কুর’আন অনুসরণের নির্দেশ

মহাগ্রন্থ আল-কুর’আন অনুসরণের নির্দেশ

কুর'আন রিসার্চ সেন্টার- কিউআরসি

১. 
মহান আল্লাহ রসুলুল্লাহ সা. এবং তাঁর পরবর্তী সব মানুষকে শুধুমাত্র আল-কুরআন অনুসরণ করার সুস্পষ্ট নির্দেশ দিয়েছেন।

যারা আল্লাহর কাছে আত্মসমর্পণ করেছে তাদের জন্য শুধুমাত্র কুরআন অনুসরণ করা এবং কুর’আন ছাড়া অন সব কথা-মত-পথ প্রত্যাখ্যান করার সুস্পষ্ট নির্দেশ আল-কুরআনে পাওয়া যায়। মহান আল্লাহ কুর’আন ছাড়া যেসব কথা, কাজ, উক্তি, বয়ান, গল্প প্রত্যাখ্যান করার নির্দেশ দিয়েছেন, আল কুর’আনে তাকে হাদিস‘ শব্দ দিয়ে উল্লেখ করা হয়েছে। পাশাপাশি, প্রচলিত দৃষ্টিকোণ থেকে- হাদিস শব্দটির অর্থ শেষনবী মোহাম্মাদ রসুলাল্লাহর কথা, কর্ম ও অনুমোদনকে বোঝায়। পাশাপাশি, হাদিসের বইগুলোতে সাহবি ও তাবেয়িনদের কথা-কাজকেও হাদিস হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। তবে, আল-কুরআন বিশ্বাস ও চর্চার ক্ষেত্রে বহুবার শুধুমাত্র কুরআন অনুসরণ করা এবং অন্য সবকিছু প্রত্যাখ্যান করার জন্য সুস্পষ্ট নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। 

আল্লাহর রসুল নিজেও সারা জীবন কুরআন অনুসরণ করতেন। কারণ তাঁকে এই নির্দেশই দেওয়া হয়েছিল। রসুলের অনুসারী হিসেবে- তিনি যা করতেন, আমাদেরও তা-ই করা উচিত। আর সেই কাজটা হলো- একনিষ্ঠভাবে কুরআন অনুসরণ করা।

যেভাবে আল্লাহ বলেছিলেন ঊর্ধ্ব জগতে-

  • আমরা  বললাম- তোমরা সবাই এখান থেকে নেমে যাও; তারপর যখনই আমার কাছ থেকে হুদা (পথনির্দেশ) আসবে, তখন যারাই আমার হুদার অনুসরণ করবে, তাদের কোনো ভয়ও থাকবে না, দুশ্চিন্তাও থাকবে না। {২:৩৮}

আর যুগে যুগে সেই হুদা নাযিল হয়েছে তাওরাত, যবুর, ইঞ্জিল, কুরআন এবং অন্যান্য নামে। তার অনুসরণ করে ইতোমধ্যে একদল মানুষ সফল হয়ে, পৃথিবী থেকে বিদায় নিয়েছে। এখন আপনার-আমার পালা। 

  •  যখন তাদেরকে বলা হয়, তোমরা অনুসরণ কর (ٱتَّبِعُوا۟) যা আল্লাহ নাযিল করেছেন (اَنْزَلَ اللّٰهُ); তারা বলে, বরং আমরা অনুসরণ করব (نَتَّبِعُ), যার উপর আমরা আমাদের পূর্বপুরুষদের (ءَابَآءَنَآ) পেয়েছি, যদিও তাদের পূর্বপুরুষরা কিছুই বুঝত না এবং সঠিক পথে ছিল না! {২:১৭০} 
  • বলে দাও, যদি তোমরা আল্লাহকে ভালবাস তবে আমাকে অনুসরণ কর (فَٱتَّبِعُونِى), আল্লাহ তোমাদেরকে ভালবাসবেন (يُحْبِبْكُمُ), তোমাদের অপরাধগুলো (ذُنُوبَكُمْۗ) ক্ষমা করবেন; এবং আল্লাহ ক্ষমাশীল করুণাময় (غَفُوْرٌ رَّحِيْمٌ)। {৩:৩১}

আর মোহাম্মাদ রসুলুল্লাহ কী অনুসরণ করতেন? প্রিয় নবী নিজ মুখেই তা বলেছেন, আর তা লিপিবদ্ধ আছে কুরআনে। 

  •  আমি তো শুধুমাত্র (إِلَّا) তারই অনুসরণ করি (أَتَّبِعُ) যা ওহি (يُوحَىٰٓ) করা হয় আমাকে। বলো- অন্ধ আর চক্ষুষ্মান কি সমান? তোমরা কি চিন্তাভাবনা করবে না (تَتَفَكَّرُونَ)? {৬:৫০}
  • ..আমি কেবল তারই অনুসরণ করি, যা আমার রবের পক্ষ থেকে আমাকে ওহি করা হয়.. {৭:২০৩}

তাঁকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল শুধুমাত্র তাঁর ওপর অবতীর্ণ ওহি অনুসরণ করার জন্য- অন্য কিছু নয়।

  • তুমি অনুসরণ করো (اِتَّبِعْ) যা  তোমার প্রতি ওহি করা হয় (أُوحِىَ)  তোমার রবের পক্ষ থেকে; নাই ইলাহ (لَآ اِلٰهَ) তিনি ছাড়া (اِلَّا هُوَۚ); মুশরিকদের (ٱلْمُشْرِكِينَ) থেকে দূরে থাকো (وَأَعْرِضْ)। {৬:১০৬}

মোহাম্মাদ রসুলুল্লাহ সা.এর কাছে কী ওহি করা হয়েছিল? মহাগ্রন্থ আল-কুর’আন। যারা শেষ নবীর দেখানো পথে চলবে তারা কী অনুসরণ করবে? আল্লাহ বলেন- 

  • তোমরা অনুসরণ করো (ٱتَّبِعُوا۟) যা অবতীর্ণ হয়েছে (أُنزِلَ) তোমাদের প্রতি তোমাদের রবের পক্ষ থেকে এবং অনুসরণ করো না (لَا تَتَّبِعُوْا) তাকে ছাড়া অন্য অভিভাবক/গুরু (أَوْلِيَآءَ); তোমরা অল্পই উপদেশ শোনো (تَذَكَّرُونَ)। {৭:৩}
  • আর তাদের খেয়াল খুশির অনুসরণ করো না (وَلَا تَتَّبِعْ)  যা তোমার কাছে এসেছে সেই মহাসত্য (مِنَ الْحَقِّۗ)- তা ছেড়ে;..{৫:৪৮}

শেষ নবী রসুল সা. কি জনাব বুখারি, জনাব মুসলিম, জনাব তিরমিজি, জনাব ইবনে মাজাহ, জনাব ইবনে দাউদের বানানো হাদিসের বই অনুসরণ করতেন? আপনারা কি ভেবে দেখেছেন? যা রচনা করা হয়েছে তাঁর ইন্তেকালের দেড়-দুইশ বছর পর! পড়ুন হাদিসের ইতিহাস।

এই অবস্থায় রসুল সা.এর সমসাময়িক লোকজন এবং পরবর্তী প্রজন্মের মানুষের জন্য সুস্পষ্ট নির্দেশ হলো- 

  • আর অনুসরণ করো (ٱتَّبِعُوٓ) উত্তম (أَحْسَنَ) যা নাযিল হয়েছে তোমাদের কাছে তোমাদের রবের পক্ষ থেকে- তোমাদের ওপর হঠাৎ আযাব আসার আগে- যখন টেরই পাবে না (لَا تَشْعُرُوْنَ)! {৩৯:৫৫};
  • হে নবী (يٰٓاَيُّهَا النَّبِيُّ) তোমার জন্যে আল্লাহই যথেষ্ট এবং মুমিনদের মধ্যে যারা তোমার অনুসরণ (ٱتَّبَعَكَ) করে {৮:৬৪}

২. 
মহাগ্রন্থ আল-কুরআনের বাইরে অন্য যে কোনও কিছু অনুসরণ করার বিষয়ে সুরা আল জাসিয়াতে সুস্পষ্ট সতর্কতা দেওয়া হয়েছে। 

ওই সব (تِلْكَ) আল্লাহর নিদর্শনাবলী (اٰيٰتِ اللّٰهِ ) বিবৃত করছি তোমার কাছে (نَتْلُوْهَا عَلَيْكَ) যথাযথ-ভাবে (بِالْحَقِّۚ); অতএব আল্লাহ এবং তার নিদর্শনাবলী ছাড়া তারা কোন হাদিসে (حَدِيثٍۭ) বিশ্বাস করবে !?

These are God’s revelations (Quran) that We recite to you with truth, so in which hadith other than God and His revelations (Quran) do they believe? {45:6}

সুরা মুরসালাতের শেষ দুই আয়াতেও আল্লাহ সতর্ক করে বলেছেন:

সেদিন দুর্ভোগ মিথ্যারোপকারীদের জন্য (لِّلْمُكَذِّبِينَ)। তাহলে এখন কোন হাদিসে/কথায় (حَدِيثٍۭ) তারা বিশ্বাস করবে? {৭৭: ৪৯,৫০} 

এখানে উল্লেখযোগ্য বিষয় হলো, মহান রব জাসিয়া ৬ নম্বর আয়াত এবং মুরসালাতের ৫০ নম্বর আয়াতে হাদিস শব্দটি ব্যবহার করেছেন। মহাজগতের প্রভু বিশ্বাসসংক্রান্ত বিষয়ে শুধুমাত্র মহাগ্রন্থ আল-কুরআন অনুসরণ করার নির্দেশ দিয়েছেন এবং অন্য যে কোনো হাদিসবই/ কিতাব/ উৎস/ ব্যক্তির কথা/ মতামত/ মন্তব্য ব্যবহার না-করার নির্দেশ দিয়েছেন। 

তবে, ভীষণ দুঃখের বিষয় হলো, বেশিরভাগ কুরআনের অনুবাদক হাদিস শব্দটিকে বাণী‘, ‘কথা‘, ‘বক্তৃতা‘, ‘ঘোষণার’ মতো শব্দ দিয়ে অনুবাদ করেছেন। বেশিরভাগ ইংরেজি অনুবাদেও ‘statement’, ‘exposition’, ‘discourse’, ‘announcement’ শব্দগুলো ব্যবহার করা হয়েছে। এ কারণে মহিমান্বিত কুরআনের আয়াতের অর্থ ও নির্দেশনা সম্পূর্ণরূপে হারিয়ে গেছে!

নিচের দুটি আয়াতেও হুবহু একই নির্দেশ দিয়েছেন আল্লাহ রব্বুল আলামিন। 

  • তারা কি লক্ষ্য করে না মহাকাশ ও যমিনের সার্বভৌম কর্তৃত্বের (مَلَكُوتِ) বিষয়ে, আর যা সৃষ্টি করেছেন আল্লাহ- সবকিছু এবং হতে পারে তাদের সময় (أَجَلُهُمْۖ) কাছাকাছি এসেছে; তাহলে এরপর কোন কথায়/ হাদিসে (حَدِيثٍۭ) তারা বিশ্বাস করে? {৭:১৮৫}
  • فَبِأَيِّ حَدِيثٍ بَعْدَهُ يُؤْمِنُونَ {৭:১৮৫
  • Which hadith after it do they believe in? {7:185}

মহান রব্বুল আলামিন সতর্ক করে বলছেন কুরআন ছাড়া আর কোনও কথা বা হাদিসের ওপর বিশ্বাস করা যাবে না। এই কথাগুলো স্বয়ং প্রিয়নবী মোহাম্মাদ রসুলুল্লাহ সা. নিজ মুখে তাঁর সাহাবিদের ও সমসাময়িক সব মানুষকে বলে গেছেন। এজন্য তিনি পৃথিবী থেকে বিদায় নেওয়ার দেড়-দুইশ বছর পর্যন্ত হাদিসের বই তৈরির কোনো তথ্য ইতিহাসে দেখা যায় না। 

মহান রব সুস্পষ্ট ভাষায় বলেছেন- কোনও কিছু বিশ্বাস করা এবং সেই বিশ্বাসের ওপর ভিত্তি করে ধর্মীয় আইনকানুন তৈরি করার মতো বিষয়ে আল-কুরআন ছাড়া অন্য কোনও কিছু অনুসরণ করো না!

উল্লেখ্য, ইসলাম যখন সারা বিশ্বে ছড়িয়ে পড়ছিল এবং মহাগ্রন্থ আল-কুরআনকে বিভিন্ন দেশের ভাষায় অনুবাদ করার প্রয়োজন দেখা দিল- তখনই মূলত আন্তর্জাতিক অঙ্গনে এই চক্রান্তের সূত্রপাত হয়। আরবি হাদিস শব্দের অনুবাদ যদি হাদিস রাখা হতো- তাহলে সবগুলো মাজহাবের হাদিস চর্চার মূলে কুঠারাঘাত করা হতো। সাধারণ সচেতন মানুষ হাদিসের বই থেকে বহু দূরে থাকত। তখন শুধুমাত্র আল-কুরআন কেন্দ্রিক জ্ঞান-গবেষণা-অধ্যয়ন হতো। এজন্য হাদিস শব্দের অনুবাদে বিভিন্ন ভাষায় বিভিন্ন অর্থ করা হয়েছে। ঠিক যেমন সালাত শব্দের অনুবাদ করা হয়েছে নামায; সাওম শব্দের অনুবাদ করা হয়েছে রোজা। যা সম্পূর্ণ ভুল এবং ইসলামের ওপর আরোপ করা ভিন্ন ধর্মের বিধিবিধান।

এবার সুরা আরাফের ২,৩ নং বাক্যের দিকে লক্ষ করি। 

  • কিতাব (كِتَٰبٌ) অবতীর্ণ হয়েছে (أُنزِلَ) তোমার কাছে অতএব তোমার মনের মধ্যে কোনো সংকোচ (حَرَجٌ) না হয় তা থেকে তুমি যেন সতর্ক করো (لِتُنذِرَ) তা দিয়ে; এবং উপদেশ বিশ্বাসীদের জন্য। তোমরা অনুসরণ করো (ٱتَّبِعُوا۟) যা অবতীর্ণ হয়েছে (أُنزِلَ) তোমাদের প্রতি তোমাদের রবের পক্ষ থেকে এবং অনুসরণ করো না (لَا تَتَّبِعُوْا) তাকে ছাড়া অন্য অভিভাবক/গুরু (أَوْلِيَآءَ); তোমরা অল্পই উপদেশ শোনো (تَذَكَّرُونَ)। {৭:২,৩} 
  • A Book has been brought down to you, so let there be no constraint in your chest because of it, and so that you may warn with it. It is a Reminder for the believers. Follow what has been brought down to you from your Lord and do not follow any allies besides Him. Rarely do you remember! (7:2,3)

সুরা আরাফের এই দুটি আয়াতে একনিষ্ঠভাবে শুধুমাত্র কুরআন অনুসরণ করার জন্য সুস্পষ্ট নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। প্রিয় নবী সা. জীবনভর এই শিক্ষাই দিয়ে গেছেন তাঁর সঙ্গী-সাথী-সাহাবিদের। 

  • তোমাদের কী হয়েছে- তোমরা কীভাবে সিদ্ধান্ত নিচ্ছ? তোমাদের কাছে কি কোনো কিতাব আছে যা তোমরা পড়ছো/ শিখছো? সেখানে তোমরা যা পছন্দ করো তাই পাও? {৬৮:৩৭,৩৮,৩৯}
  • أَمْ لَكُمْ كِتَابٌ فِيهِ تَدْرُسُونَ { ৬৮:৩৭,৩৮,৩৯}
  • Or do you have some book in which you are studying? That indeed for you is whatever you choose? {68:37,38}

এখন যে কারও কাছে কুরআন ছাড়া অন্য কোনও কিতাব থাকলে তা আস্তে করে লুকিয়ে ফেলার কথা। নাকি, মহাপ্রভুর এই প্রশ্নের জবাবে ব্যাগ থেকে আপনার কিতাবগুলো বের করে দেখিয়ে বলবেন— আমার  কাছে এসব কিতাব আছে- যার ভিত্তিতে জ্ঞান অর্জন করি ও শিক্ষা নেই! 

আমরা কি প্রতিনিয়ত এই দুঃসাহসিক কাজটিই করে যাচ্ছি না? ভেবে দেখুন।

সুরা ক্বলমের এই আয়াতগুলোতে আল্লাহ তাদেরকে উপহাস করছেন- যারা কুরআন ছাড়া অন্যান্য বইপত্রের অনুসরণ করেঅনুসরণ করতে হবে শুধুমাত্র কুরআন। পথনির্দেশ নিতে হবে শুধুমাত্র কুরআন থেকে।

পাশাপাশি, সুরা লোকমানে সতর্ক করে দেওয়া হয়েছে যে: 

  • আর কিছু মানুষ অর্থহীন হাদিস কিনে- যা আল্লাহর পথ থেকে অজ্ঞের মতো দূরে সরিয়ে দেয় এবং ঠাট্টা-বিদ্রূপ করে; তাদের জন্য রয়েছে অপমানজনক আযাব। {৩১:৬}
  • ومن الناس من يشتري لهو الحديث ليضل عن سبيل الله بغير علم ويتخذها هزوا {৩১:৬}

এখানে মহান আল্লাহ বলছেন- তাঁর পথ থেকে দূরে সরানোর জন্য লাহওয়াল হাদিস সংগ্রহ করে মানুষ!

সুরা তুর-এ আল্লাহ চ্যালেঞ্জ করে বললেন: 

  • নাকি তারা বলে- এই কুরআন সে নিজে বানিয়েছে? আসলে তারা বিশ্বাস করে না। তাহলে তাদেরকে (কুরআনের) এর মতো একটি হাদিস আনতে বলো– যদি তাদের দাবি সত্য হয়! {৫২:৩৩,৩৪}

মহান আল্লাহ আল-কুর’আনের বাণীকেই ‘হাদিস’ বলে উল্লেখ করেছেন। যেমন তিনি বলেছেন ‘সুন্নাহ’ হলো আল্লাহর সুন্নত- অন্য কারও নয় (পড়ুন সুন্নত)। নিঃসন্দেহে রব্বুল আলামিনের এসব চ্যালেঞ্জ ও যৌক্তিক কথাবার্তা তৎকালীন কাফের মুশরিকদের জন্য ছিল; কিন্তু এসব আয়াত কুরআনে লিপিবদ্ধ করে পৌঁছে দিয়েছেন আমাদের সময় পর্যন্ত। যেন, কিয়ামত পর্যন্ত মানবজাতি শিক্ষা গ্রহণ করতে পারে। 

৩.

সুরা আনআমের ১৫৫ নং আয়াত লক্ষ্য করুন।

  • এটি একটি গ্রন্থ (কিতাব), যা আমরা অবতীর্ণ  করেছি- খুব মঙ্গলময়, অতএব, এরই অনুসরণ করো (ফাত্তাবিয়ু-হু) এবং ভয় করো- যাতে তোমরা রহমত পাও। {৬:১৫৫} 
  • And this is a blessed Book which We brought down, so follow it and be reverent so that you may attain mercy. 6:155

এখানে আমরা আবারও শুধুমাত্র কুরআন অনুসরণের নির্দেশ পাই। জীবন চলার পথে বিশ্বাস-ধর্ম-কর্ম, আচার-আচরণ-অনুশীলনে কুরআন ছাড়া অন্য কোনও বই/ কিতাব/ গ্রন্থ অনুসরণ করা যাবে না। মহাগ্রন্থ জুড়ে এমন আরও অসংখ্য আয়াত রয়েছে। 

জ্ঞান অর্জনের জন্য অধ্যয়ন করা আর অনুসরণ করার জন্য পড়াশোনা করা দুটি ভিন্ন বিষয়। স্কুল-কলেজ- বিশ্ববিদ্যালয়, বিষয়ভিত্তিক উচ্চতর অধ্যয়ন- জ্ঞান অর্জন মানবজাতিকে সমৃদ্ধ করে। এসব কোনও কিছু থেকেই আল্লাহ দূরে থাকতে বলেন নি। বরং, তিনি জ্ঞান অর্জনে মানুষকে উৎসাহ দিয়েছেন। তিনিই  বলেছেন প্রকৃতির হাজারো নিদর্শন থেকে কি মানুষ শিখতে পারে না? বুঝতে পারে না? উপলব্ধি করে না? তিনিই বলেছেন- জ্ঞানীরাই মহান স্রষ্টার প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে। 

কিন্তু, অন্তরের বিশ্বাস, বিশ্বাসের ভিত্তিতে জীবনের আচার-আচরণে অনুশীলন এবং একনিষ্ঠভাবে কোনও কিছু মেনে চলার ক্ষেত্রে, অনুসরণ করার ক্ষেত্রেশুধুমাত্র তাঁর নাযিল করা আল-কিতাব বা আল-কুরআন মানতে হবে। কোনোভাবেই এর বাইরে যাওয়া যাবে 

  • কী করে তোমরা অস্বীকার করো, যখন তোমাদের প্রতি আল্লাহর আয়াত পাঠ করা হয় এবং তোমাদের মাঝে রয়েছে আল্লাহর রসূল! যে শক্ত করে ধরবে আল্লাহকে, তাকে অবশ্যই পরিচালিত করা হবে সিরাতুল মুস্তাকিমের উপর। {৩:১০১}
  • আল্লাহ কাউকেও হিদায়াত দিতে চাইলে ইসলামের জন্যে তার হৃদয়কে উদার করে দেন; আর যাকে তিনি গোমরাহ্ করতে চান তার অন্তরকে করে দেন অতিশয় সংকীর্ণ; তখন তার কাছে ইসলাম সিঁড়ি বেয়ে আকাশে উঠার মতোই কঠিন মনে হয়; যারা ঈমান আনেনা আল্লাহ্ এভাবেই তাদের লাঞ্ছিত করেন।
    এটাই তোমার প্রভুর সিরাতুল মুস্তাকিম। উপদেশ গ্রহণকারী লোকদের জন্যে আমরা নিদর্শন বর্ণনা করে দিলাম বিশদভাবে। {৬:১২৫,১২৬}
প্রথম প্রকাশ: ৩১ মার্চ ২০২২

3 thoughts on “কুর’আন অনুসরণের নির্দেশ”

  1. আলহামদুলিল্লাহ।
    খুব শিক্ষণীয় আলোচনা।

    1. পড়ার জন্য ধন্যবাদ। মহাগ্রন্থ অনুধাবন ও অনুসরণের আবেদন রইলো।

  2. মাস চারটির নাম সম্বলিত আয়াত নং দিয়ে আমাকে কুফরী থেকে বাঁচান?
    ।।।
    নিশ্চয় আল্লাহর বিধান ও গননায় মাস বারটি, আসমানসমূহ ও পৃথিবী সৃষ্টির দিন থেকে। তন্মধ্যে চারটি সম্মানিত। এটিই সুপ্রতিষ্ঠিত বিধান; সুতরাং এর মধ্যে তোমরা নিজেদের প্রতি অত্যাচার করো না। আর মুশরিকদের সাথে তোমরা যুদ্ধ কর সমবেতভাবে, যেমন তারাও তোমাদের সাথে যুদ্ধ করে যাচ্ছে সমবেতভাবে। আর মনে রেখো, আল্লাহ মুত্তাকীনদের সাথে রয়েছেন।
    এই মাস পিছিয়ে দেয়ার কাজ কেবল কুফরীর মাত্রা বৃদ্ধি করে, যার ফলে কাফেরগণ গোমরাহীতে পতিত হয়। এরা হালাল করে নেয় একে এক বছর এবং হারাম করে নেয় অন্য বছর, যাতে তারা গণনা পূর্ণ করে নেয় আল্লাহর নিষিদ্ধ মাসগুলোর। অতঃপর হালাল করে নেয় আল্লাহর হারামকৃত মাসগুলোকে। তাদের মন্দকাজগুলো তাদের জন্যে শোভনীয় করে দেয়া হল। আর আল্লাহ কাফের সম্প্রদায়কে হেদায়েত করেন না। [সুরা তাওবা – ৯:৩৬-৩৭]

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *