আল-কুর’আনে ঈদ!

মহাগ্রন্থের আলোকে ঈদ/ইদ বা ঈদান (عِيدًا)

কুর'আন রিসার্চ সেন্টার- কিউআরসি

মূলত ঈদান (عِيدًاশব্দটি একবারই এসেছে ৫:১১৪ আয়াতে।

আধুনিক ফার্সি (Modern Persian) ভাষাতেও ঈদ শব্দটি পাওয়া যায়। যার অর্থ: আনন্দ/উৎসব/উৎসবের আনন্দ।

অন্যদিকে আরবি দান (عِيدًا) শব্দটির অর্থ ব্যবহারিক ফার্সি ভাষার অর্থ নয়। আরবি ঈদ (عِيدًا) শব্দের আভিধানিক অর্থগুলো হলো: পুনরুদ্ধার, পুনরাবৃত্তিফেরানো, পাঠানো, সুনিশ্চিত প্রত্যাবর্তন ইত্যাদি।

দান (عِيدًا) শব্দের ধাতু আইন ওয়া দাল (ع و د)। এ থেকে উদ্ভূত অন্যান্য শব্দের মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ শব্দটি হলো: ইউয়িদু (يُعِيدُ) যা ১১টি আয়াতে পাওয়া যায়। নিচে এসব আয়াত বিশ্লেষণ করা হবে।

দান (عِيدًاশব্দে যাবার আগে বোঝার সুবিধার্থে ইউয়িদু (يُعِيدُ) শব্দটি দেখব। অভিধান ও প্রচলিত অনুবাদ অনুযায়ী ইউয়িদু (يُعِيدُ) শব্দের অর্থ করা হয়েছে- পুনরাবৃত্তি বা REPEAT। এই অর্থ কি সঠিক? ১১টি আয়াতেই কি পুনরাবৃত্তি বা REPEAT শব্দটি ব্যবহার করা যায়? যদি তা না-হয়, স্বাভাবিকভাবেই পুনরাবৃত্তি’ অর্থটি গ্রহণযোগ্য হবে না।

এ অবস্থায় ২টি ঘটনা ঘটতে পারে। প্রথমত, এসব শব্দের মধ্যে সর্বাধিক উপযুক্ত শব্দটিই ইউয়িদু (يُعِيدُশব্দের অর্থ হবে। দ্বিতীয়ত, এসব অর্থের বাইরে ভিন্ন কোনো অর্থ হবে, যা কালের বিবর্তনে হারিয়ে গেছে।

চলুন, একটি আয়াত দিয়েই শুরু করা যাক।

৭১নং সুরা নুহ’ দেখুন। ১৮নং আয়াতটিই অর্থ বোঝার জন্য গুরুত্বপূর্ণ

  •   ৭১:১৭, ১৮, ১৯, ২০ আর আল্লাহ তোমাদের বর্ধিত করেছেন (وَاللّٰهُ اَنْۢبَتَكُمْ) পৃথিবীতে সঠিক-বর্ধন (مِّنَ الْاَرْضِ نَبَاتًاۙ); তারপর তাতে সংরক্ষণ (?!পুনরাবৃত্তি!?) করেন (ثُمَّ يُعِيْدُكُمْ فِيْهَا) এবং তোমাদের বের করবেন সম্পূর্ণ-বাহির (وَيُخْرِجُكُمْ اِخْرَاجًا); আর আল্লাহ তোমাদের জন্য পৃথিবীকে করেছেন সম্প্রসারিত (وَاللّٰهُ جَعَلَ لَكُمُ الْاَرْضَ بِسَاطًاۙ )!  তোমরা যেন চলতে পারো তাতে প্রশস্ত পথ-ঘাটে (لِّتَسْلُكُوْا مِنْهَا سُبُلًا فِجَاجًا )!

এখানে বোঝা যাচ্ছে, পুনরাবৃত্তি নয়, বরং সংরক্ষণ শব্দটিই বেশি উপযুক্ত। 

প্রশ্ন উঠতে পারে, পৃথিবীতে মানুষর সব কর্ম (আমলনামা) সংরক্ষণ করা হয়। কিন্তু মানুষকে কেন সংরক্ষণ করা হবে? এর কি কারণ হতে পারে? এর উত্তর আছে ১০:৪ নং আয়াতে।

১০:৪…নিশ্চয়ই তিনি আবির্ভূত করেন/অস্তিত্ব দেন সৃষ্টিকে তারপর তা সংরক্ষণ করেন (ثُمَّ يُعِيْدُهٗ) যাতে প্রতিফল দেওয়া যায়….

ভালো বা মন্দ কাজের প্রতিফলন দেওয়ার জন্য মানুষকে সংরক্ষণ করা হয়। এই সংরক্ষণের একটা পর্যায়/অবস্থা/দশা হলো পুনরুদ্ধার। অর্থাৎ, প্রতিফল দেবার জন্য মানুষকে কোনো একভাবে সংরক্ষণ করা হয়, তা থেকে পুনরুত্থান/পুনরুদ্ধার করা হবে কেয়ামত পরবর্তী সময়ে।

মূল বিষয় হলো সংরক্ষণ করা।

  •    ৭১:১৭-২০ আর আল্লাহ তোমাদের বর্ধিত করেছেন (وَاللّٰهُ اَنْۢبَتَكُمْ) পৃথিবীতে সঠিক-বর্ধন (مِّنَ الْاَرْضِ نَبَاتًاۙ); তারপর তাতে/তার মধ্যে সংরক্ষণ করেন (ثُمَّ يُعِيْدُكُمْ فِيْهَا) এবং তোমাদের বের করবেন সম্পূর্ণ-বাহির (وَيُخْرِجُكُمْ اِخْرَاجًا); আর আল্লাহ তোমাদের জন্য পৃথিবীকে করেছেন সম্প্রসারিত (وَاللّٰهُ جَعَلَ لَكُمُ الْاَرْضَ بِسَاطًاۙ )! তোমরা যেন চলতে পারো তাতে প্রশস্ত পথ-ঘাটে (لِّتَسْلُكُوْا مِنْهَا سُبُلًا فِجَاجًا )!

পৃথিবীর কথা বলা হচ্ছে, যেখানে মানুষের জন্ম, বৃদ্ধি ও মৃত্যু হয়। এখানেই মানুষকে সংরক্ষণ করা হয়। কিভাবে মৃত মানুষ সংরক্ষণ হতে পারে? সে বিষয়ে ভিন্ন আলোচনা থাকবে।

এ ছাড়া আরও একটি কারণে ইউয়িদু (يُعِيدُ) শব্দের অর্থ পুনরাবৃত্তি বা REPEAT হতে পারে না।

৭:৫৭ আয়াতের শেষাংশে মৃতদেরকে অন্ধকার এক সংরক্ষণাগার (পৃথিবী) থেকে বের করার কথা বলা হয়েছে।

ভাষাগত দৃষ্টিকোণ থেকে মানুষের পুনরাবৃত্তি হলো পুনরায় মাতৃগর্ভ থেকে ভূমিষ্ঠ হবার গোটা প্রক্রিয়া আগা-গোড়া রিপিট করা।

অন্যদিকে মানুষকে সংরক্ষণ করা হয়, সেখান থেকে আবার বের করা হবে, কোনো পুনরাবৃত্তি না।

আরবি দান (عِيدًاবা ইদ শব্দটির ক্রিয়াবাচক শব্দ হলো ইউয়িদু (يُعِيدُ)। দান (عِيدًا) শব্দের একবারই ব্যবহার পাওয়া যায় ৫:১১৪ আয়াতে। যেখানে নবী ও রসুল ঈসা আকাশ থেকে মাইদাতান নাযিল করার প্রার্থনা করেন। আমরা ২ আয়াত আগে থেকে দেখি।

৫:১১২ হাওয়ারিরা ঈসা নবীকে বলেছিল আকাশ থেকে মায়িদাহ (مائدة من السماء) পাঠানোর জন্য; ঈসা নবী সতর্ক করে বলেন- আল্লাহর ব্যাপারে সজাগ-সচেতন-সতর্ক হও যদি তোমরা বিশ্বাসী হয়ে থাকো (اتقوا الله إن كنتم مؤمنين)!

এরপর ৫:১১৩ তে হাওয়ারিগণ তাদের মায়িদাহ প্রত্যাশার কারণ ব্যাখ্যা করে। তা হলো: মায়িদাহ অবতীর্ণ (يُنَزِّلَ) হলে-

১. তারা পানাহার করবে (نَّأْكُلَ مِنْهَا)
২. তাদের হৃদয় প্রশান্ত হবে/মন জুড়াবে (تَطْمَىِٕنَّ قُلُوْبُنَا)
৩. তারা এ বিষয়ে সাক্ষীদাতা হবে (ٱلشَّٰهِدِينَ)।

তারপরই ৫:১১৪ তে নবী ঈসা নিশ্চিত হয়ে আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করেন:

  •     মারিয়ামের ছেলে ঈসা বলেছিল (قَالَ عِيْسَى ابْنُ مَرْيَمَ), আল্লাহুম্মা আমাদের রব, আমাদের জন্য আকাশ থেকে রব, আমাদের জন্য আকাশ থেকে মায়িদাতান অবতীর্ণ করুন (اللهم رَبَّنَآ اَنْزِلْ عَلَيْنَا مَاۤىِٕدَةً مِّنَ السَّمَاۤءِ) যা-হবে আমাদের জন্য (تَكُوْنُ لَنَا عِيْدًا) পূর্ববর্তীদের জন্য ও আমাদের পরবর্তীদের জন্য এবং আপনার একটি নিদর্শন (لِّاَوَّلِنَا وَاٰخِرِنَا وَاٰيَةً مِّنْكএবং আমাদেরকে রিজিক/জীবনোপকরণ দিন, আর আপনিই সর্বোত্তম রিজিকদাতা (وَارْزُقْنَا وَاَنْتَ خَيْرُ الرّٰزِقِيْنَ)

এখানে, মায়িদাতান শব্দ দুটি অনুবাদ করা হবে যুক্তি দিয়ে, যাতে সর্বোচ্চ সঠিক অর্থ পাওয়া যায়। এই শব্দ দুটি একে অপরের সঙ্গে জড়িত। আকাশ থেকে মায়িদাহ’ পাঠালে হবে।

এখানে বলে রাখা ভালো যে, আল-কুরআনের সব অনুবাদে আকাশ থেকে খাদ্যপূর্ণ খাঞ্চা’ বা টেবিল-ভর্তি খাবার, a feast from heaven, a feast from the sky পাঠানোর যে ধারণা যোগ করা হয়েছে, তা মূলত খ্রিষ্টান ধর্মের বিশ্বাস থেকে আগত, যা The Last Supper বা শেষ নৈশভোজ’ নামে পরিচিত।

খ্রিষ্ট ধর্মের ধারণা অনুযায়ী যিশুখ্রিষ্ট তার ১২জন শিষ্যকে নিয়ে মৃত্যুর আগে যে শেষ নৈশভোজ করেন- তাই যিশুর শেষ নৈশভোজনামে পরিচিত। এই ভোজে যিশু তার বারোজন শিষ্যকে নিয়ে মদ পান করেন ও রুটি খান।

এই ধারণার ওপর ভিত্তি করে ইতালীয় চিত্রশিল্পী লিওনার্দো দা ভিঞ্চি বিখ্যাত চিত্রকর্ম আঁকেন। ছবিতে মাঝখানে যিশুখ্রীষ্টকে এবং তাঁর চারপাশে শিষ্যদের দেখা যায়। এই নৈশভোজের বর্ণনা রয়েছে সেইন্ট যোহন লিখিত সুসমাচারের ১৩:২১ ছত্রে; যেখানে যিশু বলেন যে, ১২জনের মধ্য থেকে একজন পরদিনই তাঁর সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করবে।

Leonardo_da_Vinci_(1452-1519)_-_The_Last_Supper_(1495-1498)

অতএব, খ্রিষ্ট ধর্ম থেকে অনুপ্রাণিত ও প্রবেশকৃত অনুবাদযার ভালো লাগবে তিনি বিশ্বাস করতেই পারেন। কোনো জ্ঞানী ও শীর্ষ পর্যায়ের মুত্তাকি মানুষ-নবী-রসুল আকাশ থেকে টেবিলভর্তি খাবার পাঠানোর জন্য প্রার্থনা করবেন (!) এমন বিস্ময়কর চিন্তা আপনি তখনই করবেন, যখন আপনি নিজেও মহান রবের কাছে এমন প্রার্থনা করবেন! নিশ্চয়ই জীবনেও এহেন প্রার্থনা করেন নি, তাই না?

উপরন্তু, ঈসা নবীর জন্মের সময়ও তার মহীয়সী মা মারিয়ামকে বলা হয়েছিল, খেজুর গাছের কাণ্ড ধরে ঝাঁকা দাও, পাকা পাকা খেজুরগুলো পড়বে! তখনও আকাশ থেকে রাশি রাশি ভরা ভরা খাবারের ডালি দেখা যায় নি। বরং, তথ্য দেওয়া হয়েছিল- কোথায় পাওয়া যেতে পারে ক্ষুধার খাবার।

যাই হোক, আসুন দেখি কুরআনের ঈদ মায়িদাহ কি জিনিস!

ক্রিয়াবাচক শব্দ হলো ইউয়িদু (يُعِيدُ) অর্থ হলো সংরক্ষণ করা। সংরক্ষণ করা এর বিশেষ্যপদ (Noun) হলো রক্ষা/সুরক্ষা save, saving, protection, defense, safeguard, guard

আর আকাশ থেকে পাঠাতে বলা হলো মা+ইদাহ্ (ىِٕدَةً +  مَاۤمَاۤىِٕدَةً)= মাইদাহ্। যার অর্থ হতে পারে, পানযোগ্য বা সংরক্ষণযোগ্য পানি, যা পর্যাপ্ত পুষ্টিগুণে ভরপুর। আর তাহলেই তা-হবে তাদের জন্য সুরক্ষার (تَكُوْنُ لَنَا عِيْدًا) গ্যারান্টি।

কে না জানে, পানীয় জলের জন্য প্রাচীনকাল থেকে জগৎজুড়ে কতই না যুদ্ধ সংঘাত হয়ে আসছে। যেখানে পাওয়া যেত সুমিষ্ট পানির জলাধার, সেখানেই গড়ে উঠেছিল উন্নত সভ্যতা, সেখানেই বিকশিত হয় মানবজাতি। হরোপ্পা-মহেনজোদ্দারো, ইউফ্রেতিস ও টাইগ্রিস নামের বৃহৎ দুই নদীর মধ্যবর্তী মেসোপটেমীয় সভ্যতা, সিন্ধু সভ্যতা, দুর্গম পর্বতের আড়ালে হলুদ নদীর তীরে চীনা সভ্যতা, নীল নদের তীরে মিশরীয় সভ্যতাসবই গড়ে উঠেছিল পানিকে কেন্দ্র করে!

প্রাচীন মেসোপটেমিয়ার কৃষিকাজ; Image Source imgur.com

এমনকি এত উন্নয়ন অগ্রগতির পর এখনও বিশ্বের মোট জনসংখ্যার ২৬ শতাংশই সুপেয় পানি পানের সুবিধা থেকে বঞ্চিত।

দেখুন, জাতিসংঘ কি বলছে:

https://www.unesco.org/en/articles/imminent-risk-global-water-crisis-warns-un-world-water-development-report-2023

বাংলাদেশের দুটি খবর দেখুন:
https://www.prothomalo.com/world/usa/wtmoeja6ht 
https://www.kalerkantho.com/online/world/2023/03/22/1263595

হাজার হাজার বছর আগে, মারিয়ামের পুত্র ঈসা বলল, আল্লাহুম্মা আমাদের রব (قَالَ عِيْسَى ابْنُ مَرْيَمَ اللهم رَبَّنَآ), আমাদের জন্য অবতীর্ণ করুন (اَنْزِلْ عَلَيْنَا) আকাশ থেকে মায়িদাহ/পানযোগ্য বৃষ্টি (مَاۤىِٕدَةً مِّنَ السَّمَاۤءِ) যা হবে আমাদের জন্য ঈদান/জলাধার (تَكُوْنُ لَنَا عِيْدًا) পূর্ববর্তীদের জন্য ও আমাদের পরবর্তীদের জন্য এবং আপনার একটি নিদর্শন (لِّاَوَّلِنَا وَاٰخِرِنَا وَاٰيَةً مِّنْكَ); আর আমাদেরকে রিজিক/জীবনোপকরণ দিন আর আপনিই সর্বোত্তম আর-রজিকিন/রিজিকদাতা (وَارْزُقْنَا وَاَنْتَ خَيْرُ الرّٰزِقِيْنَ)। (৫:১১৪)

আকাশ থেকে কল্যাণময় বৃষ্টি পাঠানোর দোয়া করাই যুক্তিসঙ্গত নয়কি? সেই প্রাচীন বেথেলহাম বা মরুময় এলাকায় আর কি হতে পারে এরচেয়ে দামি !!

কারণেই হাওয়ারিগণ তাদের মায়িদাহ্/পানীয় জলের প্রত্যাশার কারণ ব্যাখ্যা করে বলেছিলেন, মায়িদাহ বা সুপেয়, সংরক্ষণযোগ্য বৃষ্টির পানি অবতীর্ণ (يُنَزِّلَ) হলে

১. তারা পানাহার করবে (نَّأْكُلَ مِنْهَا)
২. তাদের হৃদয় প্রশান্ত হবে/মন জুড়াবে (تَطْمَىِٕنَّ قُلُوْبُنَا) এবং
৩. এ বিষয়ে তারা সাক্ষী দেবে (ٱلشَّٰهِدِينَ)।

অর্থাৎ, মায়িদাহ (مائدة) অর্থ টেবিলভর্তি খাবার বা খাদ্যভর্তি ডালা নয়, তা আকাশ থেকেও আসে না। মায়িদাহ (مائدة) অর্থ: পানযোগ্য ও সংরক্ষণযোগ্য সুপেয় অঝোর ধারায় বৃষ্টি! পাশাপাশি, ঈদান (عِيدًا) শব্দের অর্থ: জলাধার বা water reserve. প্রিয়নবী ও রসুল ঈসা আ.এর সেই বিশাল জলাধার এখনও থাকতে পারে, যেহেতু তিনি পূর্ববর্তীদের জন্য ও আমাদের পরবর্তীদের জন্য এবং আপনার একটি নিদর্শন (لِّاَوَّلِنَا وَاٰخِرِنَا وَاٰيَةً مِّنْكَ) চেয়েছিলেন।

এই আয়াতে ঈসা নবীর প্রার্থনার মধ্যে রয়েছে আকাশ থেকে (من السماء) মাইদাতান (مَاۤىِٕدَةً), যা হবে ঈদান এবং যার ধারাবাহিকতায় আসবে সর্বোত্তম রিজিকদাতার পক্ষ থেকে রিজিক/জীবনোপকরণ (ارْزُقْنَا)।

এই বিষয়টি ২নং সুরাতেও আছে। ২:২২… তিনি আকাশ থেকে পানি বর্ষণ করেছেন আর তার সাহায্যে উৎপন্ন করেছেন নানা রকম ফল-ফলাদি তোমাদের জন্যে রিজিক/জীবনোপকরণ (وأنزل من السماء ماء فأخرج به من الثمرات رزقا لكم)।

এ ছাড়াও আকাশ থেকে আসে আযাব। ২:৫৯ আকাশ থেকে তাদের উপর নাযিল করলাম আযাব, কারণ তারা করেছিল ফাসেকি (فأنزلنا على الذين ظلموا رجزا من السماء)

২:১৬৪…..আল্লাহ আকাশ থেকে যে পানি বর্ষণ করেন আর তা দ্বারা যে মৃত্যুর পর জমিনকে জীবিত করেন…. (وما أنزل الله من السماء من ماء فأحيا به الأرض بعد موتها)

৪:১৫৩ তে অবিশ্বাসীরা আকাশ থেকে কিতাব অবতীর্ণ করার দাবি জানায়!

এই ধারাবাহিকতায় ৫নং সুরাতে মায়িদাতান নাযিলের কথা জানা যায়।

এবার দেখা যাক, আকাশ থেকে (السماء) বা আস-সামায়ি থেকে কি কি নাযিল হয়:

৭:৯৬ (بركات من السماء) আকাশ থেকে বরকত/কল্যাণ
৭:১৬২ (رجزا من السماء) আকাশ থেকে শাস্তি; ২৯:৩৪
৮:৩২ (حجارة من السماء) আকাশ থেকে পাথর
৬:৯৯ (من السماء ماء) আকাশ থেকে মা/ পানি, ১৩:১৭, ১৪:৩২, ১৫:২২, ১৬:১০, ৬৫, ২০:৫৩, ২২:৬৩, ২৩:১৮, ২৫:৪৮, ২৭:৬০, ২৯:৬৩, ৩০:২৪১০:২৪ 
১০:৩১ (يرزقكم من السماء) আকাশ থেকে রিজিক; ২:২২, ২৭:৬৪
১৫:১৪ (بابا من السماء) আকাশে আছে দরজা
১৭:৯৫ (من السماء ملكا رسولا) আকাশ থেকে আসে রসুল মালাক
১৮:৪০ (حُسْبَانًا مِّنَ السَّمَاۤءِ) আকাশ থেকে বিপর্যয়
২৪:৪৩ (النور) আকাশ থেকে বিপর্যয় আসার বর্ণনা দেওয়া হয়েছে
২৬:৪ (نُنَزِّلْ عَلَيْهِمْ مِّنَ السَّمَاۤءِ اٰيَةً) আকাশ থেকে আয়াত/নিদর্শন অবতীর্ণ হয় বা হতে পারে

এবার সংরক্ষণ করা (يُعِيْدُ) বা ইয়ুঈদু সম্পর্কিত বাকি আয়াতগুলোর সরল বঙ্গানুবাদ দেখুন।

১০:৪ তাঁরই দিকে তোমাদের সবার প্রত্যাবর্তন (اِلَيْهِ مَرْجِعُكُمْ جَمِيْعًاۗ); আল্লাহর প্রতিশ্রুতি মহাসত্য (وَعْدَ اللّٰهِ حَقًّاۗ); নিশ্চয়ই তিনি আবির্ভূত করেন/অস্তিত্ব দেন/originates সৃষ্টিকে (اِنَّهٗ يَبْدَؤُا الْخَلْقَ), তারপর তা সংরক্ষণ করেন (ثُمَّ يُعِيْدُهٗ) যাতে প্রতিফলন দেওয়া যায় যারা বিশ্বাস করে ও সৎকাজ করে ন্যায্যতার সঙ্গে (يَجْزِيَ الَّذِيْنَ اٰمَنُوْا وَعَمِلُوا الصّٰلِحٰتِ بِالْقِسْطِۗ); আর যারা অস্বীকার/অবিশ্বাস করেছে তাদের জন্য উত্তপ্ত পানি ও বেদনাদায়ক শাস্তি (وَالَّذِيْنَ كَفَرُوْا لَهُمْ شَرَابٌ مِّنْ حَمِيْمٍ وَّعَذَابٌ اَلِيْمٌ ۢ) যেহেতু তারা অস্বীকার করতো (بِمَا كَانُوْا يَكْفُرُوْنَ)

১০:৩৪ বলো তোমাদের শরিকদের মধ্যে কে আবির্ভাব ঘটায়/সূচনা করে/originates কোনো সৃষ্টির (قُلْ هَلْ مِنْ شُرَكَاۤىِٕكُمْ مَّنْ يَّبْدَؤُا الْخَلْقَ) তারপর তা সংরক্ষণ করে (ثُمَّ يُعِيْدُهٗۗ); বলো আল্লাহই আবির্ভাব ঘটান কোনো সৃষ্টির (قُلِ اللّٰهُ يَبْدَؤُا الْخَلْقَ) তারপর তা সংরক্ষণ করেন (ثُمَّ يُعِيْدُهٗ) অতএব কিভাবে তোমরা বিচ্যুত হও (فَاَنّٰى تُؤْفَكُوْنَ)!

১৭:৫১ অথবা তোমাদের অন্তরের মধ্যে তা হতে বড় কোনো সৃষ্টি (اَوْ خَلْقًا مِّمَّا يَكْبُرُ فِيْ صُدُوْرِكُمْ ۚ); অতঃপর তারা বলবে, কে আমাদেরকে সংরক্ষণ করবে (فَسَيَقُوْلُوْنَ مَنْ يُّعِيْدُنَاۗ)? জানিয়ে দাও, যিনি তোমাদেরকে প্রথমবার সৃষ্টি করেছেন (قُلِ الَّذِيْ فَطَرَكُمْ اَوَّلَ مَرَّةٍۗ); অতঃপর তারা তোমার দিকে মাথাগুলো নাড়বে (فَسَيُنْغِضُوْنَ اِلَيْكَ رُءُوْسَهُمْ) আর বলবে, তা কখন (وَيَقُوْلُوْنَ مَتٰى هُوَۗ)? জানিয়ে দাও, সম্ভবত তা নিকটবর্তী (قُلْ عَسٰٓى اَنْ يَّكُوْنَ قَرِيْبًا)

১৮:২০ নিশ্চয়ই তোমাদের সম্পর্কে তারা যদি জানতে পারে তারা তোমাদের পাথর মারবে (اِنَّهُمْ اِنْ يَّظْهَرُوْا عَلَيْكُمْ يَرْجُمُوْكُمْ) অথবা তোমাদের ধরে রাখবে (সংরক্ষণ করবে) (اَوْ يُعِيْدُوْكُمْ) তাদের দলের/মতের/গোষ্ঠীর মধ্যে (فِيْ مِلَّتِهِمْ) এবং কখনো না- তোমরা কখনও সফল হবে না (وَلَنْ تُفْلِحُوْٓا اِذًا اَبَدًا)!

২৭:৬৪ অথবা কে সৃষ্টিগুলোর আবির্ভাব ঘটান (اَمَّنْ يَّبْدَؤُا الْخَلْقَ) তারপর সংরক্ষণ করেন (ثُمَّ يُعِيْدُهٗ) আর কে তোমাদের জীবিকা দেন আকাশ থেকে ও পৃথিবীতে (وَمَنْ يَّرْزُقُكُمْ مِّنَ السَّمَاۤءِ وَالْاَرْضِۗ); আল্লাহর সঙ্গে অন্য ইলাহ আছে (ءَاِلٰهٌ مَّعَ اللّٰهِ ۗ)? বলো, নিয়ে আসো তোমাদের প্রমাণ (قُلْ هَاتُوْا بُرْهَانَكُمْ) যদি তোমরা সত্যবাদী হও (اِنْ كُنْتُمْ صٰدِقِيْنَ)!

২৯:১৯ তারা কি খেয়াল করে না আল্লাহ কিভাবে সৃষ্টিগুলোর আবির্ভাব ঘটান (اَوَلَمْ يَرَوْا كَيْفَ يُبْدِئُ اللّٰهُ الْخَلْقَ) তারপর তা সংরক্ষণ করেন (ثُمَّ يُعِيْدُهٗ ۗ) ঘটান, নিশ্চয়ই এটা আল্লাহর জন্য সহজ (اِنَّ ذٰلِكَ عَلَى اللّٰهِ يَسِيْرٌ)

৩০:১১ আল্লাহ সৃষ্টির আবির্ভাব ঘটান (اَللّٰهُ يَبْدَؤُا الْخَلْقَ) তারপর তা সংরক্ষণ করেন (ثُمَّ يُعِيْدُهٗ) এরপর তাঁর দিকেই তোমাদের প্রত্যাবর্তন (ثُمَّ اِلَيْهِ تُرْجَعُوْنَ)

৩০:২৭ আর তিনিই যিনি আবির্ভাব ঘটান সৃষ্টিগুলোর (وَهُوَ الَّذِيْ يَبْدَؤُا الْخَلْقَ) তারপর তা সংরক্ষণ করেন (ثُمَّ يُعِيْدُهٗ) এবং তাঁর কাছে তা সহজতর (وَهُوَ اَهْوَنُ عَلَيْهِۗ); এবং আকাশ ও যমিনে তাঁরই জন্য সর্বোত্তম দৃষ্টান্ত (وَلَهُ الْمَثَلُ الْاَعْلٰى فِى السَّمٰوٰتِ وَالْاَرْضِۚ) আর তিনি মহা-পরাক্রমশালী মহা-প্রজ্ঞাবান (وَهُوَ الْعَزِيْزُ الْحَكِيْمُ )!

৩৪:৪৯, ৫০ ঘোষণা করো, মহা-সত্য এসে গেছে (قُلْ جَاۤءَ الْحَقُّ) আর বাতিলের উদ্ভব হবে না (وَمَا يُبْدِئُ الْبَاطِلُ) আর না-হবে সংরক্ষণ (وَمَا يُعِيْدُ)! জানিয়ে দাও, যদি আমি পথভ্রষ্ট-বিভ্রান্ত হই (قُلْ اِنْ ضَلَلْتُ) তবে তা শুধুমাত্র আমার নিজের বিভ্রান্তি/ভ্রষ্টতা (فَاِنَّمَآ اَضِلُّ عَلٰى نَفْسِيْۚ); আর যদি সুপথ পাই (وَاِنِ اهْتَدَيْتُ) তবে তা আমার কাছে আমার রবের অনুপ্রেরণা/ওহি (فَبِمَا يُوْحِيْٓ اِلَيَّ رَبِّيْۗ); নিশ্চয়ই তিনি খুব কাছে থেকে শোনেন (اِنَّهٗ سَمِيْعٌ قَرِيْبٌ)!

৭১:১৭, ১৮, ১৯, ২০ আর আল্লাহ তোমাদের বর্ধিত করেছেন (وَاللّٰهُ اَنْۢبَتَكُمْ) পৃথিবীতে সঠিক-বর্ধন (مِّنَ الْاَرْضِ نَبَاتًاۙ); তারপর তাতে সংরক্ষণ করেন (ثُمَّ يُعِيْدُكُمْ فِيْهَا) এবং তোমাদের বের করবেন সম্পূর্ণ-বাহির (وَيُخْرِجُكُمْ اِخْرَاجًا); আর আল্লাহ তোমাদের জন্য পৃথিবীকে করেছেন সম্প্রসারিত (وَاللّٰهُ جَعَلَ لَكُمُ الْاَرْضَ بِسَاطًاۙ )! তোমরা যেন চলতে পারো তাতে প্রশস্ত পথ-ঘাটে (لِّتَسْلُكُوْا مِنْهَا سُبُلًا فِجَاجًا )!

৮৫:১৩ নিশ্চয়ই তিনি আবির্ভাব ঘটান/অস্তিত্ব দেন (اِنَّهٗ هُوَ يُبْدِئُ) এবং সংরক্ষণ করেন (وَيُعِيدُ)।


প্রথম প্রকাশ: ২৭ এপ্রিল ২০২৩

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *