ কুর’আনকে পরিত্যাগ করেছিল… {২৫:৩০}
শেষ নবীর পর কিয়ামত পর্যন্ত সবাই তাঁর ওপর নাযিল হওয়া কিতাবের অনুসারী। আপনি ও আমিও তার অন্তর্ভুক্ত।
মুসলিম ছাড়া অন্য জাতির মধ্যে আছে কাফির। আর মুশরিক আছে নবী মোহাম্মদ পরবর্তী লোকদের মধ্যে। তাদের অধিকাংশই আল্লাহর প্রতি ঈমান রাখে ও তাঁর সঙ্গে শিরকও করে! {১২:১০৬}
আল্লাহ তাঁর নবীকে বলছেন, তুমি যত প্রবল আগ্রহের সঙ্গেই চাও না কেন, অধিকাংশ মানুষই ঈমান আনবে না…। {১২: ১০৩}
ভেবে দেখুন, বেশিরভাগ আমরা আল্লাহ্র ঘোষিত “অধিকাংশ মানুষের” মধ্যেই গণ্য।
কারণ, অবশ্যই তাদের মধ্যে এমন একদল লোক আছে যারা আল্লাহর কিতাবকে জিহ্বা দিয়ে বিকৃত করে, যাতে করে তোমরা তাকে আল্লাহর কিতাবের অংশ মনে করো। অথচ তা কিতাবের অংশ নয়। তারা বলে: ‘ওটা আল্লাহর পক্ষ থেকেই এসেছে।’ অথচ সেটা আল্লাহর পক্ষ থেকে নয়। তারা জেনে বুঝে আল্লাহর ব্যাপারে মিথ্যা বলে। {৩:৭৮}
এই মিথ্যাবাদী দলটি মুসলিম সমাজেরই অংশ। যারা আমাদের বিভ্রান্ত করছে হাদিসের নামে, নানা রকম কিতাবের নামে। তারা যে মিথ্যা বলছে—তার প্রমাণ হলো কুর’আন। তাদের কথাগুলো কুর’আনে নেই। আমাদের প্রচলিত বিশ্বাস ও কর্মের অনেক কিছুই কুর’আনে নেই! অথচ, সেসব ধর্মীয় কার্যাবলী আমরা কুর’আনের সঙ্গে মিশ্রিত করে শিশুদের শিক্ষা দিচ্ছি। এসবই মুশরিকের আচরণ।
সুরা বাকারার ১৫৯ নম্বর আয়াতে আল্লাহ বলেন-
আল্লাহ বলছেন, যারা আমাদের নাযিল করা সুস্পষ্ট প্রমাণসমূহ ও ‘হুদা‘ গোপন করে…
কারা গোপন করে?
যারা জানে তারাই গোপন করে।
সমাজের ধর্মীয় নেতা, সামাজিক নেতা, দলের নেতা—তারাই গোপন করে; কারণ তারা কিতাব পড়ে ও জানে। নিশ্চয়ই কুর’আনের কথা ইহুদি, খ্রিষ্টান ও কাফিরদের গোপন করার কথা না।
যা কিতাবে মানুষের জন্য সুস্পষ্ট বলেছি–(We made it clear for the people in the Scripture); আল্লাহ তাদেরকে অভিশাপ দেন এবং অভিশাপকারীরাও তাদেরকে অভিশাপ দেয়। {২:১৫৯}
অতএব, কুর’আনের পথ অনুসরণ করুন, নিজে বাঁচুন এবং পরিবার, পরিজন ও প্রিয়জনদের উদ্ধার করুন।