তাকওয়া কি? মুত্তাকি কে? (১ম পর্ব)
ভূমিকা:
প্রচলিত দৃষ্টিকোণ থেকে তাকওয়া ও মুত্তাকি বিষয়ে সমাজে একটি ধারণা আছে। যাচাই বাছাই ছাড়া সেই ধারণাকেই আকণ্ঠ আঁকড়ে আছে কিতাব-প্রাপ্তরা। বাস্তবতা হলো, প্রচলিত অনেক কিছুর মতোই তাকওয়া/ মুত্তাকির ধারণাতেও রয়েছে বড় ধরনের গলদ।
মূলত মহাগ্রন্থ শুরুই হয়েছে এই মুত্তাকীদের উদ্দেশ্যে বক্তব্য দিয়ে। বলা হচ্ছে-
০২. সেই কিতাব- কোনও সন্দেহ নেই তাতে- মুত্তাকিদের জন্য পথনির্দেশ।
(ذٰلِكَ الْكِتٰبُ لَا رَيْبَ ۛ فِيْهِ ۛ هُدًى لِّلْمُتَّقِيْنَۙ ( البقرة: ٢ ))
অতএব কিতাব থেকে পথনির্দেশ বুঝতে হলে প্রথম ও প্রধান শর্ত হলো- মুত্তাকি (متقي) হতে হবে।তাহলে, কে সেই মুত্তাকি(متقي)? কিসের ভিত্তিতে একজন মানুষ মুত্তাকি (متقي) হতে পারে? আরবি ভাষার ধারণা এবং মহান রবের দিক-নির্দেশনা থেকেই তা নিশ্চিত হতে হবে। বস্তুত, কিতাব থেকে উপকৃত হতে হলে, দিক-নির্দেশনা পেতে হলে প্রথম ও প্রধান শর্তই হলো ‘মুত্তাকি’ হওয়া। কারণ, মহান রবের কিতাব- هُدًى لِّلْمُتَّقِيْنَ মুত্তাকিনের জন্য হিদায়াত।
বলে রাখা ভালো, অভিধান সূত্রে জানা যায়, শব্দ দুটির ধাতু ওয়া-ক্বাফ-ইয়া (و ق ي); যা দিয়ে তৈরি হয়েছে ৮ ধরনের শব্দ। মহাগ্রন্থে শব্দগুলো এসেছে ২৫৮বার।
1 times as verbal noun tqyaẗ , 2 times as noun atqy, 3 times as active noun waq, 4 times as noun tqy, 16 times as verb wqya, 17 times as noun tqwy, 49 times as form VIII active noun mtqyn, 166 times as form VIII verb atqya
(Surat Al-Baqara – سورة البقرة | Al-Islam.org)
# যে ভুল অনুবাদ করা হয়েছে:
প্রচলিত অনুবাদের মৌলিক গলদ ও উদ্দেশ্যমূলক ভুলটি নিম্নরূপ। মহাগ্রন্থে ইত্তাকু/আত্তাকু বা তাকওয়া শব্দের অর্থ পরিবর্তন করা হয়েছে- ‘আল্লাহ’ ও ‘ভয়’ শব্দ ঢুকিয়ে দিয়ে। অথচ, তাকওয়া বা মুত্তাকি শব্দে ‘আল্লাহ’ ও ‘ভয়’ শব্দ দু’টি নাই। উপরন্তু, ভয় বা খিফ (خيف n.) / খাফ (خاف v.) মহাগ্রন্থেই পাওয়া যায়, যা ভিন্ন প্রেক্ষাপটে উল্লেখ করা হয়েছে।
সরল বাংলায়, ‘মুত্তাকি’ (متقي) হলেন তিনি, যার ‘তাকওয়া’(تقوى) আছে।
# চলুন দেখি তাকওয়া (تقوى) কাকে বলে?
তাকওয়া শব্দের অর্থ- সতর্ক/ সচেতনতা বোধ/ be aware of/ conscious থাকা। তাই, সতর্কতা ও সচেতনতা বোধই হলো তাকওয়া (تقوى)।
২:৪৮ তোমরা সে দিবস সম্পর্কে সতর্ক হও (اتَّقُوْ), যেদিন কেউ কারো কোনো উপকারে আসবে না, কারো কাছ থেকে কোন সুপারিশ গ্রহণ করা হবে না, কারো কাছ থেকে কোনো বিনিময় নেওয়া হবে না এবং তাদেরকে কোনো সাহায্যও করা হবে না।
২:১২৩ তোমরা সে দিবস সম্পর্কে সতর্ক হও(اتَّقُوْ), যেদিন কেউ কারো কোনো উপকারে আসবে না…।
এই সময়টিকে ভয় পাওয়া নয়, বরং সে-সময় সম্পর্কে সজাগ-সচেতন হতেই বলা হচ্ছে। সেখানে আল্লাহকে ভয় পাও- এমনটাও বলা যায় না।
# তাহলে মুত্তাকি (متقي)?
যে মানুষ সবসময় সজাগ-সতর্ক থাকে, সচেতন থাকে, যাচাই-বাছাই-পর্যবেক্ষণ না-করে কোনো কিছু গ্রহণ বা বর্জন করে না, জীবন-জগৎ-সংসারে সজাগ-সতর্কতার এই বোধ নিয়ে পথ চলে, তিনিই মুত্তাকি (متقي)। মহান রবের আল-কিতাব থেকে তিনি খুব সহজেই পথনির্দেশনা পেয়ে যাবেন।
পাশাপাশি, যখন বলা হয় ‘তাকওয়া আল্লাহ’ (تقوى الله).. অর্থাৎ আল্লাহর বিষয়ে তাকওয়া.. তখন আল্লাহর বিষয়ে সর্বোচ্চ সতর্ক হওয়া বা সচেতন থাকার চেষ্টা করতেই বলা হয়েছে। স্রষ্টা-সচেতন হওয়াই ইত্তাকুল্লাহ (وَاتَّقُوا اللّٰهَ) ২:১৮৯, ১৯৪, ২০৩, ২০৬।
২:২০৬ আর যখন তাকে বলা হয়- আল্লাহর বিষয়ে সতর্ক হও (اتَّقِ اللّٰهَ), তখন তার অহমিকা/অহংকার-বোধ তাকে পাপাচারে লিপ্ত করে ( بِالْاِثْمِ); অতএব জাহান্নামই তার জন্য যথেষ্ট এবং নিশ্চয়ই ওটা নিকৃষ্ট আশ্রয়স্থল।
এ অবস্থায় মহাগ্রন্থের শুরুতে যে কথাটি বলা হলো, তার অর্থ হচ্ছে-
আলিফ লাম মিম; সেই কিতাবে কোনো সন্দেহ নেই- ‘সজাগ-সতর্ক–সচেতন মানুষদের’ জন্য পথনির্দেশ।
গোটা মানবজাতির মধ্যে যে কারও টনটনে সজাগ-সতর্ক অনুধাবন শক্তি থাকলেই মহাগ্রন্থে লিপিবদ্ধ বক্তব্য থেকে পথনির্দেশ অনুধাবন করতে পারবে। আর এই বোধটাই হলো মহান আল্লাহর বাণী/ অদৃশ্য জগতের বিষয়াদি সম্পর্কে জানার প্রধান শর্ত।
# মহাগ্রন্থ থেকে মুত্তাকির সংজ্ঞা:
এবার মহাগ্রন্থ থেকেই মুত্তাকির সংজ্ঞা দেখুন।
২:১৭৭ তোমরা তোমাদের লক্ষ্য পূর্ব বা পশ্চিম দিকে ফেরালেও তাতে পুণ্য নেই, বরং পুন্য তার যে আল্লাহ, আখিরাত, মালাইকা, কিতাব ও নবীগণের প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করে এবং তাঁরই প্রেমে ধন-সম্পদের প্রতি আকর্ষণ থাকা সত্ত্বেও সে তা আত্মীয়-স্বজন, পিতৃহীন, দরিদ্র, পথিক ও ভিক্ষুকদেরকে এবং দাসত্ব মোচনের জন্য ব্যয় করে, আর সালাত প্রতিষ্ঠিত করে ও পরিশুদ্ধ হয় এবং অঙ্গীকার করলে তা পূরণ করে এবং যারা অভাবে ও ক্লেশে এবং সংকটে ধৈর্যশীল তারাই সত্য পরায়ণ এবং তারাই সজাগ-সচেতন মানুষ।
৩৯:৩৩ আর যে সেই সত্য-সহ (بِٱلصِّدْقِ) এসেছে এবং তাকে সত্য বলেছে/মেনেছে (صَدَّقَ بِهٖٓ)- তারাই হলো সজাগ-সচেতন মানুষ (الْمُتَّقُوْنَ)
জ্ঞানীরা ও চিন্তাভাবনা করতে পারা মানুষরাই যে সজাগ-সতর্ক-সচেতন (মুত্তাকি) হয় সে কথাও বলে দেওয়া হলো:
২:১৭৯ কিসাসের মধ্যে তোমাদের জন্য জীবন রয়েছে, হে বিবেক-বোধ সম্পন্নরা (يّٰٓاُولِى الْاَلْبَابِ)! আশা করা যায় তোমরা সজাগ-সতর্ক-সচেতন হবে (لَعَلَّكُمْ تَتَّقُوْنَ)!
বিবেক-বোধ সম্পন্ন ব্যক্তিবর্গের নিকট আশা করা হচ্ছে যে তারা কিসাস সম্পর্কে জানা-বোঝার মাধ্যমে সচেতন মানুষ হয়ে উঠবে!
কীভাবে এমন সজাগ-সচেতন চিন্তাভাবনা করতে পারা মানুষ তৈরি করা যাবে? তার উত্তরও আছে প্রথম সুরাতেই
২:১৮৩ ওহে যারা ঈমান এনেছ, তোমাদের উপর আস-সিয়াম (الصِّيَامُ) জোরালো তাড়না-প্রেরণা-উৎসাহ দেওয়া হয়েছে (كُتِبَ) যেমন জোরালো তাড়না-প্রেরণা (كُتِبَ) করা হয়েছিল তোমাদের পূর্ববর্তীদের উপর- যাতে তোমরা সচেতন (تَتَّقُونَ) হও।
মহান আল্লাহর অজুহাত দিয়ে যথাযথ সঠিক কর্ম থেকেও বিরত থাকতে নির্দেশ দিয়েছেন তিনি!
২:২২৪ আর তোমরা আল্লাহকে তোমাদের শপথের বিষয় বানিওনা- সৎকাজ, সচেতনতা অবলম্বন এবং মানুষের মধ্যে শান্তি স্থাপন হতে বিরত থাকার ব্যাপারে; আর আল্লাহ সর্বশ্রোতা ও সর্বজ্ঞাতা।
যাবতীয় বিষয়ে সবকিছু জানেন ও খোঁজ রাখেন মহান আল্লাহ। সেই মহান রব্বুল আলামিনের বিষয়েই গোঁয়ারতুর্মি করে উদাসীন থাকলে, পরকালে সুনিশ্চিত অন্ধকার! তবে দুনিয়ার বিষয়ে সচেতন থাকার সুবাদে পৃথিবীতে সমৃদ্ধ জীবন পাবে। (২:২০৬ ও ২:২১২)
৩০:৭ তারা জানে দুনিয়ার জীবন থেকে প্রকাশ্য/বাহ্যিক দিক এবং তারা সেই পরজীবন (ٱلْءَاخِرَةِ) সম্পর্কে তারাই উদাসীন/অমনোযোগী (غَٰفِلُونَ)।
২:২০৬ আর যখন তাকে বলা হয়- আল্লাহর বিষয়ে সতর্ক হও (اتَّقِ اللّٰهَ), তখন তার অহমিকা তাকে পাপাচারে লিপ্ত করে ( بِالْاِثْمِ); অতএব জাহান্নামই তার জন্য যথেষ্ট এবং নিশ্চয়ই ওটা নিকৃষ্ট আশ্রয়স্থল।
২:২১২ যারা অবিশ্বাস করে (زُيِّنَ لِلَّذِيْنَ كَفَرُوا) তাদের পার্থিব জীবন সুশোভিত/আকর্ষণীয় (زُيِّنَ) আর তারা উপহাস করে- যারা বিশ্বাস করেছে (الَّذِيْنَ اٰمَنُوْا) এবং যারা সজাগ-সচেতন (الَّذِيْنَ اتَّقَوْ)- কেয়ামত দিবসে তাদের উপর থাকবে (ا فَوْقَهُمْ) এবং আল্লাহ যাকে চান অপরিমিত রিযিক দেন।
শুধু তা-ই নয়, এমন সজাগ-সচেতন মানুষদের জন্যই মহাগ্রন্থ সহজ ও সুসংবাদ।
১৯:৯৭ অতঃপর প্রকৃতপক্ষে আমি তোমার ভাষায় তা সহজ করেছি যাতে তুমি তা দিয়ে সুসংবাদ দাও (لِتُبَشِّرَ بِهِ) সজাগ-সচেতন লোকদের (ٱلْمُتَّقِينَ) আর তা দিয়ে ঝগড়াটে লোকেদেরকে হুঁশিয়ার/সতর্ক করো (تُنذِرَ)।
২৪:৩৪ আর নিঃসন্দেহে আমি অবতীর্ণ করেছি তোমাদের কাছে সুস্পষ্ট আয়াতসমূহ (وَلَقَدْ اَنْزَلْنَآ اِلَيْكُمْ اٰيٰتٍ مُّبَيِّنٰتٍ) আর তোমাদের পূর্বে যারা অতীত হয়েছে তাদের দৃষ্টান্ত এবং শিক্ষামূলক সতর্কতা (مَوْعِظَةً) সজাগ-সচেতনদের জন্যে (لِّلْمُتَّقِيْنَ)।
কেমনতর সজাগ-সতর্ক-সচেতন মানুষ? মহাগ্রন্থের শুরু থেকেই কিছু উদাহরণ খা যাক:
২:১৮০ তোমাদের ওপর জোরালো তাড়না-প্রেরণা-উৎসাহ দেওয়া হয়েছে (كُتِبَ عَلَيْكُمْ)- যখন তোমাদের কারও মৃত্যু (الْمَوْتُ) হাজির হয়, যদি সে কল্যাণ-সম্পদ (خَيْرًا) ছেড়ে যায়, তবে ন্যায্যভাবে ওসিয়াত করে (ٱلْوَصِيَّةُ–the will) পিতা-মাতা ও নিকট আত্মীয়ের জন্য, সজাগ-সচেতনদের জন্যে এটা যথাযথ কর্তব্য (حَقًّا عَلَى الْمُتَّقِيْن)।
২:২৭৮ ওহে যারা বিশ্বাস করেছ! আল্লাহর বিষয়ে সচেতন হও এবং ছেড়ে দাও যা অবশিষ্ট আছে বর্ধিত সুদ (ٱلرِّبَوٰٓا۟) থেকে- যদি তোমরা বিশ্বাসী হও!
২:২৮১ সে সময়ের (يَوْمًا) বিষয়ে সতর্ক-সচেতন হও (اتَّقُوْا) যে-সময়ের মধ্যে প্রত্যাবর্তন হবে (تُرْجَعُونَ) আল্লাহর দিকে (اِلَى اللّٰهِ); তারপর প্রত্যেক আত্মাকে/ব্যক্তিকে (كُلُّ نَفْسٍ) তার অর্জন পরিপূর্ণ দেওয়া হবে (تُوَفَّىٰ) আর তাদের অন্যায়-অত্যাচার করা হবে না (وَهُمْ لَا يُظْلَمُوْنَ)।
৩:৭৬ হ্যাঁ, যে নিজ তার চুক্তি পূর্ণ করে ও সচেতন থাকে (بَلٰى مَنْ اَوْفٰى بِعَهْدِهٖ وَاتَّقٰى), অতঃপর নিশ্চয়ই আল্লাহ সজাগ-সচেতন লোকদের ভালোবাসেন (فَاِنَّ اللّٰهَ يُحِبُّ الْمُتَّقِيْنَ)।
৩:১৩৭,১৩৮ নিশ্চয়ই তোমাদের পূর্বে বহু জীবনাচরণ/পরিস্থিতি (سُنَنٌ) পার হয়েছে, অতএব পৃথিবীতে ভ্রমণ কর (فَسِيْرُوْا فِى الْاَرْضِ) আর খেয়াল করো- মিথ্যাবাদীদের পরিণাম (عَاقِبَةُ الْمُكَذِّبِيْنَ) কেমন হয়েছে। এসব মানবজাতির জন্য বিবরণ (هٰذَا بَيَانٌ لِّلنَّاسِ) ও পথনির্দেশ (هُدًى) এবং শিক্ষামূলক সতর্কতা (مَوْعِظَةً) সজাগ-সচেতনদের জন্যে (لِّلْمُتَّقِيْنَ)।
পৃথিবীতে ভ্রমণ করে তথ্য অনুসন্ধান করা, বিক্ষিপ্ত সূত্র দেখে অতীত রহস্যময় ঘটনা উপলব্ধি করার কাজটি হয়ত রহস্য রোমাঞ্চ উপন্যাসের ফেলুদা বা শার্লক হোমস ভালো পারবে। তবে, বাস্তব জীবনে মানুষই তা পারে। বাস্তবজীবনেই বিচ্ছেদের পর সাবেক স্ত্রীকে যথাযথ ভরণ-পোষণ দেওয়া দুর্বল চেতনার মানুষের কাজ নয়। বরং, যার মধ্যে নিষ্ঠা, সতর্কতা, সচেতনতাবোধ সদা-জাগ্রত থাকে, সেসব মানুষই কঠিন পরিস্থিতিতেও সঠিক কাজ করতে পারে। এমনকি, কতটুকু বিচক্ষণ মানুষ হলে সে তার মৃত্যুর সময় সম্পর্কে ধারণা করতে পারে। তখন সেই মানুষটিকে সহায়-সম্পদ ওসিয়ত করার দায়িত্ব-কর্তব্য দেওয়া হয়েছে (হাক্ব আলা আল-মুত্তাকিন)! তেমন মানুষই তো নিজের প্রতিশ্রুতি/চুক্তি পূর্ণ করার বিষয়ে সদা-সচেষ্ট ও সতর্ক থাকে! টনটনে সচেতন না হলে নিজেকে বিশ্বাসী বলে প্রমাণের জন্য চক্রবৃদ্ধি হারে বর্ধিত সুদের অর্থ ছেড়ে দিতে পারে কেউ?!? আর্থিক লেনদেন, ঋণ-ধারের বিষয়ে ঠিকঠাক লিখে রাখতে বলা হচ্ছে বোকাদের নয়, বরং সজাগ-সচেতন বুদ্ধিমান লোকদেরকেই (২:২৮২,২৮৩)।
এমন মুত্তাকি বা সতত সচেতন ও জাগ্রত চেতনার নারী-পুরুষদের মহান আল্লাহ খুব ভালো করেই জানেন (৩:১১৫); আর তাদেরকেই আসমান-জমিনের পরিধির সমান বিস্তৃত জান্নাতের দিকে ছুটে যেতে বলা হয়েছে (৩:১৩৮)। মহান আল্লাহ মুত্তাকিদের ত্যাগ (৫:২৭) গ্রহণ করেন, তাদেরকেই শুভ পরিণাম দেন (৭:১২৮)। এমন সজাগ-সচেতন মানুষগুলোই মুশরিকদের সঙ্গে চুক্তি সুচারুভাবে রক্ষা করে, যথাযথভাবে লড়াই-সংগ্রাম করে (৯:৪,৭,৩৬,৪৪,১২৩), ওহি-সূত্রে প্রাপ্ত গায়েবের জগতের বিষয়ে সবর অবলম্বন করে (১১:৪৯), তারা জগতেও কল্যাণ করবে, কল্যাণপ্রাপ্ত হবে; তাদের আখিরাতের আবাসও হবে উৎকৃষ্ট মানের (১৬:৩০,৩১)। এমন সজাগ-সচেতন মানুষ হবে মহান আল্লাহর কাছে সম্মানিত (১৯:৫৮, ৩৮:৪৯); আর মহান আল্লাহই মুত্তাকিদের পক্ষে থাকেন, তাদের রক্ষা করেন (৪৫:১৯)।
পরিশেষে, ৩:১০২ ওহে যারা বিশ্বাস করেছো! আল্লাহ সম্পর্কে সচেতন হও (اتَّقُوا اللّٰهَ) যেভাবে তাঁর প্রতি যথাযথ সচেতন হতে হয় (حَقَّ تُقٰىتِهٖ); আর তোমরা আত্মসমর্পণকারী (اَنْتُمْ مُّسْلِمُوْنَ) না হয়ে মারা যেও না!
প্রথম প্রকাশ: ১৮ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩।