জাহান্নাম কী ও কোথায় (দ্বিতীয় পর্ব)
১ (গ). পার্থক্য
প্রথব পর্বে আমরা বিভিন্ন ধরনের শাস্তির স্থান বা জাহান্নামের নাম জেনেছি। কুর’আনের আয়াত থেকে বোঝা যায়- অপরাধ অনুযায়ী শাস্তির জন্যই এসব স্থানের মধ্যে পার্থক্য করা হয়েছে। এবার এ কয়েকটি জাহান্নামের মধ্যে সূক্ষ্ম পার্থক্যগুলো জানার চেষ্টা করবো।
জাহান্নাম
মহাগ্রন্থ অনুযায়ী মুনাফিক ও কাফিরদের জাহান্নামে হাশর বা সমবেত করা হবে; কষ্ট ও শাস্তির সর্বনিম্ন স্তরে থাকবে মুনাফিকরা (৪:১৪০, ১৪৫)। যারা সরাসরি আল্লাহ ও তাঁর রসুলের বিরোধিতা করেছিল—সবার শাস্তি হবে এই জাহান্নামে (৯:৬৩)। এর দরজা আছে, প্রহরী আছে (১৬:২৯; ২৯:৭১, ৭২) এবং এই স্থানটি হবে পাপী মানুষদের ‘অতি নিকৃষ্ট বিশ্রামাগার’ (২:২০৬, ৩:১২, ১৩:২৮, ১৪:২৯)। অতর্কিতভাবে নানারকম বিপদ-দুর্যোগ তাদের ওপর পড়তে থাকবে (৭৮:২১); সেখানকার প্রচণ্ড উত্তাপে ছুটোছুটি করতে থাকবে অপরাধীরা (৫৫:৪৪); যন্ত্রণায় তারা বের হয়ে যেতে চাইবে—কিন্তু পারবে না (২২:২২); খাবার জন্য থাকবে নিকৃষ্ট উত্তপ্ত গলিত তরল (১৪:১৬)। সেখানে আছে ভয়াবহ বৃক্ষ-সদৃশ জঘন্য ‘কাঁটাগাছ যাক্কুম’ (৩৭:৬২-৬৭)। জাহান্নামের অধিবাসীদের খাবারের চাহিদা থাকবে। নিদারুণ কষ্ট ও যন্ত্রণায় তারা মৃত্যু কামনা করবে (৪৩:৭৭) তবে অপমান ও লাঞ্ছনাই হবে তাদের নিত্যসঙ্গী (৫৪:৪৮, ৪২:৪৫)।
জাহিম
অপরাধীদের আরেকটি আবাস হবে জাহিম; যেখানে সীমালংঘনকারী- পাপিষ্ঠরা থাকবে (৮২:১৪)। যারা অবিশ্বাস করে এবং অস্বীকার করে আল্লাহর নিদর্শন/আয়াত, তারাই হবে জাহিমের অধিবাসী (৫,১০,৮৬; ৫৭:১৯)। সেখানে আছে প্রজ্জলিত আগুনের শাস্তি (৮১:১২)। ধরে টেনে নিয়ে শিকল দিয়ে বেঁধে রাখা হবে জাহিমে (৪৪:৪৭; ৭৩:১২)। জাহিমের ভয়াবহ আযাব থেকে (সুনির্দিষ্ট কিছু) মানুষের নিষ্কৃতির জন্য আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করেন আরশের মহা-সম্মানিত মালাইকারা (৪০:৭)।
সায়ির
সায়ির হলো শয়তান বা জিনদের বাসস্থান, সেখানেই মানুষকে নিয়ে যেতে চায় জিন-শয়তান (৩৫:৬)। যেসব মানুষ বৈজ্ঞানিক তথ্য-প্রমাণ, যুক্তি-বোধের ধার ধারে না, আকল ও বিবেক খাটায় না এবং কিয়ামত/ধ্বংস ও পুনরুত্থানকে অস্বীকার করে তারা শাস্তি ভোগ করবে সায়িরে। তবে, সে-সময় তারা অপরাধ স্বীকার করবে (২৫:১১, ৬৭:১০,১১)। কিছু জিন সুলাইমান আ.এর অধীনে কাজ করত। যদি তারা নির্দেশ অমান্য করে, তাদেরকে সায়িরে আযাব ভোগ করতে হবে বলে সতর্ক করা হয়েছে (৩৪:১২)। স্বাভাবিক কারণেই অ্যান্টি-ম্যাটারের (প্রতি-পদার্থ) তৈরি জিনের আবাসস্থল ভয়াবহ উত্তাপের স্থান।
সাকার
যেসব মানুষ দুনিয়াতে ধন-সম্পদ-সচ্ছলতা-সন্তান-সন্ততি তথা প্রশান্তিময় জীবন পেয়েছে; তারপরও তাদের চাওয়ার শেষ নেই! বরং ঠান্ডা মাথায় চিন্তা-ভাবনা করে চোখ-মুখ বিকৃত করে এবং অহঙ্কার করে ও আল্লাহর বাণীকে জাদু ও মানুষের কথা বলে মিথ্যাচার করে—তাদের দগ্ধ করা হবে সাকারে। অপরাধী মানুষদের সাকারের উত্তাপে ঝলসানো হবে। সেখানে আছে ১৯জন প্রহরী (৭৪:১২-২৯)। ধারণা করা যায়– নক্ষত্রের ভয়াবহ জ্বলন্ত আগুনের চারপাশে (গ্রহ- উপগ্রহের মতো) অনন্তকাল বন বন করে ঘুরতে থাকবে অপরাধী নফস/মানুষগুলো।
হাবিয়া
আরেকটি শাস্তির স্থান হলো হাবিয়া। হাবিয়ার সঙ্গে পাপ-পূণ্যের ওজন করার ধারণা দেওয়া হয়েছে। যাদের পাপকাজ আছে, ভালো কাজও আছে; কিন্তু পাপের পরিমাণ বেশি- তাদেরকে নেওয়া হবে হাবিয়াতে। অবশ্যই প্রজ্বলিত আগুনের ভয়াবহ উত্তাপ হবে হাবিয়ার বৈশিষ্ট্য। সেখানে কোনও মাধ্যাকর্ষণ শক্তি থাকবে না। পশমের মতো ভাসবে ও শাস্তির দাবদাহে জ্বলবে অপরাধী নফস/মানুষগুলো। সুরা-১০১
নার
সরাসরি বহুবার বলা হয়েছে ‘আসহাবুন নার’ বা আগুনের অধিবাসী। অগ্নিময় এই স্থানের বিস্তারিত বর্ণনা না পেলেও কারা সেখানকার অধিবাসী—তা সুস্পষ্টভাবে বলা হয়েছে। নার-এর অধিবাসী হবে সেইসব মানুষ- যারা অবিশ্বাসী এবং আল্লাহর আয়াত/নিদর্শন অস্বীকারকারী (২:৩৯); যারা পাপ কাজে ডুবে থাকে (২:৮১); দীন ত্যাগ করে (মুরতাদ হয়ে) সে অবস্থায়ই মারা যায় (২:২১৭)। তারা নিজেরা অবিশ্বাসীর কাজ করে ও তাগুতকে অভিভাবক হিসেবে গণ্য করে (২:২৫৭) এবং যারা সুদখোর (২:২৭৫)। আগুনের অধিবাসী এইসব লোক।
২. জাহান্নামের সাধারণ/প্রচলিত বর্ণনা
সমাজে জাহান্নামের ধারণা গড়ে উঠেছে কুর’আন, হাদিস ও ঐতিহাসিক নানা বর্ণনার ভিত্তিতে। পাশ্ববর্তী অন্যান্য ধর্মবিশ্বাস থেকেও নানা মত যুক্ত হয়ে গড়ে উঠেছে সমাজের প্রচলিত বিশ্বাস। এই ধারণাটি উইকিপিডিয়া থেকে নেওয়া হয়েছে (কিছুটা পরিমার্জন করে)।
‘দোজখ’ মানে জাহান্নাম। যা পারস্যের অগ্নি-উপাসকদের পুরাণ বা কল্পকাহিনীর অংশ। পারসিক প্রাচীণ পৌত্তলিক ধর্মের প্রভাবে কুর’আনের জাহান্নামকে দোযখ বলে বৃহত্তর ভারতীয় অঞ্চলের মানুষ।
জাহান্নাম বা দোজখ ইসলামের পরিভাষায় পরকালের আবাসস্থল যা এমন পাপীদের জন্য নির্দিষ্ট যারা আল্লাহ’র ক্ষমা লাভ করবে না। ইসলাম ধর্মে কুরআনে বর্ণিত জাহান্নামের অপর নামগুলো হল : জাহীম (জ্বলন্ত আগুন ), হুতামাহ (চূর্ণবিচূর্ণকারী), হাবিয়াহ (অতল গহ্বর), লাযা, সা’ঈর (উজ্জ্বল অগ্নিকাণ্ড), সাকার, আন-নার।
ইসলামের নবী মোহাম্মাদ-এর হাদিসে এবং পরবর্তী সময়ের ইসলামী পণ্ডিতদের লেখাতেও জাহান্নামের বর্ণনা উল্লেখ করা হয়েছে। জাহান্নাম শব্দটি শাব্দিকভাবে হিব্রু ‘גיהנום’ গেহেন্নম-এর সাথে জড়িত)।
হাদিস অনুযায়ী দাবি করা হয়- জাহান্নামের স্তর সাতটি এবং দরজাও সাতটি। জাহান্নামীরা যখন খাবার চাইবে- তখন তাদের দেওয়া হবে যাক্কুম নামক কাটা যুক্ত ফল, আর তাদেরকে দেয়া হবে জাহান্নামিদের উত্তপ্ত রক্ত ও পুঁজ। মূলে গাস্সাক শব্দ ব্যবহার করা হয়েছে। এর অর্থ হয়ঃ পুঁজ, রক্ত, পুঁজ মেশানো রক্ত এবং চোখ ও গায়ের চামড়া থেকে বিভিন্ন ধরনের কঠোর দৈহিক নির্যাতনের ফলে যেসব রস বের হয়, যা প্রচণ্ড দুর্গন্ধযুক্ত। চারিদিকে শোনা যাবে শুধু চিৎকার।
হাদিস থেকে আরও জানা যায়- রসুল সা. বলেছেন হে লোক সকল ! তোমরা বেশি করে কাঁদ। আর যদি তোমরা এরূপ করতে না পার, তাহলে অন্তত কান্নার ভান কর! কেননা, জাহান্নামিরা জাহান্নামে গিয়ে এমনভাবে কাঁদবে যে, তাদের অশ্রু তাদের মুখের উপর এভাবে গড়িয়ে পড়বে, মনে হবে এটা পানির নালা। এভাবে কাঁদতে কাঁদতে তাদের অশ্রু শেষ হয়ে যাবে এবং রক্ত প্রবাহিত হবে। তারপর এতে তাদের চোখে ক্ষত সৃষ্টি হবে। (এরপর সেই ক্ষত স্থান থেকে আরো বেশি রক্ত বের হবে, তখন জাহান্নামিদের এই অশ্রু ও রক্তের পরিমাণ এমন হবে যে) সেখানে যদি অনেকগুলো নৌকা চালিয়ে দেওয়া যাবে।
জাহান্নামে আছে যাক্কুম গাছ। এর একটি ফোটা যদি এই দুনিয়ায় ছিটকে পড়ে, তাহলে পৃথিবীতে বসবাসকারী সবার জীবনোপকরণ বিনষ্ট করে দিবে। অতএব, ঐ ব্যক্তির কি অবস্থা হবে যার খাবারই হবে যাক্কুম?”
জাহান্নামকে কখনও ধ্বংস করা হবেনা। এটি বর্তমানে অস্তিত্বশীল এবং এর অধিবাসীরা একের পর এক আগমনকারী দীর্ঘ সময় সেখানে অবস্থান করবে। এমন একটি ধারাবাহিক যুগ যে, একটি যুগ শেষ হবার পর আর একটি যুগ শুরু হয়ে যায়। এমন কোন যুগ হবে না যার পর আর কোন যুগ আসবে না। কুরআনের জাহান্নামবাসীরা চিরন্তন এবং চিরকাল সেখানে থাকবে। অর্থাৎ জাহান্নামে তাদেরকে যে শাস্তি দেওয়া হবে, তা ন্যায় ও ইনসাফের দৃষ্টিতে তাদের বাতিল বিশ্বাস ও কুকর্মের অনুরূপ হবে। এতে কোন বাড়াবাড়ি হবে না।
৩. জাহান্নামের অবস্থান
জাহান্নাম কোথায়? প্রাচীন নানা ধর্মীয় কিতাব থেকে শুরু করে হাদিসের বই গুলোতে এ বিষয়ে মুখরোচক ও অবাস্তব কল্পনাপ্রসূত নানা মতামত দেওয়া হয়েছে। আমরা তার আশপাশ দিয়েও যাব না। মহাজগতের প্রভু মহাগ্রন্থ-জুড়ে এতবার জাহান্নাম-সমূহের কথা বলেছেন; তিনি জাহান্নামের অবস্থান সম্পর্কে মানুষকে কিছুটা ইঙ্গিত দিতেই পারেন- সে অনুসন্ধানই প্রথমে করা দরকার।
পর্যবেক্ষণ ১
মহাকাশ ও যমিনসমূহে কর্তত্ব একমাত্র আল্লাহর; আর আল্লাহ সব বিষয়ে পরাক্রমশালী। নিঃসন্দেহে মহাকাশ ও যমিন সৃষ্টিতে এবং রাত ও দিন আবর্তনের মধ্যে জ্ঞান-বুদ্ধি সম্পন্ন লোকদের জন্যে অনেক নিদর্শন আছে। যারা আল্লাহকে স্মরণ করে দাঁড়িয়ে, বসে ও শুয়ে এবং মহাকাশ ও যমিনের সৃষ্টি নিয়ে চিন্তা করে; তারা বলে- আমাদের প্রভু! আপনি এসব অকারণে সৃষ্টি করেন নি! সব প্রশংসা আপনার! অতএব আমাদের রক্ষা করুন আগুন থেকে!
আমাদের প্রভু! অবশ্যই আপনি যাকে আগুনে দেবেন, সে নিশ্চয়ই লাঞ্ছিত হবে; আর যালিমদের কোনও সাহায্যকারী নেই। {৩: ১৮৯-১৯২}
স্মরণ রাখা দরকার যে- মহান আল্লাহর উল্লেখিত প্রতিটি শব্দ ও বাক্যের গুরুত্বপূর্ণ অর্থ ও তাৎপর্য রয়েছে। তিনি অপ্রয়োজনে, অযৌক্তিক-ভাবে বা সম্পর্কহীন, খাপছাড়া কথা বলেন না। গোটা মহাগ্রন্থ (কুর’আন) একই বৈশিষ্ট্য ধারণ করে।
ওপরের অনুচ্ছেদ খেয়াল করলে বোঝা যায়- প্রতিটি বিষয় একে অপরের সঙ্গে গভীরভাবে জড়িত। যেমন- অন্তহীন-বিশাল মহাশূন্য ও যমিন-গুলোতে মহান এক স্রষ্টা ছাড়া আর কারও নিয়ম না। এই মহাবিশ্বের সৃষ্টি, ঘূর্ণন ও পৃথিবীতে দিন-রাতের পালা পরিবর্তনে নিখুঁত নিয়ম শৃঙ্খলা কোটি কোটি বছর ধরে কাজ করছে—যা জ্ঞানী লোক মাত্রই উপলব্ধি করতে পারে। যে মানুষ তা অস্বীকার করবে, সে হয় স্রষ্টাকে শত্রু মনে করে- অথবা সে মহামূর্খ!
যারা এসব বিষয় পর্যবেক্ষণ, চিন্তা ও গবেষণা করে; তারা হঠাৎ বুঝতে পারে- মহান স্রষ্টা এসব অনর্থক সৃষ্টি করেন নি! সব কিছুই কত নিখুঁত—ওই ভয়াবহ ওই আগুন আমাদের গ্রাস করতে পারে !!
কী?? এই ত্রুটিহীন মহাশূন্যে কী এমন জিনিস দেখা যায়? যা দেখে তথ্য-জ্ঞান-বিবেক-বোধসম্পন্ন মানুষ আগুনের কষ্ট থেকে নিজেকে বাঁচানোর ফরিয়াদ করে!!!
আশ্চর্য নয় কি? এ কিসের ইঙ্গিত দিলেন মহান রব্বুল আলামিন!
যে ‘আগুন’ থেকে প্রাণ বাঁচানোর জন্য তাঁর কাছে প্রার্থনা করতে কুর’আনে দোয়া শিখিয়েছেন মহাপ্রভু; তিনিই কি মহাকাশে ‘সেই আগুনের আযাব’ দেখিয়ে দিলেন?
এই আয়াতগুচ্ছ ইঙ্গিত দেয়- জাহান্নামের আগুন (নার) ও তার আযাব এই মহাশূন্যেই রয়েছে এবং তা দেখা যায়- বোঝা যায়।
কীভাবে দেখতে পাই?
১৯১ নং আয়াত আমাদের সে ইঙ্গিতই দিচ্ছে।
সামায়ওয়াত ওয়াল আরদ নিয়ে কিছুটা চিন্তা-ভাবনা ও বোঝার চেষ্টা করলে জাহান্নামের অবস্থান খুঁজে পাওয়া যায়!
সেটা আর কোথাও নয়; এই সামাওয়াত ওয়াল আরদ বা সাত স্তরে সজ্জিত ‘ভয়ঙ্কর মহাকাশেই’ আছে ‘জাহান্নাম, জাহিম , সায়ির, হাবিয়া, হুতামা ও নার বা আগুন।
এখনও দেখা যাচ্ছে না? গনগনে ওই সূর্যকে ভয়াবহ আগুনের গোলা ছাড়া আর কী মনে হয় আপনার!
আল ইমরানের ১৯১ আয়াত সে দিকেই সুস্পষ্টভাবে ইঙ্গিত করছে।
সৌরজগতের প্রাণকেন্দ্র সূর্য একটি মাঝারি মানের নক্ষত্র। অন্যান্য নক্ষত্রের মতোই এর জন্ম হয়েছিল। প্রায় ৪.৫ বিলিয়ন বছর আগে তৈরি হয়েছিল সূর্য। বর্তমানে সূর্যের যে আকার- তার ভেতরে ১০ লাখ পৃথিবী অনায়াসে জায়গা করে নিতে পারবে। পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে জানা গেছে, সূর্যের ভেতরের তাপমাত্রা ১০ মিলিয়ন ডিগ্রি এবং বাইরের দিকে তাপমাত্রা ৬ হাজার কেলভিন।
সূর্যের কেন্দ্রের দিকে রয়েছে প্রচণ্ড- ভয়াবহ অভিকর্ষীয় চাপ। সে সবকিছুকে নিজের ভেতরের দিকে টানে। সেই প্রচণ্ড তাপে ও চাপে সৃষ্ট ভয়াবহ বিস্ফোরণে সৃষ্ট প্রচণ্ড উত্তপ্ত গ্যাস (হাইড্রোজেন ৭০% ও হিলিয়াম ২৭%) বাইরে বেরিয়ে আসতে চায়। পারমাণবিক বিস্ফোরণের এই দুই ধরনের বিপরীতমুখী টানে সূর্যের মধ্যে ভারসাম্য সৃষ্টি হয়েছে এবং তা গোলাকার রূপ লাভ করেছে। সূর্যে যে পরিমাণ তাপ ও আলোক (ফোটন কণা) তৈরি হয়- তা কিন্তু সব বের হয়ে আসতে পারে না। তার নিজের ক্ষুধা-টান-চাহিদা ও এত বেশি যে- তার টানের সঙ্গে মহাযুদ্ধ করে কিছুটা তাপ ও আলো বের হয়ে আসতে সময় লাগে এক মিলিয়ন বছর! যদি বাধা দেওয়া না পেত- ২/৩ সেকেন্ডের মধ্যেই প্রচণ্ড তাপ ও তীব্র আলোয় ঝলসে যেত চারপাশের সব গ্রহ উপগ্রহ! সূর্যের বেশিরভাগ তাপ ও আলো সূর্যের অভিকর্ষীয় শক্তি নিজের দিকে ফিরিয়ে নেয়। শুধুমাত্র বাইরের দিকের আলোক-মণ্ডলে তৈরি হওয়া তাপ, আলো, রেডিয়েশন সৌরজগৎ পেয়ে থাকে।
পর্যবেক্ষণ ২
সুরা মুলক্-এর ৩-৬ আয়াত দেখুন।
যিনি সৃষ্টি করেছেন সাত আকাশ একটির উপর একটি। রহমানের সৃষ্টিতে তুমি কোনও খুঁত দেখতে পাবে না। ফের তাকিয়ে দেখো, কোনও খুঁত পাও কি? তারপর বার বার দেখো, সেই দৃষ্টি ব্যর্থ ও ক্লান্ত হয়ে ফিরে আসবে।
আমরা পৃথিবীর আকাশকে সাজিয়েছি অনেক প্রদীপ দিয়ে এবং সেগুলোকে বানিয়েছি শয়তানদের জন্য ক্ষেপণাস্ত্র, আর তাদের শাস্তির জন্যে প্রস্তুত রেখেছি জ্বলন্ত আগুন (সায়ির)।
প্রভুর অস্বীকারকারী যারা- জাহান্নামের আযাব; নিকৃষ্ট সে গন্তব্য! {৬৭:৩-৬}
এই অনুচ্ছেদটিও মূলত প্রথম পর্যবেক্ষণের মতো। একটি শব্দের সঙ্গে পরের শব্দ, একটি বাক্যের সঙ্গে পরের বাক্য গভীরভাবে সংযুক্ত।
রব্বুল আলামিনের সৃষ্ট মহাকাশ নিখুঁত (fine-tuned)! মহাকাশের দৃশ্যমান অংশ দারুণভাবে সজ্জিত স্থান। এসবের মধ্যেই রয়েছে দুষ্টু জিনদের জন্য নিক্ষেপের ক্ষেপণাস্ত্র। আর এখানেই তিনি তৈরি করেছেন জলন্ত আগুন ও শাস্তির স্থান।
২টি পর্যবেক্ষণের শেষ আয়াত দুটি আগুনের আযাব থেকে মানুষকে সতর্ক হতে বলছে।
দুই আয়াতেই দেখা যাচ্ছে যে, মহাকাশে প্রদীপ, ক্ষেপণাস্ত্র এবং ‘জাহান্নামের জ্বলন্ত আগুন’ রয়েছে।
- মহাকাশে কী কী আছে?
মহাকাশে বিশাল শূন্যতায় নানা রকম পদার্থ ও প্রতি-পদার্থ রয়েছে। এসব বিষয়কে বিভিন্ন শ্রেণী বা ক্যাটাগরিতে ভাগ করা যায়। তবে, সার্বিক বিবেচনায় মহাশূন্যের এসব উপাদানকে চারটি শ্রেণীতে ভাগ করা যেতে পারে। যেমন-