মহাগ্রন্থ আল-কিতাব কে ব্যাখ্যা করবে?
প্রশ্নটির বাস্তবতা, প্রয়োজন ও গুরুত্ব জানা দরকার। কারণ, মহাগ্রন্থ আল-কিতাব জানার ও বোঝার জন্য বিভিন্ন মানুষের লেখা ‘তাফসির বই’ পাওয়া যায়। সেসব ‘তাফসির বই’-এর লেখক তাদের জ্ঞান-বুদ্ধি-উপলব্ধি অনুযায়ী মহান আল্লাহর কথা ব্যাখ্যা করেছেন। আসলে কী ব্যাখ্যা করা হয়েছে? দেখা যায়, আল্লাহর বক্তব্যকে বিভিন্ন প্রাচীন বই পুস্তকের উদ্ধৃতি দিয়ে অথবা বিভিন্ন ব্যক্তির উদ্ধৃতি দিয়ে বলা হয়েছে যে- তারা আসলে কী বুঝেছিলেন। অর্থাৎ, একটি বিষয়ে ৫/৬/৭ জন মণিষী কী বললেন তা জানানো হয়েছে। এটা সুনির্দিষ্ট কোনও বিষয়ের ব্যাখ্যা হলো না। বরং, কোনও একটি বিষয়ে ‘নানা মুনির নানা মত’ শুনে মানুষ নিজের অজান্তেই বিভ্রান্তির মধ্যে পড়ে যায় এবং সবশেষে তাফসির বই-এর লেখক যা বলে দিলেন- মানুষ সে কথাই নির্দ্বিধায় বিশ্বাস করে নেয়!
অথচ, মহান আল্লাহ পাক সে কথা বলেন নি! মহান প্রভু মানুষের হিদায়াত বা পথ নির্দেশনার জন্য যে কিতাব পাঠালেন, তার বক্তব্য কি এমন কঠিন করে দিয়েছেন যে, মানুষ তা বুঝতেই পারে না! যেহেতু বেশিরভাগ মানুষ নিজে চেষ্টা করে না, তাই ‘তাফসির বই’ এর লেখকদের মতামতকেই মহান আল্লাহর মতামত হিসেবে মেনে নেয়।
আমাদের মতো সাধারণ মানুষ তখন আল কুর’আনের সুস্পষ্ট আয়াত দেখেও (অর্থ দেখেও) না-বোঝার ভান করে। তারা মনে করে, নিশ্চয়ই এর এমন কোনও ব্যাখ্যা আছে- যা আমি/ আমরা বুঝতে পারছি না! অথবা, যা বোঝা যাচ্ছে- তা হয়তো সঠিক হচ্ছে না! নিশ্চয়ই এ বিষয়ে তাফসির বই-এর লেখকদের মতামত দেখতে হবে।
এখন কোন তাফসির বই দেখবেন? আপনি যে দল-মতের অনুসারী- সেই দলের নির্ধারিত তাফসির বই দেখবেন। যদি কোনো দল-মত না থাকে, তাহলে আরবি ভাষার দখল থাকা কোনও দেশের তাফসির বই দেখবেন। মনে রাখতে হবে- সেই আরব দেশও কিন্তু নিজেদের সুবিধাজনক দল বা মতাদর্শ বাস্তবায়নে কাজ করে। যেমন, আপনি সৌদি-আরবের প্রকাশিত তাফসিরের বই দেখবেন; যারা (অবৈধ) রাজতন্ত্র, ওয়াহাবি মতবাদ টিকিয়ে রাখার জন্য কুর’আনের আয়াতকে নিজেদের মতো করে ব্যাখ্যা করেছে; আপনারই দেশের কোনও না কোনও ‘ইসলামিক রাজনৈতিক দলের’ কুর’আনের তাফসির বইয়ের মতো। আপনি হয়তো, মিশরের আল-আজহার বিশ্ববিদ্যালয় কিংবা মদিনা বিশ্ববিদ্যালয়ের অনুমোদিত ব্যক্তির কথা শুনবেন ও ‘তাফসির বই’ পড়বেন; যাদের অন্যতম এজেন্ডা হলো ইসলাম নয় বরং সুন্নি ইজম, সালাফি ইজম ইত্যাদির চর্চা করে। আরও জানার জন্য আপনি বিশাল পারস্য দেশের চমৎকার ‘ইসলামি সংস্কৃতির’ দেশের তাফসির বই পড়েতে যাবেন; যাদের জন্ম থেকে মৃত্যু পর্যন্ত একটাই সাধনা- তাহলো শিয়া মতবাদকে সবকিছুর ওপর প্রতিষ্ঠা করা। তাদের কাছে ইসলামের চেয়ে বড় হলো শিয়া-ইজম ভিত্তিক ইসলাম।
এসব কথার অর্থ হলো- যখনই মানুষ কুর’আন থেকে এক ধাপ বাইরে গিয়ে কুর’আন বোঝার চেষ্টা করে, তখনই মানুষ মহান প্রভুর দেখানো পথ থেকে দূরে সরে যায়। মহান আল্লাহর কালাম (বাক্য, কথা) বোঝার জন্য আল্লাহর ওপর ভরসা না করে যার ওপর ভরসা করবেন, আপনি তারই দলভুক্ত হয়ে যাবেন। ফলশ্রুতিতে দুই হাতে কুর’আন আঁকড়ে ধরেই মানুষ সিরাতল মুস্তাকিম থেকে ছিটকে পড়ে।
মানুষ তখন নিজের ওপর আস্থা হারিয়ে ফেলে, কুর’আনের ওপর আস্থা ও ভালোবাসা হারিয়ে তাকে ‘ভয়ের বস্তু’ বানিয়ে ফেলে। তখন মনে করে- জানতে গিয়ে যদি এমন কিছু বের হয়- যা পালন করা যায় না- তার চেয়ে না-জানাই ভালো। যদি ভুল বুঝে ভুল কাজ করে বসে- তার চেয়ে বোঝার চেষ্টা না-করাই উত্তম। এটাই হলো আরব ও অনারব বিশ্বের সাধারণ মানসিকতা। গোটা মানবজাতি- বিশেষ করে মুসলিম উম্মাহকে এভাবেই মহাগ্রন্থ- পথের দিশারি কুর’আন থেকে দূরে সরিয়ে দিয়েছে জিন-শয়তান ইবলিস।
কিন্তু এভাবে কতদিন? কত হাজার বছর? চারদিকে চেয়ে দেখুন, শুধুমাত্র কুর’আন থেকে দূরে সরে গিয়ে নানা রকম মত-পথ তৈরি করে সামাজিক বিভেদ, বিশৃঙ্খলা, অরাজকতা, পঙ্কিলতা ও পাপাচরে ডুবে আছে মুসলিম সমাজ। তারা সবাই আল্লাহকে ভালোবাসে। কিন্তু আল্লাহ কী করতে বলেছেন, তা জানতে ও দেখতে চাচ্ছে না। এই দৃষ্ঠিভঙ্গি বদলাতেই হবে। কারণ, মহান আল্লাহ কুর’আনে বলেছেন- তিনি কুর’আনে পরিষ্কার করে উদাহরণ ও উপমাসহ বিশদভাবে সব কিছু ব্যাখ্যা করে দিয়েছেন। তিনি কুর’আনের বাণী মনে রাখার জন্য সহজ করে দিয়েছেন। তিনি কুর’আনকে সুস্পষ্ট আরবি ভাষায় নাযিল করেছেন এবং তা সংরক্ষণ ও মানুষের কাছে ব্যাখ্যা করার দায়িত্ব নিজে নিয়েছেন। তিনি এই কিতাবের মধ্যে দিয়েছেন- যিকরা, হিকমা, হুদা, ফুরকান, নুর, কুর’আন এবং নানা রকম সতর্কবার্তা ও সুসংবাদ। তিনি এসবের মাধ্যমে তাঁর নিজের কথা নিজেই ব্যাখ্যা করেছেন। কিন্তু কোনও ‘তাফসির বইয়ে’ আল্লাহর নাযিল করা এসব উপকরণ দিয়ে আল্লাহর কথাগুলো বোঝানোর বা ব্যাখ্যা করার চেষ্টা দেখা যায় না। কী আশ্চর্য! কেন এমন হয়েছে? তার উত্তর অজানা; তবে, ফলাফল দৃশ্যমান।
গোটা মুসলিম বিশ্ব মহাগ্রন্থ আল-কুর’আন থেকে অনেক অনেক দূরে সরে গেছে!
এবার মূল প্রশ্নের দিকে যাই আমরা।
মহাগ্রন্থ আল-কিতাব কে ব্যাখ্যা করবে?
– সহজ ও সঠিক উত্তর হলো- মহান আল্লাহ তাঁর পাঠানো কিতাব ব্যাখ্যা করবেন। কারণ, তিনি ব্যাখ্যা-সহ এই কিতাব নাযিল করেছেন। পাশাপাশি, তিনি বলেছেন তিনিই কুর’আন বয়ান করবেন, পরিষ্কার করবেন ও সুস্পষ্ট করে বলবেন, কারণ তিনি আ’লিমুল হাকিম।
তিনি কোন পদ্ধতিতে বা কীভাবে ব্যাখ্যা করেছেন?
– তিনি আল-কিতাবের মধ্যে দেওয়া যিকরা, হিকমা, হুদা, ফুরকান, নুর, কুর’আন দিয়ে তাঁর নিজের কথাগুলো ব্যাখ্যা করেছেন। পাশাপাশি, তিনি নানা ধরনের উদাহরণ ও উপমা দিয়েছেন। তিনি পূর্ববর্তী অসংখ্য নবী রসুল ও তাঁদের উম্মতদের বিষয়ভিত্তিক ঘটনা বর্ণনা করেছেন, যাতে আমরা শিক্ষা গ্রহণ করি। তিনি নানা ধরনের বিজ্ঞান-ভিত্তিক বক্তব্য দিয়েছেন, যাতে মানুষ বৈজ্ঞানিক দৃষ্টিকোণ থেকে উপলব্ধি করতে পারে। যেসব বিষয়ে মানুষের জ্ঞান নেই, সেসব বিষয়ে তিনি সাদৃশ্যপূর্ণ (মুতাশাবিহাত) বস্তুর কথা উল্লেখ করে সেসব বিষয় ব্যাখ্যা করেছেন (যেমন- জান্নাত ও অদৃশ্যজগত), যাতে মানুষ একধরণের ধারণা লাভ করতে পারে। পাশাপাশি, মহান আল্লাহ তাঁর পাঠানো কিতাবে কিছু সু-নির্দিষ্ট পদ্ধতিতে কথা বলেছেন, যা আয়ত্ত করা সম্ভব। এরকম নানা বিষয় জানার ও বোঝার মাধ্যমে মহাগ্রন্থের ব্যাপারে Deep understanding বা গভীর ধারণা অর্জন করা সম্ভব।
সব মানুষ কি মহাগ্রন্থ আল-কিতাব সম্পর্কে এত বিস্তারিত জ্ঞান অর্জন করতে পারবে?
– এ ব্যাপারে আল্লাহ মানুষকে কোনও বাধ্যবাধকতা ও চাপ প্রয়োগ করেন নি। তিনি উৎসাহ দিয়ে বলেছেন, যে যত জানবে সে তত পরিপূর্ণ দৃষ্টি নিয়ে ‘দ্বিতীয় জন্ম’ লাভ করবে। এ ছাড়া, হুকুম সংক্রান্ত আয়াতগুলো এতোটাই সুস্পষ্ট যে (মুহকামাত), তা জানার ও মানার জন্য স্বাভাবিক চেষ্টা করাই যথেষ্ট। এমনকি, চূড়ান্ত পুরস্কার লাভের জন্য অত্যাবশ্যকীয় করণীয় কাজের তালিকাও ২/১ লাইনের বেশি নয়! এরপরও কোন জিনিস মানুষকে বিভ্রান্ত কর? শুধুমাত্র মহাপ্রভুর কিতাব থেকে দূরে সরে গেলেই মানুষ বিভ্রান্ত হয়। কিতাবের ব্যাখ্যা কিতাবের বাইরে তালাশ করা সবচেয়ে বড় ভুল। এ যেন অন্ধকার ঘরে সূচ হারিয়ে, বাইরের ল্যাম্পপোস্টের আলোর নিচে সূচ খোঁজার মতো! কারণ, ল্যাম্পপোস্টের নিচে আলো আছে, আর অন্ধকারে সূচ খুঁজতে আলো লাগে! গোটা জাতি আজ সেই দশায় ভুগছে।
তাহলে কুর’আন বোঝানো ও ব্যাখ্যা করার দায়িত্ব কার?
– প্রধান দায়িত্ব মহান রব্বুল আলামিনের। যেহেতু তিনি নাযিল করেছেন, তাই তিনিই বলে দেবেন কীভাবে আল-কুর’আন ব্যাখ্যা করা যাবে।
وَيَوْمَ نَبْعَثُ فِيْ كُلِّ اُمَّةٍ شَهِيْدًا عَلَيْهِمْ مِّنْ اَنْفُسِهِمْ وَجِئْنَا بِكَ شَهِيْدًا عَلٰى هٰٓؤُلَاۤءِۗ وَنَزَّلْنَا عَلَيْكَ الْكِتٰبَ تِبْيَانًا لِّكُلِّ شَيْءٍ وَّهُدًى وَّرَحْمَةً وَّبُشْرٰى لِلْمُسْلِمِيْنَ ࣖ ( النحل: ٨٩ )
সেদিন আমি প্রত্যেক উম্মাত থেকে তাদের নিজেদেরই মধ্য হতে একজন সাক্ষী দাঁড় করাব, আর এই লোকদের ব্যাপারে সাক্ষ্যদাতা হিসেবে আমি তোমাকে আনব। আমি তোমার প্রতি এ কিতাব নাযিল করেছি যা প্রত্যেকটি বিষয়ের সুস্পষ্ট ব্যাখ্যা, সত্য পথের নির্দেশ, রহমত আর আত্মসমর্পণকারীদের জন্য সুসংবাদ স্বরূপ। {১৬:৮৯}
সুস্পষ্ট বিষয় হলো- তিনি বলছেন, এই কিতাব প্রতিটি বিষয়ের সুস্পষ্ট বিবৃতি-বক্তব্য-বর্ণনা (تِبْيَانًا-তিব্ইয়ানান)। এখন কুর’আন ছাড়া অন্য কোথাও ব্যাখ্যা খুঁজতে যাওয়ার কী অর্থ দাঁড়ায়? তাহলো এই কিতাবে আল্লাহর দাবিকে অস্বীকার করা- তাই নয় কি?
وَيُبَيِّنُ اللّٰهُ لَكُمُ الْاٰيٰتِۗ وَاللّٰهُ عَلِيْمٌ حَكِيْمٌ ( النور: ١٨ )
আল্লাহ তোমাদের জন্য তাঁর বাক্যসমূহ সুস্পষ্টভাবে বিবৃত করেন এবং আল্লাহ সর্বজ্ঞ, প্রজ্ঞাময়। {২৪:১৮}
তোমাদের জন্য আয়াত (লাকুমুল আয়াত) তিনি বয়ান করেন, পরিষ্কার করেন, সুস্পষ্ট করেন (ইয়ু বাইয়্যুনুল্লাহ)। তিনি তাঁর নিজের আয়াত পরিষ্কার করে বর্ণনা করেন। কেন?
কারণ, তিনি আলিমুল হাকিম (ওয়াল্লাহু আলিমুল হাকিম)।
আল-কুর’আন একমাত্র সঠিক ও সুস্পষ্টভাবে তিনিই ব্যাখ্যা করতে পারেন; কারণ তিনিই একমাত্র আলিমুল হাকিম!
وَكَذٰلِكَ نُصَرِّفُ الْاٰيٰتِ وَلِيَقُوْلُوْا دَرَسْتَ وَلِنُبَيِّنَهٗ لِقَوْمٍ يَّعْلَمُوْنَ ( الأنعام: ١٠٥ )
এভাবেই আমি নিদর্শনগুলোকে বার বার নানাভাবে বর্ননা করি। যার ফলে তারা বলে, তুমি শিখে এসেছো, বস্তুত আমি জ্ঞানী লোকদের জন্য তা সুস্পষ্টভাবে বিবৃত করি। {৬:১০৫}
And thus do We diversify the verses so they [i.e., the disbelievers] will say, “You have studied,” and so We may make it [i.e., the Quran] clear for a people who know.
দেখা যাচ্ছে যে, কিতাবের আয়াত বা বিভিন্ন বক্তব্য সম্পর্কে স্বয়ং রসুলুল্লাহ ও তাঁর সাহাবীরা জ্ঞান-গবেষণা-অধ্যয়ন করতেন। আর আল্লাহ এমনভাবে বার বার বর্ণনা করেছেন- অবিশ্বাসীরা পর্যন্ত স্বীকৃতি দিত যে- এই বিষয়ে শিখে-জেনেবুঝে এসে কথা বলছে।
তাড়াতাড়ি ওহি আয়ত্ত করার জন্য তুমি তোমার জিহ্বা সঞ্চালন করো না। নিশ্চয় এটার সংরক্ষণ ও পাঠ করাবার দায়িত্ব আমারই। সুতরাং যখন আমি ওটা পাঠ করি, তখন তুমি সেই পাঠের অনুসরণ কর। অতঃপর নিশ্চয় এটা বিবৃত করার দায়িত্ব আমারই। {৭৫:১৬–১৯}
কাফিররা বলে তার কাছে কুর’আন একসঙ্গে সম্পূর্ণ অবতীর্ণ হলো না কেন; যাতে আমরা তোমার হৃদয়ে তা মজবুত করতে পারি; এবং আমরা তা পাঠ করেছি তারতিলের সঙ্গে।
এবং তারা তোমাকে কোনও উদাহরণ দিলেই আমরা তোমাকে সর্বোৎকৃষ্ট তাফসির দেই। {২৫:৩২,৩৩}
আমি কি আল্লাহ ছাড়া আর অন্য কাউকেও বিচারক মানবো- অথচ তিনিই তোমাদের কাছে নাযিল করেছেন আল-কিতাব ব্যাখ্যা-সহ (মুফাস্সলান)!
আর ইতোপূর্বে আমরা যাদের কিতাব দিয়েছিলাম তারা জানে- এটি তোমার প্রভুর পক্ষ থেকেই পাঠানো হয়েছে। সুতরাং তুমি সন্দেহ পোষণকারীদের অন্তর্ভুক্ত হয়ো না। {৬:১১৪}
আল্লাহ সর্বোত্তম বাণী অবতীর্ণ করেছেন- এমন কিতাব যা সামঞ্জস্যপূর্ণ, যার বিষয়াবলী পুনরাবৃত্তি করা হয়েছে। যারা তাদের প্রতিপালককে ভয় করে তাদের গা এতে শিউরে ওঠে। তখন তাদের দেহ-মন আল্লাহর স্মরণে বিনম্র হয়। এ হল আল্লাহর হিদায়াত, যাকে ইচ্ছে তা দিয়ে হিদায়াত করেন। আর আল্লাহ যাকে পথহারা করেন, তার কোন পথপ্রদর্শক নেই। {৩৯:২৩}
মহান আল্লাহ স্বয়ং এই কুর’আনকে সর্বোৎকৃষ্ট বাণী বা আহসানুল হাদিস বলেও উল্লেখ করেছেন।
এখন আর কোন বক্তব্য, বাণী, বিবৃতি বা কথা দিয়ে আল্লাহর কিতাব মানুষ ব্যাখ্যা করবে? আহসানুল হাদিস বা সর্বোৎকৃষ্ট কথার চেয়ে আর ভালো কিছু আছে কি? যা দিয়ে মহান আল্লাহর কথাগুলো ব্যাখ্যা করা যাবে?
এখানে উল্লেখ করা প্রয়োজন যে, বাংলা ভাষাভাষীরা যেভাবে ‘বাংলা ভাষা’ দিয়ে কিতাবে উল্লেখিত আল্লাহর বাণী বোঝার চেষ্টা করছে, সেভাবেই অন্য ভাষার মানুষও চেষ্টা করছে ও করবে। এখানে ‘ভাষা’ হলো মহাপ্রভুর কথা বোঝার কাজে ব্যবহৃত সহায়ক উপকরণ মাত্র। তেমনি, মহাগ্রন্থের কোনও আয়াত আরও ভালোভাবে, আরও গভীর অর্থ-তাৎপর্য বুঝতে, পদার্থবিজ্ঞান, গণিত, রসায়ন, জোতির্বিজ্ঞান- ইত্যাদি নানা বিষয়ের সাহায্য নিতে হবে। যা সহায়ক টুলস মাত্র। মানুষের গভীর থেকে গভীরতর উপলব্ধিতে সহায়ক উপকরণ মাত্র। আল-কুর’আনের যে কোনও বিষয়ে সিদ্ধান্ত, হুকুম ও মূল কথা মহাগ্রন্থ থেকেই নিতে হবে। বোঝা ও বোঝানোর ক্ষেত্রে যে দুর্বলতা- তা কুর’আনের নয় বরং যিনি পড়বেন ও বোঝার চেষ্টা করবেন একান্তই তার। ব্যক্তির জ্ঞানগত যোগ্যতার ওপর ভিত্তি করে মানুষ একই বিষয় কম বা বেশি বুঝে থাকে। এটাই স্বাভাবিক বিষয়। আর ভুল-ভাবে বা ভুল পদ্ধতিতে বোঝার চেষ্টা করলে মানুষ ভুল বুঝবে—এটাও স্বাভাবিক। তাই ভুল পদ্ধতিতে কুর’আন বোঝার চেষ্টা থেকে দূরে থাকতে হবে।
পরিশেষে, আবারও পাঠকবর্গের কাছে বিনীত অনুরোধ, মহান রব- যিনি আপনার স্রষ্টা, তাঁর ওপর ভরসা করুন এবং আপনার ঘরে থাকা অনুবাদসহ কুর’আন হাতে নিন। বোঝার চেষ্টা করুন। মহান প্রভু আপনাকে দেখিয়ে দেবেন, বুঝিয়ে দেবেন—যা থেকে এতদিন আপনি দূরে ছিলেন।