নাসখ মানসুখ আসলে কী?
কুর'আন রিসার্চ সেন্টার- কিউআরসি
‘মানসুখ’ শব্দটির অর্থ ‘রহিত করা’। কুর’আনের কোনও আয়াত রহিত করা হলে তাকে মানসুখ বলে। আর, যা রহিত করা হলো, তার স্থানে অন্য কিছু স্থাপন করাকে নাসখ বলে (نسخ উচ্চারণ না-স-খ; Naskh; Abrogation)।
দাবি করা হয়, মহান আল্লাহ কুর’আনে আয়াত বা হুকুম নাযিল করেছেন এবং পরবর্তীতে তিনি তা রহিত করেছেন (মানসুখ) এবং সেই স্থানে নতুন আয়াত বা হুকুম প্রতিস্থাপন করেছেন (নাসখ)। এমনকি ‘তিন ধরনের নাসখের’ দাবিও করা হয়। যেমন-
১. Naskh al-hukm dun al-tilawa (শব্দ পরিবর্তন না-করে হুকুম-বিধান প্রতিস্থাপন)
২. Naskh al-hukm wa al-tilawa (কুর’আনের শব্দ ও হুকুম পরিবর্তন করা) এবং
৩. Naskh al-tilawa dun al-hukm (হুকুম বহাল রেখে শব্দ প্রতিস্থাপন করা)
এ অবস্থায় কুর’আন বুঝতে হলে অবশ্যই নাসখ-এর ওপর গভীর দক্ষতা থাকতে হবে—এই হলো আলেমদের দাবি।
এই অদ্ভুত দাবি কতটুকু সত্য- তা বাস্তব অবস্থা, সাধারণ যুক্তিবোধ ও মহাগ্রন্থ আল-কুর’আন দিয়ে যাচাই করা হবে। অবশ্যই আমাদের যাচাই ও সিদ্ধান্ত গ্রহণের মানদণ্ড একমাত্র আল-কুর’আন। বাস্তব পরিস্থিতি ও সাধারণ যৌক্তিক চিন্তা শুধু ‘রেফারেন্স’ মাত্র।
১. বাস্তব অবস্থা
জানা যায়, নাসখ-মানসুখের এই ধারণাটি চালু হয়েছিল ৪০০ হিজরি বা ১০০০ সালের শেষ দিকে। তৎকালীন কিছু ব্যক্তিবর্গের নামও জানা যায়- যারা এই দাবি উত্থাপন করেন। যেমন- আহমেদ বিন ইশাক আল দিনারি (মৃত ৩১৮ হিজরি), মোহাম্মদ বিন বাহার আল-আসবাহানি (মৃত ৩২২ হিজরি), হেবাতাল্লাহ বিন সালামাহ (মৃত. ৪১০ হিজরি), মুহাম্মাদ মুসা আল-হাজমি (মৃ. ৫৪৮ হিজরি)।
তারা সে সময়ের সামাজিক ধর্মীয় নেতা বা ‘আলেম-ওলামা’। তারাই মূলত প্রথম দাবি করেন, মহাগ্রন্থের কিছু আয়াত ও বিধান বাতিল বা প্রতিস্থাপিত হয়েছে কুর’আনের অন্যান্য আয়াতের মাধ্যমে।
এটাই ছিল শুরু।
তারপর দিন-বছর-যুগ-শতাব্দী গড়াতে থাকে। প্রোথিত বীজ মহীরুহ বৃক্ষের মতো বেড়ে ওঠে। ইসলামিক স্কলার বলে আমরা যাদের নাম জানি, তাদের অনেকেই সুনির্দিষ্ট করে ঘোষণা করেন, কোন কোন আয়াত রহিত হয়েছে এবং কোন কোন আয়াত দিয়ে তা প্রতিস্থাপন করা হয়েছে! বাস্তবতা হলো- তাদের একজনের সিদ্ধান্তের সঙ্গে অন্যজনের দাবির মিল নেই। তারা প্রত্যেকেই একে-অপরের চেয়ে ভিন্নমত পোষণ করেন। তবে, শুধু একমত যে— মহান আল্লাহ কুর’আনের আয়াত রহিত করেছেন এবং নতুন আয়াত নাযিল করেছেন; এবং তাদের কাছে মহান আল্লাহ কোনও ‘ওহি’ পাঠান নি, তাই তারা একমত হতে পারছেন না; কিন্তু সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেছেন!!
এ দুরবস্থাকে কবির ভাষায় বলা যায়-
কী ভয়াবহ অবস্থা!
দেখুন, তাঁরা কি সিদ্ধান্তে এলেন।
আল-জুহরি দাবি করেন- ৪২টি আয়াত রহিত বা খারিজ করা হয়েছে (মৃত ১৯৩ হিজরি)।
আল-নাহহাজ বলেন- ১৩৮টির নাসখ আয়াত রয়েছে (মৃত ৩৩৮ হিজরি)।
আবু আল কাসিম ইবনে সালামাহ ২৩৮টি নাসখ বা প্রতিস্থাপিত আয়াত সুনির্দিষ্ট করে বলে দিয়েছেন (মৃত ১৬৭ হিজরি)।
আল-ফার্সি ২৪৮টি আয়াতকে বাতিল করে দিয়েছেন।
শিয়া আলেম আল খুইয়ির দাবি- ১টি আয়াত নাসখ মানসুখ হয়েছে।
জালালুদ্দীন আল সুয়ুতী মাত্র ২১টি আয়াত রহিত, প্রতিস্থাপন বা নাসখ হয়েছে বলে দাবি করেন (মৃত ৯১১ হিজরি)।
শাহ ওয়ালীউল্লাহ দেহলভী বলেন- পাঁচটি আয়াত নাসখ হয়েছে (মৃত ১১৭৬ হিজরি)!
ইবনে আল-আতায়িকি বলেন- ২৩১টি আয়াত নাসখ হয়েছে, তবে ২৬টি আয়াতের ব্যাপারে তার ঘোর সন্দেহ আছে (মৃত ৭০৮ হিজরি)!
এই তালিকায় এরকম আরও ‘পণ্ডিত’ আছেন। মনে রাখতে হবে-
- কুর’আন ছাড়া- শিয়া-সুন্নি যে বিষয়ে একমত; সেখানেই লুকিয়ে ঘোরতর বিপদ!
অর্থাৎ, এইসব ‘সুন্নি, শিয়া, হানাফি, হাম্বলি ইত্যাদি মাজহাবের আলেমগণ’ উল্লেখিত পরিমাণ আয়াত ‘কুফর’ বা অস্বীকার করলেন। তাদের পরস্পরের মধ্যে কোনও ঐকমত্য নেই। এমনকি নিজের ঘোষিত ‘রহিত-প্রতিস্থাপিত’ দাবি নিয়ে নিজেই ঘোর সন্দেহে আছেন। তারপরও ঘোষণা করে দিলেন- যাতে সাধারণ মানুষ নিঃসন্দেহে তাদের কথা মেনে নেয়! উল্লেখ্য, তাদের অনেকেই কুর’আনের বিখ্যাত তাফসির-কারক। বিভিন্ন তাফসির গ্রন্থ তাদের বরাত দিয়েই উল্লেখ করা হয়েছে। যারা তাফসির পড়েন, তাঁরা এসব নাম দেখে নিশ্চয়ই স্মরণ করতে পারছেন।
২. সাধারণ যুক্তি
মহাগ্রন্থ আল-কুর’আন পৃথিবীর শেষ দিন পর্যন্ত সব যুগের সব পর্যায়ের মানুষের জন্য প্রয়োজনীয় সব তথ্য বিস্তারিতভাবে দিয়েছে। এখন কুর’আনের কোনও আয়াতের অর্থ যদি বোঝা না যায়—সেটা ব্যক্তির সমস্যা বা মানব-মগজের সীমাবদ্ধতা। এজন্য কুর’আনের আয়াতকে বাতিল, মানসুখ বা রহিত করতে হবে? এটা কি চরম ঔদ্ধত্বপূর্ণ আচরণ নয়? মানুষের জ্ঞান-বুদ্ধির সীমাবদ্ধতা আছে। কিন্তু মহান রব্বুল আলামিনের ঈলম, জ্ঞান, প্রজ্ঞার কোনও সীমাবদ্ধতা আছে কি? তাঁর প্রজ্ঞা, রহমত ও দূরদর্শীতা সবই অসীম। এই অসীমেরও নেই কোনও সীমানা। এই বিশালত্বের ব্যাপ্তি ধারণ করা, চিন্তা করা কিংবা ব্যাখ্যা করার সাধ্যও মানুষের নাই!
তা ছাড়া, মহাজগতের প্রভু কুর’আনে আগে কিছু আয়াত নাযিল করেছেন, পরে হঠাৎ দেখলেন যে, কাজটা ঠিক হয়নি (!), তখন তিনি আগের হুকুম রদ করে নতুন করে বিধান দিলেন!—এমন ধারণা কি মহান আল্লাহর জন্য প্রযোজ্য??? নাঊযুবিল্লাহ। ‘আগে-পরে, আস্তে-ধীরে, দেখে-শুনে’…. সময়ের এমন ধারণা মানুষের জন্যই প্রযোজ্য, মহান রব্বুল আলামিনের জন্য নয়। তিনিই সময়ের স্রষ্টা। তিনিই আমাদের সময় বেঁধে দিয়েছেন। সময়ের সুতোয় বাঁধা আমাদের জগতের (ডাইমেনশনের) ঊর্ধ্বে থেকে তিনি রাজত্ব করেন। “আগে ঠিক ছিল- পরে ভুল হলো”—এমন কোনও ধারণাই তাঁর জন্য খাটে না। এগুলো মানবীয় দুর্বলতা বা বৈশিষ্ট্য- খোদায়ী নয়।
অথচ, এমন দুর্বলতা দিয়েই আল্লাহ এবং কুর’আনের আয়াতগুলোকে বিচার করে শত শত আয়াত নাসখ-মানসুখ ঘোষণা করে দিলেন ‘আলেম ওলামারা’।
এ যেন নিছক নিজের সুবিধার জন্য কুর’আনের আয়াত অস্বীকারের এক নতুন পদ্ধতি মাত্র!
আবার দেখুন, কুর’আনের আয়াত অস্বীকারকারী ওইসব আলেম এবং তাদের অনুসারীরা দলে-উপদলে বিভ্ক্ত। তারা কেউ সুনির্দিষ্ট আয়াত অথবা আয়াত-সংখ্যার ব্যাপারে একমত না। তবে, সবাই ‘আল্লাহর আয়াত অস্বীকারের ব্যাপারে একমত’! এটা কিসের আলামত ?
কোনও ধরনের যুক্তি দিয়েই নাসখ-মানসুখের বৈধতা প্রমাণ করা যায় না। বরং, প্রমাণিত হয় যে—যারা মূলত নিজেদেরকে ‘কুর’আন-হাদিসের জ্ঞানে’ বলীয়ান বলে দাবি করে, তারা মূলত কুর’আন-বিরোধী, রসুল-বিরোধী ও আল্লাহ-বিরোধী পক্ষ! তারা আলেম নয়; বরং, জালেম। কাফের-মুশরিকদের চেয়ে বড় জালেম আর কে আছে? অতএব তাদের নানা মুখরোচক ফাঁদে পা দেওয়া থেকে সাবধান!
৩. কুর’আন দিয়ে যাচাই
এবার কুর’আনের আয়াত দিয়ে নাসখ-মানসুখের ধারণা যাচাই করা যাক।
প্রথমেই আমরা কুর’আনের দু’টি আয়াত স্মরণ করি। যেখানে মহান রব্বুল আলামিন সুস্পষ্ট মৌলিক নীতি ঘোষণা করেছেন।
- …তবে কি তোমরা কিতাবের কিছু অংশের প্রতি বিশ্বাস রাখো আর কিছু অংশ অস্বীকার করো? তোমাদের মধ্যে যারাই এটি করে, তাদের প্রতিদান এ ছাড়া আর কিছুই নয় যে- দুনিয়ার জীবনে তাদের গ্রাস করবে হীনতা-লাঞ্ছনা-গঞ্জনা, আর কিয়ামতের দিন তাদের নিক্ষেপ করা হবে কঠিনতম আযাবে; আল্লাহ মোটেও গাফিল নন তোমাদের আমলের ব্যাপারে। {২:৮৫}
- এবং নিশ্চয়ই আমি তোমার প্রতি স্পষ্ট আয়াতসমূহ নাযিল করেছি; ফাসিকরা ছাড়া কেউ তা অস্বীকার করে না। {২:৯৯}
অর্থাৎ, কুর’আনের আয়াত অস্বীকার করলেই ফাসিক (মিথ্যুক-অবাধ্য) হয়ে যেতে হবে।
কুর’আনের যে দু’টি আয়াত উল্লেখ করে নাসখ-মানসুখের দাবি করা হয়, সে দুটি আয়াত হলো-
(ক)
- আমি কোনো ‘আয়াত’ রহিত করলে অথবা বিস্মৃত করিয়ে দিলে তদাপেক্ষা উত্তম অথবা তার সমপর্যায়ের ‘আয়াত’ আনি; তুমি কি জান না- আল্লাহ সব কিছুর উপর শক্তিমান? {২:১০৬}
(খ)
- এবং যখন আমি এক ‘আয়াতের’ স্থলে অন্য ‘আয়াত’ উপস্থিত করি, আর আল্লাহ যা অবতীর্ণ করেন তিনি সে সম্পর্কে ভালই জানেন; তখন তারা বলে আপনি তো মনগড়া উক্তি করেন; বরং তাদের অধিকাংশ লোকই জানে না। {১৬:১০১}
ক-এর বিশ্লেষণ:
সুরা বাকারার ৯৯ নং আয়াত থেকে পড়া শুরু করুন। দেখা যায়, এখানে আল্লাহ রব্বুল আলামিন তাঁর আয়াত প্রত্যাখ্যানকারীদের ফাসিকুন (মিথ্যাবাদী-অবাধ্য) বলে তিরস্কার করেছেন। আর স্বয়ং মহাপ্রভুই কিনা তাঁর আয়াত প্রকাশ করে- আবার রহিত করে দেবেন! কী আশ্চর্য দাবি!
যাই হোক, এরপর ধারাবাহিকভাবে আয়াতগুলো পড়লে দেখা যায়, নবী সুলাইমান আ.এর সময় ব্যাবিলন শহরে হারুত, মারুত নামে দুই ফেরেশতা পাঠানো, নবী সুলাইমান ও হারুত, মারুতের কাছে আল্লাহর বাণী থাকা এবং জিন-শয়তান ও তৎকালীন মানুষদের সেসব আয়াতের (নিদর্শনের) অপব্যবহারের ঘটনা ও শিক্ষা বর্ণনা করা হয়েছে। পাশাপাশি, মু’মিনদের জন্য নির্দেশ এবং আহলে কিতাবের মধ্যে (ইহুদি, খ্রিষ্টান) কাফির, মুশরিকেদের অন্তরের রোগ প্রকাশ করে দিয়েছেন আল্লাহ। তারই ধারাবাহিকতায় আল্লাহ বলছেন- যা আমরা নিদর্শনের (ءَايَةٍ) মধ্যে নানসাখ করি (বিলোপ করি) অথবা নুনসিহা (ভুলিয়ে দেই) আমরা তার চেয়েও ভালো কিছু অথবা সমপর্যায়ের কিছু আনি…..
অর্থাৎ, আল্লাহ এই আয়াতের ওপরে উল্লেখিত সোলাইমান আ.এর আমলের নিদর্শনসমূহ; অর্থাৎ জিন-শয়তান, হারুত, মারুত, জাদুবিদ্যা বা কৌশল ইত্যাদি নিদর্শন বিলোপ বা রহিত করার কথা বলছেন বলেই বোঝা যায়। কারণ, ফেরেশতা ও জিন- তারা তো মারা যায়নি। তবে তাদের ব্যাবিলন শহর থেকে বিলোপ করা হয়েছে- উঠিয়ে নেওয়া হয়েছে। নবী সোলাইমানের ঐতিহাসিক জাঁকজমকপূর্ণ ব্যাবিলন নগরীও আর নেই; আছে তার ধ্বংসাবশেষ।
আল্লাহ বলছেন- তিনি কোনও আয়াত বা নিদর্শন নানসাখ (نَنسَخۡ বিলোপ abrogate) করেন বা ভুলিয়ে দেন, তখন তিনি আরও ভালো কিছু বা সমপর্যায়ের কিছু আনেন। অর্থাৎ, অতীতের নির্দশন বা প্রাচীন কিতাবের চেয়েও ভালো বা সমতুল্য কিছু আনেন। রব্বুল আলামিন কিছু বিলোপ করলেও দেখা যাবে না, আবার ভুলিয়ে দিলে তা কারও মনেই থাকবে না। তাহলে, আমাদের নাসখ-মানসুখের দাবিদাররা কীভাবে, কোথায়, কী পেলো? আল্লাহ জানিয়েছেন বলেই পূর্বের নিদর্শন বা আয়াতগুলো জানা গেছে।
আল-কুর’আনে ‘আয়াত’ মানে শুধু কুর’আনের ‘আয়াত’ বা Verses নয়; পাশাপাশি নিদর্শন বা Sign-ও বোঝানো হয়েছে। দেখুন- ২:৭৩; ৬:৯৭; ২৫:৩৭, ১৭:১০১; ১৯:১০; ৪৩:৪৬-৪৮ এবং এরকম অসংখ্য আয়াতে ‘আয়াত’ মানে নিদর্শন। আর যখন ‘কুর’আনের আয়াত’ বা Verses বোঝানো হয়েছে- তখন তার সঙ্গে কিতাব/ কুর’আন/ নিয়ম-কানুন উল্লেখ করা হয়েছে। যেমন- ২:১৮৭, ২২১, ২৪২; ৩:১৬৪; ৩৮:২৯ এবং এরকম অসংখ্য আয়াত।
অর্থাৎ, ক (২:১০৬) বাক্যে ‘আয়াত’ মানে ‘নিদর্শন’।
খ-এর বিশ্লেষণ:
দ্বিতীয় আয়াতের প্রথম অংশটুকু পড়েই যদি নাসখ-মানসুখের তত্ত্ব দাঁড়িয়ে যায়, তাহলে শেষ অংশের কী হবে? একটা সম্পূর্ণ আয়াতের মধ্যে থেকে এক টুকরো অংশ ছিঁড়ে বের করে নতুন অর্থ-মতাদর্শ দাঁড় করানো কি ভালো মানুষের কাজ হতে পারে? যেখানে ওই একই আয়াতে লেখা রয়েছে- তখন তারা বলে আপনি তো মনগড়া উক্তি করেন; বরং তাদের অধিকাংশ লোকই জানে না {১৬:১০১}।
অর্থাৎ, যারা রসুল সা.এর বিরুদ্ধে এমন অভিযোগ করে, তারা তো মুসলিম নয়, বরং আহলে কিতাব বা ইহুদি ও খ্রিষ্টান! তারা প্রিয় নবীর কুর’আনের বানীর বিরুদ্ধে অভিযোগ করছে। এ অবস্থায় নাসখ-মানসুখের দাবি তুলে আমরাও কি পথভ্রষ্টদের মতো একই অভিযোগ করতে পারি?
এই সুরার আগের দুটি আয়াতে আল্লাহ বলছেন, যেসব লোক আল্লাহকে বিশ্বাস করে এবং আল্লাহর ওপর ভরসা রাখে, শয়তান তাদের ওপর প্রভাব ফেলতে পারে না। জিন-শয়তান শুধুমাত্র তাদের ওপরই প্রভাব ফেলে- যারা তাকে বন্ধু মনে করে, আর যারা মুশরিক। পরের আয়াতটিই শুরু হয়েছে সংযুক্তকারী অব্যয়পদ- ‘এবং’ দিয়ে। বলা হচ্ছে- শয়তান দ্বারা প্রভাবিত এসব লোক আল্লাহর আয়াতের প্রতিস্থাপন (بَدَّلۡنَآ substitute) নিয়ে রসুলুল্লাহর বিরুদ্ধে আয়াত বানানোর অভিযোগ করে। তারা আহলে কিতাব বা ইহুদি ও খ্রিষ্টান। তাদের কাছে তখন তাওরাত ও বাইবেলের বিকৃত সংস্করণ ছিল; যাত আল্লাহর বানীও ছিল। তারা রসুলকে এবং কুর’আনকে বিশ্বাস করে না। রসুলের কাছে নাযিল হওয়া কুর’আনের আয়াত- তাদের কাছে থাকা ‘আল্লাহর আয়াত’ (তাওরাত, বাইবেল) থেকে ভিন্ন। তাই তারা রসুলুল্লাহর বিরুদ্ধে অভিযোগ করছে। মূলত, তারা আয়াত অস্বীকারকারী ও মুশরিক। একই আয়াতে আল্লাহ বলছেন- আল্লাহ খুব ভালো করেই জানেন তিনি কী নাযিল করেছেন (وَاللَّهُ أَعْلَمُ بِمَا يُنَزِّلُ)।
এই আয়াত ছাড়া অন্য আরও আয়াতে আল্লাহ জানিয়েছেন যে, আল-কুর‘আনে পূর্বের রসুলগণ ও তাদের অনুসারীদের ওপর নাযিলকৃত কিছু বিধান তিনি পরিবর্তন করে দিয়েছেন (এটা তিনি করতেই পারেন!)। যেমন, তিনি রসুল নবী মুসা আ.এর অনুসারীদের শাস্তিমূলক কিছু বিধান দিয়েছিলেন। আল-কুর‘আনে নাযিল করা আয়াতে সেসব শাস্তি থেকে তাদের (ইহুদিদের) মুক্তি দিয়েছেন এবং সঠিক পথে আসার সুযোগ করে দিয়েছেন।
- আমরা ইহুদিদের জন্যে নখরধারী সব পশুই হারাম করে দিয়েছিলাম। গরু এবং ছাগলের চর্বিও তাদের জন্যে হারাম করেছিলাম, তবে পিঠের, অন্ত্রের কিংবা হাড়ের সাথের চর্বি ছাড়া। তাদের অবাধ্যতার কারণে আমরা তাদের এই শাস্তি দিয়েছিলাম। অবশ্যই আমরা সত্যবাদী। তারপরও যদি তারা তোমাকে প্রত্যাখ্যান করে, তুমি বলো: তোমাদের প্রভু অসীম দয়ার মালিক এবং অপরাধী লোকদের উপর থেকে তাঁর শাস্তি রদ করা হয়না। {৬:১৪৬,১৪৭} এ ছাড়া দেখুন {৭:১৫৭}।
এটা হলো মূলত আহলে কিতাবদের জন্য- তাদের কিতাবের আয়াতের প্রতিস্থাপন— মুসলিমদের কুর’আনের নয়।
এসব ব্যাখ্যা বিশ্লেষণ থেকে নিশ্চিত যে- মহাগ্রন্থ আল-কুর’আনের কোনও আয়াত রহিত, বাতিল, নাসখ-মনসুখ করা হয় নি। প্রতিটি আয়াত জীবন্ত, শিক্ষামূলক এবং মানুষের জন্য অতীব প্রয়োজনীয়। আয়াত অস্বীকার করে কুফরি করার মতো বিপজ্জনক কাজ থেকে দূর থাকা জাগতিক ও পরজগতের কল্যাণ নিশ্চিত করবে ইনশা’আল্লাহ।
সালাম নিবেন
গরু এবং ছাগলের চর্বি খাওয়া হাদু শ্রেণীর জন্য হারাম।
হাদু অর্থ কোনো অবস্থাতেই ইহুদী নয়।
হাদু অর্থ হেদায়েতপ্রাপ্ত।
সালাম।
এটা যদিও প্রচলিত অনুবাদ, প্রচুর ভুলত্রুটি আছে। তা ধীরগতিতে সংশোধনের কাজ চলছে।
হাদু সংক্রান্ত অন্যান্য আয়াতগুলো দেখুন। ২:৬২, ৫:৬৯ এর ক্ষেত্রে কি বলবেন? হাদু অর্থ কোনো অবস্থাতেই হেদায়েতপ্রাপ্ত করা যাচ্ছে না। যাচাই করে দেখুন।
তা ছাড়া ২:২১১তেই বা কি বলবেন? হুদান-রা নাসারাদের সঙ্গেই জান্নাতে যাবার ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জের মুখে পড়ল। অর্থাৎ, হেদায়েতপ্রাপ্ত বলার সুযোগ নাই।
ধন্যবাদ।
কোন ধরনের চর্বী বোঝানো হইছে একটু বিস্তারিত বলবেন আর রেফারেন্স
জাজাআকাল্লাহ
আসসালামু আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহ। আপনি উক্ত বিষয়ে যে আলেমদের নাম গুলো উল্লেখ করেছেন আপনি তার রেফারেন্স দিতে পারবেন কি?
তাদের লেখা বইয়ে এসব তথ্য আছে। সময় পেলে এখানে রেফারেন্স উল্লেখ করব।