হাদিসের ইতিহাস- প্রথম পর্ব
গবেষণা প্রতিবেদন অনুবাদ
মহানবী (সা) হাদিস লেখা নিষিদ্ধ করেছেন
সহীহ মুসলিম, সহীহ আহমাদ ও হাদিসের অন্যান্য সূত্র থেকে প্রমাণ পাওয়া যায় যে, মহানবী হযরত মুহাম্মদ (স) তাঁর বিভিন্ন সময় বলা কথা বা হাদিস লেখা নিষিদ্ধ করেছেন। বর্তমান সময়ে যত হাদিস সংগৃহীত আছে, যেগুলোকে হাদিস বিশেষজ্ঞরা সহীহ বলে মনে করেন তার সবই মহানবীর ইন্তেকালের ২০০ বছর পরে লেখা হয়েছে। নবীজির নির্দেশ মোতাবেক কোনো হাদিস লেখা হয় নি এবং এই অবস্থা বিদ্যমান ছিল প্রায় ২০০ বছর পর্যন্ত। বর্তমান সময়ে আমাদের মাঝে সহীহ হাদিস বলে যেসব গ্রন্থ রয়েছে তার মধ্যে বুখারি হচ্ছে অন্যতম। এই বুখারি শরীফের লেখক ইমাম বুখারি জন্মগ্রহণ করেছিলেন হিজরি ১৯৪ সালে তথা ৮৭০ খ্রিস্টাব্দে। সিয়া-সিত্তাহর ছয়টি হাদিস গ্রন্থের লেখক সবাই ইমাম মুসলিম ও আবু দাউদের মতো ইমাম বুখারির পরে জন্মগ্রহণ করেছেন।
পবিত্র কুরআনে হাদিসের বিকৃতি সম্পর্কে বলা হয়েছে, যা যুগে যুগে প্রত্যেক নবীর শত্রুরা করবে। সুরা আন’আমে বলা হচ্ছে-
এভাবে আমি প্রত্যেক নাবীর জন্য মানুষ ও জিন শয়তানদের মধ্যে থেকে শত্রু বানিয়ে দিয়েছি; প্রতারণা করার উদ্দেশ্যে তারা একে অপরের কাছে চিত্তাকর্ষক কথাবার্তা বলে। তোমার প্রতিপালক ইচ্ছে করলে তারা তা করত না, কাজেই তাদেরকে আর তাদের মিথ্যে চর্চাকে উপেক্ষা করে চল। ৬:১১২
পবিত্র কুরআন নিশ্চিত করছে যে, মহান আল্লাহর ইচ্ছাতেই হাদিসের বিকৃতি ঘটানোর সুযোগ দেয়া হয়েছে। এটা করা হয়েছে মূলত প্রকৃত ঈমানদার ও মুনাফিকদেরকে পার্থক্য করার জন্য। যারা হাদিসকে আঁকড়ে ধরবে তারা মিথ্যা ঈমানদার হিসেবে প্রমাণিত হবে। আর সত্যিকারের ঈমানদারেরা একমাত্র আল্লাহতে সন্তুষ্ট থাকবেন। তারা রাজিখুশি থাকবেন শুধুমাত্র আল্লাহর কথা এবং আল্লাহর আইনে (কুরআন)। যখন তারা এই কথা বলেন যে, কুরআন হচ্ছে পূর্ণাঙ্গ ও বিস্তারিত ধর্মগ্রন্থ এবং এজন্য তাদের আর অন্য কোনো উৎসের প্রয়োজন নেই।
পবিত্র কুরআনের সূরা আন’আমে আরও বলা হচ্ছে-
(বলুন) “আমি কি আল্লাহ ছাড়া অন্যকে বিচারক মানব, যখন তিনি সেই (সত্তা) যিনি তোমাদের নিকট কিতাব নাযিল করেছেন, যা বিশদভাবে বিবৃত। আমি যাদেরকে (পূর্বে) কিতাব দিয়েছিলাম তারা জানে যে, তা সত্যতা সহকারে তোমার প্রতিপালকের নিকট হতে অবতীর্ণ হয়েছে। কাজেই কিছুতেই তুমি সন্দেহ পোষণকারীদের মধ্যে শামিল হয়ো না। সত্যতা ও ইনসাফের দিক দিয়ে তোমার প্রতিপালকের বাণী পরিপূর্ণ। তাঁর বাণী পরিবর্তন করার কেউ নেই। আর তিনি হলেন সর্বশ্রোতা ও সর্বজ্ঞ।” (৬:১১৪,১১৫)
তারা মহান আল্লাহর নির্দেশ মতো পবিত্র কুরআন ছাড়া কোনো হাদিসগ্রন্থ আঁকড়ে ধরবে না, ধরতে পারে না।
এগুলো আল্লাহর আয়াত যা আমি তোমার কাছে পড়ছি যথাযথভাবে; সুতরাং আল্লাহ এবং তাঁর আয়াতের পরিবর্তে তারা আর কোন হাদিসে বিশ্বাস করবে? ৪৫:৬
আল্লাহ প্রশ্ন করছেন, খুব সাবধানে উত্তর দিতে হবে:
তোমাদের কী হয়েছে- তোমরা কীভাবে ফায়সালা করছো? নাকি তোমাদের কাছে কোনো কিতাব রয়েছে যার মধ্যে থেকে তোমরা পড়ছো? ৬৮:৩৬,৩৭
অন্যদিকে, মিথ্যা ঈমানদারেরা আইনের উৎস হিসেবে পবিত্র কুরআন নিয়েই সন্তুষ্ট থাকবে না বরং তারা আরো সূত্র খোঁজ করবে। পবিত্র কুরআন বলছে,
আর তারা এ উদ্দেশ্যে কুমন্ত্রণা দেয় যে, যারা আখেরাতে ঈমান রাখে না তাদের মন যেন সে চমকপ্রদ কথার প্রতি অনুরাগী হয় এবং তাতে যেন তারা পরিতুষ্ট হয়। আর তারা যে অপকর্ম করে তাই যেন তারা করতে থাকে। ৬:১১৩
খোদ হাদিস গ্রন্থে বলা হচ্ছে যে, নবীজী হাদিস লেখাকে নিষিদ্ধ করেছেন এবং তাঁর অনুসারীদের কুরআন ব্যতিরেকে তাঁকে উদ্ধৃত করে কোনো কিছু লেখা উচিত নয় বলে জানিয়েছেন। এটি প্রমাণিত সত্য যে, নবীজির ওফাতের আগ পর্যন্ত তিনি তাঁর এই অবস্থান ধরে রেখেছিলেন। এর স্বপক্ষে নিচেই কয়েকটি হাদিস তুলে ধরা হলো:
১) ইবনে সাঈদ আল-খুদরি বলেন, আল্লাহর রাসূল বলেছেন, “কুরআন ছাড়া আমার থেকেও কোনো কিছু তোমরা লিখো না। কেউ যদি কুরআন ছাড়া অন্য কিছু লেখে তাহলে তোমরা তা মুছে ফেলবে।” (আহমাদ ভলিয়ম ১, পৃষ্ঠা ১৭১ এবং সহীহ মুসলিম, জুহদ গ্রন্থ ৪৩, নম্বর ৭১৪৭)
কোনো কোনো হাদিস বিশেষজ্ঞ বলতে চান যে, নবীজি হাদিস লেখা সম্পর্কে তাঁর দৃষ্টিভঙ্গি পরিবর্তন করেছিলেন। কিন্তু নিচের হাদিসটি যা তার ওফাতের ৩০ বছর পরে বর্ণনা করা হয়েছে তাতে নিশ্চিত করা হয় যে, কুরআন ব্যতিরেকে তার থেকে আর কোনো কিছু না লেখার জন্য মহানবী (সা) নির্দেশনা দিয়েছেন। এরপর আর কখনো হাদিস লেখার অনুমতি দেন নি।
২) যায়িদ ইবনে সাবিত (মহানবীর ঘনিষ্ঠতম ওহী লেখক) একবার গভর্নর মুয়াবিয়ার সঙ্গে সাক্ষাৎ করলেন (নবীজির ওফাতের ৩০ বছর পর) এবং নবীজির সম্পর্কে একটি কাহিনী বললেন। বিষয়টি মুয়াবিয়া পছন্দ করলেন এবং কোনো একজনকে সেটি লিখে রাখার নির্দেশ দিলেন। কিন্তু যায়িদ ইবনে সাবিত বললেন, “আল্লাহর রাসূল তাঁর কোনো হাদিস না লিখে রাখার জন্য আমাদের নির্দেশ দিয়েছেন।”
৩) ইবনুল সালা লিখিত বিখ্যাত গ্রন্থ উলুমুল হাদিসে আবু হুরায়রা থেকে উদ্ধৃত একটি হাদিস উল্লেখ করা হয়েছে। হাদিসে আবু হুরায়রা বলছেন, “আমরা যখন আল্লাহর রাসূলের হাদিস লিখছিলাম তখন তিনি আমাদের কাছে আসলেন এবং বললেন, ‘তোমরা কি লিখছো?’ আমরা বললাম, ‘ইয়া রাসুলুল্লাহ আমরা হাদিস লিখছি যা আপনার কাছ থেকে শুনি।‘
তিনি বললেন, ‘আল্লাহর কিতাব ছড়া অন্য কোনো কিতাব?’ আমরা বললাম, ‘আমরা কী আপনার সম্পর্কে লিখব না?’ তিনি বললেন, ‘আমার সম্পর্কে লেখ সেটা ভালো কথা, কিন্তু যারা আমার সম্পর্কে মিথ্যা বলবে তারা জাহান্নামে যাবে।” আবু হুরায়রা বলেন, “আমরা হাদিস আকারে যা লিখেছিলাম তা সংগ্রহ করলাম এবং আগুনে পুড়িয়ে ফেললাম।”
৪) বিখ্যাত গ্রন্থ তাক-ঈদ উল ইলমে আবু হুরায়রা বলেন, আল্লাহর রাসূল জানতে পারলেন যে, কিছু লোক তাঁর হাদিস লিখছেন। তিনি মসজিদের মিম্বরের উপরে উঠলেন এবং বললেন, “আমি শুনেছি তোমরা কিছু কিতাব লিখছো, সেগুলো কি? আমি নিতান্তই একজন মানুষ। কেউ একজন এগুলোকে এখানে আন। আবু হোরায়রা বলেন, ‘আমরা সবগুলোকে সংগ্রহ করলাম এবং সেগুলোকে আগুনে পুড়িয়ে দিলাম।’
৫) ইবনে হাম্বল তার মুসনাদ গ্রন্থে একটি হাদিস বর্ণনা করেছেন যেখানে আবদুল্লাহ ইবনে ওমর বলছেন, “আল্লাহর রাসূল দ্রুত আমাদের ছেড়ে চলে যাবেন সেজন্য একদিন তিনি আমাদের কাছে আসলেন এবং বললেন, আমি যখন তোমাদের ছেড়ে চলে যাব (ইন্তেকাল করব) তখন তোমরা আল্লাহর কিতাব আঁকড়ে ধরো, আমি যা হারাম ঘোষণা করেছি তোমরা তাকে হারাম জানবে এবং আমি যেগুলোকে হালাল বলেছি তোমরা সেগুলোকে হালাল বলে গ্রহণ করবে।”
৬) তাক-ঈদ উল ইলম গ্রন্থের অন্য জায়গায় আবু সাইদ আল-খুদরি বলেছেন, “আমি আল্লাহর রাসূলের হাদিস লেখার অনুমতি চাইলাম কিন্তু তিনি আমাকে তা লেখার অনুমতি দিলেন না।”
৭) মহানবী (সা)’র বিদায় হজ ছিল মুসলিম ইতিহাসে এটি গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক। হাজার হাজার মুসলমানের সামনে মহানবী তাঁর বিদায় হজের শেষ ভাষণ দিয়েছিলেন। কিন্তু হাদিস গ্রন্থগুলোতে তাঁর এই ভাসনের তিনটি বিবরণ পাওয়া যায়। মহানবী (সা)’র এই বক্তৃতা সবচেয়ে বেশি মানুষ প্রত্যক্ষ করেছেন। তারপরও এ নিয়ে তিন ধরনের বর্ণনা পাওয়া যায়। এ থেকেও হাদিস গ্রন্থগুলোর অসামঞ্জস্য বেরিয়ে আসে।
১) প্রথম বর্ণনা, “আমি তোমাদের জন্য এমন কিছু রেখে যাচ্ছি তা যদি তোমরা আঁকড়ে ধরো তাহলে কখনো তোমরা পথ হারাবে না, আল্লাহর কিতাব এবং আমার আহলে বাইয়াত।” মুসলিম ৪৪/৪, নম্বর ২৪০৮; ইবনে হাম্বল ৪/৩৬৬; জারিমি ২৩/১, নম্বর ৩৩১৯।
এই বর্ণনা শিয়া মুসলমানরা গ্রহণ করে থাকেন।
২) দ্বিতীয় বর্ণনা, “আমি তোমাদের জন্য এমন কিছু রেখে যাচ্ছি তা যদি তোমরা আঁকড়ে ধরো তাহলে কখনো তোমরা পথ হারাবে না, আল্লাহর কিতাব এবং আমার সুন্নাহ”। মুয়াত্তা ৪৬/৩
এই মতকে সুন্নি মুসলমানরা গ্রহণ করে থাকেন।
৩) তৃতীয় বর্ণনা, “আমি তোমাদের জন্য এমন কিছু রেখে যাচ্ছি তা যদি তোমরা আঁকড়ে ধরো তাহলে কখনো তোমরা পথ হারাবে না, আল্লাহর কিতাব।” মুসলিম ১৫/১৯, নম্বর ১২১৮, ইবনে মাজাহ ২৫/৮৪, আবু দাউদ ১১/৫৬।
তৃতীয় এই মত সুন্নি ও শিয়া মুসলমানরা বাদ দিয়েছেন। এটিই একমাত্র মত যা বারবার পবিত্র কোরআনে বর্ণনা করা হয়েছে যাতে বলা হয়েছে মুহাম্মাদের বার্তা ছিল শুধুই কুরআন। এমনকি বহু সুন্নি মুসলমান ও শিয়া মুসলমান জানেন না যে, তৃতীয় এই বর্ণনা বা মত আছে। প্রকৃতপক্ষে, তারা আসল সত্য জানতে চান না।
হাদিস সংকলনের ইতিহাস:
হাদিস লেখা এবং তার সংকলনের বিষয়টি ইসলামের ইতিহাসে খুবই মজার ও গুরুত্বপূর্ণ অংশ।
মহান আল্লাহ পবিত্র কুরআন শরীফে বারবার বলেছেন যে, এই কিতাব পূর্ণাঙ্গ সঠিক এবং এতে বিস্তারিত বর্ণনা রয়েছে (৬:১৯,৩৮,১১৫, ১১৫; ৫০:৪৫; ১২:১১১), এবং যদি প্রয়োজন থাকতো তাহলে মহান আল্লাহ আমাদেরকে শত শত গ্রন্থ দিতে পারতেন, শুধুমাত্র একটি কুরআন দিতেন না (দেখুন ১৮:১০৯ এবং ৩১:২৭ আয়াত)।
হাদিস এবং ‘খোলাফায়ে রাশেদীন‘ (নির্দেশিত খলিফারা)
মহানবীর ওফাতের পর চারজন খলিফা মুসলিম উম্মাহকে শাসন করেছেন, তারা সবাই নবীজির নির্দেশের প্রতি সম্মান দেখিয়েছেন এবং হাদিস লেখা ও সংগ্রহ করাকে নিষিদ্ধ করেছিলেন। তারা পবিত্র কুরআনকে পূর্ণাঙ্গ ও বিস্তারিত গ্রন্থ হিসেবে গ্রহণ করেছিলেন এবং তারা কুরআনকে একমাত্র ধর্মের উৎস হিসেবে গ্রহণ করেছিলেন (৬:১১৪)।
হযরত আবু বকর একটি পর্যায়ে এসে নিশ্চিত হতে পারছিলেন না যে, তিনি যেগুলোকে হাদিস বলে জানেন সেগুলোকে তিনি সংরক্ষণ করবেন নাকি করবেন না। নবীজির দীর্ঘ সাহচর্যের মধ্যদিয়ে তিনি ৫০০ হাদিস সংগ্রহ করেছিলেন। সেগুলোকে না পোড়ানো পর্যন্ত রাতে তার ঘুম হচ্ছিল না।
ওমর ইবনুল খাত্তাবের ছেলে আব্দুল্লাহ যে সমস্ত হাদিস সংগ্রহ করেছিলেন সেগুলোকে ধ্বংস করার জন্য ওমর বারবার তাগিদ দিয়েছেন। ইসলামের ইতিহাসে এই কাহিনী বর্ণিত হয়েছে যে, ওমর ইবনুল খাত্তাব নবীজির চারজন সাহাবিকে হাদিস লেখার ক্ষেত্রে বাধা দিয়েছেন। তারা হাদিস প্রচারের ব্যাপারে পীড়াপীড়ি করতেন। এই চার সাহাবি হলেন ইবনে মাসউদ, আবু দারদা, আবু মাসউদ আল-আনসারী এবং আবু জার গিফারি। আবু হুরায়রাকে ওমর মিথ্যাবাদী বলেছেন এবং নবী মুহাম্মাদ সম্পর্কে মিথ্যা বলা থেকে বিরত না থাকলে তাকে ইয়েমেনে ফেরত পাঠানোর হুমকি দিয়েছিলেন। আবু হুরায়রা ইয়েমেন থেকে মদিনায় গিয়েছিলেন। ওমরের মৃত্যু পর্যন্ত আবু হুরায়রা হাদিস প্রচার বন্ধ রাখেন, এরপর আবার তিনি তা শুরু করেন।
বলা হয়ে থাকে ওমর নিজেও বলেছেন যে, তিনি হাদিস লিখতে চেয়েছিলেন কিন্তু তিনি এই ভয়ে সে কাজ থেকে বিরত ছিলেন যে, মুসলমানেরা কুরআনের শিক্ষা বাদ দিয়ে হাদিসকে গ্রহণ করতে পারে।
“আমি সুন্নাহ লিখতে চেয়েছিলাম, এবং আমি স্মরণ করলাম তোমাদের আগে কিছু লোক আল্লাহর কিতাব বাদ দিয়ে অন্য কিছু কিতাব লিখেছিল যেগুলো তারা অনুসরণ করবে।” জামিউল বয়ান ১/৬৭।
চতুর্থ খলিফা আলী ইবনে আবু তালিব তাঁর একটি খুৎবায় বলেছেন, “যে সমস্ত মানুষ আল্লাহ রাসুলের লিখিত কথা সংগ্রহে রেখেছেন তারা বাড়ি যান এবং এগুলো নষ্ট করে ফেলুন। আপনাদের আগের উম্মতেরা পণ্ডিতদের হাদিস অনুসরণ এবং মহাপ্রভুর কিতাব বর্জন করার কারণে ধ্বংস হয়ে গেছে।” (সুনান আল-জারামি)
ওমর ইবনে আবদুল আজিজ, জালিয়াতির সূত্রপাত:
আবু বকর, ওমর, আলী এবং আয়েশা যারা সারাজীবন নবীজির সাথে থেকেছেন অথচ তাদের চেয়ে আবু হুরায়রা অনেক বেশি হাদিস বর্ণনা করেছেন। নবীজির সাথে দুই বছরেরও কম সময় থাকার পর আবু হুরায়রা এত বেশি হাদিস বর্ণনা করেছেন যা সমস্ত সাহাবির হাদিস একসাথে করলেও তার সমান হবে না। তিনি বর্ণনা করেছেন ৫,৩৭৪টি
হাদিস। ইবনে হাম্বল তার হাদিস গ্রন্থে ৩,৮৪৮টি হাদিস উদ্ধৃত করেছেন। মহানবীর ওফাতের পর খোলাফায়ে রাশেদীন মুসলিম জাহান শাসন করেছেন কিন্তু তারা কুরআন ছাড়া অন্য কিছু লেখার ইচ্ছা পোষণ করেন নি এবং হাদিস ও সুন্নাহ লেখার ব্যাপারে তারা বিরোধিতা করেছেন। নবীজির ওফাতের পর ২০০ বছর তাদের দৃষ্টান্ত অনুসরণ করা হয়। এই সময়ের পর নবীজি সম্পর্কে নানা রকমের গুজব এবং মিথ্যা ছড়িয়ে পড়ে এবংলোকজন কুরআন বাদ দিয়ে হাদিসের দিকে ঝুঁকে পড়ে। খলিফা ওমর ইবনে আবদুল আজিজ ক্ষমতায় আসার পর একটি নির্দেশ জারি করলেন যার মাধ্যমে হাদিস ও সুন্নাহ লেখার অনুমতি দেন। তিনি এই চিন্তা করে অনুমতি দিলেন যাতে সঠিক হাদিস লেখা হবে এবং এর মাধ্যমে নবীজী সম্পর্কে মিথ্যার অবসান ঘটবে। তার এই আদেশের মধ্যদিয়ে তিনি পবিত্র কুরআন শরীফে আল্লাহর দেয়া নির্দেশনা এবং নবীজির দেয়া নির্দেশনা লঙ্ঘন করলেন। একই সঙ্গে তিনি তার পূর্বসূরী খলিফাদের দৃষ্টান্ত লঙ্ঘন করলেন এবং সেই সময়কার বহু পণ্ডিত ব্যক্তির আপত্তি উপেক্ষা করলেন। ওই সময় থেকে আল্লাহর ধর্ম, আল্লাহর সুন্নাহ ও কুরআন থেকে ইসলাম সরে গেল, জায়গা করে নিলনিষিদ্ধ হাদিস এবং তথাকথিত সুন্নাহ যা প্রকৃতপক্ষে আল্লাহ ও তাঁর রাসুল নিষিদ্ধ করেছিলেন।
প্রথম হাদিস লিখন:
এটি ঐতিহাসিকভাবে সত্য যে, মহানবী (স)’র জীবদ্দশায় হাদিস লেখা হয়েছিল কিন্তু নবীজী এবং তার ওফাতের পরে যারা মুসলিম জাহানকে শাসন করেছেন তারা সবাই এর নিন্দা করেছেন, অনুৎসাহিত করেছেন, ধ্বংস করেছেন এবং যারা এসব লিখেছেন তাদের সবাইকে খারাপ চোখে দেখতেন। হাদিস গ্রন্থ বলছে যে, নবী মুহাম্মাদ (সা) সংগ্রহ করা হাদিস পুড়িয়ে ফেলেছিলেন এবং আল্লাহর কিতাবের পাশাপাশি আরেকটি কিতাব তৈরির জন্য খুবই রাগান্বিত হয়েছিলেন। আবু বকর ও ওমর ইবনুল খাত্তাবও সংগ্রহ করা হাদিস পুড়িয়ে দিয়েছিলেন।
ওমর ইবনে আবদুল আজিজ হাদিস লেখার অনুমতি দেয়ার আগ পর্যন্ত এই নিষেধাজ্ঞা বহাল ছিল। এরপর বহু বই ও নোটবই হাদিস হিসেবে প্রচলিত হয়ে গেল। উদাহরণ হিসেবে ইবনে গ্রিগ, মালিক ইবনে আনাস, মুহাম্মাদ ইবনে ইসহাকের নাম উল্লেখ করা যায়। তাদের লেখা গ্রন্থের মধ্যে সবচেয়ে বেশি বিখ্যাত হলো মালিক ইবনে আনাসের গ্রন্থ (আল-মুয়াত্তা) যাতে ৫০০ হাদিস রয়েছে।
দ্বিতীয় শতাব্দীর শেষের দিকে মুসনাদ নামে গ্রন্থটি বের হয়। আহমদ ইবনে হাম্বল লিখিত মুসনাদ গ্রন্থটিতে ৪০ হাজার হাদিস রয়েছে। তৃতীয় শতাব্দীর প্রথমার্ধে বিখ্যাত ৬টি হাদিস গ্রন্থ প্রকাশ হয়।
এই গ্রন্থগুলো এখনকার বিশেষজ্ঞরা ব্যবহার করে থাকেন- ১. সহীহ বুখারি ২. সহীহ মুসলিম ৩. সুনানে আবু দাউদ ৪. সুনানে তিরমিজি ৫. সুনানে নাসাঈ ৬. সুনানে ইবনে মাজাহ।
এসব গ্রন্থে একটি নতুন ধর্মকে উপস্থাপন করা হয় যা কুরআনের চেয়েও বেশি গুরুত্ব পেতে থাকে; যদিও তারা ভিন্ন দাবি করতেন। এসব গ্রন্থের লেখক এই বিষয়টি বিবেচনায় নেন নি যে, হাদিসের বিষয়বস্তুগুলো পবিত্র কুরআনের সঙ্গে সাংঘর্ষিক হচ্ছে কিনা। এমনকি সেগুলো অন্য হাদিসের সঙ্গে কিংবা সাধারণ জ্ঞানের সঙ্গে সাংঘর্ষিক হচ্ছে কিনা তাও বিবেচনায় নেয়া হয় নি। প্রকৃতপক্ষে এসব কাজ করে তারা আল্লাহর প্রতিশ্রুতি পূরণ করে দিলেন যে প্রতিশ্রুতি সূরা আন আমের ১১২ ও ১১৩ নম্বর আয়াতে দেয়া হয়েছে।
“আর এভাবেই আমরা মানব ও জিনের মধ্য থেকে শয়তানদেরকে প্রত্যেক নবীর শত্রু করেছি, প্রতারণার উদ্দেশ্যে তারা একে অপরকে চমকপ্রদ বাক্যের কুমন্ত্রণা দেয়। যদি আপনার রব ইচ্ছে করতেন তবে তারা এসব করত না; কাজেই আপনি তাদেরকে ও তাদের মিথ্যা রটনাকে পরিত্যাগ করুন। আর তারা এ উদ্দেশ্যে কুমন্ত্রণা দেয় যে, যারা আখেরাতে ঈমান রাখে না তাদের মন যেন সে চমকপ্রদ কথার প্রতি অনুরাগী হয় এবং তাতে যেন তারা পরিতুষ্ট হয়। আর তারা যে অপকর্ম করে তাই যেন তারা করতে থাকে। (৬:১১২,১১৩)
হাদিসের সংখ্যা কত:
মহানবী হযরত মুহাম্মদ (সা)’র নামে সংগ্রহ করা হাদিসের সংখ্যা প্রায় সাত লাখ। এইসব হাদিসের বেশিরভাগই সম্পূর্ণ মিথ্যা ও বানোয়াট। এ ছাড়া, এসব হাদিস প্রথম দিককার মুসলিম বিশেষজ্ঞরা প্রত্যাখ্যান করেছিলেন; যারা ভাবতেন তারা সঠিক এবং বিশুদ্ধ হাদিস আলাদা করতে পারবেন। চলুন এবার নজর দেয়া যাক কয়েকজন বিখ্যাত হাদিস সংগ্রহকারীর দিকে এবং তারা কী সংগ্রহ করেছেন।
১. মালিক ইবনে আনাস তার বিখ্যাত হাদিস গ্রন্থ আল মুয়াত্তা-তে ৫০০ হাদিস তুলে ধরেছেন।
২. আহমাদ ইবনে হাম্বল তার বিখ্যাত মুসনাদ গ্রন্থে ৪০ হাজার হাদিস তুলে ধরেছেন। সাত লাখ হাদিসের মধ্য থেকে তিনি এই ৪০ হাজার হাদিস বেছে নিয়েছিলেন। এর অর্থ হচ্ছে- তিনি ছয় লাখ ৬০ হাজার হাদিসকে প্রমাণহীন, মিথ্যা অথবা বানোয়াট মনে করেছিলেন এবং বাকিগুলোকে মনে করেছিলেন সঠিক।
৩. জনাব বুখারি সংগ্রহ করেছিলেন ৬ লাখ হাদিস। তার মধ্য থেকে তিনি মাত্র গ্রহণ করেছিলেন সাত ৭,২৭৫টি হাদিস এবং বাকি পাঁচ লাখ ৯২ হাজার ৭২৫টি হাদিসকে প্রমাণহীন, মিথ্যা অথবা বানোয়াট মনে করেছিলেন। অন্য কথায়, তার সংগ্রহ করা শতকরা ৯৯ ভাগ হাদিসকে তিনি মিথ্যা বলে গণ্য করেছেন।
৪. মুসলিম হাদিস সংগ্রহ করেছিলেন তিন লাখ। তার মধ্য থেকে তিনি গ্রহণ করেছিলেন মাত্র ৪,০০০ এবং বাকি দুই লাখ ৯৬ হাজার বাদ দিয়েছিলেন। তার মানে হচ্ছে তিনি প্রায় শতকরা ৯৯ ভাগ হাদিস বাতিল করেছেন।
উপরের এই বিষয়গুলো আমাদের একটি ধারণা দেয় তাহলো- পেছন দরজা দিয়ে ইসলামের ভেতর কি পরিমাণে জালিয়াতি ঢুকিয়ে দেয়া হয়েছে অথবা জালিয়াতি ঢোকানোর চেষ্টা করা হয়েছে।
আবু হুরায়রা এবং নানা ধরনের মিথ্যাচার:
আবু হুরায়রা ইয়েমেন থেকে সপ্তম হিজরিতে মদিনায় আসেন এবং তিনি মুসলমান হন। তিনি মহানবী (সা) এর সঙ্গে ছিলেন দুই বছরেরও কম সময়। অথচ তিনি পাঁচ হাজারের বেশি হাদিস বর্ণনা করেছেন। তার হাদিস বর্ণনার সঠিক সংখ্যা হচ্ছে ৫,৩৭৪। নবীজির সমস্ত সাহাবি যত হাদিস বর্ণনা করেছেন আবু হুরায়রা দুই বছরের কম সময় নবীজীর সঙ্গ পেয়ে তাদের সবার চেয়ে বেশি হাদিস বর্ণনা করেছেন।
উদাহরণ হিসেবে আবু বকর অথবা ওমরের নাম উল্লেখ করা যায়। তারা নবীজির দীর্ঘদিনের সাহাবি হলেও তাদের চেয়ে আবু হুরায়রা বর্ণিত হাদিসের সংখ্যা অনেক বেশি। তার বর্ণিত হাদিসের বেশিরভাগকে ‘হাদিসে আহাদ’ বলা হয়। হাদিসে আহাদ সেইসব হাদিসকে বলা হয় যার প্রত্যক্ষদর্শী মাত্র একজন ব্যক্তি। এ পেক্ষাপটে নবীজির কয়েকজন সাহাবি এবং নবীজির স্ত্রী আয়েশা আবু হুরায়রাকে মিথ্যাবাদী বলে অভিযুক্ত করেন। তারা বলেছেন, আবু হুরায়রা হাদিস তৈরি এবং নিজের অবস্থান উন্নয়নের জন্য নবীজী সম্পর্কে মিথ্যা বলেছে।
খোলাফায়ে রাশেদীনের দ্বিতীয় খলিফা ওমর ইবনুল খাত্তাব হুমকি দিয়ে আবু হুরায়রাকে বলেছিলেন, নবীজি সম্পর্কে হাদিস বলা বন্ধ না করলে তাকে নির্বাসনে পাঠানো হবে।
ওমরের হত্যাকাণ্ড পর্যন্ত আবু হুরায়রা হাদিস বর্ণনা বন্ধ রাখেন এবং ওমরের মৃত্যুর পর তিনি আবার তা শুরু করেন। তিনি সেই সময়কার খলিফার সন্তুষ্টি অর্জনের জন্য হাদিস বলা অব্যাহত রাখেন।
মুয়াবিয়ার সময় আবু হুরায়রাকে সিরিয়ার রাজ দরবারে রাখা হয়েছিল। আবু হুরায়রা বলেছেন, ওমর বেঁচে থাকাকালীন তিনি যে হাদিস প্রচার করতেন তা যেন ওমর জানতে না পারেন সেজন্য তিনি তার শ্রোতাদেরকে সতর্ক করে দিতেন। আবু হুরায়রা বলতেন, হযরত ওমর তার হাদিস প্রচারের কথা জানলে তাকে দোররা মারবেন।
আবু জাফর আল ইসকাফি উল্লেখ করেছেন, নবীজির চাচাতো ভাই আলী ইবনে আবু তালিবকে ছোট করার জন্য তার সম্পর্কে বানোয়াট কাহিনী ও হাদিস তৈরি করতে খলিফা মুয়াবিয়া আবু হুরায়রাসহ আরো কিছু লোককে নির্বাচিত করেছিলেন।
সে সময় আবু হুরায়রা মুয়াবিয়ার রাজনৈতিক স্বার্থ হাসিলের কর্মকাণ্ডসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে তার স্বার্থ সংরক্ষণে ভূমিকা রাখেন। তিনি এমন কিছু হাদিস তৈরি করেন যা আলী ইবনে আবু তালিবের জন্য অপমানজনক হয়ে দাঁড়ায়। আবু হুরায়রা হযরত আলীকে আবু বকর, ওমর এবং ওসমানের চেয়ে নিচু পর্যায়ের খলিফা হিসেবে দেখানোর চেষ্টা করেন। তিনি এ চেষ্টা করেন শুধুমাত্র মুয়াবিয়ার সন্তুষ্টি অর্জনের জন্য।
মুয়াবিয়ার শাসনামলে আবু হুরায়রার সহযোগিতায় বহু হাদিস তৈরি করা হয় যার মাধ্যমে এই সমর্থন দেয়া হয় যে, ইমাম অথবা খলিফাকে আল্লাহ কিংবা রাসূলের মতো আনুগত্য করতে হবে, এই সমস্ত হাদিস ছিল কুরআনের আইনের সঙ্গে সাংঘর্ষিক। যেখানে কুরআনে বলা হয়েছে- শাসনকার্যে সমস্ত সবকিছু নির্ধারিত হবে গণতান্ত্রিক পরামর্শের ভিত্তিতে। (মনে রাখতে হবে যে, আবু হুরায়রা তখন মুয়াবিয়ার রাজপ্রাসাদে
অবস্থান করছেন)
আবু হুরায়রা বর্ণিত বহুসংখ্যক হাদিস অন্য হাদিসের সাথে সাংঘর্ষিক। এমনকি তার নিজের বর্ণনা করা হাদিস এবং অন্য লোকজনের বর্ণনা করা হাদিসের সাথে সাংঘর্ষিক। আবু হুরায়রা বর্ণিত হাদিস পবিত্র কুরআনের সাথে সাংঘর্ষিক এবং মানুষের সাধারণ জ্ঞান বুদ্ধি ও বিবেক বিবেচনা সাথেও সাংঘর্ষিক।
আবু হুরায়রা কাব আল-আহবারের মতো হাদিস বর্ণনা করতে থাকেন। কাব আল-আহবার প্রথমে ইহুদি ছিলেন পরে তিনি মুসলমান হন। এই ব্যক্তি ইহুদিদের বিকৃত কিছু গ্রন্থ ব্যবহার করে পবিত্র কুরআনকে ব্যাখ্যা করার চেষ্টা করতেন। তিনি সবচেয়ে জঘন্য কিছু হাদিস তৈরি করেন যা পবিত্র কুরআনের সাথে সম্পূর্ণ সাংঘর্ষিক। ইহুদিদের বিকৃত তাওরাত গ্রন্থের কিছু মিথ্যা গল্প অনুসরণে তিনি এসব তৈরি করেছিলেন।
ইসলামিক ঐতিহাসিকগণ আবু হুরায়রা সম্পর্কে একটি কাহিনী বলে থাকেন। আবু হুরায়রাকে বাহরাইনের গভর্নর নিযুক্ত করা হয়। দুই বছরের মধ্যে তিনি বিরাট ধনী হয়ে যান। এ ঘটনা জানতে পেরে খলিফা ওমর তাকে মদিনায় তলব করেন এবং বলেন, “তুমি আল্লাহর দুশমন, তুমি আল্লাহর সম্পদ চুরি করেছো। তোমার যখন একজোড়া জুতোও ছিল না তখন আমি তোমাকে বাহরাইনে গভর্নর বানিয়েছি, এখন তুমি এই চার লাখ দিরহাম কোথায় পেয়েছ?” বলা হয়ে থাকে- আবু হুরায়রা ২০ হাজার দিরহামের কথা স্বীকার করেছিলেন এবং ওমর তার কাছ থেকে ১০ হাজার দিরহাম নিয়ে নেন।
যে সমস্ত ব্যক্তি সবচেয়ে বানোয়াট হাদিস ছড়িয়েছেন বলে অভিযোগ করা হয় আবু হুরায়রা তাদের অন্যতম। নবীজির স্ত্রী মা আয়েশা সব সময় তাকে অসত্য এবং অপূর্ণাঙ্গ কাহিনী বলার জন্য অভিযুক্ত করতেন। আয়েশা বলতেন, আবু হুরায়রা যে হাদিস বলে তিনি তা নবীজির কাছ থেকে কখনো শোনেন নি। আবু হুরায়রা নারী এবং কুকুর সম্পর্কে বাজে ধারণা পোষণ করতেন। মুসলিম নারীদের বিরুদ্ধে তিনি বেশকিছু অপমানজনক হাদিস তৈরি করেছিলেন। এছাড়া কুকুর হত্যা সম্পর্কে কিছু হাদিস লিখেছেন।
মা আয়েশা ও আবু হুরায়রার দ্বন্দ্ব:
ইবনে কুতাইবা আল-জিনোরির বিখ্যাত গ্রন্থ “তাওয়িল মুখতালাফ আল-হাদিস” এ একটি কাহিনী উদ্ধৃত হয়েছে যেখানে নবীজির স্ত্রী আয়েশা আবু হুরায়রাকে বলছেন, “তুমি নবীজি সম্পর্কে এমন হাদিস বল যা আমরা কখনো তাঁর কাছ থেকে শুনি নি।” আবু হুরায়রা জবাব দিলেন, (বুখারি যেভাবে বলেছেন) “আপনি (আয়েশা) আপনার আয়না এবং মেকআপ নিয়ে ব্যস্ত থাকতেন।” তিনি (আয়েশা) জবাব দিলেন, “তুমি তো তোমার পেট এবং ক্ষুধা নিয়ে ব্যস্ত থাকতে। তোমার ক্ষুধা তোমাকে সবসময় ব্যস্ত রাখত, তুমি গলিতে গলিতে লোকজনের পিছনে খাদ্যের জন্য ঘুরে বেড়াতে, লোকজন তোমাকে এড়িয়ে চলত এবং তোমাকে দেখলে লোকজন ভিন্ন পথে চলে যেত।
অবশেষে তুমি আমার দরজায় এলে এবং অজ্ঞান হয়ে পড়ে গেলে। লোকজন তোমাকে পাগল সাব্যস্ত করেছিল এবং লোকজন তোমাকে ডিঙিয়ে চলে যাচ্ছিল।”
বুখারির সহীহ: বিকৃতির উদাহরণ
বহু মুসলমান হাদিস সম্পর্কে এমনভাবে কথা বলেন যা দেখে মনে হবে পবিত্র কুরআনের সমতুল্য হাদিস অথবা কখনো কখনো হাদিসের মর্যাদা কুরআনের সম্মানকেও ছাড়িয়ে যাবে। যেখানে কুরআন কোনো ক্ষেত্রে সন্দেহের অবকাশ রাখে নি এবং আল্লাহ চান কুরআনের মধ্যেই ঈমানদাররা তাদের দিক নির্দেশনা এবং প্রকৃত আনন্দ খুঁজে পাবে। আল্লাহর নিজের ভাষায়- যারা আল্লাহর প্রতি বিশ্বাস রাখে না তারাই সাধারণত হাদিসে আশ্রয় নেয়। পবিত্র কুরআন বারবার এর নিন্দা করেছে। আল্লাহ পবিত্র কুরআনকে শ্রেষ্ঠ হাদিস বলে উল্লেখ করেছেন এবং এজন্য কুরআন ছাড়া অন্য কোনো হাদিসে আমাদের বিশ্বাস করা উচিত নয়।(৪৫:৬ এবং ৭:১৮৫) পবিত্র কুর’আরনই হলো আল্লাহ্র কথা বা হাদিস।
মহানবী (সা) এবং তাঁর অনুসারী খলিফাগণ সুস্পষ্ট নির্দেশনা দেয়ার পরেও যেসব পণ্ডিত ব্যক্তি হাদিস সংগ্রহের সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন বুখারি তাদের অন্যতম।
যেখানে বর্তমান খ্রিস্টধর্ম ব্যাপকভাবে খ্রিষ্টান পাদ্রি পলের বিকৃতির ফসল; সেখানে বর্তমান সুন্নি ইসলামে যা চর্চা করে, তা সত্য ইসলামের নামে বুখারির মতো লোকজনের উৎপাদিত পণ্য।
হাদিস অনুসরণ করার মধ্যদিয়ে যখনই মুসলমানরা কুরআন থেকে দূরে সরে গেল তখনই তাদের ধর্ম অবিশ্বাস্য রকম বিকৃত হয়ে গেল। আজকে যে ইসলাম চর্চা করা হচ্ছে তা মূলত বুখারি, মুসলিম, তিরমিজি, আবু দাউদ এবং অন্য কয়েকজন ব্যক্তির ইসলামের প্রতিফলন। এগুলো কোনমতেই নবী মুহাম্মদ (সা) প্রচারিত সত্য বাণী নয়।
হাদিসের সত্যতার ব্যাপারে দাবি করার ক্ষেত্রে বুখারি শুধু নিয়ম-নীতিই ভঙ্গ করেন নি বরং তার ব্যক্তিগত অনুভূতি, রাজনৈতিক মিত্রতা এবং আলী ইবনে আবু তালিবের মতো ব্যক্তিদের প্রতি ঘৃণা- এসবই তার ব্যক্তিগত পছন্দ অপছন্দকে প্রভাবিত করেছে। এগুলোর ওপর ভিত্তি করেই তিনি কোন হাদিস গ্রহণ করবেন আর কোনগুলো বাদ দেবেন তা ঠিক করেছেন।
এই মানদণ্ডের ওপর দাঁড়িয়ে তিনি তার গ্রন্থে হাদিস অন্তর্ভুক্ত করেছেন। হাদিসের বিষয়বস্তু সম্পর্কেও তিনি ততটা যত্নশীল নন। তার গ্রন্থে বহু হাদিস অন্তর্ভুক্ত করেছেন যা পবিত্র কুরআনের সঙ্গে সাংঘর্ষিক, কোনোটি হাদিসের সঙ্গে সাংঘর্ষিক, সাধারণ জ্ঞান বা বিবেচনাবোধের সঙ্গে সাংঘর্ষিক, মহান আল্লাহর জন্য অপমান, নবী মুহাম্মদ (সা)‘র জন্য অপমান, অপমান নবীজির স্ত্রী এবং তাঁর পরিবারের প্রতি। আলী ইবনে আবু তালিবের সঙ্গে মুয়াবিয়ার বিরোধের ব্যাপারে বুখারি যে অবস্থান গ্রহণ করেছেন তা নিতান্তই বুখারির রাজনৈতিক অসততা এবং আলীর প্রধান শত্রু মুয়াবিয়া ইসলামী শরীয়তের সাধারণ আইনকানুন লঙ্ঘন করার পরেও তাকে একজন খাঁটি মুসলমান হিসেবে তিনি তার হাদিসের বইয়ে তুলে ধরেছেন। বুখারি তার গ্রন্থে বহু হাদিস তুলে ধরেছেন যা এখন সহীহ বলা হচ্ছে এবং এই সব হাদিস বর্ণনা করেছেন এমন সব ব্যক্তি যারা মিথ্যাবাদী, দুর্নীতিগ্রস্ত ও অবিশ্বস্ত বলে পরিচিত ছিলেন। তারপরে যে সব মুসলিম পণ্ডিত ব্যক্তি এসেছেন তারা সবাই সত্য উন্মোচন এবং বুখারি ও তার মতো হাদিস এবং সুন্নাহর পণ্ডিত ব্যক্তিদের সীমাবদ্ধতাগুলো প্রকাশ করার ক্ষেত্রে ভীত ছিলেন। এর সহজ একটি উদাহরণ হচ্ছে- বিখ্যাত গ্রন্থ আল মুস্তাদরাকের লেখক বলছেন, বুখারি এমন ৪৩৪ ব্যক্তির কাছ থেকে হাদিস গ্রহণ করেছে যাদেরকে মুসলিম সহীহ মুসলিম গ্রন্থের জন্য বিশ্বাসযোগ্য ব্যক্তি বলে গ্রহণ করেন নি।অন্যদিকে, মুসলিম এমন ৬২৫ ব্যক্তির কাছ থেকে হাদিসের বর্ণনা গ্রহণ করেছেন যাদেরকে বুখারি বাতিল করেছেন।
নবীজির জীবদ্দশাতেই হাদিসের মধ্যদিয়ে ইসলামের বিকৃতি শুরু হয় এবং তার ওফাতের পর এই বিকৃতির কাজ জোরদার হয়। হাদিসকে আঁকড়ে ধরার বিষয়টি আল্লাহর পক্ষ থেকে নিন্দা জানানো হয়েছে, এমনকি মহানবী (সা) এবং সাহাবারাও হাদিস অনুসরণের সমালোচনা ও নিন্দা করেছেন।
হিজরি তৃতীয় শতাব্দীতে যখন হাদিসের ছয়টি গ্রন্থ লেখা হয় তখন থেকে হাদিস চর্চার বিষয়টি চূড়ান্ত পর্যায়ে পৌঁছায়।
পবিত্র কুরআন বলছে, বিচার দিবসে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কুরআন ছেড়ে দেয়ার জন্য আল্লাহর কাছে অভিযোগ করবেন।
রসূল বলবে- ‘হে আমার প্রতিপালক! আমার জাতির লোকেরা এ কুরআনকে পরিত্যক্ত গণ্য করেছিল।’ (২৫:৩০)
যেসব হাদিসে নবীজিকে উপহাস করা হয়েছে, সেগুলো দেখি:
বুখারি ও মুসলিম গ্রন্থ দুটি আল্লাহ, নবী মুহাম্মদ, মুসলমান, ইসলাম এবং যেকোন সাধারণ মানুষের জীবনের বুদ্ধিমত্তার বিষয়ে লজ্জাজনক হাদিসে ভর্তি।
এই পর্যায়ে আমরা নবী মুহাম্মদের প্রতি সেই সব লোকদের কিছু অবমাননাকর হাদিস দেখব যারা দাবি করেছেন যে, তারা নবীজির হাদিস রক্ষা করার চেষ্টা করছেন। তাদের মিথ্যা এবং বিকৃতি অবশ্যম্ভাবী, যদিও তারা তাদের বানোয়াট হাদিসকে সহীহ বলে দাবি করছেন। নিচেই এমন কিছু উদাহরণ তুলে ধরা হলো:
১. সহীহ বলে দাবি করা
গ্রন্থগুলোতে অনেক নিয়ম-নীতি রয়েছে যা পবিত্র কুরআনের সাথে সাংঘর্ষিক। এইরকম একটি হাদিসে নবীজিকে আল্লাহর আনুগত্যহীন ব্যক্তি হিসেবে চিত্রিত করা হয়েছে যেখানে নবীজিকে একজন আইনপ্রণেতার ভূমিকায় অবতরণ করানো হয়েছে। অথচ আমরা জানি পবিত্র কুরআন নির্দিষ্টভাবে জানিয়েছে যে, আল্লাহ সর্বোত্তম আইন প্রণেতা (৬:১১৪, ৬৬:১)।
অন্য এক হাদীসে দাবি করা হয়েছে, জেনা বা ব্যভিচারের জন্য পবিত্র কুরআনে যে শাস্তির বিধান রয়েছে তার থেকে ভিন্ন শাস্তির কথা বলেছেন নবীজি। পবিত্র কুরআনের সূরা নূর-এ ব্যভিচারের শাস্তির কথা উল্লেখ রয়েছে এবং সেটি হচ্ছে ১০০ দোররা মারা। কিন্তু হাদিসে বলা হয়েছে- ব্যভিচারের শাস্তি পাথর মেরে হত্যা করা যা অবশ্যই নবীজির উপর মিথ্যা আরোপ। মুসলিম বই ১৭, নম্বর ৪১৯২:
“উবাদা ইবনুল সামিত বলেছেন, আল্লাহর রাসুল (সা) বলেছেন, বিবাহিত ব্যক্তিদের ব্যভিচারীর ক্ষেত্রে শাস্তি হচ্ছে ১০০ দোররা এবং পাথর মেরে হত্যা করা।”
কুরআন এবং হাদিসের মধ্যকার এই নজরকাড়া পার্থক্যের জবাবে হাদিসের অনুসারীরা দাবি করেন যে, পাথর মারার কথা উল্লেখ করে পবিত্র কুরআন শরীফে একটি আয়াত ছিল কিন্তু সে আয়াতটি ছাগলে খেয়ে গেছে এবং এ কারণে আয়াতটি কুরআন শরীফ থেকে উঠে গেছে।
যেখানে কুরআন সংরক্ষণের ব্যাপারে আল্লাহ নিজেই প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন সেখানে কুরআন শরীফের আয়াত কী করে একটি ছাগলে খেয়ে যায় (১৫:৯)?
২) অন্য একটি হাদিসে আমরা দেখি যেখানে দাবি করা হয়েছে নবী মুহাম্মদ (সা) একরাতে তার নয়জন স্ত্রীর সাথে সহবাস করতেন এবং তাকে ৩০ জন পুরুষের যৌন ক্ষমতা দেয়া হয়েছিল।
ভলিউম ৭, বই ৬২, নম্বর ৬:
“আনাস বলেন, নবীজি এক রাতে পর্যায়ক্রমে (সহবাসের জন্য) তার সব স্ত্রীর কাছে যেতেন এবং তার নয় স্ত্রী ছিলেন।”
এই লজ্জাজনক মিথ্যা পবিত্র কুরআনের বাণী এবং একমাত্র আল্লাহর জন্য কী ইবাদত? এই হাদিস দ্বারা বুখারি নবীজিকে কোন ধরনের ভাবমর্যাদা দেয়ার চেষ্টা করেছেন? বুখারি কী বুঝতে পেরেছিলেন যে, মুহাম্মাদ (সা)’র নবুয়ত প্রাথমিকভাবে তাঁর যৌন ক্ষমতার সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত?
সর্বোপরি, যারা এই ধরনের হাদিসকে সহীহ বলে মনে করে তারা প্রকৃতপক্ষে আল্লাহর নবীর বিরুদ্ধে মিথ্যা প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছে।
৩) বুখারিতে আমরা দেখি, নবীজী দিনের নির্দিষ্ট কয়েকটি সময়ে নামাজ নিষিদ্ধ করেছেন! বলার অপেক্ষা রাখে না পবিত্র কুরআন শরীফে কোথাও এ ধরনের নিষেধাজ্ঞা নেই। এছাড়া এটি চিন্তা করাই বাহুল্য যে, দিনের কোনো কোনো সময় আল্লাহর রাসূল নামাজ নিষিদ্ধ করবেন। (বুখারি, ভলিউম ২, বই ২৬, নম্বর ৬৯৫ )
আব্দুল্লাহ বর্ণনা করেছেন, “আমি নবীজিকে সূর্যোদয় এবং সূর্যাস্তের সময় নামাজ পড়া নিষেধ করতে শুনেছি।”
৪) বুখারি, ভলিউম ৭, বই ৬২, নম্বর ৯৩- এ আমরা দেখতে পাই একটি কাহিনী যেখানে নবীজির স্ত্রী আয়েশা একটি গলার হার হারিয়ে ফেলেন। এরপর নবীজি সমস্ত মুসলমানকে ওই হার খোঁজার নির্দেশ দেন। এমন সময় নামাজের ওয়াক্ত হয়ে গেল এবং তারা ওজু ছাড়া নামাজ পড়লেন। এরপর আল্লাহ মুসলমানদের জন্য তায়াম্মুমের বিধান দেয়ার সিদ্ধান্ত নিলেন।
আরেকটি লজ্জাজনক হাদিস, একেও সহীহ বলে দাবি করা হয়!
ওযু ছাড়া অশুদ্ধ নামাজ পড়ার কথা বলে এই হাদিসে শুধুমাত্র নবীজিকে অপমানই করা হয় নি বরং বলা হচ্ছে যে, নবীজির একটি ভুল সংশোধনের জন্য তায়াম্মুমের বিধান জারি করলেন আল্লাহ। অথচ আল্লাহর সমস্ত আইন বিশ্বজনীন এবং মানুষের কোনো ঘটনার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট নয়।
৫) বুখারি, ভলিউম ৮, বই ৮২, নম্বর ৭৯৬
এই হাদিসে আমরা দেখি, “ওরেইনেহ এবং ওকায়েল গোত্রের কিছু লোক ইসলাম গ্রহণের জন্য নবীজির কাছে আসলো। নবীজি তাদেরকে উটের মূত্র পান করার উপদেশ দিলেন! পরে তারা যখন নবীজির মেষ পালককে হত্যা করল তখন নবীজি তাদেরকে অবরুদ্ধ করলেন, তাদের চোখ উপড়ে ফেললেন, তাদের হাত ও পা কেটে দিলেন এবং তাদেরকে মরুভূমিতে ফেলে রাখলেন যাতে তারা তৃষ্ণার্ত হয়ে মারা যায়।”
এই হলো হাদিস গ্রন্থের অবস্থা। যেখানে নবীজির চরিত্রকে এভাবে তুলে ধরা হয়েছে। অথচ মহান আল্লাহ পবিত্র কুরআনে নবীজিকে দয়ালু এবং উন্নত নৈতিক চরিত্রের অধিকারী বলে বর্ণনা করেছেন। এই হাদিসে নবীজিকে বর্বর হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে যিনি কিনা লোকজনের চোখ উপড়ে ফেলছেন এবং হাত পা কেটে দিচ্ছেন। আর উটের মূত্র খাওয়ার নির্দেশনা দেয়ার কথা বলাই বাহুল্য।
এখন কী আমরা বুঝতে পারছি কেন মহান আল্লাহ তাঁর পবিত্র গ্রন্থকে (কুরআন) শ্রেষ্ঠ হাদিস বলে উল্লেখ করেছেন? আমরা কি জানতে পারলাম- কেন আমাদের কুরআন ছাড়া অন্য কোনো কিছু বিশ্বাস করা উচিত নয় (৪৫:৬)?
একমাত্র আল্লাহর শত্রু, নবী মুহাম্মদ (সা)‘র শত্রু এবং ইসলামের শত্রুরা হাদিসকে আঁকড়ে ধরে।
হয়তো আমরা এখন বুঝতে পারি, কেন আল্লাহ বলেছেন- যারা এ ধরনের বিকৃত কিতাব তৈরি করবে তারা কেন নবীজির শত্রু (৬:১১২)
এবং মুনাফিকরাই এই ধরনের কিতাবে গ্রহণ করে এবং সেগুলো আঁকড়ে ধরবে।
কোনো সন্দেহ নেই যে, রাসূল (সা) শেষ বিচারের দিনে আল্লাহর কাছে অভিযোগ করবেন যে, তাঁর উম্মত কুরআন থেকে দূরে সরে গিয়েছিল (২৫:৩০)।
৬)
সম্ভবত নিচের এই হাদিসটিকে ইসলাম এবং মহানবীকে আক্রমণের জন্য সবচেয়ে বেশি ব্যবহার করা:
ভলিউম ৭, বই ৬২, নম্বর ৬৪
মা আয়েশা বর্ণনা করেন যে, তার বয়স যখন ছয় বছর তখন নবীজি তাকে বিয়ে করেছেন এবং তার বয়স যখন নয় বছর তখন তিনি বিয়ের বিষয়টি ভালোভাবে অনুধাবন করতে পেরেছেন। এবং তারপর তিনি নয় বছর যাবত নবীজির সঙ্গে ছিলেন (নবীজির ওফাত পর্যন্ত)।
বলার অপেক্ষা রাখে না, এটি যদি সত্য হয়ে থাকে তাহলে এটি হবে নবীজির বিরুদ্ধে ভয়ঙ্কর ধরনের অবমাননা এবং অন্ততপক্ষে শিশু নির্যাতনের দায় তাঁর ওপর পড়ে। এই কাহিনী নিঃসন্দেহে মহানবীর বিরুদ্ধে একটি মিথ্যা আরোপ এবং যে আয়েশার বরাত দিয়ে এই হাদিস প্রচার করা হয়েছে তাকেও অপমান করা হয়।
৭) নবীজি নারীদেরকে বাঁকা বলেছেন!
ভলিউম ৭, বই ৬২, নম্বর ১১৩:
আবু হুরায়রা বর্ণনা করেন: আল্লাহর রাসূল বলেছেন, “নারীরা পাঁজরের হাড়ের মতো বাঁকা। যদি তোমরা তাকে সোজা করতে যাও তাহলে ভেঙে যাবে। ফলে তোমরা যদি তাদের থেকে কল্যাণ চাও তাহলে তাদেরকে বাঁকা অবস্থায় রাখ।”
আরো একটি হাদিস আমরা উল্লেখ করতে পারি যা নিঃসন্দেহে আল্লাহর রাসূলের বিরুদ্ধে মিথ্যারোপ। কথিত এই হাদিসে পুরুষ শাসিত সমাজে নারীদেরকে দ্বিতীয় শ্রেণীর নিম্নমানের সৃষ্টি বলে দেখানো হয়েছে এবং তা আল্লাহ প্রেরিত নবীর কোনো কথা হতে পারে না। এটিও নবীজির বিরুদ্ধে বিকৃত মিথ্যারোপ।
৮) নবীজি ঘোষণা করেছেন: “যেসব নারী উটে চড়ে তারা হলো শ্রেষ্ঠ”!
বুখারি, ভলিউম ৭, বই ৬২, নম্বর ১৯:
আবু হুরায়রা বর্ণনা করেন: নবীজি বলেছেন, “কুরাইশ নারীদের মধ্যে তারাই শ্রেষ্ঠ ও ন্যায়-নিষ্ঠাবান যারা উটের পিঠে চড়ে। তারা তাদের শিশুদের শৈশবের সময় মমতাময়ী হয় এবং তারা তাদের স্বামীর অর্থ-সম্পদ যত্নসহকারে দেখাশোনা করে।”
উটের পিঠে আরোহণকারীনি? আল্লাহ রাসুল সত্যিই নারীদের মূল্যায়নের ক্ষেত্রে এই ধরনের মানদণ্ড নির্ধারণ করেছেন!
৯) নবীজির বিরুদ্ধে সম্ভবত সবচেয়ে জঘন্য মিথ্যাচার হচ্ছে এই হাদিস যেখানে দাবি করা হয়েছে যে, যৌন আকাঙ্ক্ষা পরিতৃপ্ত করতে অল্প কয়েকদিনের জন্য দুজন নারী পুরুষকে মহানবী (সা) বিয়ের অনুমতি দিয়েছেন।
বুখারি, ভলিউম ৭, বই ৬২, নম্বর ৫২
এ হাদিস বর্ণনা করেছেন জাবের বিন আব্দুল্লাহ এবং সালামা বিন আল-আকওয়া:
আমরা যখন সেনাদলের সঙ্গে ছিলাম তখন আল্লাহর রাসূল আমাদের কাছে এসে বললেন, “তোমাদেরকে মুতা বিয়ের জন্য অনুমতি দেয়া হয়েছে। অতএব তোমরা তা কর।” সালামা বিন আল-আকওয়া বলেন, আল্লাহর রাসূল বললেন, “যদি কোনো নারী ও পুরুষ সম্মত হয় (অস্থায়ী বিয়ের ব্যাপারে) তাদের বিয়ে ৩ রাত স্থায়ী করতে হবে এবং তারা যদি সম্পর্ক অব্যাহত রাখতে চায় তাহলে তারা তা করতে পারে। আবার তারা যদি আলাদা হয়ে যেতে চায় তাও করতে পারে।”
এটি দুই ধাপের মিথ্যা। প্রথমত এই হাদিসে আল্লাহর পাশাপাশি নবীজিকে একজন আইন প্রণেতা হিসেবে চিত্রিত করা হয়েছে যার মাধ্যমে পবিত্র কুরআনের কয়েকটি আয়াতকে লঙ্ঘন করা হয়েছে। এইসব আয়াতে যেমন- ৬:১১৪ ও ৬৬:১ নম্বর আয়াতে নিশ্চিত করা হয়েছে যে, একমাত্র আল্লাহ হচ্ছেন আইন প্রণেতা। দ্বিতীয়তঃ বিয়ের ব্যাপারে আল্লাহ যে নকশা তৈরি করে দিয়েছেন তার চেয়ে ভিন্ন মনোভাব থেকে এক ধরনের বিয়ের ক্ষেত্র তৈরি করে দেয় এই হাদিস। মুতা বিয়ে এই শব্দটির অনুবাদ হচ্ছে ‘যৌন আকাঙ্ক্ষা মেটানোর জন্য বিয়ে’; প্রকৃতপক্ষে এটি অত্যন্ত সূক্ষ্মভাবে পতিতাবৃত্তির ছদ্মাবরণ।
এ কথা বলা বাহুল্য যে, কোনো ব্যক্তি তার স্ত্রীকে তালাক দেয়ার আগে আল্লাহর পক্ষ থেকে তার সামনে অনেকগুলো বাধা তৈরি করা হয়েছে যেমন- বিবাহ বিচ্ছেদের আগে ৪ মাস পরিস্থিতি শান্ত হওয়ার জন্য অপেক্ষা (২:২২৬), দুই পরিবারের সদস্যদের মধ্যে আলোচনা (৪:৩৫), স্বামীর বাড়ি থেকে স্ত্রীকে তাড়িয়ে না দেয়া (৬৫:১), স্ত্রীকে তালাকের
খোরপোষ দেয়া (২:২৪১) ইত্যাদি। এই সমস্ত বাধা মূলত এই কারণে করা হয়েছে যে, মহান আল্লাহ বিয়েকে মূলত নারী ও পুরুষের মধ্যে দীর্ঘ সম্পর্কে মাধ্যম করেছেন। নিতান্তই তিনদিনের আমোদ ফুর্তির বিষয় করেন নি যার মাধ্যমে একটি দম্পতি শুধু যৌন স্বাদ আস্বাদন করে!
তিন দিনের বিয়ের মাধ্যমে একটি দম্পতি পরস্পরের যৌন আকাঙ্ক্ষা পরিতৃপ্ত করা ছাড়া আর কি খুঁজে পায় সেখানে?
১০) মহানবী (সা)‘র বিরুদ্ধে আরেকটি জঘন্য মিথ্যা নিচের হাদিসে খুঁজে পাওয়া যাবে।
পবিত্র কুরআনের মাধ্যমে আমাদের বলা হয়েছে যে, মহানবী মুহাম্মদের ব্যক্তিগত কোনো অলৌকিক ক্ষমতা নেই। কিছু আয়াতে মহান আল্লাহ নবীজির সঙ্গে কথা বলছেন এবং তিনি তাকে বলেছেন যে, লোকজন যদি তাঁর কাছে মোজেজা দেখতে চায় তাহলে তিনি যেন বলেন যে, তিনি একজন মানব বার্তাবাহক ছাড়া আর কিছুই নন, তাঁর কাছে কোনো অলৌকিক ক্ষমতা নেই। (১৭:৯০-৯৩)। কিন্তু নিচের এই হাদিসে মহানবীর আশ্চর্য অলৌকিক ক্ষমতা দেখানোর কথা বলা হয়েছে:
বুখারি, ভলিউম ৫, বই ৫৮, নম্বর ২০৮:
আনাস বিন মালিক বর্ণনা করেছেন, “মক্কার লোকজন আল্লাহর রাসূলকে তাঁর মোজেজা দেখাতে বললো। এরপর তিনি চাঁদকে ইশারা দিয়ে দুই খণ্ডে বিভক্ত করলেন এবং হিরাম পর্বতের দুই জায়গায় তিনি রাখলেন।
আল্লাহকে অপমান করার কয়েকটি হাদিসের উদাহরণ:
নিচে কয়েকটি হাদিস উল্লেখ করা হলো যার মাধ্যমে আল্লাহকে অপমান করা হয়েছে।
সর্বপ্রথম এটি আমাদের স্মরণ করা কল্যাণকর হবে যে, আল্লাহ নিজের সম্পর্কে পবিত্র কুরআনে তিনি কি বলছেন:
দৃষ্টিসমূহ তাঁকে আয়ত্ব করতে পারে না, অথচ তিনি সব দৃষ্টিকে আয়ত্ব করেন এবং তিনি সূক্ষদর্শী সম্যক অবহিত। ৬:১০৩
কোনো কিছুই তাঁর সদৃশ নয়, তিনি সর্বশ্রোতা, সর্বদ্ৰষ্টা। ৪২:১১
যখন মূসা আল্লাহ দেখতে চাইলেন (৭:১৪৩), আল্লাহ তাঁকে বললেন যে, তিনি তাঁকে দেখতে পাবেন না।
এখন চলুন আমরা বুখারি ও মুসলিমের কিছু বিকৃত হাদিস দেখি যাতে আল্লাহ সম্পর্কে বর্ণনা করা হচ্ছে এবং তা মহানবীর বক্তব্য বলে দাবি করেছেন:
১) আল্লাহ ঈমানদারদের মধ্যে
আবির্ভূত হন এবং তারা আল্লাহকে পূর্ণ চাঁদের মতো দেখতে পায়! (বুখারি, ভলিউম ৯, বই ৯৩, নম্বর ৫২৯)।
২) আল্লাহ তাঁর পা দোজখের ওপর রাখলেন এবং আগুন পরিপূর্ণতা পেল। (বুখারি, ভলিউম ৮, বই ৭৮, নম্বর ৬৫৪)।
৩) আল্লাহ মানুষের মতো হাসেন। (মুসলিম বই ১, নম্বর ৩৪৯)।
অন্যান্য “সহীহ” মিথ্যা এবং বিকৃতি:
এই অধ্যায়ে জঘন্য কিছু মিথ্যা এবং বিকৃতি তুলে ধরা হবে যেগুলোকে হাদিস বিশেষজ্ঞরা সহীহ বলে চালিয়ে দিয়েছেন। এই হাদিসগুলোতে ইসনাদ (বর্ণনাকারীদের ধারাক্রম) থাকায় সেগুলোকে অনুমোদন দেয়া হয়েছে। এগুলোকে বিশ্বাসযোগ্য বলে বিবেচনা করা হয়েছে! হাদিসের বিষয়বস্তুর সঙ্গে এগুলোর কোনো মিল নেই। এগুলো পবিত্র কুরআন অথবা সাধারণ জ্ঞানের সঙ্গে সাংঘর্ষিক কিনা তা কোন ব্যাপার বলেই মনে হয় না! নিচেই এইরকম কিছু ‘সহীহ’ হাদিস তুলে ধরা হলো:
১) দাঁড়িয়ে পানি পান করো না। -সহীহ মুসলিম, বই ৩৩, নম্বর ৫০১৭;
“আবু হুরায়রা বলেন, আল্লাহর রাসূল বলেছেন, দাঁড়িয়ে পানি পান করো না, কেউ যদি ভুলে এমন করে তাহলে তার উচিত যা পান করেছে তা বমি করে ফেলে দেয়া।”
২) দাঁড়িয়ে প্রস্রাব করা –সহীহ বুখারি, ভলিউম ৩, বই ৪৩, নম্বর ৬৫১:
“আল্লাহর রাসূল দাঁড়িয়ে প্রস্রাব করেছেন।”
৩)
“দাঁড়ানো অবস্থায় প্রস্রাব করো না” –সুনানে ইবনে মাজাহ, ভলিউম ১, বই ১, নম্বর ৩০৮
“দাঁড়িয়ে প্রস্রাব করো না”
৪)
আল্লাহর রূপে মানুষ –সহীহ মুসলিম, বই ৪০, নম্বর৬৮০৯:
আবু হুরায়রা বলেন, আল্লাহর রাসূল বলেছেন, “আল্লাহ আদমকে উন্নত এবং সুন্দররূপে নিজের আকৃতিতে তৈরি করেছেন।”
আবু হুরায়রা কর্তৃক বর্ণিত আরেকটি মিথ্যা এবং বিকৃতি হাদিস মুসলিম তার হাদিসগ্রন্থে লিপিবদ্ধ করেছেন।
৫)
আদমের উচ্চতা ছিল ৬০ হাত এবং তিনি চওড়া ছিলেন সাত হাত।
মুসনাদে আহমদ:
আবু হুরায়রা বলেন, আল্লাহর রাসূল বলেছেন “আল্লাহ আদমকে সৃষ্টি করেছেন ৬০ হাত উঁচু এবং সাত হাত চওড়া করে।”
সহীহ মুসলিম, বই ৪০, নম্বর ৬৭৯৫ : “আদম হচ্ছেন ৬০ হাত উঁচু!”
৬)
নারী, কুকুর এবং গাধা: সহীহ মুসলিম, বই ৪, নম্বর ১০৩২:
“কোনো ব্যক্তি নামাজ পড়ার সময় যদি তার সামনে দিয়ে গাধা, নারী লোক অথবা কালো কুকুর যায় তাহলে ওই নামাজ বাতিল হয়ে যাবে।”
নারীদের জন্য কি মারাত্মক রকমের অপমান, এই ধরনের কথা আল্লাহ রাসুলের মুখ থেকে আসতে পারে?
৭) নারীদের মধ্যে অশুভ লক্ষণ- সহীহ বুখারি, ভলিউম ৭, বই ৬২, নম্বর ৩০
“ঘর, ঘোড়া এবং নারীর মধ্যে অকল্যাণ রয়েছে।
নারীদের মর্যাদা ক্ষুন্নকারী আরেকটি হাদিস, যারা এই ধরনের জাল হাদিস তৈরি করেছে তাদের চরিত্র তুলে ধরে। সত্যিকারের ইসলাম যা পবিত্র কুরআন থেকে উৎসারিত হয়েছে তা নারীকে পরিপূর্ণ সম্মান দেয় এবং কখনো এই ধরনের ধারণা দেয় না।
৮) রাসূলদের মধ্যে কোনো পার্থক্য না থাকার অসঙ্গতি সহীহ বুখারি, ভলিউম ৪, বই ৫৫, নম্বর ৬০৮:
ইবনে আব্বাস বলেন, আল্লাহর রাসূল বলেছেন, “কারোর বলা উচিত না যে আমি ইউনুস (জোনাহ) ইবনে মাত্তার চেয়ে ভালো।”
উপরের এই হাদিস সত্ত্বেও আমরা হাদিস গ্রন্থগুলোর নানা ধরনের কাহিনী খুঁজে পাই যেখানে নবী মুহাম্মদকে অন্য সমস্ত নবী এবং মানুষ থেকে শ্রেষ্ঠ বলে বর্ণনা করা হয়েছে। এইসব হাদিস উপরের এই হাদিসের সঙ্গে সাংঘর্ষিক এবং কুরআনের শিক্ষার সঙ্গেও সাংঘর্ষিক। আল্লাহর রাসূলদের মধ্যে কোনো ধরনের পার্থক্য না করার জন্য পবিত্র কুরআনে সমস্ত ঈমানদারের জন্য সুস্পষ্ট নির্দেশনা রয়েছে (২:২৮৫)। যারা হাদিসগ্রন্থ অনুসরণের দাবি করেন তারাই আবার নিজেদের সুবিধার জন্য সেই সমস্ত হাদিস অস্বীকার করেন যাতে ঈমানদারদেরকে রাসূলদের মাঝে পার্থক্য করতে নিষেধ করা হয়েছে।#
গবেষণা, অনুবাদ ও সংশোধন: এ মোহাম্মদ, এস ইসলাম, কিউআরসি।
এই গবেষক নামধারী ইবলিশের কথায় কিছুক্ষণের জন্য হাদিছ বাদ দিলাম।
এখন বাবাজি গবেষক নামধারী ইবলিশ বলো তো ফজর নামাজ কয় রাকাত ?
প্রমাণ কোরান থেকে দিবা।
ইবলিসের অনুসারী বুখারি ও অন্যান্য হাদিসের বই থেকে জানা যায় যে, ফজর নামায ২ রাকাত।
তার অনুসরণ কর তারাই, যারা খাঁটি মুশরিক।
ফজরের নামাজ ২ রাকাত, এই তথ্য পেয়েছেন হাদিস থেকে। প্রতিটা নামাজে কয়টা রুকু-সেজদা এবং সেটা কখন কখন কয়বার করে দিতে হবে, এটাও পায়েছেন হাদিস থেকেই, এমনকি রুকু বা সেজদায় গিয়ে কয়বার করে দোয়া পড়তে হবে, জোড় নাকি বিজোড় সংখ্যায় পড়তে হবে, এটাও হাদিস থেকেই পেয়েছেন। আল্লাহ প্রতিটি মানুষকে (বিশেষ করে মুসলমানদের) বলেছেন, একাগ্রচিত্তে সালাত আদায় করতে, যাতে আল্লাহর সাথে বান্দার নীবিড় সম্পর্ক (আন-ইন্টারাপ্টেড কানেকশন) তৈরী হয়। অথচ রুকু বা সেজদায় গিয়ে যখন ‘সুবহানা রাব্বিয়াল আজিম’ অথবা ‘সুবহানা রাব্বিয়াল আ’লা’ কয়বার বলেছেন, সেটা কাউন্ট করতে শুরু করেন, তখন কী বান্দার সাথে আল্লাহর নীবিড় সম্পর্ক থাকে? থাকে না তো! আপনি তো তখন দোয়া কাউন্টিং দিকে মনোনিবেশ করেন! ৩ বার, নাকি ৫ বার, নাকি ৭ বার পড়ছেন, মনযোগ চলে যায় সেদিকে।
ইবনে কুতাইবা আল-জিনোরির বিখ্যাত গ্রন্থ “তাওয়িল মুখতালাফ আল-হাদিস” এ একটি কাহিনী উদ্ধৃত হয়েছে যেখানে নবীজির স্ত্রী আয়েশা আবু হুরায়রাকে বলছেন, “তুমি নবীজি সম্পর্কে এমন হাদিস বল যা আমরা কখনো তাঁর কাছ থেকে শুনি নি।” আবু হুরায়রা জবাব দিলেন, (বুখারি যেভাবে বলেছেন) “আপনি (আয়েশা) আপনার আয়না এবং মেকআপ নিয়ে ব্যস্ত থাকতেন।” তিনি (আয়েশা) জবাব দিলেন, “তুমি তো তোমার পেট এবং ক্ষুধা নিয়ে ব্যস্ত থাকতে। তোমার ক্ষুধা তোমাকে সবসময় ব্যস্ত রাখত, তুমি গলিতে গলিতে লোকজনের পিছনে খাদ্যের জন্য ঘুরে বেড়াতে, লোকজন তোমাকে এড়িয়ে চলত এবং তোমাকে দেখলে লোকজন ভিন্ন পথে চলে যেত।
অবশেষে তুমি আমার দরজায় এলে এবং অজ্ঞান হয়ে পড়ে গেলে। লোকজন তোমাকে পাগল সাব্যস্ত করেছিল এবং লোকজন তোমাকে ডিঙিয়ে চলে যাচ্ছিল।
এটার Arabic রেওয়ায়েতটি কি একটু দেওয়া যাবে?
ইবনে সাঈদ আল-খুদরি বলেন, আল্লাহর রাসূল বলেছেন, “কুরআন ছাড়া আমার থেকেও কোনো কিছু তোমরা লিখো না। কেউ যদি কুরআন ছাড়া অন্য কিছু লেখে তাহলে তোমরা তা মুছে ফেলবে।” (আহমাদ ভলিয়ম ১, পৃষ্ঠা ১৭১)
এটা মুসনাদে আহমাদের কোন সংস্করণ থেকে? আমার কাছে মুসনাদে আহমাদের যে সংস্করণ আছে তার ১৭১ পৃষ্ঠায় তো আপনার দেওয়া রেফারেন্স নেই।
ইবনে সাঈদ আল-খুদরি বলেন, আল্লাহর রাসূল বলেছেন, “কুরআন ছাড়া আমার থেকেও কোনো কিছু তোমরা লিখো না। কেউ যদি কুরআন ছাড়া অন্য কিছু লেখে তাহলে তোমরা তা মুছে ফেলবে।” (আহমাদ ভলিয়ম ১, পৃষ্ঠা ১৭১)
এটা মুসনাদে আহমাদের কোন সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে? আমার কাছে যেই সংস্করণ আছে তার সাথে রেফারেন্স মিলছে না।