আমলে সালেহ বা ভালো কাজ

কুরআনের দৃষ্টিতে আমলে সালেহ

পূর্ব ও পশ্চিম দিকে মুখ ফেরানোর মধ্যে কোনও কল্যাণ/সৎকাজ নেই; বরং সৎকাজ হলোমানুষ ঈমান আনবে এক আল্লাহর প্রতি, শেষ দিবসের প্রতি, ফেরেশতাদের প্রতি, আল্লাহর কিতাব ও নবীদের প্রতি; আর তাঁর ভালোবাসায় মাল-সম্পদ দান করবে আত্মীয়-স্বজন, এতিম, মিসকিনপথিক-পর্যটকদের, সাহায্যপ্রার্থীদের এবং মানুষকে দাসত্ব থেকে মুক্তির কাজে; আর সালাত কায়েম করবেযাকাত দেবে; তা ছাড়া প্রতিশ্রুতি দিলে তা পূর্ণ করবে; এবং অর্থসংকট, দুঃখ-কষ্ট ও সত্য-মিথ্যার সংগ্রামে সবর অবলম্বন করবে। মূলত এরাই সত্যবাদী ও মুত্তাকি। (বাকারা ১৭৭)

তোমরা আল্লাহর পথে ব্যয় করো এবং নিজেদের হাতে নিজেদেরকে হালাক হবার (ধ্বংসের) দিকে নিক্ষেপ করোনা। ভালো কাজ করো, যারা ভালো কাজ করে আল্লাহ তাদের ভালোবাসেন। (বাকারা ১৯৫)

তারা তোমার কাছে জানতে চায়, তারা কী ব্যয় করবে? তুমি বলো: তোমরা উত্তম যা কিছুই ব্যয় করবে, তা করো বাবা-মার জন্যেআত্মীয়-স্বজনের জন্যে এবং এতিম, মিসকিন ও পথিক-পর্যটকদের জন্যে। আর তোমরা জনকল্যাণে যে কাজই করোনা কেন, আল্লাহ সে সম্পর্কে অবহিত। (বাকারা ২১৫)

যারা আল্লাহ্‌র পথে তাদের অর্থ-সম্পদ ব্যয় করে, তারপর সে ব্যয়ের কথা বলে বেড়ায় না এবং এটা দিয়ে কারও মনেও কষ্ট দেয়না, তাদের পুরষ্কার রয়েছে তাদের প্রভুর কাছে। তাদের কোনো ভয়ও থাকবেনা এবং দুঃখ-বেদনাও থাকবেনা। (বাকারা ২৬২)

যারা ব্যয় করে নিজেদের সম্পদ রাতে ও দিনে, গোপনে ও প্রকাশ্যে; তাদের প্রতিদান রয়েছে তাদের প্রভুর কাছে। তাদের কোনো ভয়ও থাকবেনাদুঃখ-বেদনাও থাকবেনা। (বাকারা ২৭৪)

যারা ব্যয় করে সচ্ছল ও অসচ্ছল অবস্থায়, যারা রাগ সংবরণকারী এবং মানুষের প্রতি ক্ষমাশীলকোমল। আর আল্লাহ তো কল্যাণকামীদেরই ভালোবাসেন। (আলে ইমরান ১৩৪)

তোমাদের ভালোবাসার সম্পদ থেকে ব্যয় (দান) না করলে তোমরা কখনো পুণ্য লাভ করবেনা। আর তোমরা যা কিছু ব্যয় করো আল্লাহ সে বিষয়ে বিশেষভাবে অবহিত। (ইমরান ৯২)

আমাদের প্রভু! আমরা শুনেছি একজন আহবায়ককে আহ্বান করছেন ঈমানের দিকে- তোমরা ঈমান আনো তোমাদের প্রভুর প্রতি। (তাঁর আহবানে সাড়া দিয়ে) আমরা ঈমান এনেছি। আমাদের প্রভু! অতএব আপনি আমাদের ক্ষমা করুন, আমাদের সব পাপমুছে দিন আমাদের সব মন্দকর্ম ও ত্রুটি বিচ্যুতি, আর আমাদের ওফাত দান করুন পুণ্যবানদের সঙ্গে। (ইমরান ১৯৩)

আর পুণ্য ও তাকওয়ার কাজে একে অপরকে সহযোগিতা করো (মায়েদা ২)

আর তারা কম ও বেশি যা-ই ব্যয় করে এবং যে কোনো প্রান্তরই অতিক্রম করে, তা তাদের জন্যে পুণ্য হিসাবে লেখা হয়, যাতে করে তারা যা করে আল্লাহ্ তাদেরকে তার চাইতেও উত্তম পুরস্কার দিতে পারেন। (তওবা ১২১)

তোমাদের কারও মৃত্যু আসার আগেই তোমাদেরকে আমরা যে রিযিক দিয়েছি তা থেকে ব্যয় করো। তা না হলে মৃত্যু এলে বলবে- আমার প্রভু! আমাকে আরও কিছুকাল অবকাশ দিন, যাতে আমি দান করতে পারি এবং পুণ্যবান লোকদের অন্তরভুক্ত হতে পারি। (মুনাফিকুন ১০)

 

পবিত্র কুরআনের এসব আয়াতে সৎকাজ বা ভালো কাজের মৌলিক নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।

শুরুতেই (সুরা বাকারাতে) বলা হয়েছে এক আল্লাহর প্রতি বিশ্বাস করা এবং আখিরাত, ফেরেশতা, আসমানি কিতাব ও নবী-রসুলদের প্রতি বিশ্বাস করা হলো সৎকাজ।

এ ছাড়া, আত্মীয়-স্বজন, এতিম, মিসকিনপথিক-পর্যটক, সাহায্যপ্রার্থী অর্থাৎ বিপদগ্রস্ত মানুষ এবং মানুষকে দাসত্ব থেকে মুক্তির জন্য অর্থ ব্যয় করা সৎকাজ।

সেই সঙ্গে সালাত কায়েম করা, যাকাত দেওয়া; প্রতিশ্রুতি রক্ষা করা হলো সৎকাজ।

জীবন চলার পথে অর্থসংকট, দুঃখ-কষ্ট ও সত্য-মিথ্যার সংগ্রামে ধৈর্য ধারণ করা–অর্থাৎ সততার পথ অবলম্বন করা হলো সৎকাজ।

সচ্ছল ও অসচ্ছল অবস্থায়, দিনে-রাতে বা প্রকাশ্যে-গোপনে আল্লাহ্‌র পথে, বাবা-মার জন্য, আত্মীয়-স্বজনের জন্য, সাহায্যপ্রার্থীদের জন্য অর্থ ব্যয় করা হলো সৎকাজ।

এমনকি জনকল্যাণকর যে কোনও কাজে (কম/বেশি) অর্থ-সময়-মেধা ব্যয় করাও কুরআনের নির্দেশনা অনুযায়ী সৎকাজ।

এসব অসংখ্য সৎকাজের ক্ষেত্রে একে অপরকে সহযোগিতা করা; বিভিন্ন পরিস্থিতিতে রাগ/ক্রোধ সংবরণ করা এবং মানুষকে ক্ষমা করা ও কোমল আচরণ করা হলো সৎকাজ।

মহান আল্লাহ্‌র প্রতি ঈমান রেখে এমনতর অসংখ্য সৎকাজে যারা জড়িত থাকবেতাদের জন্য জান্নাতের নিশ্চিত গ্যারান্টি দিয়েছেন পরাক্রমশালী আল্লাহ!

ধর্ম-বর্ণ-গোত্র-জাত-পাত নির্বিশেষে মানুষের কল্যাণে কাজ করাই হলো আমলে সালেহ্‌ সৎকাজ। এসব গুণাবলী অর্জন করেই একদা মুসলিমরা হয়েছিল শ্রেষ্ঠ উম্মাতযা আমাদের কাছে আজ হারানো সম্পদ ও লুণ্ঠিত গৌরব!

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *