আলিফ লাম মিম ⁉️ রহস্যের উদঘাটন
কুর'আন রিসার্চ সেন্টার- কিউআরসি
আলিফ-লাম-মিম (الٓمٓ)
মূলত একটি পাঠ বা সুরা বা একটি অধ্যায়ের শিরোনাম (Title)। এই
দাবির জবাব সুরাগুলোতেই বিদ্যমান।
প্রথমত, গোটা
মহাগ্রন্থটি ‘আল-কুর’আন’
নয়❗ ‘আল-কুর’আন’ বিশাল
এই গ্রন্থটির একটি অংশ। এজন্যই মহাগ্রন্থ বা The Great Book বলে
থাকি। অনেক আরবিভাষী একে ‘মুসহাফ’
বলেন।
গোটা মহাগ্রন্থে আছে, আল-কিতাব, আল-কুর’আন, আয-যিকর এবং অন্যান্য সুরা ও কিতাব ইত্যাদি❗ তাহলে কোনটা কোন অংশ❓ তা কিভাবে বোঝা যাবে❓ চলুন জেনে নেই।
- আলিফ লাম মিম (الٓمٓ) দিয়ে ৬টা সুরা পাওয়া যায়। এই ৬টা সুরা হলো আল-কিতাবের অংশ।
আলিফ_লাম_মিম (الٓمٓ) হলো গোটা মহাগ্রন্থের/মুসহাফের মধ্য থেকে ‘আল-কিতাব’ নির্দেশক শিরোনাম বা টাইটেল।
এ ছাড়া আছে, আলি-লাম-রা (الٓر), আলিফ-লাম-মিম-রা (الٓمٓر), হা-মিম (حمٓ) ইত্যাদি। সুরার অনুবাদ অনুযায়ী এগুলো হলো আল-কিতাব। চলুন আয়াতগুলো দেখি।
০২:১,২ আলিফ লাম মিম; (যালিকা)
সেই/ সেটা/ ওটা/ ওইটা আল-কিতাব যাতে কোনো সন্দেহ নেই- সজাগ-সচেতনদের জন্য
পথনির্দেশ।
উল্লেখ্য, যালিকা:
সেই/সেটা/সেগুলো/ওটা (পুরষবাচক নির্দেশক সর্বনাম পদ)
তিলকা: সেই/সেটা/সেগুলো/ওটা
(নরীবাচক নির্দেশক সর্বনাম পদ)
আয়াত অর্থ: চিহ্ন, নিদর্শন বা sign
০৩:১
আলিফ লাম মিম;.২.ٱللَّهُ
لَآ إِلَـٰهَ إِلَّا هُوَ ٱلْحَىُّ ٱلْقَيُّومُ ৩.তিনি
তোমার কাছে যথাযথভাবে আল-কিতাব নাযিল করেছেন..
৭:১,২ الٓمٓصٓ
আলিফ লাম মিম স্বদ; কিতাবগুলো/এই কিতাব (?) (كِتٰبٌ اُنْزِلَ اِلَيْكَ) অবতীর্ণ হয়েছে তোমার
প্রতি, সুতরাং তোমার মনে/ হৃদয়ে/ অন্তরে না হয় (فَلَا يَكُنْ فِيْ صَدْرِكَ) তাতে কোনো
সঙ্কোচ (حَرَجٌ مِّنْهُ)
যেন তুমি সতর্ক করো তা দিয়ে (لِتُنْذِرَ
بِهٖ) এবং উপদেশ বিশ্বাসীর জন্য (وَذِكْرٰى لِلْمُؤْمِنِيْنَ)।
১০:১
الٓر
আলিফ লাম রা; ওই চিহ্নগুলো আল-কিতাবের যা মহা-প্রজ্ঞাময় (تِلْكَ اٰيٰتُ الْكِتٰبِ الْحَكِيْمِ)
১১:১
الٓر
