জান্নাত ও তার পূর্বশর্ত

জান্নাত ও তার পূর্বশর্ত​

    প্রথমেই চিন্তা আসে- জান্নাত কী ও কেমন? পবিত্র কুর’আনে জান্নাতের যে বর্ণনা রয়েছে তা থেকে সংক্ষেপে বলা যায়- জান্নাত হলো এমন একটি মহাবিশ্ব বা ইউনিভার্স যার প্রশস্ততা (চওড়া) মহাবিশ্বের মতো। বলা যেতে পারে- জান্নাত একটি স্ট্যাটিক ইউনিভার্স (static universe); যেখানে সময় স্থির হয় থাকে; বয়স বাড়ে না, সময়ও ফুরায় না! সেখানে আল্লাহর কোনও নেয়ামত শেষ হয়ে যায় না! 

দ্বিতীয় উল্লেখযোগ্য প্রশ্ন হতে পারে- মহাবিস্ময়কর সেই জান্নাতে যাওয়ার শর্ত কী?

মূলত, ধর্ম ও কর্মে বিশ্বাসী যে কেউ জান্নাতে যাওয়ার ইচ্ছা পোষণ করেন। কুরআনে একাধিকবার বলা হয়েছে- জান্নাতে যাওয়াই চূড়ান্ত সফলতা। সেই চূড়ান্ত সফলতা অর্জনের সূত্র বা শর্ত কি আল্লাহ পাক কুরআনে বলবেন না? অবশ্যই কুরআনেই তা বিস্তারিত বলেছেন আল্লাহ।

যিনি এই মহাবিশ্ব (সামাওয়াত) ও জান্নাত নামক মহাবিশ্বের অধিপতি, একমাত্র তাঁর পথনির্দেশ অনুসরণ করলেই জান্নাতে যাওয়া যাবে। এ বিষয়ে বিন্দুমাত্র সন্দেহের অবকাশ নাই। তাই, তাঁর কাছ থেকেই পথের দিশা অনুসন্ধান করতে হবে; অন্য কোথাও নয়।

মহান রব নিজেই তাঁর জান্নাতের দিকে মানুষকে ছুটে যেতে বলেছেন! কীভাবে যাবো? কী করলে জান্নাতের দিকে ছুটে যাওয়া হবে? কী সেই পূর্বশর্ত বা পদ্ধতি? চলুন দেখা যাক…

শুভ সংবাদ দাও তাদেরকে, যারা ঈমান আনবে আমলে সালেহ্ করবে, তাদের জন্যে রয়েছে জান্নাত, যার নিচে নদী উৎসারিত। (বাকারা ২৫)

যারা ঈমান আনে আমলে সালেহ্ করে, তারা হবে জান্নাতের অধিবাসীসেখানে থাকবে তারা চিরকাল। (বাকারা ৮২)

হাঁ, যে আল্লাহ্‌র নিকট সম্পূর্ণরূপে আত্মসর্মপণ করে এবং সৎকর্মপরায়ণ হয়, তার ফল প্রতিপালকের নিকট আছে এবং তাদের কোন ভয় নাই ও তারা দুঃখিত হবে না। (বাকারা ১১২)

বলো, আমি কি তোমাদেরকে এসব জিনিসের চেয়ে আরও উৎকৃষ্ট কোনও কিছুর খবর দিব? যারা তাক্ওয়া অবলম্বন করে তাদের জন্য তাদের প্রতিপালকের কাছে আছে জান্নাতসমূহ, যার পাদদেশে রয়েছে প্রবাহিত নদী। (ইমরান ১৫)

যারা ঈমান আনে এবং আমলে সালেহ্ করে, অচিরেই আমরা তাদের দাখিল করবো জান্নাতেযার নিচে বহমান থাকবে নদী। চিরকাল থাকবে তারা সেখানে। তা ছাড়া সেখানে তারা পাবে পবিত্র স্বামী ও স্ত্রী। আর আমরা তাদের দাখিল করবো সুবিস্তৃত চিরস্নিগ্ধ ছায়ায়। (নিসা ৫৭)

আর যারা ঈমান আনেসৎকাজ করে তাহাদেরকে দাখিল করব জান্নাতে, যার পাদদেশে নদী প্রবাহিত; সেখানে তারা চিরস্থায়ী হবে; আল্লাহ্‌র প্রতিশ্রুতি সত্যকে আল্লাহ্‌ অপেক্ষা কথায় অধিক সত্যবাদী ? (নিসা ১২২)

যে কোনো পুরুষ বা নারী মুমিন অবস্থায় আমলে সালেহ্ করবে, তারা অবশ্যই দাখিল হবে জান্নাতে এবং তাদের প্রতি কণা পরিমাণ অবিচারও করা হবেনা। (নিসা ১২৪)

আল্লাহ ওয়াদা করেছেন, যারা ঈমান আনে ও আমলে সালেহ করে, তাদের জন্যে রয়েছে মাগফিরাত ও বিশাল পুরস্কার। (মায়েদা ৯)

যারা ঈমান আনে এবং আমলে সালেহ্ করে, তাদের প্রভু তাদের ঈমানের ভিত্তিতে নিয়ে যাবেন সেই নিয়ামতে ভরা জান্নাতের দিকে, নিচে যার প্রবাহিত নহর! (ইউনুস ৯)

তবে যারা সবর অবলম্বন করে এবং আমলে সালেহ্ করে তাদের জন্যে রয়েছে মাগফিরাত এবং বিশাল পুরস্কার। (হুদ ১১)

….যারা ঈমান আনে, আমলে সালেহ্ করে এবং তাদের প্রভুর প্রতি বিনীত হয়ে জীবনযাপন করে, তারাই হবে জান্নাতের অধিকারীসেখানেই থাকবে তারা চিরকাল। (হুদ ২২,২৩)

আমি কাউকে তার সাধ্যাতীত ভার দেই না। যারা ঈমান আনে ও সৎকর্ম করে তারাই জান্নাতি, সেখানে চিরকাল থাকবে। (আরাফ ৪২)

যারা ঈমান আনে সৎকর্ম করে তারা জান্নাতে প্রবেশ করবে- যার পাদদেশে নদী বয়ে যায়। (ইব্রাহিম ২৩)

 সব প্রশংসা আল্লাহ্‌রই যিনি তাঁর বান্দার প্রতি এই কিতাব নাযিল করেছেন এবং তাতে কোনও বক্রতা নাই; একে করেছেন সুপ্রতিষ্ঠিত তাঁর কঠিন শাস্তি সম্পর্কে সতর্ক করার জন্য; এবং মুমিনগণ, যারা সৎকর্ম করে, তাদেরকে এই সুসংবাদ দেওয়ার জন্য যে, তাদের জন্য আছে উত্তম পুরস্কার, যাতে তারা চিরস্থায়ী হবে। (কাহ্‌ফ ১-৩)

যারা ঈমান আনে এবং আমলে সালেহ্ করে তাদের আতিথ্যের জন্যে প্রস্তুত রাখা হয়েছে জান্নাতুল ফেরদাউস। (কাহফ ১০৭)

…এবং যারা তাঁর নিকট উপস্থিত হবে মুমিন অবস্থায় সৎকর্ম করে, তাদের জন্য আছে সমুচ্চ মর্যাদা; স্থায়ী জান্নাত, যার পাদদেশে নদী প্রবাহিত, সেখানে তাহারা স্থায়ী হবে এবং এই পুরস্কার তাদেরই, যারা পবিত্র। (ত্বহা ৭৫,৭৬)

যারা ঈমান আনে এবং আমলে সালেহ্ করে আল্লাহ্ তাদের দাখিল করবেন জান্নাতে, যার নিচে বয়ে যায় নদী। আল্লাহ্ যা ইচ্ছা তা-ই করেন। (হজ্জ ১৪)

যারা ঈমান আনে এবং আমলে সালেহ্ করে আল্লাহ্ তাদের দাখিল করবেন জান্নাতে, যার নিচে দিয়ে নদী বয়ে যায়। তাদেরকে সেখানে অলংকার পরানো হবে সোনার ও মুক্তার। তাদের পোশাক হবে রেশমি পোশাক। (হজ্জ ২৩)

অতএব, যারা ঈমান আনবে এবং আমলে সালেহ্ করবে, তাদের জন্যে থাকবে মাগফিরাত এবং সম্মানজনক জীবিকা। (হজ্জ ৫০)

আর যারা ঈমান আনবে এবং আমলে সালেহ্ করবে– আমরা অবশ্যই বসবাসের জন্যে জান্নাতে উঁচু প্রাসাদ দেবো। সেসবের নিচে নদী বয়ে যায়। চিরদিন থাকবে তারা সেখানে। কতো যে উত্তম প্রতিদান নেক আমলকারীদের জন্যে। (আনকাবুত ৫৮)

যেদিন কিয়ামত হবে সেদিন মানুষ বিভক্ত হয়ে পড়বে। অতএব যারা ঈমান এনেছে সৎকর্ম করেছে তারা জান্নাতে থাকবে। (রুম ১৪,১৫)

যারা ঈমান আনে আমলেসালেহ্ করে, তাদের জন্যে রয়েছে জান্নাতুন নায়ীম।(লুকমান ৮)

যারা ঈমান আনে, সৎকর্ম করে তাদের কৃতকর্মের ফলস্বরূপ তাদের আপ্যায়নের জন্য স্থায়ী বাসস্থান হবে জান্নাত। (সিজদাহ ১৯)

এর কারণ যারা ঈমান আনে এবং আমলে সালেহ্ করে তিনি তাদের পুরস্কার দেবেন এবং তাদের জন্যে রয়েছে মাগফিরাত ও সম্মানজনক রিযিক। (সাবা ৪)

যারা কুফুরি করে তাদের জন্যে রয়েছে কঠিন আযাব। আর যারা ঈমান আনে এবং আমলে সালেহ্ করে, তাদের জন্যে রয়েছে মাগফিরাত ও মহাপুরস্কার। (ফাতির ৭)

আর যারা ঈমান আনে এবং আমলে সালেহ্ করে তাদের জন্যে রয়েছে অফুরন্ত পুরস্কার। (হা মিম সাজদা/ফুসসিলাত ৮)

তুমি দেখবে এই যালিমরা তাদের কৃতকর্মের জন্যে ভীত আতংকিত। অথচ তা (আল্লাহর আযাব) তাদের উপর আপতিত হবেই। পক্ষান্তরে যারা ঈমান এনেছে এবং আমলে সালেহ্ করেছে, তারা বসবাস করবে জান্নাতের মনোরম বাগ-বাগিচায়। তারা যা যা ইচ্ছা করবে তাদের প্রভুর কাছে সবই পাবে। এ হলো সর্বশ্রেষ্ঠ অনুগ্রহ। (আশ শুরা ২২)

যারা আমার আয়াতে বিশ্বাস করেছিল এবং আত্মসর্মপণ করছিল। তোমরা এবং তোমাদের সহধর্মিণীগণ সানন্দে জান্নাতে প্রবেশ কর। (যুখরুফ ৬৯, ৭০)

যারা ঈমান এনেছে এবং আমলে সালেহ করেছে, তাদের অবস্থা হবে সম্পূর্ণ ভিন্ন। তাদের প্রভু তাদের দাখিল করবেন তাঁর রহমতে (জান্নাতে)। এটাই সুস্পষ্ট সফলতা। (জাসিয়া ৩০)

যারা কুফুরির পথ ধরেছে এবং আল্লাহর পথে বাধা দিয়েছে, তিনি ব্যর্থ করে দিয়েছেন তাদের সব কর্মকাণ্ড। (মুহাম্মদ ১-৩)

আর যারা ঈমান এনেছে এবং আমলে সালেহ্ করেছে আর মুহাম্মদের প্রতি যা (যে কিতাব) নাযিল করা হয়েছে তার প্রতি ঈমান এনেছে, আর এতো তাদের প্রভুর পক্ষ থেকে মহাসত্য; তিনি তাদের থেকে দূর করে দেবেন তাদের মন্দ আমলগুলো এবং সংশোধন করে দেবেন তাদের অবস্থা।

এর কারণ হলোযারা কুফুরি করে তারা অনুসরণ করে মিথ্যা- বাতিলের। আর যারা ঈমান আনে তারা ইত্তেবা (অনুসরণ) করে তাদের প্রভুর পক্ষ থেকে অবতীর্ণ মহাসত্যের। এভাবেই আল্লাহ্ দৃষ্টান্ত দিয়ে থাকেন মানুষের জন্যে। (মুহাম্মদ ১-৩)

যারা ঈমান আনে সৎকর্ম করে আল্লাহ্‌ তাহাদেরকে দাখিল করবেন জান্নাতে- যার পাদদেশে নদী প্রবাহিত। (মুহাম্মদ ১২)

আর যে আল্লাহ্‌র সামনে উপস্থিত হতে ভয় পায়, তার জন্য রয়েছে দুটি জান্নাত। (আর রহমান ৬২)

অবশ্যই যারা ঈমান আনে সৎকাজ করে, তাদের জন্য আছে জান্নাত, যার পাদদেশে নদী প্রবাহিত, এটাই মহাসাফল্য। (বুরুজ ১১)

সুতরাং তোমরা ঈমান আনো আল্লাহর প্রতিতাঁর রসুলগণের প্রতি এবং আমাদের নাযিল করা নূরের প্রতি। তোমরা যা করো আল্লাহ্ সে বিষয়ে খবর রাখেন।

যেদিন তিনি তোমাদের জমা করবেন জমায়েতের দিন, সেটাই হবে হারজিতের দিন। যে কেউ ঈমান আনবে আল্লাহর প্রতি এবং আমলে সালেহ্ করবে, তার থেকে মুছে দেওয়া হবে তার পাপসমূহ এবং তাকে দাখিল করা হবে জান্নাতে, যার নিচে বয়ে যায় নদী। সেখানে থাকবে তারা চিরকাল; এটাই মহাসাফল্য। (তাগাবুন ৮-৯)

তবে তাদের নয়যারা ঈমান আনেআমলে সালেহ্ করে। তাদের জন্যে রয়েছে এমন পুরস্কারযা শেষ হবেনা কখনও। (তীন ৬)

যারা ঈমান আনে আমলে সালেহ্ করে, তারা হলো সৃষ্টির সেরা। (বাইয়্যেনাহ ৭)

সময়ের শপথ। নিশ্চই মানুষ ক্ষতির মধ্যে রয়েছে। তবে তারা ছাড়া- যারা ঈমান আনে, আমলে সালেহ্ করে, একে অপরকে সত্যের উপদেশ দেয় এবং ধৈর্য ধারণ করতে বলে। (আসর)

এসব আয়াতে সুস্পষ্ট যে- জান্নাতে যাবার জন্য ঈমান বা বিশ্বাস করা এবং আমলে সালেহ বা সৎকর্মের বাধ্যতামূলক শর্ত আরোপ করেছেন মহান রব্বুল আলামিন।

কোন্‌ বিষয়ের প্রতি ঈমান আনতে হবে? ওপরের আয়াতগুলোতে দেখা যায়মহান রব ৩১ বার তঁকে বিশ্বাস করা বা ঈমান আনার কথা বলেছেন। একই সঙ্গে ৩১ বার আমলে সালেহ্‌ বা সৎকর্ম করার কথা বলেছেন।

তাহলে আমরা বলতে পারি- নিঃসন্দেহে বিশ্বাস ও সৎকাজই হলো জান্নাতে যাবার পূর্বশর্ত !

সুরা তাগাবুনের ৮ ও ৯নং আয়াতে সুস্পষ্ট করে বলা হয়েছে- বিশ্বাস করো এক আল্লাহর প্রতি, রসুলদের প্রতি এবং নাযিল করা নুরের (কুরআনের) প্রতি।

তা ছাড়া, এসব আয়াতে আলাদাভাবে দুইবার আল্লাহর কাছে আত্মসমর্পণ করা, দুইবার সবর বা ধৈর্য ধারণ করা, তাকওয়া অবলম্বন করা, বিনীত জীবনযাপন করা, কুরআনের অনুসরণ এবং আয়াতে বিশ্বাস করা, পরস্পরকে সত্য ও ধৈর্যের পরামর্শ দেওয়া এবং আল্লাহ্‌র সামনে উপস্থিত হওয়ার কথা বিশ্বাস করতে বলা হয়েছে।

এবারে কুরআনের আলোকে আমলে সালেহ্‌ বলতে কী বোঝায়- তা জানার চেষ্টা করব।

পূর্ব ও পশ্চিম দিকে মুখ ফেরানোর মধ্যে কোনও কল্যাণ/সৎকাজ নেই; বরং সৎকাজ হলোমানুষ ঈমান আনবে এক আল্লাহর প্রতি, শেষ দিবসের প্রতি, ফেরেশতাদের প্রতি, আল্লাহর কিতাব ও নবীদের প্রতি; আর তাঁর ভালোবাসায় মাল-সম্পদ দান করবে আত্মীয়-স্বজন, এতিম, মিসকিনপথিক-পর্যটকদের, সাহায্যপ্রার্থীদের এবং মানুষকে দাসত্ব থেকে মুক্তির কাজে; আর সালাত কায়েম করবেযাকাত দেবে; তা ছাড়া প্রতিশ্রুতি দিলে তা পূর্ণ করবে; এবং অর্থসংকট, দুঃখ-কষ্ট ও সত্য-মিথ্যার সংগ্রামে সবর অবলম্বন করবে। মূলত এরাই সত্যবাদী ও মুত্তাকি। (বাকারা ১৭৭)

তোমরা আল্লাহর পথে ব্যয় করো এবং নিজেদের হাতে নিজেদেরকে হালাক হবার (ধ্বংসের) দিকে নিক্ষেপ করোনা। ভালো কাজ করো, যারা ভালো কাজ করে আল্লাহ তাদের ভালোবাসেন। (বাকারা ১৯৫)

তারা তোমার কাছে জানতে চায়, তারা কী ব্যয় করবে? তুমি বলো: তোমরা উত্তম যা কিছুই ব্যয় করবে, তা করো বাবা-মার জন্যেআত্মীয়-স্বজনের জন্যে এবং এতিম, মিসকিন ও পথিক-পর্যটকদের জন্যে। আর তোমরা জনকল্যাণে যে কাজই করোনা কেন, আল্লাহ সে সম্পর্কে অবহিত। (বাকারা ২১৫)

যারা আল্লাহ্‌র পথে তাদের অর্থ-সম্পদ ব্যয় করে, তারপর সে ব্যয়ের কথা বলে বেড়ায় না এবং এটা দিয়ে কারও মনেও কষ্ট দেয়না, তাদের পুরষ্কার রয়েছে তাদের প্রভুর কাছে। তাদের কোনো ভয়ও থাকবেনা এবং দুঃখ-বেদনাও থাকবেনা। (বাকারা ২৬২)

যারা ব্যয় করে নিজেদের সম্পদ রাতে ও দিনে, গোপনে ও প্রকাশ্যে; তাদের প্রতিদান রয়েছে তাদের প্রভুর কাছে। তাদের কোনো ভয়ও থাকবেনাদুঃখ-বেদনাও থাকবেনা। (বাকারা ২৭৪)

যারা ব্যয় করে সচ্ছল ও অসচ্ছল অবস্থায়, যারা রাগ সংবরণকারী এবং মানুষের প্রতি ক্ষমাশীলকোমল। আর আল্লাহ তো কল্যাণকামীদেরই ভালোবাসেন। (আলে ইমরান ১৩৪)

তোমাদের ভালোবাসার সম্পদ থেকে ব্যয় (দান) না করলে তোমরা কখনো পুণ্য লাভ করবেনা। আর তোমরা যা কিছু ব্যয় করো আল্লাহ সে বিষয়ে বিশেষভাবে অবহিত। (ইমরান ৯২)

আমাদের প্রভু! আমরা শুনেছি একজন আহবায়ককে আহ্বান করছেন ঈমানের দিকে- তোমরা ঈমান আনো তোমাদের প্রভুর প্রতি। (তাঁর আহবানে সাড়া দিয়ে) আমরা ঈমান এনেছি। আমাদের প্রভু! অতএব আপনি আমাদের ক্ষমা করুন, আমাদের সব পাপমুছে দিন আমাদের সব মন্দকর্ম ও ত্রুটি বিচ্যুতি, আর আমাদের ওফাত দান করুন পুণ্যবানদের সঙ্গে। (ইমরান ১৯৩)

আর পুণ্য ও তাকওয়ার কাজে একে অপরকে সহযোগিতা করো (মায়েদা ২)

আর তারা কম ও বেশি যা-ই ব্যয় করে এবং যে কোনো প্রান্তরই অতিক্রম করে, তা তাদের জন্যে পুণ্য হিসাবে লেখা হয়, যাতে করে তারা যা করে আল্লাহ্ তাদেরকে তার চাইতেও উত্তম পুরস্কার দিতে পারেন। (তওবা ১২১)

তোমাদের কারও মৃত্যু আসার আগেই তোমাদেরকে আমরা যে রিযিক দিয়েছি তা থেকে ব্যয় করো। তা না হলে মৃত্যু এলে বলবে- আমার প্রভু! আমাকে আরও কিছুকাল অবকাশ দিন, যাতে আমি দান করতে পারি এবং পুণ্যবান লোকদের অন্তরভুক্ত হতে পারি। (মুনাফিকুন ১০)

পবিত্র কুরআনের এসব আয়াতে সৎকাজ বা ভালো কাজের মৌলিক নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।

শুরুতেই (সুরা বাকারাতে) বলা হয়েছে এক আল্লাহর প্রতি বিশ্বাস করা এবং আখিরাত, ফেরেশতা, আসমানি কিতাব ও নবী-রসুলদের প্রতি বিশ্বাস করা হলো সৎকাজ।

এ ছাড়া, আত্মীয়-স্বজন, এতিম, মিসকিনপথিক-পর্যটক, সাহায্যপ্রার্থী অর্থাৎ বিপদগ্রস্ত মানুষ এবং মানুষকে দাসত্ব থেকে মুক্তির জন্য অর্থ ব্যয় করা সৎকাজ।

সেই সঙ্গে সালাত কায়েম করা, যাকাত দেওয়া; প্রতিশ্রুতি রক্ষা করা হলো সৎকাজ।

জীবন চলার পথে অর্থসংকট, দুঃখ-কষ্ট ও সত্য-মিথ্যার সংগ্রামে ধৈর্য ধারণ করা–অর্থাৎ সততার পথ অবলম্বন করা হলো সৎকাজ।

সচ্ছল ও অসচ্ছল অবস্থায়, দিনে-রাতে বা প্রকাশ্যে-গোপনে আল্লাহ্‌র পথে, বাবা-মার জন্য, আত্মীয়-স্বজনের জন্য, সাহায্যপ্রার্থীদের জন্য অর্থ ব্যয় করা হলো সৎকাজ।

এমনকি জনকল্যাণকর যে কোনও কাজে (কম/বেশি) অর্থ-সময়-মেধা ব্যয় করাও কুরআনের নির্দেশনা অনুযায়ী সৎকাজ।

এসব অসংখ্য সৎকাজের ক্ষেত্রে একে অপরকে সহযোগিতা করা; বিভিন্ন পরিস্থিতিতে রাগ/ক্রোধ সংবরণ করা এবং মানুষকে ক্ষমা করা ও কোমল আচরণ করা হলো সৎকাজ।

মহান আল্লাহ্‌র প্রতি ঈমান রেখে এমনতর অসংখ্য সৎকাজে যারা জড়িত থাকবেতাদের জন্য জান্নাতের নিশ্চিত গ্যারান্টি দিয়েছেন পরাক্রমশালী আল্লাহ!

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *