প্রশ্ন উত্তর

প্রয়োজনীয় বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর এখানে সংগ্রহ করা হয়েছে

god-g1389670ff_1280

তিনি ৩টি পদ্ধতিতে মানুষের সঙ্গে যোগাযোগ করেন। ১. ওহির মাধ্যমে, ২. হিজাবের আড়াল থেকে, ৩. রসুলের মাধ্যমে (৪২:৫১)

religion-g6f9b32c60_1920

মৃত্যু কি?

তিনিই রাতের বেলা তোমাদের মৃত্যু দেন এবং তিনি জানেন দিনের বেলায় তোমরা যা করো…{০৬:৬০}

বিভিন্ন প্রশ্নের সংক্ষিপ্ত উত্তর

আরবি শব্দ ‘ইসলাম’ অর্থ ‘স্রষ্টার প্রতি পূর্ণ আত্মসমর্পন’ (submission to the will of God)। মানুষের জন্য রব্বুল আলামিনের মনোনীত একমাত্র দীন (জীবন পদ্ধতি/ বিধান/ আইন) হলো তাঁর প্রতি পূর্ণ আত্মসম্পর্ণ (৩:১৯)। যে কেউ এই আত্মসমর্পণ অবস্থা ছাড়া কোনো পদ্ধতি বা দীন (ধর্ম, মতাদর্শ, ব্যবস্থা ও পথ) অনুসরণ করবে, তা অগ্রহণযোগ্য। মৃত্যু পরবর্তী জীবনে সে অবধারিতভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে (৩:৮৫)

যে ব্যক্তি আল্লাহর কাছে পরিপূর্ণভাবে আত্মসমর্পণ করে, সেই আত্মসমর্পণকারী বা মুসলিম। যে আত্মসমর্পণ করে, সে সঠিক পথ লাভ করে। {:২০; ৪১:৩০}

আল্লাহর কাছে আত্মসমর্পণকারী ব্যক্তি যখন, সব কিতাব, সব রসুল, ফেরেশতাগণ এবং আখিরাতের প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করে- তখন মু’মিন হিসেবে তার যাত্রা শুরু হয়। মু’মিন অর্থ বিশ্বাসী মানুষ। মু’মিন ব্যক্তি রসুলদের মধ্যে পার্থক্য করে না। {২:২৮৫}

যেসব মু’মিন ব্যক্তি অদৃশ্য জগতের কথা বিশ্বাস করে, সালাত প্রতিষ্ঠা করে, রিজিক থেকে দান করে, সব কিতাবে বিশ্বাস করে, আখিরাতের প্রতি নিশ্চিত বিশ্বাস করে- তারাই মুত্তাকি। মুত্তাকিরা মহান রবের দেওয়া হুদা বা পথ-নির্দেশ অনুসারে জীবন যাপন করে। মুত্তাকিরা চূড়ান্ত সফলতা লাভ করবে। {২:২-৫}

১. যারা পৃথিবীতে/ দেশে/ সমাজে বিপর্যয় ও অশান্তি তৈরি করে, ২. যারা বিশ্বাসীদের নির্বোধ বা বোকা বলে, ৩. যারা প্রকাশ্যে ঈমানের ঘোষণা দেয় কিন্তু অন্তরে বিশ্বাস করে না, ৪. যারা মু’মিনদের সঙ্গে প্রতারণা করে ও লোক দেখানো সালাত করে। দেখুন ২:১১-১৪; ৪:১৪২

‘সালাত’ কয়েক হাজার বছর ধরে চলমান একটি কার্যক্রম। মহাগ্রন্থ আল-কুর’আনে উল্লেখিত আল্লাহর হুকুম আহকাম বা নির্দেশাবলীকে (ORDERS) এক শব্দে ‘সালাত’ বলা হয়। অন্যান্য নবী রসুলদের সময়ও সালাত বিদ্যমান ছিল। দেখুন ১১:৮৪-৮৭ এবং আরও অসংখ্য আয়াত।

আল্লাহর হুকুম আহকাম বা নির্দেশাবলী সমাজে প্রচার করাই হলো সালাত কায়েম বা আকিমুস সালাত। এর অংশ হিসেবে ব্যক্তিজীবন থেকে বিশ্ব পর্যন্ত বৈধ উপায়ে, ন্যায়সঙ্গত ও গ্রহণযোগ্য পদ্ধতিতে এবং সুন্দরভাবে স্রষ্টার নির্দেশ প্রচার করার সব কাজ ‘আকিমুস সালাতের’ অন্তর্ভুক্ত। রসুল সা.কে সরাসরি বলা হয়েছে- “পাঠ করো যা তোমার প্রতি নাযিল করা হয়েছে কিতাবে এবং তুমি কায়েম করো সালাত….” (২৯:৪৫) এবং আরও অসংখ্য আয়াত।

আল-কিতাব হলো নির্ভুল, সন্দেহমুক্ত মহাগ্রন্থ (২:২) যা মহান রব সত্যতা ও বাস্তবতার নিরিখে নাযিল করেছেন। যাতে বিস্তারিতভাবে লেখা আছে সঠিক পথ; এবং যাতে উল্লেখ করা নিয়মের আলোকে সমাজে বিচার ফায়সালা করতে হয়– সেই মহাগ্রন্থই হলো আল-কিতাব (৪:১০৫১১৩)

দীন হলো একটি প্রাতিষ্ঠানিক ব্যবস্থা; যে ব্যবস্থা মানুষকে অন্যায়-অন্যায্য শক্তির আনুগত্য থেকে মুক্ত ও স্বাধীন করে দেয়। যে ব্যবস্থার অধীনে মানুষ স্রষ্টার বিধি-বিধান স্বাধীনভাবে পালন করতে পারে। মানুষ সালাত কায়েম করতে পারে, মানুষ সুন্দর, শান্তিপূর্ণ ও নিশ্চিন্ত জীবনের অধিকারী (মু’মিন) হয়ে উঠতে। সেই স্বর্গীয় জীবনব্যবস্থা বা আল্লাহর মনোনীত দীনের নামই হলো ইসলাম। এই দীন মানুষকে উন্নত চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য অর্জনের পথে এগিয়ে নেয়।

ইবাদত হলো স্বাধীনতার শক্তি; যা শুধুমাত্র জিন ও মানুষকে দেওয়া হয়েছে। স্বাধীনতার শক্তির (ইবাদতের) যথাযথ ব্যবহারই মানুষকে সিরাতুল মুস্তাকিমে পরিচালিত করে।

সিরাতুল মুস্তাকিম-এর বাংলা সঠিক পথ। যা অনুসরণ করার মাধ্যমে মানুষ পৃথিবীতে নির্মল-সুন্দর জীবন লাভ করে এবং মৃত্যু পরবর্তী অনন্ত জীবনে সফলতা লাভ করে।

কুর’আন মানুষের জন্য হেদায়েত এবং সত্যপথ যাত্রীদের জন্য সুষ্পষ্ট পথ নির্দেশ আর ন্যায় ও অন্যায়ের মাঝে পার্থক্য বিধানকারী। 

নিশ্চিতভাবে কুর’আন দিয়েছেন সেই সত্তা- যিনি সবকিছু জানা হুকুমদাতা (মিল্লাদুন হাকিমিন আ’লিম ২৭:৬)।

এই কিতাব- আয়াতসমূহ বিশদভাবে বিবৃত– আরবি কোরআন (৪১:৩); আমরা এই কুর’আনে সব উদাহরণ ব্যাখ্যা করেছি, কিন্তু বেশিরভাগ মানুষ প্রত্যাখ্যান করে- যা কুফর (১৭:৮৯); এবং নিশ্চয়ই এই কুর’আনে আমরা মানুষের জন্যে সব উদাহরণ দিয়েছি- যাতে তারা উপদেশ গ্রহণ করে (৩৯:২৭); এবং নিশ্চিতভাবে এই কুর’আনে আমরা মানবজাতির জন্য সব উদাহরণ ব্যাখ্যা/বর্ণনা করেছি; অথচ মানুষ বেশিরভাগ বিষয়ে বিতর্কপ্রিয় (১৮:৫৪)।  

এই কুর’আন এমন পথ প্রদর্শন করে, যা একদম সোজা; এবং মু’মিনদেরসুসংবাদ দেয়– যারা সৎকর্ম করে- তাদের জন্যে রয়েছে মহা-পুরস্কার (১৭:৯)। আমি এই কুর’আনে বিশ্লেষণ করেছি, যাতে তারা চিন্তা করে (১৭:৪১)।  আমরা কুর’আনকে বোঝার ও উপদেশ নেওয়ার জন্যে সহজ করেছি (৫৪:১৭, ২২, ৩২, ৪০); যারা আমার শাস্তিকে ভয় করে তাদের উপদেশ দিয়ে যাও এই কুর’আন দিয়ে (৫০:৪৫)।

যে বা যারা আকিমুস-সালাত করে ও যাকাত দেয়; তারাই আখিরাতে নিশ্চিতভাবে বিশ্বাস করে (ইয়ুকিমুনাস-সলাতা ওয়া ইয়ুতুনায যাকাতা ওয়াহুম বিল আখিরাতি হুম ইয়ুকিনুন ২৭:৩)।

যেসব বিশ্বাসী আকিমুস সালাত করে ও যাকাত দেয় এবং তারাই বিনীত/ রুকুকারী/ রকিউন (আমানুল্লাযিনা ইয়ুকিমুনাস-সলাতা ওয়া ইয়ুতুনায-যাকাতা ওয়াহুম রকিউন ৫:৫৫)

১. একক রব- আল্লাহকে বিশ্বাস করা এবং ২. আখিরাত বা (মৃত্যু) পরবর্তী জীবনের প্রতি বিশ্বাস হলো মৌলিক নির্দেশ। এ ছাড়া, একজন বিশ্বাসী বা মু’মিনকে বিশ্বাস করতে হবে ৩. সব রসুল, ৪. ফেরেশতা এবং ৫. নাযিল করা সব কিতাব।

জান্নাত একটি ভিন্ন মহাবিশ্ব। আমাদের জানা ইউনিভার্সের চেয়েও বিশাল বড়। সেখানে সময় স্থীর। এ কারণে কারও বয়স কম-বেশি হয় না। সেখানকার প্রাকৃতিক নিয়ম-কানুন সম্পূর্ণ ভিন্ন। কোনও সামগ্রী সেখানে শেষ হয় না। সেই মহাবিশ্ব গঠনে ব্যবহৃত অ্যাটম (অনু-পরমাণু) মানুষের কথা শুনবে এবং তাৎক্ষণিক সব ইচ্ছা পূরণ করবে।

জান্নাতে যেতে চাইলে কমপক্ষে ৩টি শর্ত পূরণ করতে হবে। ১. একক সৃষ্টিকর্তা/ আল্লাহকে বিশ্বাস করা ২. আখিরাত বা পরকালের বাস্তবতা সম্পর্কে বিশ্বাস করা এবং ৩. আমলে সলেহ করা। [দেখুন- বাকারা: ৬২; মায়িদা: ৬৯]

আল্লাহর গুণাবলী, অধিকার, বিধি-বিধান, হুকুম-আহকামের সঙ্গে বা পাশাপাশি অন্য যে কোনও নিয়ম-কানুন তৈরি করা; এবং আল্লাহর জন্য বা তাঁর উদ্দেশ্যে পালন করা বা মেনে চলা হলো শিরক।

শিরকের পরিণতি চিরস্থায়ী জাহান্নাম। কারণ, আল্লাহ বলেছেন- তুমি যদি শরিক কর, তাহলে তোমার কর্ম অবশ্য অবশ্যই নিষ্ফল হয়ে যাবে, আর তুমি অবশ্য অবশ্যই ক্ষতিগ্রস্তদের অন্তর্ভুক্ত হবে। {৩৯:৬৫} কিতাবধারীদের মধ্যে যারা কুফুরি করে তারা- আর মুশরিকরা জাহান্নামের আগুনে স্থায়ীভাবে থাকবে। এরাই সৃষ্টির অধম {৯৮:৬}।

নিশ্চয় আল্লাহ তাঁর সাথে শরিক করা ক্ষমা করবেন না। এটা ছাড়া অন্য সব যাকে ইচ্ছা মাফ করবেন; এবং যে আল্লাহর সঙ্গে শরিক করল, সে এক মহা অপবাদ আরোপ করল {৪:৪৮}।

যে মানুষ আল্লাহকে বিশ্বাস করে, পাশাপাশি শিরকও করে- সেই মুশরিক। কিতাবে বলা হয়েছে, অধিকাংশ মানুষ আল্লাহ’র প্রতি বিশ্বাস করে, সেই সঙ্গে শিরকও করে। {১২: ১০৬}
অর্থাৎ, মানব-রচিত নানা বিধি-বিধান-নির্দেশ 
আল্লাহর নামে বিশ্বাস, চর্চা ও প্রচলন করা শিরক।
যে কোনো কিছুকে আল্লাহ বা সুমহান সৃষ্টিকর্তার সঙ্গে যে কোনো ধরনের তুলনা করাই হলো শিরক।   

কিতাবধারীদের মধ্যে যারা কুফুরি করে তারা- আর মুশরিকরা জাহান্নামের আগুনে স্থায়ীভাবে থাকবে। এরাই সৃষ্টির অধম {৯৮:৬}।

যারা বিবেক বিবেচনা ছাড়া অন্ধভাবে স্রষ্টার জন্য বা স্রষ্টার নামে নিয়ম-কানুন মেনে চলে- তারাই ধর্মান্ধ।

যারা বিবেক বুদ্ধি খাটায় না, আল্লাহ তাদের উপর গুমরাহী চাপিয়ে দেন/ অপবিত্রতা স্থাপন করে দেন/ আযাব চাপিয়ে দেন {১০:১০০}। তুমি বিশ্বের অধিকাংশ লোকের কথা শুনলে তারা তোমাকে আল্লাহর পথ থেকে সরিয়ে দেবে। তারা তো কেবল ধারণার অনুসরণ করে এবং আন্দাজ অনুমানে কথা বলে {৬:১১৬}।

ফরজ মানে বাধ্যতামূলক। মহান আল্লাহ আল-কুর’আনে যেসব কাজকে ‘ফরজ’ বলেছেন- সেটাই বাধ্যতামূলক বা ফরজ

মহা-গ্রন্থ আল কুর’আনে- সুরা নুরের বিধিবিধানগুলো আল্লাহ ফরজ করেছেন। যাতে আছে মূলত আইনগত ও সামাজিক বিধি-বিধান।

ইজমা হলো শিরক্। ইজমার মাধ্যমে আল্লাহর হুকুম ও বিধানের পাশাপাশি নতুন হুকুম বিধান তৈরি করা হয়। সেই সঙ্গে আল্লাহর নামে তা পালন করা হয়।

কবিরা গুনাহ হলো ‘বড় গুনাহ’। যেসব অপরাধকে মহান আল্লাহ নিজে বড় গুনাহ বা ‘কবিরা গুনাহ’ বলেছেন- শুধুমাত্র সেগুলোই কবিরা গুনাহ। কবিরা গুনাহের ক্ষেত্রে জাহান্নামের আযাব বা শাস্তির কথা উল্লেখ করেছেন আল্লাহ।

মহান আল্লাহ ঘোষণা অনুযায়ী কবিরা গুনাহ হলো- ১. মহান আল্লাহ্‌র সঙ্গে শরিক করা বা শিরক্‌ করা; ২. স্বেচ্ছায় কোনও মুসলিমকে হত্যা করা; ৩. ইসলামের সঙ্গে মুনাফেকি আচরণ করা; ৪. এতিমদের সম্পদ আত্মসাৎ করা

আল্লাহপাক জানিয়ে দিয়েছেন যে- তোমদেরকে যা নিষেধ করা হয়েছে তার মধ্যে যা কবিরা গোনাহ্‌- তা থেকে বিরত থাকলে আমরা তোমাদের ছোট পাপগুলো ক্ষমা করব এবং তোমাদেরকে সম্মানজনক স্থানে প্রবেশ করাব (৪:৩১)।

মহান আল্লাহ হাদিসের বিরুদ্ধে চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে দিয়েছেন- “এগুলো আল্লাহর আয়াত যা আমি আপনার নিকট আবৃত্তি করছি যথাযথভাবে; সুতরাং আল্লাহ এবং তাঁর আয়াতের পরিবর্তে তারা আর কোন হাদিসে বিশ্বাস করবে?” (৪৫:৬)