আলিফ লাম রা; কিতাবগুলোর চিহ্ন সুদৃঢ়/সুপ্রতিষ্ঠিত (كِتٰبٌ اُحْكِمَتْ اٰيٰتُهٗ), তারপর বিস্তারিত বর্ণণা/ব্যাখ্যা (ثُمَّ فُصِّلَتْ) মহাজ্ঞানী
সর্বজ্ঞের পক্ষ থেকে (مِنْ
لَّدُنْ حَكِيْمٍ خَبِيْرٍۙ)।
১২:১
الٓر
আলিফ লাম রা; ওই চিহ্নগুলো (تِلْكَ اٰيٰتُ)
আল-কিতাবের যা সুস্পষ্ট (لْكِتٰبِ
الْمُبِيْنِ)।
১২:২
নিশ্চয়ই আমি তা অবতীর্ণ করেছি (اِنَّآ
اَنْزَلْنٰهُ) আরবি পঠন (قُرْاٰنًا عَرَبِيًّا) যাতে
তোমরা চিন্তাভাবনা করে বুঝতে পারো (لَّعَلَّكُمْ تَعْقِلُوْنَ)।
১৩:১
الٓمٓر
আলিফ লাম মিম রা; এসব চিহ্ন আল-কিতাবের (تِلْكَ اٰيٰتُ الْكِتٰبِۗ); আর যা অবতীর্ণ হয়েছে তোমার কাছে (وَالَّذِيْٓ اُنْزِلَ اِلَيْكَ) তোমার
রবের পক্ষ থেকে প্রকৃত সত্যতা-যথার্থতা (مِنْ رَّبِّكَ الْحَقُّ), কিন্তু অধিকাংশ মানুষ বিশ্বাস করে না (وَلٰكِنَّ اَكْثَرَ النَّاسِ لَا يُؤْمِنُوْنَ)।
১৪:১
الٓمٓر
আলিফ লাম মিম রা; কিতাবগুলো অবতীর্ণ হয়েছে তোমার কাছে
(كِتٰبٌ
اَنْزَلْنٰهُ اِلَيْكَ) যাতে তুমি বের করো মানবজাতিকে (لِتُخْرِجَ النَّاسَ) অন্ধকার
থেকে আলোর দিকে (مِنَ
الظُّلُمٰتِ اِلَى النُّوْرِ)- তাদের রবের অনুমতিক্রমে (بِاِذْنِ رَبِّهِمْ) সেই
প্রশংসিত মহা-পরাক্রমশালীর পথের দিকে (اِلٰى صِرَاطِ الْعَزِيْزِالْحَمِيْدِۙ)।
১৫:১
الٓر
আলিফ লাম রা; ওই চিহ্নগুলো আল-কিতাবের (تِلْكَ اٰيٰتُ الْكِتٰبِ) ও
সুস্পষ্ট পঠন (وَقُرْاٰنٍ
مُّبِيْنٍ)
২৬:১,২ ত্ব সিন মিম (طسٓمٓ); ওই চিহ্নগুলো (تِلْكَ اٰيٰتُ)
আল-কিতাবের যা সুস্পষ্ট (الْكِتٰبِ
الْمُبِيْنِ)!
২৮:১,২ ত্ব সিন মিম (طٰسۤمّۤ); ওই চিহ্নগুলো
আল-কিতাবের (تِلْكَ
اٰيٰتُ الْكِتٰبِ) যা সুস্পষ্ট (الْمُبِيْنِ)!
২৯:১
আলিফ লাম মিম (الٓمٓ);
৩০:১
আলিফ লাম মিম (الٓمٓ);
৩১:১,২,৩ আলিফ লাম মিম (الٓمٓ); ওই চিহ্নগুলো
আল-কিতাবের (تِلْكَ
اٰيٰتُ الْكِتٰبِ) যা প্রজ্ঞাময় (الْحَكِيْمِۙ)! পথনির্দেশ ও দয়া-অনুকম্পা (هُدًۭى وَرَحْمَةًۭ)
সজাগ-সচেতনদের জন্য (لِّلْمُحْسِنِينَ)।
৩২:১, ২ আলিফ লাম মিম
(الٓمٓ); অবতীর্ণ আল-কিতাব (تَنْزِيْلُ الْكِتٰبِ) তাতে
সন্দেহ নেই (لَا رَيْبَ فِيْهِ), বিশ্বজগতের রবের পক্ষ থেকে (مِنْ رَّبِّ الْعٰلَمِيْنَۗ)।
৪০:১
হা মিম (حمٓ); অবতীর্ণ হয়েছে
আল-কিতাব (تَنزِيلُ
ٱلْكِتَـٰبِ) আল্লাহর পক্ষ থেকে যিনি সর্বজ্ঞ মহা-পরাক্রমশালী
(مِنَ ٱللَّهِ
ٱلْعَزِيزِ ٱلْعَلِيمِ)।
৪১:১,২,৩ হা মিম (حمٓ); অবতীর্ণ হয়েছে (تَنزِيلٌۭ) মহা-শক্তিধর দয়াময়ের পক্ষ থেকে (مِّنَ ٱلرَّحْمَـٰنِ ٱلرَّحِيمِ); এ কিতাব/বইয়ের আয়াত বিশদভাবে বর্ণিত (كِتَـٰبٌۭ فُصِّلَتْ ءَايَـٰتُهُۥ) আরবি
ভাষার পঠন (قُرْءَانًا
عَرَبِيًّۭا) যারা জানে তাদের জন্য (لِّقَوْمٍۢ يَعْلَمُونَ)
৪৩:১,২,৩,৪ হা মিম (حمٓ); এবং আল-কিতাব যা
সুস্পষ্ট (وَٱلْكِتَـٰبِ
ٱلْمُبِينِ); নিশ্চয় আমি তা
বানিয়েছি (إِنَّا
جَعَلْنَـٰهُ) আরবি ভাষার পঠন (قُرْءَٰنًا عَرَبِيًّۭا) যাতে
তোমরা চিন্তা-ভাবনা করে বুঝতে পারো (لَّعَلَّكُمْ تَعْقِلُونَ);
এবং
নিশ্চয়ই তার মধ্যে (وَإِنَّهُۥ
فِىٓ) আল-কিতাবের উৎস (أُمِّ ٱلْكِتَـٰبِ)….. (لَدَيْنَا لَعَلِىٌّ حَكِيمٌ)।
৪৪:১,২,৩ হা মিম (حمٓ); এবং এই আল-কিতাব (وَٱلْكِتَـٰبِ)
যা-সুস্পষ্ট (ٱلْمُبِينِ)!
নিশ্চয়ই আমি তা অবতীর্ণ করেছি (إِنَّآ
أَنزَلْنَـٰهُ) কল্যাণময় আঁধারে (فِى لَيْلَةٍۢ مُّبَـٰرَكَةٍ ۚ); নিশ্চয়ই আমি সতর্ককারী (إِنَّا كُنَّا مُنذِرِينَ)।
৪৫:১,২ হা মিম (حمٓ); অবতীর্ণ হয়েছে
আল-কিতাব আল্লাহর পক্ষ থেকে (تَنزِيلُ ٱلْكِتَـٰبِ مِنَ ٱللَّهِ) যিনি
মহা-পরাক্রমশালী মহা-প্রজ্ঞাবান (ٱلْعَزِيزِ ٱلْحَكِيمِ)।
৪৬:১,২ হা মিম (حمٓ); অবতীর্ণ হয়েছে
আল-কিতাব আল্লাহর পক্ষ থেকে (تَنزِيلُ ٱلْكِتَـٰبِ مِنَ ٱللَّهِ) যিনি
মহা-পরাক্রমশালী মহা-প্রজ্ঞাবান (ٱلْعَزِيزِ ٱلْحَكِيمِ)
…………………………………………………………
৪২:১,২,৩ হা মিম (حمٓ), আইন সিন ক্বাফ
(عٓسٓقٓ); এভাবে তোমাকে ওহি করা হয়/ অনুপ্রাণিত করা হয় (كَذَٰلِكَ يُوحِىٓ إِلَيْكَ) এবং তোমার
আগে যারা ছিল (وَإِلَى
ٱلَّذِينَ مِن قَبْلِكَ)- আল্লাহ হলেন মহা-পরাক্রমশালী
মহা-প্রজ্ঞাবান (ٱللَّهُ
ٱلْعَزِيزُ ٱلْحَكِيمُ)
………………………………………………………….
১৯:১
كٓهيعٓصٓ
কাফ হা ইয়া আইন স্বদ;
২০:১, ২, ৩ طه ত্ব হা; তোমার উপর অবতীর্ণ করিনি (مَآ اَنْزَلْنَا عَلَيْكَ) আল-কুর’আন
(الْقُرْاٰنَ)
যেন তুমি কষ্ট পাও (لِتَشْقٰٓى); শুধুমাত্র উপদেশ-স্বরূপ (اِلَّا تَذْكِرَةً) তার জন্য
যে ভয় করে (لِّمَنْ يَّخْشٰى)।
২৫:১
মহা-কল্যাণময় যিনি অবতীর্ণ করেছেন (تَبٰرَكَ الَّذِيْ نَزَّلَ)
আল-ফুরক্বান (ٱلْفُرْقَانَ)
তাঁর ইবাদের ওপর (عَلٰى
عَبْدِهٖ) যেন সে বিশ্বজগতের জন্য সতর্ককারী হয় (لِيَكُوْنَ لِلْعٰلَمِيْنَ نَذِيْرًا)!
২৭:১,২ ত্ব সিন (طٰسۤ); ওই চিহ্নগুলো
আল-কুর’আনের (تِلْكَ اٰيٰتُ الْقُرْاٰنِ) এবং একটি
সুস্পষ্ট গ্রন্থ/বই/কিতাব (وَكِتَابٍ
مُّبِيْنٍ)। পথ-নির্দেশ
ও সুসংবাদ (هُدًى وَّبُشْرٰى)
বিশ্বাসীদের জন্য (لِلْمُؤْمِنِيْنَ)।
৩৬:১,২ ইয়া সিন (يسٓ); আর আল-কুর’আন
যা-মহাপ্রজ্ঞাময় (وَٱلْقُرْءَانِ
ٱلْحَكِيمِ)!
৩৮:১
স্বদ (صٓ); আর আল-কুর’আন
ধারণ করে মহা-উপদেশ/ আয-যিকর (وَٱلْقُرْءَانِ
ذِى ٱلذِّكْرِ)।
৫০:১
ক্বফ (ق); আর আল-কুর‘আন হলো অতি-মহিমান্বিত/ মহিমাময় (وَٱلْقُرْءَانِ ٱلْمَجِيدِ)!
৬৮:১ নুন (نٓ); আর কলম (وَٱلْقَلَمِ) এবং যা তারা লেখে (وَمَا يَسْطُرُونَ)!
- আল-কিতাব: তাহলে
বলা যায়,
২, ৩, ১০, ১১, ১২, ১৩, ১৪, ১৫, ২৬, ২৯, ৩০, ৩১, ৩২, ৪০, ৪১, ৪৩, ৪৪, ৪৫, ৪৬, ৫০ এবং ৭, ১৯, ২৬, ২৮, ৪২নং সুরা হলো আল-কিতাব - আল-কুর’আন: ২০, ২৭, ৩৬, ৩৮, ৫০ এবং ৭, ১৯, ২৬, ২৮, ৪২নং সুরা হলো আল-কুর‘আন।এখানে, ৭, ১৯, ২৬, ২৮, ৪২নং সুরাগুলো একাধারে আল-কিতাব ও আল-কুর‘আন।
- পাশাপাশি, হা-মিম শিরোনামের সুরা থেকেই আল-কিতাব উৎসারিত। যেমন বলা হয়েছে, আল-কিতাবের উৎস হলো হা-মিম।
- আয যিকর: ২০, ২৭, ৩৬, ৩৮, ৫০ এবং ৭, ১৯, ২৬, ২৮, ৪২নং সুরা।
একইভাবে, আল-কুর‘আনের মধ্যেই আছে ‘আয-যিকর‘। অর্থাৎ,
আয-যিকর আল-কুর‘আন থেকে উৎসারিত। যা
মূলত- ২০, ২৭, ৩৬, ৩৮, ৫০ এবং ৭, ১৯, ২৬, ২৮, ৪২নং সুরা।
যেমন বলা হয়েছে, আল-কুর‘আন ধারণ
করে আয-যিকর।
বিশেষ একটি
চিহ্ন আছে ৪২নং সুরায়- আঈন (عٓ)। আঈন এর আগে আছে আল-কিতাবের চিহ্ন: হা মিম। আঈন এর পরে আছে আল-কুর‘আনের চিহ্ন: সিন ক্বফ।
অনুদঘাটিত
আরেকটি চিহ্ন হলো নুন (نٓ), যা ৬৮নং সুরাতে আছে। যেমন, বলা হয়েছে- নুন (نٓ) আর কলম (وَٱلْقَلَمِ) এবং যা তারা লেখে (وَمَا يَسْطُرُونَ)!
পাঠকের দৃষ্টিকোণ
থেকে কিছু প্রশ্নোত্তর তুলে ধরা হলো।
⭕১. বাকারার শুরুতেই- যালিকা মানে সেটা। কোনটা?
▶️ উত্তর–
আলিফ লাম মিম। যালিকা – পুরুষবাচক ‘ওইটা’
দিয়ে ‘আল-কিতাবকে’
নির্দেশ করা হয়েছে। যার টাইটেল বা শিরোনাম হলো ‘আলিফ-লাম-মিম’।
আর ‘তিলকা
আয়াত’ বলে “আলিফ
লাম মিম” এর চিহ্নগুলো আলাদাভাবে নির্দেশ
করা হয়েছে; হরফগুলোকে নারীবাচক বলা হয়েছে।
✅ আলিফ
লাম মিম স্বদ রা হা সিন: আল কিতাবের চিহ্ন।
✅ ক্বফ
স্বদ ছোট-হা ত্ব-সিন ইয়া-সিন কাফ আইন: আল কুর‘আনের চিহ্ন।
✅ ১২:১
আলিফ লাম রা; সেই চিহ্নগুলো (تِلْكَ اٰيٰتُ)
আল-কিতাবের- সুস্পষ্ট (لْكِتٰبِ
الْمُبِيْنِ)
⭕২. আল্লাহ আল কিতাব নাজিল করেছেন যার মধ্যে আছে
সকল বিষয়ের বিস্তারিত ব্যাখ্যা, পথ নির্দেশ, আমাদের জন্য উপদেশ (১৬:৮৯) এখান থেকেই তো বোঝা যায় কিতাবের মধ্যেই
সবকিছু আছে। যদি আলাদা হয় সেটা কিভাবে, বুঝায় বলেন।
▶️ উত্তর-:
১৬:৮৯…. আর আমি অবতীর্ণ করেছি তোমার কাছে
আল-কিতাব (ٱلْكِتَٰبَ–The Kitab) প্রত্যেক জিনিসের/বস্তুর জন্য সুস্পষ্ট বর্ণনা (تِبْيَٰنًا–a clarification) এবং
পথ-নির্দেশ (هُدًى), অনুগ্রহ (رَحْمَةً) ও সুসংবাদ (بُشْرَىٰ) আত্মসমর্পণকারীদের জন্য (لِلْمُسْلِمِينَ)।
✅সঠিক, আল-কিতাবের মধ্যে (ٱلْكِتَٰبَ) সব জিনিসের/বস্তুর জন্য সুস্পষ্ট বর্ণনা (تِبْيَانًا لِّكُلِّ شَيْءٍ)।
প্রথমত, ‘সব
জিনিসের/বস্তুর বর্ণনা’ এবং ‘সব
জিনিসের/বস্তুর জন্য বর্ণনা (تِبْيَٰنًا)’ এক
কথা নয়।
দ্বিতীয়ত, আল-কিতাবের মধ্যে (ٱلْكِتَٰبَ) বর্ণনার পাশাপাশি আছে অনুগ্রহ (رَحْمَةً) ও সুসংবাদ (بُشْرَىٰ)–যা আলাদাভাবেই উল্লেখ করা আছে। আর এসব
কিছুই আত্মসমর্পণকারীদের জন্য (لِلْمُسْلِمِينَ)।
আপনার কথা থেকে বোঝা যায় “এখান থেকেই তো বোঝা যায় কিতাবের
মধ্যেই সবকিছু আছে” – ব্যাপারটা
সেটা নয়। ব্যাপার হলো, আল-কিতাবের মধ্যে সব জিনিসের জন্য
সুস্পষ্ট বর্ণনা (تِبْيَانًا لِّكُلِّ شَيْءٍ) দেওয়া আছে।
সুক্ষ্ম ও গুরুত্বপূর্ণ এই পার্থক্য অবশ্যই দেখতে হবে।
⭕৩. ২৭:১ তোয়া সিন -এখানেও তো এই চিহ্ন দিয়ে বলা
হচ্ছে কোরআনের আয়াত এবং সুস্পষ্ট কিতাব! তাহলে কুরআন আর কিতাবের মধ্যে পার্থক্য
কোথায়?
২০:১-২ তোয়া হা এরপর কুরআন
নাযিলের কথা!!
▶️উত্তর-
২৭:১ ত্ব-সিন (طٰسۤ); এই চিহ্নগুলো (ءَايَٰتُ) আল-কুর’আনের
(ٱلْقُرْءَانِ)
ও সুস্পষ্ট একটি কিতাবের (وَكِتَابٍ مُّبِيْنٍ)।
অর্থাৎ, ত্ব-সিন (طٰسۤ) চিহ্নযুক্ত সুরাগুলো হলো আল-কুর’আন
(The
Quran)- যা একটা সুস্পষ্ট কিতাব (a clear Book.)
মানে, মহাগ্রন্থের মধ্যে যে অংশটা “আল-কুর’আন”–
সেই আল-কুর’আন অংশটা একটা কিতাব/ একটা বই।
এরকম অনেকগুলো কিতাব মিলে হয়েছে মহাগ্রন্থ। যা অনেকগুলো কিতাবের সমষ্টি।
✅ ত্ব-সিন
(طٰسۤ)
কোনো শব্দ বা বাক্য নয়; বরং চিহ্ন/আয়াত। ধারণা, করি ত্ব/সিন এরকম চিহ্ন দিয়ে শুরু হওয়া অংশগুলো হলো আল-কুর’আন।
আরও এরকম লেখা আছে। যেমন- ইয়া সিন, ওয়া আল-কুর’আনিল
হাকিম।
✅ “আল কিতাব যেখানে লিখিতভাবে সবকিছু বিস্তারিতভাবে আছে। এর মধ্যে যিকর, হিকমাহ সব আছে। আবার এই কিতাব কে সত্য মিথ্যা পার্থক্যকারী ফোরকান বলা হয়।”
⭕৪. ৩:২৩ আয়াতে আল কিতাব আর কিতাব কি আলাদা? মূলত এই কথাগুলো ইহুদিদের বলে জানা যায়। তাদেরকে যা দেওয়া হয়েছিল
(তাওরাত) তা ‘আল-কিতাবের’ একটা
অংশ (مِّنَ الْكِتٰبِ)। তারপরও
যখন তাদেরকে আল্লাহর কিতাবের দিকে ডাকা হয় (اِلٰى كِتٰبِ اللّٰهِ)
বিচার-ফয়সালা করার জন্য….. আল্লাহর যে
কোনো কিতাবের/বইয়ের দিকে….তখন তারা মুখ
ফিরিয়ে নেয়।
▶️ উত্তর- এটা
আসলেই কোনো সমস্যা মনে হচ্ছে না।
⭕৫. আল্লাহ কি নাযিল করেছেন আলকিতাব নাকি শুধু
কিতাব?
আয যিকর নাকি যিকর?
▶️ উত্তর- সবগুলোই আল্লাহ নাযিল করেছেন। আল-কুর’আন, আল-কিতাব, আল-ফুরকান, আয-যিকর…. সবগুলোই একেকটি কিতাব বা বই। ধারণা করছি, সবগুলোই যেহেতু বিকৃত করা হয়েছে, সেহেতু সবগুলো একত্রে মহাগ্রন্থ আকারে নাযিল করা হয়েছে।
⭕৬. ৩৮ আয়াতে আল্লাহ বলেছেন তার নিকট থেকে হুদা
আসবে- এই হুদা আল কুরআন নাকি আল কিতাব নাকি আযযিকর?
▶️ উত্তর- ‘আমার হুদা (هُدَاىَ)’—এটা কোনো কিতাব না। এটা জান্নাতে ফিরে যাবার পথ-নির্দেশনা, কর্ম-পদ্ধতির দিক-নির্দেশনা। আল্লাহর পাঠানো সব কিতাবের মধ্যেই এই হুদা (هُدَا) আছে। আল-কুরআন, আল-কিতাব, আয-যিকর—সবখানেই এই হুদা আছে।
⭕৭. ৩:৭ আয়াতের ম্যাসেজ কি?
▶️ উত্তর-
ধারণা করা যায়, এই আয়াতের প্রচলিত অনুবাদে ভয়াবহ ধরনের গোলমাল করে রাখা হয়েছে।
✅ ৩:৭ তিনিই যিনি (هُوَ الَّذِيْٓ) তোমার কাছে পাঠিয়েছেন আল-কিতাব (اَنْزَلَ عَلَيْكَ الْكِتٰبَ) তাতে আছে সুদৃঢ় চিহ্ন-সমূহ (اٰيٰتٌ مُّحْكَمٰتٌ) সেগুলো আল-কিতাবের শুরু/উৎস (هُنَّ اُمُّ الْكِتٰبِ) এবং অন্যগুলো সমজাতীয় (اُخَرُ مُتَشٰبِهٰتٌ); অতএব যাদের অন্তরে/হৃদয়ে (فِيْ قُلُوْبِهِمْ) বক্রতা আছে (زَيْغٌ) তথাপি তারা অনুসরণ করে তার মধ্যে যা সমজাতীয় (تَشَٰبَهَ)- অনুসন্ধান করে ফিতনা ও অনুসন্ধান করে তার তাওইলি-হি (تَأْوِيلِهِ) এবং তার তাওইলাহু (تَأْوِيلَهُۥٓ) আল্লাহ ছাড়া কেউ জানে না; আর যারা জ্ঞানের ব্যাপারে সুদৃঢ়/সুগভীর (وَالرَّاسِخُوْنَ فِى الْعِلْمِ) আমরা তাতে বিশ্বাস করেছি/ আমরা নিরাপদ (يَقُوْلُوْنَ اٰمَنَّا بِهٖ)- সবই এসেছে আমাদের রবের নিকট থেকে (كُلٌّ مِّنْ عِنْدِ رَبِّنَا); বোধসম্পন্ন ব্যক্তি ছাড়া কেউ উপদেশ/শিক্ষা নেয় না (وَمَا يَذَّكَّرُ اِلَّآ اُولُوا الْاَلْبَابِ)।
⏺️আয়াতের
ম্যাসেজ যা বুঝতে পারছি, তা হলো: মুহকাম আয়াত বলতে, আলিফ
লাম মিম স্বদ হা মিম ইয়া সিন ক্বফ— এ
জাতীয় সব চিহ্নকে বোঝানো হয়েছে। এসব চিহ্ন হলো উম্মুল কিতাব বা আল-কিতাবের (ٱلْكِتَٰبِ) শুরু/টাইটেল/জননী/শিরোনাম (أُمُّ); এগুলোই খুব সুদৃঢ়
আয়াত বা চিহ্ন।
এর বাইরে
মহাগ্রন্থের সব আয়াত- একটা আরেকটাকে ব্যাখ্যা করে, অনুসরণ করে… অর্থাৎ সমজাতীয়
বা মুতাশাবিহাত বলে মনে করি।
মুসলিম
নামধারী গোটা মুশরিক জগৎ এই মুতাশাবিহাত
আয়াত নিয়েই যে যার মতো ব্যাখ্যা দিচ্ছে এবং পথ মত ফিরকা তৈরি করছে। যেমন-
শুধুমাত্র ওযুর আয়াত নামে পরিচিত (!) আয়াত থেকেই নানা রকম ওযু পয়দা হয়েছে।
সালাত-এর কথা নাহয় বাদই দিলাম!
এসব লোক
মুতাশাবিহাত আয়াতের তাওইল (تَأْوِيلِ) খোঁজে। এখানে অর্থ ব্যাখ্যা লেখা হয়েছে।
মনে হচ্ছে এটা ব্যাখ্যা নয়- উপযুক্ত শব্দ খুঁজতে হবে। তারা গোটা গ্রন্থের তাওইল
খোঁজে ফিৎনা-ফ্যাসাদ সৃষ্টির জন্য।
আর, চিন্তা-ভাবনা ও জ্ঞানের গভীরতা যার আছে- সে বা তারা বিষয়টা বুঝতে পারে
এবং স্রষ্টার নিকট আত্মসমর্পণ করে। কারণ, মানব মস্তিষ্ক বিশাল
জ্ঞান ধারণ করতে পারবে না বলে বোঝা যায়।
চূড়ান্তভাবে,
বানরের গলায় মুক্তার মালা ঝুলিয়ে লাভ হয় না। কারণ, উলুল
আলবাবরা (اُولُوا الْاَلْبَابِ) বা বোধশক্তি সম্পন্ন লোকজন ছাড়া কেউ
শিক্ষা-উপদেশ-নসিহত নেয় না!
#আলিফলামমিম #আলিফলামরা #আলিফলামমিমরা #আলকিতাব #কিতাব
প্রথম প্রকাশ:
২৩ জুন ২০২৩