সিয়াম: কী, কেন, কীভাবে?

সিয়াম: কী, কেন, কীভাবে?

কুর'আন রিসার্চ সেন্টার-কিউআরসি

বিশ্বজুড়ে সিয়ামের মহোৎসব চলে প্রতিবছর। কারণ, সিয়ামের নির্দেশ মহাগ্রন্থ আল-কুরআনে দিয়েছেন মহান রব্বুল আলামিন। তবে, সেই নির্দেশটি কেমন? তা যাচাই করে দেখার সুযোগ হয় না অনেকের। কুরআনের বিধি-বিধান মানতে যারা আগ্রহী, তারাও কুরআন থেকে মিলিয়ে দেখেন না। কুরআনে সাওম বলা হয়েছে– তাই হাদিসের বই থেকে সিয়ামের নিয়ম-কানুন খুঁজে বের করে তা পালন করার দিকে মনোযোগ দেয় বেশিরভাগ মানুষ।

কিন্তু, রসুল সা. কী করতেন? তিনি কী বুখারি, মুসলিম, তিরমিজি থেকে সিয়ামের বিধানগুলো খুঁজতেন? নাকি জিবরিল ফেরেশতার কাছে গোপনে জেনে নিতেনসিয়াম কী ও কীভাবে করে? তাঁর ওপর কী কী নির্দেশ ছিল- তা কুর’আনে আছে। পাশাপাশি, তিনি সেসব নির্দেশ হুবহু পালন করতেন, সে ক্থাও কুর’আনে বলা আছে। তারপরও কি আমাদের কোথাও ভুল হতে পারে? চলুন দেখি- মহাগ্রন্থ কুরআন আসলে কী বলছে! সিয়াম বা সাওম কী, কেন, কীভাবে?- তা শুধুমাত্র আল-কুরআন থেকেই দেখুন। ঠিক যেভাবে দেখতেন শেষ নবী মোহাম্মদ রসুলুল্লাহ সা.।

নিচে কিছু ছবি সংযুক্ত করা হয়েছে। লাল রঙে চিহ্নত অংশগুলো ভুল অনুবাদ। 
শব্দ থেকে শব্দ বাংলা অনুবাদ সংশোধিত।
প্রতিটি ছবির নিচে রঙিন ঘরের মধ্যে লেখা অংশগুলো সংক্ষিপ্ত ব্যাখ্যা ও চিন্তার খোরাক।
মহাগ্রন্থ আল-কুর’আনে ‘সিয়াম’ সম্পর্কে এই আয়াতগুলোতে বিস্তারিত কথা বলা হয়েছে।

siyam-2.183
siyam-2.184
siyam-2.185
siyam-2.186-ayatw
siyam-2.186-bn
siyam-2.187-ayat
siyam-2.187-1
siyam-2.188
siyam-2.196-ayat
siyam-2.196-w2w
siyam-4.92
siyam-5.89
siyam-5.89.1-bn
siyam-9.112
siyam-19.26-abw
siyam-33.35
siyam-58.4
siyam-66.5

সিয়াম বা সাওম নিয়ে গোটা কুরআনে এসব আয়াতই পাওয়া যায়। ইসলামের শেষ নবী কি এই সিয়াম অনুসরণ করতেন? নাকি সবাই মিলে সাহরি থেকে ইফতার পর্যন্ত আনুষ্ঠানিকভাবে পানাহার ও যৌনসম্ভোগ থেকে বিরত থাকার চেষ্টা করতেন? আল্লাহর রসুল শুধুমাত্র আল-কুরআন অনুসরণ করতেন।

মহাগ্রন্থ আল-কুরআন সিয়াম সম্পর্কে আমাদের সুস্পষ্টভাবে জানিয়ে দিয়েছে।

সংক্ষেপে পুনরায় তা তুলে ধরা হলো-

১. সিয়াম কি?

প্রথমত, এটি মহাপ্রভুর বাণী (কুরআন) সম্পর্কে জানার বিশেষ কর্মসূচি; যা কুরআন নাযিলের সময় প্রথম অনুষ্ঠিত হয়। দ্বিতীয়ত, সামাজিক নেতৃত্বের অধীনে সবসময় পরিচালিত থাকবে- এমন সংশোধনমূলক কর্মসূচি’ হলো সিয়াম বা সাওম।

২. সিয়ামের সময় কখন?

রসুল ও তাঁর সাহাবিদের সিয়ামের রাতে বাসায় ফিরে স্ত্রীর সঙ্গে কুরআন সম্পর্কে আলোচনা করতে বলা হয়েছিল। এটি হলো ঘরের কাজ (ঘরের সিয়াম)। তারপর, সম্মিলিত হবার স্থান বা মাসাজিদে গিয়ে রাত পর্যন্ত একই গবেষণা করতে বলা হয়েছিল। বর্তমান সময়ে সিয়াম যে কোনও নিরাপদ স্থানে হতে পারে। এতে বোঝা যায়- সকাল থেকে রাত পর্যন্ত চলবে সিয়াম।

পাশাপাশি সারা বছরই চলবে সিয়াম। তা ছাড়া, সমাজ সংশোধনের কাজ সম্ভব না; Muttaqi Making Mission (মুত্তাকি তৈরির কর্মসূচি) সারা বছরের- সবসময়ের কাজ; কোনও সুনির্দিষ্ট মাসের না। তবে, সিয়াম কর্মসূচি নির্দিষ্ট দিনের বা মেয়াদের জন্য। যেমন- ৩ দিন, ৭ দিন, ১০ দিন এবং বিশেষ ক্ষেত্রে টানা ২ মাস।

৩. সিয়ামের সময় দিনের বেলা কোনও কাজ করা যাবে কি?

অবশ্যই না। সিয়ামের সময় সকাল থেকে রাত পর্যন্ত সব কাজ, বিশেষ করে অন্যদের সঙ্গে কথা-বার্তা, ব্যবসা-বাণিজ্য এবং যাবতীয় সব কাজ থেকে বিরত থেকে রুদ্ধদ্বার অধ্যয়ন ও মস্তিষ্ক সংশোধনের কাজে লিপ্ত থাকতে হবে। এক্ষেত্রে প্রিয়নবীর সাহাবিদের বলা হয়েছিলসিয়াম চলাকালীন বাইরে গিয়ে কারও সঙ্গে কথা বলা যাবে না। মারিয়াম আ.এর ক্ষেত্রে বলা হয়েছিলজানিয়ে দাও, কথা বলার সময়-সুযোগ নাই; আমি সিয়াম করছি।

জীবনের স্বাভাবিক সব কাজ থেকে বিরত থাকা এবং আল্লাহর বাণীর প্রতি সম্পূর্ণ আত্মনিয়োগ করা হলো সিয়ামের কর্মসূচি।

৪. এমন সিয়াম কষ্টকর! তাতে কী কী কল্যাণ হয়?

প্রথমত, পৃথিবীর জীবনের জন্য সিয়াম কল্যাণকর। যারা সিয়ামে আগ্রহী, তারা নির্দিষ্ট দিনের জন্য সিয়াম করতে পারে। এর মাধ্যমে আল-কুরআন এবং মহান আল্লাহ সম্পর্কে জানার অফুরন্ত সুযোগ পেয়ে যায়। সিয়ামের মূল উদ্দেশ্য- মুত্তাকি মানুষ বানানো। যারা সিয়াম করবে- তারাই দ্রুত মুত্তাকি হয়ে গড়ে উঠবে।

দ্বিতীয়ত, সিয়ামের মাধ্যমে বিভিন্ন স্বেচ্ছা-অপরাধী বা অন্যায়কারী ব্যক্তি তার মন-মগজ-চরিত্র সংশোধনের সুযোগ পায় এবং সমাজের জন্য ভালো মানুষে পরিণত হয়।

তৃতীয়ত, স্বয়ং আল্লাহ ঘোষণা করেছেনবিভিন্ন সময়- বিভিন্ন কারণে সিয়ামের কর্মসূচির মধ্যে দিয়ে যাওয়া নারী ও পুরুষকে সু-সংবাদ জানিয়ে দাও। পৃথিবীতে যারা আল্লাহর কথা জানার চেষ্টা করেছিল- তাদের জন্য আছে ক্ষমা ও মহাপ্রতিদান।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *