একজন শিক্ষকের ঘটনা। মনে করি, তার নাম জনাব B। তিনি ৬০ বছর বেঁচে ছিলেন (৮১০-৮৭০ সাল) এবং জ্ঞান গবেষণা ও অধ্যয়নে ৪৫ বছর ব্যয় করেন।
জনাব B জীবনের ৪৫ বছরে ৬ লাখ হাদিস মুখস্থ করেছেন। টানা ১৬ বছরে তিনি এই ৬ লাখ হাদিসের বক্তব্য এবং ধারাবাহিক বর্ণনাকারীদের যাচাই বাছাই করে- তার মধ্যে থেকে ৭ হাজার হাদীসকে ‘সহীহ’ মর্যাদা দেন ও বই লেখেন। মনে করি, বইটির নাম BS.
তিনি জীবনের শেষ ৬ বছরে ৯০ হাজার শিক্ষার্থীকে ৭ হাজার হাদিস সনদ, মতন, ব্যাখ্যা-সহ শিখিয়েও দেন।
এবার আমরা সাধারণ বুদ্ধি বিবেচনা দিয়ে এই দাবিগুলো বিবেচনা করার চেষ্টা করবো।
৯০ হাজার শিক্ষার্থীর ১০০জনের একেকটা দল হলে- মোট ব্যাচ হবে ৯০০টি। আর ৫০জনের দল হলে- ১৮০০ ব্যাচ।
মনে করি, প্রতিদিন ১টা ব্যাচকে ১ ঘণ্টায় ২০টা হাদিস (সনদ, মতন ও ব্যাখ্যা) শিক্ষা দেওয়া হয়। এভাবে দৈনিক ২০টা ব্যাচের ২ হাজার শিক্ষার্থীকে শেখানো হয় ! তাহলে এক বছরে ৭ হাজার হাদিস শিক্ষা দেওয়া যাবে। আর ৫০জনের ব্যাচ ধরলে- ছাত্র সংখ্যা অনেক কমে যায়! তাই একেবারে দ্বিগুণ ধরলাম।
তারপরও ১ বছরে ২ হাজার শিক্ষার্থীকে BS শেখালে, ৬ বছরে ১২ হাজার শিক্ষার্থী BS শিখবে। বাকি ৭৮ হাজার ছাত্র এই ৬ বছরে কীভাবে কী শিখলো- সে গোলক-ধাঁধাঁর সমাধান নাই।
১৫ বছর বয়স থেকে শুরু করে প্রতিদিন টানা ৪১টি হাদিস সংগ্রহ, বর্ণনাকারীদের নাম-ধাম-বংশ পরিচয়, ঈমান-আমল যাচাই বাছাই ও মুখস্থ করলে ৪০ বছরে ৬ লাখ হাদিস মুখস্থ করা যাবে।
তবে, মানুষের দাবি জনাব B, ১৬ বছরেই এমন কর্ম সম্পন্ন করেছিলেন। অর্থাৎ, প্রতিদিন তিনি প্রায় ১০৩টা হাদিস সংগ্রহ, মুখস্থ ও যাচাই-বাছাই করেছিলেন। অবশ্য, মানুষই বলে- একেকটা হাদিস সংগ্রহের জন্য তিনি দিনের পর দিন, রাতের পর রাত উট/ঘোড়া/গাধা/পায়ে হেঁটে এখান থেকে ওখানে গিয়েছেন। আর কোথাও গিয়েই যে টার্গেট করা জীবিত ও তাদের মৃত হাদিস বর্ণনাকারীদের একসঙ্গে চায়ের দোকানে পেয়ে যাবেন—তাও হবার কথা না!
তাহলে, ১টা হাদিস সংগ্রহে ২ দিন লাগলে, ৬ লাখ হাদিসের জন্য তাঁকে বাঁচতে হবে ৩৩৩৩ বছর! আর, দাবি অনুযায়ী ১টা হাদিসের পেছনে ৩ দিন করে সময় দিলে তাঁর আয়ু হল- ৫০০০ বছর। (এখনও বেঁচে থাকার কথা!)
আমাদের এরকম আরও শিক্ষক আছেন। তাঁদের কারও কারও সংগ্রহ ও মুখস্থের পরিমাণ ১০ লাখেরও বেশি হাদিস। মুসলমানদের বিভিন্ন মাজহাবের বিভিন্ন হাদিস শিক্ষকদের কম-বেশি এমনই দশা! অঙ্ক করে কুলাবে না।
বুঝতেই পারছেন, জোর-জবরদস্তি করেও আমাদের তথাকথিত শিক্ষকদের কথা ও কাজ এবং তার ভিত্তিতে গড়ে ওঠা আমাদের বিশ্বাস ও ভবিষ্যৎ রক্ষা করা যাচ্ছে না। আপনারা কেউ পারলে- এই তাসের ঘর রক্ষা করুন।
জেনে বা না-জেনে বিষপানের পরিণতি একই।
তাই, আমরা মহা-সত্যের অনুসরণকারী এবং তাঁর প্রেরিত আদর্শ শিক্ষকের একনিষ্ঠ অনুসারী- সামান্য ও সুস্পষ্ট সতর্ককারী মাত্র। ধন্যবাদ।