জাহান্নামে যাওয়ার কারণ

জাহান্নামে যাওয়ার কারণ

পবিত্র কুরআনে উল্লেখিত কবিরা গুনাহ করলে এবং তার জন্য তওবা/অনুশোচনা/ক্ষমা প্রার্থনা না-করলে জাহান্নামের ঘোষণা দেওয়া হয়েছে। তাই, সর্বাগ্রে কবিরা গুনাহ থেকে বাঁচার চেষ্টা করতে হবে। আর কবিরা গুনাহ থেকে বেঁচে থাকতে পারলে আল্লাহ রব্বুল আলামিন আমাদের অন্যান্য গুনাহ মাফ করে কিয়ামতের দিন উদ্ধার করবেনসে কথা বলা হয়েছে। (নিসা ৩১)

সুরা নিসার ০২, ৪৮, ৯৩ ও ১৪৫ নং আয়াতে সুস্পষ্টভাবে ৪টি কবিরা গুনাহ্‌র কথা উল্লেখ করা হয়েছে। সেগুলো হলো- 

  • ১.মহান আল্লাহ্‌র সঙ্গে শরিক করা বা শিরক্‌ করা
  • ২.স্বেচ্ছায় কোনও মুসলিমকে হত্যা করা
  • ৩.(ইসলামের সঙ্গে) মুনাফেকি আচরণ করা
  • ৪.এতিমদের সম্পদ আত্মসাৎ করা
এছাড়া, সুরা হুমাযা (১-৫) থেকে জানা যায় আরেকটি কবিরা গুনাহ।
      
৫. মানুষের সামনে ও পেছনে নিন্দা ও বিদ্রুপ করা।

অতএব, এসব সুস্পষ্ট কবিরা গুনাহ সম্পর্কে আমাদের সর্বোচ্চ সতর্ক থাকতে হবে।

এবার আমরা, জাহান্নামিদের কথোপকথন শুনবো। জাহান্নামের অধিবাসীরা নিজেদের মধ্যে, ফেরেশতাগণের সঙ্গে অথবা জান্নাতবাসীর সঙ্গে কী কী কথা বলবে এবং সেখান থেকে আমাদের জানার কী কী আছেতা পবিত্র কুরআনেই উল্লেখ করা হয়েছে।

 কথোপকথন ১. সুরা আল মুদ্দাসির ৪২-৪৯

তোমাদেরকে কিসে সাকার – এ নিক্ষেপ করিয়াছে?

আমরা মুসুল্লি ছিলাম না,

আমরা অভাবগ্রস্তকে আহার্য দান করিতাম না,

এবং আমরা বিভ্রান্ত আলোচনাকারীদের সঙ্গে বিভ্রান্তিমূলক
আলোচনায় নিমগ্ন থাকিতাম।

আমরা কর্মফল দিবস অস্বীকার করিতাম,

আমাদের নিকট মৃত্যুর আগমন পর্যন্ত।

ফলে সুপারিশকারীদের সুপারিশ উহাদের কোন কাজে
আসিবে না।

কথোপকথন ২. সুরা মুলক ১০:

তাদেরকে যখন তাতে নিক্ষেপ করা
হবে
, তারা তখন শুনতে পাবে তার উত্থান পতনের বিকট
শব্দ। যেনো সে (জাহান্নাম) ক্রোধে ফেটে পড়বে। যখনই তাতে নিক্ষেপ করা হবে কোনো দলকে
, তখনই তার রক্ষীরা তাদের প্রশ্ন করবে: তোমাদের
কাছে কি আসেনি কোনো সতর্ককারী
?

তারা বলবে: হ্যাঁ, আমাদের কাছে একজন সতর্ককারী এসেছিল, কিন্তু আমরা প্রত্যাখ্যান করেছিলাম তাকে।
আমরা বলেছিলাম: আল্লাহ কিছুই নাযিল করেননি। তোমরা মহাভুল পথে আছো।

তারা আরো বলবে: আমরা যদি শুনতাম এবং আকল খাটাতাম, তাহলে আজ আমরা সায়ীরের (জাহান্নামের) অধিবাসী
হতাম না।

এভাবেই তারা স্বীকার করবে তাদের
অপরাধ। ধ্বংস সায়ীরের অধিবাসীদের জন্যে।

কথোপকথন ৩. সাফ্‌ফাত ২৮,২৯

তারা (তাদের ক্ষমতাশালীদেরকে) বলবে, ‘‘তোমরা তো তোমাদের ক্ষমতা নিয়ে
আমাদের কাছে আসতে।

তারা (অর্থাৎ ক্ষমতার অধিকারীরা) উত্তর দিবে- ‘‘তোমরা তো (বিচার দিবসের প্রতি)
বিশ্বাসীই ছিলে না

কথোপকথন ৪. আহযাব ৬৪-৬৭

আল্লাহ্ কাফিরদেরকে অভিশপ্ত করিয়াছেন এবং তাহাদের জন্য প্রস্তুত
রাখিয়াছেন জ্বলন্ত অগ্নি।সেখানে উহারা স্থায়ী হইবে এবং উহারা কোন অভিভাবক ও
সাহায্যকারী পাইবে না।

যেদিন উহাদের মুখমণ্ডল অগ্নিতে উলটপালট করা হইবে সেদিন উহারা বলিবে, হায়, আমরা যদি আল্লাহকে মানিতাম ও রাসূলকে মানিতাম!

তাহারা আরও বলিবে, হে আমাদের প্রতিপালক ! আমরা আমাদের নেতা ও প্রভাবশালীদের আনুগত্য করিয়াছিলাম এবং উহারা আমাদেরকে পথভ্রষ্ট করিয়াছিল;

কথোপকথন ৫. হাদীদ ১৪

মুনাফিকরা মুমিনদেরকে ডেকে বলবে, আমরা কি তোমাদের সাথে ছিলাম না? তারা বলবে হ্যাঁ, কিন্তু তোমরা নিজেরাই নিজদেরকে
বিপদগ্রস্ত করেছ। আর
তোমরা অপেক্ষা করেছিলে এবং সন্দেহ
পোষণ করেছিলে এবং আকাঙ্ক্ষা তোমাদেরকে প্রতারিত করেছিল
, অবশেষে আল্লাহর নির্দেশ এসে গেল।
আর মহা প্রতারক তোমাদেরকে আল্লাহ সম্পর্কে প্রতারিত করেছিল।

কথোপকথন ৬. ইবরাহিম ২২

যখন বিচারকার্য সম্পন্ন হইবে তখন শয়তান বলিবে, আল্লাহ্‌ তো তোমাদেরকে প্রতিশ্রুতি দিয়াছিলেন সত্য প্রতিশ্রুতি, আমিও তোমাদেরকে প্রতিশ্রুতি
দিয়াছিলাম
, কিন্তু আমি তোমাদেরকে প্রদত্ত প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ করিয়াছি। আমার তো
তোমাদের উপর কোন আধিপত্য ছিল না
, আমি কেবল তোমাদেরকে আহ্বান
করিয়াছিলাম এবং তোমরা আমার আহ্বানে সাড়া দিয়াছিলে।
সুতরাং তোমরা আমার প্রতি দোষারোপ করিও না, তোমরা নিজেদেরই প্রতি দোষারোপ কর।
আমি তোমাদের উদ্ধারে সাহায্য করিতে সক্ষম নই এবং তোমরাও আমার উদ্ধারে সাহায্য
করিতে সক্ষম নও। তোমরা যে পূর্বে
আমাকে আল্লাহ্‌র
শরীক করিয়াছিলে
আমি তাহা অস্বীকার করিতেছি, জালিমদের জন্য তো মর্মন্তুদ
শাস্তি রহিয়াছে। 

এ ছাড়া, আল্লাহ বলেছেন

বাকারা ৩৯: আর যারা কুফরি করেছে এবং আমার আয়াতসমূহকে অস্বীকার করেছে, তারাই আগুনের অধিবাসী। তারা সেখানে স্থায়ী হবে।

হা-ক্কাহ ৩০-৩৪: তাকে ধর এবং গলায় বেড়ী পরিয়ে দাও। তারপর জাহান্নামে নিক্ষেপ কর। অতঃপর সত্তর হাত শৃঙ্খল দ্বারা তাকে শৃঙ্খলিত কর। কেননা সে মহান আল্লাহতে বিশ্বাসী ছিল না আর ইয়াতিমদের খাদ্যদানে উৎসাহিত করত না

আনআম ৩০: হায়! তুমি যদি দেখতে যখন তাদের প্রভুর সামনে দণ্ডায়মান করা হবে। তখন আল্লাহ জিজ্ঞেস করবেন, কিয়ামত কি সত্য নয়? উত্তরে (জাহান্নামীরা) বলবে, হে আমাদের প্রভু! আমরা আমাদের প্রতিপালকের শপথ করে বলছি, এটা বাস্তব সত্য বিষয়। তখন আল্লাহ বলবেন, তবে তোমরা এটাকে অস্বীকার করার ফলস্বরূপ শাস্তি আস্বাদন কর।

এসব আয়াতে জাহান্নামীদের বিবৃতি থেকে জাহান্নাম /আগুন /দোজখ /শাস্তির মধ্যে নিপতিত হবার যেসব কারণ জানা যায়, তা হলো-

 ১. মৃত্যুর সময় পর্যন্ত কেউ যদি মুসল্লিদের অন্তর্ভুক্ত না হয়, অভাবগ্রস্তকে/ ক্ষুধার্তকে খাবার না দেয়, বিভ্রান্তিমূলক/ বেহুদা কথাবার্তায় ব্যস্ত থাকে এবং কর্মফল দিবসকে অস্বীকার করে।

২. কুরআনের সতর্কতা না-শোনা এবং যুক্তি-বুদ্ধি দিয়ে না-বোঝা

৩. অবিশ্বাস করা, নবী/ রসুলদের মিথ্যাবাদী বলা এবং আল্লাহর আয়াতকে মিথ্যা বলা বা অস্বীকার করা।

৪. এতিমদের খাবারের ব্যবস্থা করা/ উৎসাহ না দেওয়া।

৫. এবং আল্লাহর আয়াতগুলো অস্বীকার করা।

৬. মুমিন বা বিশ্বাসী না হওয়া।

৭. আল্লাহ ও তাঁর রসুলকে মান্য না করা এবং সমাজ/ দেশের নেতা এবং বিভিন্ন পর্যায়ের প্রভাবশালীদের আনুগত্য করা।

                     –Quran Research Center- QRC  

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *