জিন-সমগ্র (পঞ্চম পর্ব) 

জিন-সমগ্র (পঞ্চম পর্ব)

জিন সম্পর্কে জানার চূড়ান্ত লক্ষ্য হলোজিন কীভাবে মানুষের মধ্যে প্রভাব ফেলে- সেটা জানা ও তা থেকে নিজেকে মুক্ত করা। সাধারণতশয়তান-জিন মানুষকে প্রভাবিত করে। তাই তার প্রভাব থেকে নিজেকে মুক্ত রাখতে পারলেমানুষের নফস উন্নত হয়চরিত্র উন্নত হয়নফসের বিকাশ হয়সর্বোপরি মানুষ স্রষ্টার কল্যাণ লাভ করতে পারে।

৫. মানুষের সঙ্গে জিনের যোগাযোগ ! কীভাবে ?

এটা বোঝার জন্য আমাদের দৃষ্টি দিতে হবে মহাবিশ্বের অন্যতম উপাদান গ্যালাক্সি বা ছায়াপথের দিকে।

ক) মহাকাশের গ্যালাক্সিগুলোর কেন্দ্রের শক্তি অকল্পনীয় শক্তিশালী গ্র্যাভিটি (একটি ফোর্স ফিল্ড); যা দুই স্তর বা ডাইমেনশনের সংযোগক্ষেত্র হতে পারে। কারণ, যা কিছু গ্যালাক্সির কেন্দ্র বা ব্ল্যাকহোলে পড়ে- তা হারিয়ে যা চিরতরে। তা অদৃশ্য হয়ে যায়। যৌক্তিকভাবে ধারণা করা যেতে পারে যে, গ্যালাক্সির কেন্দ্রের শক্তি বা ব্ল্যাকহোলগুলো অ্যান্টিম্যাটার বা প্রতিপদার্থের তৈরি কয়েক গুণ বিশাল বড়- ডার্ক এনার্জির অদৃশ্য স্তর বা জগতের সংযোগস্থল। ডার্ক এনার্জিই মূলত দৃশ্যমান এই মহাবিশ্ব ও তার উপাদানগুলো সংকোচন, প্রসারণ, সৃষ্টি ও ধ্বংসের ব্যবস্থাপক হিসেবে ভূমিকা রাখছে।

অর্থাৎ, ম্যাটার ও অ্যান্টিম্যাটার- এই দুই বিপরীত শক্তির জগৎ বা ডাইমেনশনের সংযোগকেন্দ্র হলো ব্ল্যাকহোল; যেখানে সক্রিয় থাকে অকল্পনীয় প্রচণ্ড ক্ষমতার মহাকর্ষ শক্তি বা গ্র্যাভিটি–যা একটি ফোর্স ফিল্ড।

খ)
প্রত্যেক জীবিত মানবদেহে আছে নফস। এই নফস হলো জানা ও অজানা শক্তি ক্ষেত্র বা ফোর্স ফিল্ড দিয়ে তৈরি/সাজানো প্রকৃত মানুষ। নফস (আত্মা) ছাড়া মানবদেহ মৃত। আর এই নফসের মধ্যে কুমন্ত্রণা বা তথ্য ঢুকিয়ে দিতে পারে জিন (শয়তান)। ব্যারিওনিক ম্যাটারের (baryonic matter: matter composed of protons and neutrons; ordinary matter, as distinct from exotic forms) তৈরি মানুষ এবং অ্যান্টিম্যাটারের তৈরি জিনের সংযোগের মাধ্যম- এই নফস’ বা জানা-অজানা ফোর্স ফিল্ডের ক্ষেত্র। ঠিক ওই ব্ল্যাকহোলের মতো। যেখানে সক্রিয় থাকে শক্তিক্ষেত্র বা ফোর্সফিল্ড– গ্র্যাভিটি (gravity)। এ পর্যন্ত চারটি শক্তিক্ষেত্রে বা ফোর্স ফিল্ড আবিষ্কার করেছে মানুষ। স্ট্রং নিউক্লিয়ার ফোর্স ফিল্ড, উইক নিউক্লিয়ার ফোর্স ফিল্ড, ম্যাগনেটিক ফোর্স ফিল্ড এবং গ্র্যাভিটি। গ্যালাক্সির কেন্দ্রে অবস্থিত ব্ল্যাক হোলে সক্রিয় থাকে গ্র্যাভিটি যা, দুই জগতের বা স্তরের (ডাইমেনশনের) সংযোগকেন্দ্র হিসেবে কাজ করতে পারে।

ঠিক একইভাবে মানুষের নফসও পরিচিত ও অপরিচিত কিছু শক্তিক্ষেত্রের (force field) সমন্বয়ে গঠিত। নানা ধরনের শক্তি বা ফোর্স ফিল্ড দিয়ে মানুষের নফস তৈরি করেছেন মহান আল্লাহ। (পড়ুন নফস ও রুহ)

  • নিশ্চয়ই নিশ্চয়ই আমি তোমাদের সৃষ্টি করেছি (خَلَقْنَٰكُمْ), তারপর সজ্জিত করেছি {৭:১১}

গ)
পৃথিবীর সব মানুষের দেহ একই বৈশিষ্ট্য ধারণ করে। মানবদেহের প্রতিটি অংশই বিভিন্ন ধরনের কোষ দিয়ে গঠিতযা মৌলিক একক। পরিণত অবস্থায়, মানবদেহে কোষের সংখ্যা থাকে গড়ে প্রায় ৩৭.২ ট্রিলিয়ন। কোষের বেশিরভাগ অংশই পানি। তাহলে সাজানো হলো কোন অংশ? সবই তো এক! আল্লাহ রব্বুল আলামিন যা সাজিয়েছেন তা নিশ্চয়ই মহা বৈচিত্র্যময় কিছু হবে। সব মানবদেহ সম্পূর্ণ একই জিনিস; সময় ও পরিস্থিতির কারণে কোষের পরিমাণ কম-বেশি হয়। পার্থক্য হয় কোথায় তাহলে? আল্লাহ বলেছেন- তিনি সাজিয়েছেন (صَوَّرۡنَٰكُمۡ); তাহলে অবশ্যই তিনি সাজিয়েছেন। 

আমরা যখন আমাদের সন্তান-সন্ততি বা অনেকগুলো ছোট বাচ্চাকে সাজাই; যখন ঘর সাজাই- চেষ্টা করি সব কিছুকে সুন্দর করতে, বৈচিত্র্যময় করতে। একটির চেয়ে আরেকটি জাঁকজমকপূর্ণ করতে। একজন ফ্যাশন ডিজাইনার তার প্রতিটি ডিজাইন/ নকশা আলাদাভাবে করে থাকেন। একটির মতো আরেকটি করতে চান না। কিছু সাদৃশ্য বা মিল থাকে বটে। তারপরও প্রতিটি ডিজাইন হয় আলাদা বা স্ব-বৈশিষ্ট্যময়।

আর মহাজগতের প্রভু মানুষকে সাজিয়েছেন (صَوَّرۡنَٰكُمۡ)- এটা ব্যাপক বিশাল ও সম্মানজনক বিষয় নয় কি! তাহলে মানুষে মানুষে যে বৈচিত্র্য ও পার্থক্য আমরা দেখি- সেটাই হলো মহাপ্রভুর সাজানোর পদ্ধতি! ১০০জন কোটিপতি কখনও একরকম হয় না। ১০০জন ভিক্ষুকের আচরণও একরকম হয় না। ক্লাসের ১০০টি শিশু ১০০ ধরনের বৈশিষ্ট্যের হয়। এমনকি দু’টি জমজ সন্তান দেখতে ও চলাফেরায় একইরকম হলেও তাদের চিন্তা-ভাবনা, আবেগ-অনুভূতি, চাওয়া-পাওয়ার মধ্যে বিশাল পাথ্যর্ক থাকে। এই পার্থক্য বা বৈচিত্র্য হলো মানুষের নফসে। প্রত্যেক বনি আদমের নফস’ রব্বুল আলামিন বিশেষ ফোর্সফিল্ড বা শক্তিক্ষেত্র দিয়ে সাজিয়েছেন, যা তাকে জগতের সব মানুষের থেকে আলাদা নকশা বা আলাদা ডিজাইনের বানিয়েছে। আর নফসকেই মৃত্যুর স্বাদ পেতে হবে। প্রতিটি প্রাণীর নফস আছে। তবে মানুষের নফস বৈচিত্র্যময় ও বিশেষ কারণে ইউনিক। তা হলো মহাজগতের প্রভুর দেওয়া রুহ’ বা বিশেষ আদেশ। নফসের সঙ্গে যখন আল্লাহ রুহ যুক্ত করে দেন, তখন মানুষের নফস মূলত মানুষ’ হয়ে ওঠে।

  • তাই যখন আমি তাকে সাজাবো (سَوَّيۡتُهُ) এবং তাতে আমার রুহ (رُّوحِ) ফুঁকে দেবো, তখন তার প্রতি সিজদায় অবনত হও… {১৫:২৯}

এই সিজদা তো মানুষকে নয়, বরং মানুষের মধ্যে থাকা রব্বুল আলামিনের দেওয়া সেই আদেশ বা রুহের প্রতি।

ঘ) 
এই নফসের মধ্যেই অ্যান্টিম্যাটারের প্রাণী বা বুদ্ধিমত্তা-সম্পন্ন জিন তথ্য দেয়- ইফ্লুয়েন্স করে। মানুষের নফসে জিনরা কোনও তথ্য দিলে মানুষের তখন সেসব বিষয় মনে হয়। সে বিভিন্ন রকম চিন্তা থেকে বিভিন্ন কাজ করে। কখনও তা ভালো, কখনও তা মন্দ।

  • যে ব্যক্তি রহমানের স্মরণ-বিমুখ থাকে, আমি তার জন্য শয়তান নিয়োজিত রাখি, তখন সে তার সঙ্গী হয়। আর অবশ্যই তারা নিশ্চিতভাবে সরিয়ে রাখে সুপথ থেকে; এবং তারা মনে করে- তারা সঠিক পথে আছে। {৪৩:৩৬,৩৭}

  • যে মানবজাতির বুকে উসকানি (whispers) দেয়; সেই জিন ও মানুষ। {১১৪:৫,৬}

মূলত এটাই হলো মানুষের ওপর শয়তান-জিনের প্রভাব বিস্তার বা যোগাযোগের পথ। তবে এই যোগাযোগ স্থাপিত হয় মানুষের অজ্ঞতা ও অন্ধত্বের সুযোগে। মানুষের নফসে জিন-শয়তান বাজে কাজের চিন্তা প্রবেশ করায় এবং তাকে পরিচালিত করার চেষ্টা করে। এটাই হলো মানুষের ওপর শয়তান-জিনের প্রাধান্যের দিক।

এখান থেকে আরও সুস্পষ্ট যে, নফসের প্রধান অবস্থান মানুষের বুক বা হৃদয়। যেখানে আছে হৃদপিণ্ড। আল্লাহ বলেছেন ছুদুর (صُدُور) এখানে রয়েছে কলব্ বা হৃদপিণ্ড।

এ বিষয়ে মানুষের সচেতন হওয়া উচিত। কারণ মহান রব বলেছেন

  • শয়তান তোমাদের শত্রু; তাই তাকে শত্রু হিসেবে গ্রহণ করো। {৩৫:,৬}

ধারণা করা যায়, মৃত্যুর পরও একটি নফসের বিকাশ বা বেড়ে ওঠার কাজ চলতে থাকে। কিন্তু মূল চরিত্র পরিবর্তন হয় না। কারণ, পৃথিবীর জীবনে তার মূল রূপ বা চরিত্র নির্ধারিত হয়ে যায়। এখানেই এসেছে ইল্লিন ও সিজ্জিনের অস্তিত্ব। সিজ্জিনে মুশরিকের নফস রাখা হয়। নফসটি সিজ্জিনে বেড়ে উঠতে থাকে; আরও ভয়াবহ ও প্রচণ্ড বীভৎস শয়তান-মানব রূপে। শিরককারী শয়তান-মানুষের আকারে দৈত্যের মতো হাশরের মাঠে পুনরুত্থিত হবে।

  • তারা বলবে- আমরা আমাদের নিজেদের বিরুদ্ধেই সাক্ষ্য দিচ্ছি। মূলত দুনিয়ার জীবনটাই তাদের প্রতারিত করে রেখেছিল। {৬:১৩০}

  • যারা যুলুম করে, পৃথিবীতে যা কিছু আছে এবং আরো সমপরিমাণ সম্পদও যদি তাদের থাকে, তবে কিয়ামতের দিন কঠিন আযাব থেকে বাঁচার জন্যে মুক্তিপণ হিসেবে তারা সবই দিয়ে দেবে; এবং এমন অবস্থা দেখবে আল্লাহর পক্ষ থেকে- যা তারা কখনও ভাবতেও পারে নি! 
    আর তাদের কাছে স্পষ্ট হয়ে যাবে দুষ্কর্মগুলো (سَيِّـَٔاتُ)- যা তারা অর্জন করেছিল; ঘিরে থাকবে তাদের- যা নিয়ে তারা ঠাট্টা-বিদ্রূপ করত। {৩৯:৪৭,৪৮}

    Even if the wrongdoers had all that there is on earth and as much more would they offer it for ransom from the pain of the Penalty on the Day of Judgment! But something will confront them from God, which they could never have counted upon—and will become apparent to them satan, what they earned, and will surround them what they used to mock!” {৩৯:৪৭,৪৮}

অপরাধীদের আসল মানব-রূপ আর দেখা যাবে না। তারা হবে দৈত্যের মতো নফসের অধিকারী। তাদেরকে চেনা যাবে অপকর্ম দিয়ে। তাদের আমলনামা, নামধাম, বংশপরিচয়- কিছুই দেখার প্রয়োজন পড়বে না। কারণ তাদের রূপ (!) দেখেই চেনা যাবে!

  • সেদিন কোনও মানুষকে তার পাপ সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হবে নাকোনও জিনকেও নয়। {৫৫:৩৯}

  • অপরাধীদের চেনা যাবে তাদের চিহ্ন দেখে তাদের কপালের চুল ও পা ধরে টেনে নেওয়া হবে {৫৫:৪১}


ঙ)
মানবদেহে দুটি সক্রিয় শক্তি থাকে। একটি নফস, অন্যটি রুহ। নফস নিজের পছন্দমতো চলতে পারে। মানবদেহের প্রতিটি অনু-পরমাণু, প্রতিটি কোষের সঙ্গে জড়িয়ে থাকে নফস। দেহের প্রতিটি দাবির প্রতি চাহিদা তৈরি কোরে- মস্তিষ্ক পর্যন্ত পৌঁছে দেয় নফস। মস্তিষ্ক সেই চাহিদা বা তথ্য বিশ্লেষণ করে। তারপর কীভাবে চাহিদার বস্তু পাওয়া যাবে- তার পথ খোঁজে। তখন মানুষ চেষ্টা করে।

অন্যদিকে রুহ হলো মহাজগতের প্রভুর দেওয়া একটি শক্তি; যা পৃথিবীতে নফসের বিকাশে সাহায্য করে।নফসের একটি চাহিদা বা ডিমান্ড বাস্তবায়নের পথ তৈরি করে মস্তিষ্ক। কিন্তু, সঠিক না বেঠিক- তা নির্ধারণ করে দেয় রুহ!

গরু তার নফস দ্বারা পরিচালিত হয়ে অন্যের ক্ষেতের ফসল খেয়ে ফেলতে পারে। একটি গরুকে কখনোই এ-কাজের ভালো মন্দ বোঝানো যাবে না। ‘এই জমির ঘাস খাওয়া ভালো, আর অন্যের জমির ঘাস খাওয়া ভালো না– এই তথ্য কোনোভাবেই বোঝানো যাবে না। কারণ, সেটা বোঝার জন্য শক্তি বা রুহ তার নাই। কোনও প্রাণীর নাই। শুধু তা মানুষকে দিয়েছেন আল্লাহ। করোনাভাইরাস কখনোই ভালো মানুষের ফুসফুস ও খারাপ মানুষের ফুসফুস আলাদা করতে পারে না। সে নির্ধারিত দূরত্বের মধ্যে সব ফুসফুসে আক্রমণ করে।

ভাইরাসের নফস’ আছেকিন্তু বিচার বিশ্লেষণ করার রুহ’ নাই। এমনকি যে আগুন সবকিছু জ্বালিয়ে ছারখার করে দেয়, সে আগুনও ভালো মন্দ চেনে না। সবই সে জ্বালাময়ী ক্ষমতা দিয়ে গ্রাস করে ফেলে। এজন্য ইবরাহিম আ-কে যখন আগুনে নিক্ষেপ করা হয়, তখন আগুনকেও রুহ বা নির্দেশ পাঠিয়েছিলেন আল্লাহ।

  • আমরা বললামহে আগুন ঠাণ্ডা ও নিরাপদ হও ইবরাহিমের জন্য। {২১:৯}

আল্লাহর এই বিশেষ আদেশটি ছিল রুহ; যা আগুনকে ইবরাহিমের ব্যাপারে সচেতন করেছিল। অন্যকথায়, আল্লাহর দেওয়া সব রুহ-ই হলো বিশেষ আদেশ। 

  • বলুন- রুহ আমার প্রভুর আদেশ। Say- The ruhh is Command of my Lord. {১৭:৮৫}

চ)

অ্যান্টি ম্যাটার বা প্রতিপদার্থের তৈরি জিন ফোর্স ফিল্ড বা শক্তিক্ষেত্র দিয়ে সাজানো নফসে প্রভাব ফেলে, সে কুমন্ত্রণা দেয়। এটি জিনের বিশেষ ক্ষমতা। এই কুমন্ত্রণা পেয়ে মানুষের নফস উত্তেজিত হয় এবং একের পর এক ভুল কাজ, খারাপ কাজ করতে থাকে। ভালো কাজের মতো করে খারাপ ও চরম ক্ষতিকর কাজে নিজেকে নিয়োগ করে মানবাত্মা। যার পরিণতি, সে নিজেও ভোগ করে (বা করবে) এবং প্রজন্মের পর প্রজন্ম ধরে শত হাজার বছর ধরে বিলিয়ন-ট্রিলিয়ন মানুষ ক্ষতির শিকার হয়।

জিন-শয়তান শুধু ইনফ্লুয়েন্স করেছে; এটুকুর জন্যই সে দায়বদ্ধ। কিন্তু, সেই কুমন্ত্রণায় উত্তেজিত হয় মানুষের নফস। তারপর নিজের  মস্তিষ্ক (যা হাজার সুপার কম্পিউটারের চেয়েও শক্তিশালী), তা ব্যবহার কোরে নানা অপকর্ম করে। তার বিবেক তথা রুহের আদেশ সে শুনতে পায় না।

বিজ্ঞানীরা বলছেনব্রেনের তথ্য ধারণক্ষমতা কমপক্ষে ১ মিলিয়ন জিবি বা ১০ লাখ গিগাবাইট। সেক্ষেত্রে মস্তিষ্কের সার্বিক ক্ষমতা ও শক্তি কেমন হতে পারে- তা কি ধারণা করা যায়? প্রতিটি বনি আদম কতইনা গুরুত্বপূর্ণ, তা কি বোঝা যায়?

ছ)

উল্লেখ্য যে, মানবদেহে যতক্ষণ নফস থাকে- ততক্ষণ সে জীবিত থাকে। আর নফসের সঙ্গে যতক্ষণ রুহ থাকে ততক্ষণ তার মনুষ্যত্ব থাকে। এজন্য রুহ নিয়ে যাওয়াকে বা রাতের ঘুমকে আল্লাহ বলেছেন মৃত্যু। কারণ, রুহ চলে গেলে প্রকৃত মানুষটা আর নির্বোধ গরু-ছাগলের মধ্যে কোনও পার্থক্য থাকে না। ঘুমন্ত মানুষের মাথায় হাত বুলালে, পিঠ চুলকিয়ে দিলে- সে আরাম পাবে। ঘুমন্ত অবস্থায়ও তার মুখে প্রশান্তির ছাপ দেখা যাবে। একটি বিড়ালকেও আদর করে দেখুন, সে আনন্দে গড় গড় করবে। তোমার কি আরাম লাগে? এই প্রশ্নের জবাব বিড়ালও দেবে না, ঘুমন্ত মানুষও দেবে না। ঘুমন্ত মানুষকে তাই প্রকৃত মানুষটার মৃত্যু বলেছেন রব্বুল আলামিন। কারণ তিনি তার রুহ নিয়ে যান। বেশিরভাগ মানুষ রাতের বেলা ঘুমিয়ে পড়ে। এটাই সাধারণ নিয়ম।

  • তিনিই রাতের বেলা তোমাদের মৃত্যু দেন.. {৬:৬০}

পৃথিবীতে অন্যান্য প্রাণীরও নফস আছে। তার বিকাশ একটি নির্দিষ্ট পর্যায়ে সীমাবদ্ধ। একটি কুকুর, ঘোড়া বা ডলফিন নির্দিষ্ট পর্যায় পর্যন্ত শিখতে পারে। কিন্তু, মানুষের নফস সম্পূর্ণ ব্যতিক্রম। রুহ (رُّوحِ) এর কল্যাণে মানুষের নফস বিকশিত হতে থাকে। কিয়ামতে এই নফসের বিচার হবে। পৃথিবীতে মানুষের নফস হলো দেহ-নির্ভর। আর সমবেত হবার মাঠে (হাশর) মানুষের দেহ হবে নফস-নির্ভর। মানুষের পরবর্তী জীবনের শাস্তি (আযাব) বা সুখ-সম্ভোগ উপভোগ করবে পরিপূর্ণভাবে বিকশিত নফসগুলো (প্রকৃত মানুষ)।

এ অবস্থায় নিশ্চয়ই নফসের সঠিক বিকাশ এবং নফস সুরক্ষার প্রয়োজনীয়তা উপলব্ধি করা যায়।

কিন্তু আমরা নফস দেখি না, নফসের শত্রুকেও দেখি না। তাহলে রক্ষার উপায় কী?

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *