জান্নাত

জান্নাত

আমাদের মহাবিশ্ব পুনরুত্থান দিবসবিচার দিবসডুমস ডে’ এবং আরেকটি নতুন শুরুর (a new beginningদিকে বিপুল বেগে এগিয়ে যাচ্ছে। এই প্রবন্ধে পবিত্র কুরআনের আয়াত, বাইবেল ও কিছু বিজ্ঞান-সম্মত তথ্যের ওপর ভিত্তি করে জান্নাতের অস্তিত্ব অনুসন্ধান করা হবে। এই মহাবিশ্ব বা সামাওয়াতের বাইরে আরেকটি মহাবিশ্ব আছে, যার নাম জান্নাত। এর বিশাল কাঠামো বর্ণনার ক্ষেত্রে নিম্নলিখিত বিষয়গুলো ধাপে ধাপে বিশ্লেষণ করতে হবে।

. জান্নাতের প্রচলিত ধারণা

এই মহাবিশ্ব জান্নাতের সামগ্রী ধারণে উপযুক্ত নয়

. জান্নাত একটি আলাদা মহাবিশ্ব, যা এই মহাবিশ্বের (সামাওয়াত) বাইরে অবস্থিত

. জান্নাতের অবস্থান

. জান্নাতের সাধারণ চেহারা

. জান্নাতের বৃহদাকার কাঠামো

. উপসংহার

. জান্নাতের প্রচলিত ধারণা

আল্লাহ তায়ালা জান্নাত সৃষ্টি করার পর ঘোষণা করেন যেএই জান্নাত কখনও ধ্বংস করা হবে না। জান্নাতে রয়েছে প্রবাহিত জলধারা ও ফুলের গাছ। সেখানে আছে কুমারী মেয়ে যারা তাদের দৃষ্টি সংযত রেখেছে।

জান্নাতের ধারণা বাইবেলে পাওয়া যায়নি বা দেওয়া হয়নি। এটি শেষ নবী ও রসুল মুহাম্মাদ সা.-কে পবিত্র কুরআনে দেওয়া হয়েছে। নবী মোহাম্মদ সা.-এররাতের যাত্রা’ বা মিরাজের ঘটনা প্রায় সবাই জানি। ওই মহিমান্বিত রাতে তিনি জান্নাত দেখেছিলেন। জান্নাত সম্পর্কে তাঁর বিভিন্ন বক্তব্য মূলত রাতের সফর বা মিরাজ-সংক্রান্ত হাদীসে পাওয়া যায়।

মোহাম্মদ রসুলাল্লাহ কোন্‌ জান্নাতে প্রবেশ করেছিলেন তা জানা যায় না। তবে জানা যায়, জান্নাতের আটটি স্তর রয়েছে। জান্নাতের দুটি সন্নিহিত স্তরের মাঝখানের দূরত্ব- পাশাপাশি দুটি আকাশের দূরত্বের সমান।

প্রিয়নবী মোহাম্মদ সা. এর মতেজান্নাত সপ্তম আকাশের বাইরে কোথাও অবস্থিত। তবে, জান্নাত সপ্তম আকাশের সঙ্গে সংযুক্ত নয়। চূড়ান্ত বিচারের জমিন/ভূমি/ময়দান থেকেভালো মানুষগুলো আস-সিরাতে (জান্নাত অভিমুখী পথ) চলে যাবে। সেই পথ (সিরাত) বরযাখ’ অতিক্রম করে জান্নাতের মহাবিশ্বে পৌঁছে গেছে। জান্নাতে যাবার পথ মূলত সেটাই।

আমাদের সামওয়াত বা মহাবিশ্বের সঙ্গে জান্নাত নামক মহাবিশ্বের একটি প্রতিবন্ধকতা রয়েছেনাম বারযাখ। বারযাখ’ মানে বাধা বা প্রতিবন্ধকতা। এটি ভিন্ন প্রকৃতি ও ভিন্ন বৈশিষ্ট্যের একটি স্থান বলেই মনে হয়; যা জান্নাতের মহাবিশ্বকে আমাদের সামওয়াতের ডোমেইন থেকে সম্পূর্ণ আলাদা করে রাখেছে।

জান্নাতে প্রবেশকারী বিভিন্ন দল প্রথমে একটি বিশেষ নদী পার হবে। সেখানে তারা গোসল করবে। এতে তাদের শারীরিক গঠন সুন্দর, সুঠাম ও জান্নাতের জন্য উপযুক্ত হয়ে উঠবে। তারা আরও এগিয়ে যাবে এবং অন্য একটি নদীতে পৌঁছাবে। তারা তার পানি পান করবে। এতে তারা উন্নত মনের মানুষ হিসেবে গড়ে উঠবে। তাদের একে অপরের মনে কোনও বিদ্বেষ বা ঘৃণা থাকবে না। তাদের হৃদয় হবে এক- অভিন্ন, তারা একে অপরকে ভালবাসবে।

জান্নাতবাসীরা আদম আ. আকৃতির হবে। তারা ৬০ হাত লম্বা হবে। তাদের শরীরে অবাঞ্ছিত লোম থাকবে না; তবে মাথার চুল ও ভ্রু থাকবে। পুরুষদের দাড়ি থাকবে না। কিন্তু, একজন পুরুষকে হালকা সবুজ উঠতি বয়সের গোঁফ দিয়ে চেনা যাবে। জান্নাতে পুরুষরাও অলঙ্কার পরবে। নারী-পুরুষ দেখতে কাছাকাছি হবে।

জান্নাতে প্রস্রাব বা মলত্যাগের ঝামেলা নেই। জান্নাতি মানুষের বিপাক প্রক্রিয়ায় ঘাম ও ঢেকুর/গ্যাস নির্গত হবে। ঘামের দুর্গন্ধ থাকবে না। তারা কখনই ক্লান্ত হবে না বা দুঃখ পাবে না।

তাদের সন্তান হবে না এবং তারা সন্তান ধারণ করতেও চাইবে না।

জান্নাতের নুড়ি হবে মূল্যবান পাথর ও মুক্তা। জান্নাতে সোনার কাণ্ড-বিশিষ্ট গাছ রয়েছে। বিশাল আকারের গাছ; যদি কেউ দ্রুত ঘোড়ায় চড়ে ১০০ বছর দৌড়ায়, তারপরও সেই গাছের ছায়া শেষ হবে না। তুবা নামের কিছু গাছ আছে, যাতে মানুষের জন্য পোশাক পাওয়া যায়। এমন গাছ আছে, যা বাতাসে দোল খায় ও সংগীতের ধ্বনি তৈরি হয়।

জান্নাতে পশু-পাখি আছে; সেগুলো কথা বলে ও মানুষের আনুগত্য করে। জান্নাতের ঘোড়া পঙ্খীরাজের মতো দ্রুতবেগে উড়তে পারে।

জান্নাতের ভবনগুলো সোনা ও রূপার ইট দিয়ে তৈরি। এর সিমেন্ট হলো সুগন্ধযুক্ত কস্তুরী। কিছু বাড়ি হলো- বিশাল ফাঁপা মুক্তা, ৬০ মাইল উঁচু। প্রতিটি ভবনে অনেক কুমারী (হুর্‌রাইন) থাকবে। তারা ভবন মালিকের অধীনে থাকবে, হুর পৃথিবীর কেউ নয়!

সেখানে মেয়েরা এমন পোশাক পরেযা তাদের সৌন্দর্য আড়াল করে না, বরং প্রকাশ করে দেয়! জান্নাতি নারীর একটি আঙুল দুনিয়ায় দেখা যায়- তার রূপের ঝলক ও স্নিগ্ধতায় সবকিছুকে আলোকিত হয়ে যাবে।

জান্নাতে প্রত্যেক ব্যক্তির অনেক ভৃত্য থাকবে, যারা চির আনন্দদায়ক। সবচেয়ে দরিদ্র জান্নাতি ব্যক্তির ১০ হাজার ভৃত্য থাকবে, তারা সোনা ও রূপার ট্রে বহন করবে। তারাও তরুণ-যুবকতবে পৃথিবীর কেউ নয়। তাদেরকে কেউ কখনও স্পর্শ করেনিগোপন মুক্তার মতোই সুন্দর তারা!

       রসুল সা. বলেছেন, জান্নাতে অনেক বাগান রয়েছে। বিশেষ একটি বাগানে আসবাবপত্র সোনা ও রূপার দিয়ে বানানো। কিছু হাদীসে এ বাগানগুলোকে বাজার বলা হয়েছে। জান্নাতের হাট-বাজারে এমন মুক্ত হুর (নারী) আছেযারা কোনও বিশেষ ব্যক্তির অধীনে থাকবে না। বিলাশবহুল বাজারে যাওয়া যে কেউ তাদেরকে সঙ্গী হিসেবে পাবে।

জান্নাতে গবলেট বা হাতলছাড়া পানপাত্র আছে; পানীয় জলের পাশেই তা থাকবে। হেলান দেওয়ার জন্য বালিশ আছে, সর্বোন্নত মানের কার্পেট আছে। সেখানকার চিরুনি সোনা দিয়ে তৈরি। ধূপের পাত্রে আছে আল-উদ, যা উঁচু মানের সুগন্ধি। 

জান্নাতে মদ নিষিদ্ধ নয়; আছে মদের প্রবাহিত সরোবর/ নদী। সবচেয়ে উৎকৃষ্ট হলো জাঞ্জাবির। এটা পান করে মাথাব্যথা বা নেশা হবে না; মহা আনন্দে মানুষ বছরের পর বছর উড়তে থাকবে।

তাদের উপর বিস্তীর্ণ থাকবে জান্নাতি বৃক্ষরাজির ছায়াআর ফলমূল থাকবে সব সময়ই নাগালের মধ্যে। তাদের মাঝে (খাদ্য ও পানীয়) পরিবেশন করা হবে রৌপ্য পাত্র আর স্ফটিক- স্বচ্ছ (crystal) পান পাত্রে। রজত স্বচ্ছ স্ফটিকের (crystalপাত্রে পরিবেশনকারীরা পরিবেশন করবে পরিমাণ মতো। সেখানে তাদের
শরাব পান করতে দেয়া হবে জানজাবিল
(ginger) মিশ্রিত। আর এই শরাব হবে মূলত জান্নাতের একটি ঝর্ণা, যার নাম হলো সালসাবিল। সেখানে তাদের সেবায় নিয়োজিত থাকবে এমনসব চির-বালক (boys of everlasting youth), যাদের দেখলে তোমার মনে হবে, ওরা যেনো সদ্য-ছড়ানো মুক্তা!

সেখানে গিয়ে যখন দেখবে, দেখতে পাবে নিয়ামত আর নিয়ামত (ভোগ বিলাসের সীমাহীন সামগ্রী), আর দেখতে পাবে (তোমাকে দেয়া হয়েছে) এক বিশাল সাম্রাজ্য (a great dominion)। তাদের পরিধানে থাকবে সবুজ রঙের সুক্ষ্ম-মিহি রেশমি পোশাক, আর সোনালি কিংখাবের বস্ত্ররাজি। তাদের অলংকৃত করা হবে রৌপ্য নির্মিত ব্রেসলেট দিয়ে আর তাদের প্রভু তাদের পান করাবেন শরাবান তহুরা (অনাবিল পানীয়)। (আল কুরআন ৭৬: ১৪-২১)

জান্নাতে বসার জায়গাগুলো সোনার তৈরি; তা গহনা, রুবি ও পান্না দিয়ে সজ্জিত।

জান্নাতে কমান্ড ভিউ’ বা নির্দেশ অনুযায়ী দেখার সুবিধা রয়েছে। যা এই নিচের আয়াতগুলিতে বলা হয়েছে। অর্থাৎ, সিংহাসনে বসে বড় স্ক্রিনের মাধ্যমে যোগাযোগের ব্যবস্থা থাকবে। দেখা-সাক্ষাত ও কথাবার্তা বলার উপযুক্ত ব্যবস্থা থাকবে।

সৎ-সত্যপন্থী লোকেরা অবশ্যই থাকবে আনন্দ আর ভোগ বিলাসে। সিংহাসনে উপবেশন করে তারা দেখবে (সবকিছু)। তুমি তাদের চেহারায় দেখতে পাবে আনন্দের উজ্জ্বলতা। তাদের পান করতে দেওয়া হবে সিল করা বিশুদ্ধ শরাব (পানীয়)।

(আল কুরআন ৮৩: ২২-২৫)

কমান্ড ভিউ বা নির্দেশ অনুযায়ী দেখার সুবিধাটি বর্তমান কম্পিউটারের মতো- তবে ভীষণ উন্নত কিছু একটা হতে পারে। যা উন্নত প্রযুক্তির মাধ্যমে মিলিয়ন-বিলিয়ন আলোকবর্ষ দূরে নরকে বসবাসকারী লোকদের সঙ্গে লাইভ/সরাসরি যোগাযোগ করতে পারবে। এই আয়াতে সেকথা বলা হয়েছে।

সুতরাং আজ মুমিনরা উপহাস করবে কাফিরদের সাথে। সিংহাসনে বসে তারা দেখবে তাদের। কাফিরদেরকে তাদের কৃতকর্মের প্রতিদান কি দেয়া হলোনা?

(আল কুরআন ৮৩: ৩৪-৩৬)

এই ব্যবস্থা হয়তো টেলোপ্যাথির চেয়েও উন্নত বিষয়। উল্লেখ্য, জাহান্নাম কিন্তু আমাদের মহাবিশ্ব বা সামাওয়াত অবস্থিত। একজন জান্নাতি ব্যক্তি শুধু একটি নির্দেশ দেবেন। তখন জাহান্নামের ব্যক্তির দৃশ্য তার সামনে উপস্থাপন করা হবে। কোনও দেরি ছাড়াই তাৎক্ষণিক যোগাযোগ হবে।

একটি নির্দিষ্ট সময় পার হওয়ার পর, আল্লাহ জান্নাতবাসীদের সঙ্গে দেখা করবেন। তখন তিনি ঘোষণা করবেন যেতিনি জান্নাতবাসীদের উপর চিরদিনের জন্য খুশি।

জান্নাতের আনন্দ-বিনোদনকে যদি সাগরের সঙ্গে তুলনা করা হয়, তাহলে পৃথিবীর সব মানুষের গোটা জীবনের সুখ-শান্তি-উপভোগ হলোসূঁচের ডগায় পানির অস্তিত্বের পরিমাণ!


      ২
. এই মহাবিশ্ব জান্নাতের সামগ্রী ধারণে উপযুক্ত নয়

এবার আমরা যুক্তি-বুদ্ধি-উপলব্ধি দিয়ে বোঝার চেষ্টা করব যে- জান্নাত একটি ভিন্ন মহাবিশ্ব। আমাদের স্বল্প দৃশ্যমান মহাবিশ্বের অংশ নয় সেই জান্নাত।

২.১: এই মহাবিশ্বের (সামাওয়াত) প্রকৃতি

আমরা সুন্দরভাবে সুরক্ষিত এক পৃথিবীতে বাস করি। অথচ, এই মহাবিশ্ব (সামাওয়াত) কতটা হিংস্র ও ভয়ঙ্কর- তা গবেষণা ছাড়া বুঝতে পারি না! মহাবিশ্বে (সামাওয়াতে) ধ্বংসাত্মক কোয়াসার এবং জ্বলন্ত ছায়াপথ-সহ গোটা মহাকাশে ছড়িয়ে রয়েছে প্রচণ্ড ক্ষতিকর বিকিরণ! এখানে কোনও কিছুই অক্ষত থাকতে পারে না; যা সত্যিই ভয়াবহ বিপজ্জনক স্থান। একটি রেডিও সেট বা টিভি টিউন করলে মহাকাশের কোনও গ্যালাক্সি ও কোয়াসারে বিশাল বিস্ফোরণের রেডিও সিগনাল শোনা যায়! বিরামহীনভাবে সেই তরঙ্গ ধরা পড়ে সিগনাল হিসেবে! নিরবচ্ছিন্ন প্রচণ্ড সব বিস্ফোরণ-তরঙ্গ!

মূলত, এই মহাবিশ্ব হলো জিন ও অনুরূপ প্রাণীদের আরামদায়ক বাসস্থান যা অ্যান্টি-ম্যাটার (‘গর্তের আগুন-জ্বালানি-এনার্জি’/ ব্ল্যাক হোল) থেকে তৈরি করা হয়েছে। তারা পৃথিবী-বান্ধব প্রাণী নয়; তারা মহাকাশে উড়ে বেড়ায়ঘুরে বেড়ায়। জিনরাই মূলত এই মহাবিশ্বের সন্তান!

অন্যদিকে, জান্নাত হলো নদী ও ফুল গাছে পরিপূর্ণ স্থান। সেখানে সময় স্থীর- তাই বয়স বাড়ে না। রূপকথার মতো সেই রাজ্যে হুকুম দেওয়া মাত্রই সব বাস্তবায়িত হয়! কিন্তু, এই মহাবিশ্বের সুনির্ধারিত প্রকৃতি ও বিবর্তন প্রক্রিয়া এভাবে কিছু সৃষ্টি হতে দেয় না। এখানে সবকিছু সময়ের প্রবাহে আবদ্ধবার্ধক্য এখানে অলঙ্ঘনীয়; এখানে প্রকৃতি মানুষের নির্দেশ মানে না।

২.২: এই মহাবিশ্বের ধ্বংস অবধারিত

এই মহাবিশ্বের দুটি সম্ভাব্য ভবিষ্যত রয়েছে। এটি চিরতরে প্রসারিত হতে থাকবে; অথবা, এর ব্যবস্থাপনা ভেঙে পড়বে। পরিণামে মহাবিশ্ব ধ্বংস হতে বাধ্য।

পৃথিবীতে যা কিছু আছে সবই বিলীন হয়ে যাবে; বাকি থাকবে কেবল তোমার মহা মর্যাদাবান, মহানুভব প্রভুর সত্তা।” (৫৫:২৬,২৭)

অন্যদিকে, জান্নাত একটি চিরস্থায়ী সৃষ্টি। তাই সেটি এই অবস্যম্ভাবী ধ্বংসোন্মুখ মহাবিশ্বে থাকতে পারে না। জান্নাত এই মহাবিশ্ব থাকার উপযুক্ত না। এজন্যই জান্নাতকে তাই মহাবিশ্বের সীমানার বাইরেই খুঁজতে হবে।

২.৩: চিরন্তন স্থিতিশীল স্থান

      এই মহাবিশ্বের কোনো বস্তুই স্থায়ী বা স্থিতিশীল নয়। অন্যদিকে জান্নাত এমন একটি স্থানে বা মহাবিশ্বে অবস্থিতযা চিরন্তন ও স্থিতিশীল। সেখানে আনন্দ স্থিতিশীল, সেখানে প্রশান্তি স্থিতিশীল, সেই স্থিতিশীলতা রক্ষাকারী ব্যবস্থাও স্থিতিশীল ও চিরস্থায়ী। মহান রবের নির্দেশেই এই ব্যবস্থা গড়ে তোলা হয়েছে।


. জান্নাত একটি স্বাধীন মহাবিশ্ব, যা এই মহাবিশ্বের (সামাওয়াতের) বাইরে অবস্থিত

পবিত্র কুরআনের আয়াত জান্নাতকে একটি পৃথক মহাবিশ্ব হিসাবে ইঙ্গিত দেয়। এখানে তা তুলে ধরা হলো।

৩.১: আরও জগৎ বা মহাবিশ্ব

নিচের আয়াতগুলো থেকে ইঙ্গিত পাওয়া যায় যে আরও মহাবিশ্ব আছে। 

সব প্রশংসা ও কৃতজ্ঞতা শুধুমাত্র আল্লাহরযিনি জগৎসমূহের প্রতিপালক (ধারক ও রক্ষক)। যিনি রহমান ও রহীম (পরম করুণাময়, অসীম দয়ালু)।”  (আল কুরআন ১: ২,৩)

 

কুরআন থেকে এই দুটি মহাবিশ্বের কথা জানা যায়। তা হলো- সামাওয়াত (এই মহাবিশ্ব) এবং জান্নাত (ভিন্ন মহাবিশ্ব)।

কুরআনে আমরা আরশ ও আরাফ’ সম্পর্কেও জানতে পারি। কিন্তু, সেগুলি মানুষের জীবনযাপনের জন্য নয় বলেই বোঝা যায়।

৩.২: ভিন্ন উৎস

এই মহাবিশ্বকে কুরআনে সামাওয়াত বা আকাশমণ্ডলী বলা হয়েছে। একে সামাওয়াত-ওয়াল-আর্দ (আকাশ ও ভূমি)-ও বলা হয়। বিগ ব্যাং অথবা বিগ বাউন্স থেকে সামওয়াত তৈরি হয়েছে।

যারা কুফুরি করে তারা কি ভেবে দেখেনামহাকাশ ও পৃথিবী প্রথমে ছিলো একসঙ্গে জড়িয়ে থাকা পিণ্ড। তারপর আমরা তাদের পৃথক করে দিয়েছি, আর সব প্রাণীকেই আমরা সৃষ্টি করেছি পানি থেকে। তবু কি তারা বিশ্বাস স্থাপন করবেনা।” (আল কুরআন ২১:৩০)

অর্থাৎ, বিগ ব্যাং-এর মাধ্যমে এই সামাওয়াত বা মহাবিশ্ব সৃষ্টি হয়েছিলজান্নাত নয়। সুতরাং, জান্নাত মূলত একটি পৃথক সৃষ্টি।

কুরআনে প্রায়শই উল্লেখ করা হয়েছে যে জান্নাত পানি দিয়ে পরিপূর্ণ। জান্নাতের নদীগুলোর পানি ভূগর্ভস্থ উৎস থেকে উৎসারিত হয়।

তাদের জন্য তাদের প্রতিপালকের কাছে আছে জান্নাতসমূহ, যার পাদদেশে রয়েছে প্রবাহিত নদী। (ইমরান ১৫)

তাদের জন্যে রয়েছে জান্নাত, যার নিচে রয়েছে প্রবাহিত নদী। (বাকারা ২৫)

সেই নিয়ামতে ভরা জান্নাতের দিকে, নিচে যার প্রবাহিত নহর! (ইউনুস ৯)

যারা ঈমান আনে ও সৎকর্ম করে তারা জান্নাতে প্রবেশ করবে- যার পাদদেশে নদী বয়ে যায়। (ইব্রাহিম ২৩)

যারা ঈমান আনে ও সৎকর্ম করে আল্লাহ্‌ তাহাদেরকে দাখিল করবেন জান্নাতে- যার পাদদেশে নদী প্রবাহিত। (মোহাম্মদ ১২)

অবশ্যই যারা ঈমান আনে ও সৎকাজ করে, তাদের জন্য আছে জান্নাত, যার নদী প্রবাহিত, এটাই মহাসাফল্য। (বুরুজ ১১)

উপরের আয়াতগুলিতে, তাজরি মিন তাহতিহাল আনহার সাধারণত নিচ দিয়ে নদী বয়ে যায় হিসাবে অনুবাদ করা হয়। কিন্তু শব্দ-থেকে-শব্দের সরাসরি অনুবাদ হল: (flow from under it the rivers”.এর নিচ থেকে নদী প্রবাহিত হয়
        তার অর্থ- জান্নাতের নদীগুলো বৃষ্টির পানির ওপর নির্ভরশীল না
; ভূ-গর্ভ থেকেই পানি উৎসারিত হয়, আর্টিসিয়ান কূপের মতো। ছবিতে দেখুন-

https://valleywaternews.org/2019/07/11/what-is-an-artesian-well/

অসংখ্য জান্নাতি মানুষের জন্য বিশাল বিশাল জান্নাত থাকবে। সুতরাং, এরকম জান্নাত তৈরি করতে প্রচুর পরিমাণে পানির প্রয়োজন হয়েছিল নিশ্চয়ই। সৃষ্টির আদিতে সেই পানি কোথা থেকে এলো? এই আয়াতে ইঙ্গিত দেওয়া হয়েছে যে, মহাবিশ্ব সৃষ্টির আগেই মূলত পানি সৃষ্টি হয়েছিল।

তিনিই মহাকাশ ও পৃথিবী সৃষ্টি করেছেন ছয়টি কালে এবং তাঁর আরশ ছিলো পানির উপর… 
(আল কুরআন ১১:৭)

পূর্ববর্তী গ্রন্থ বাইবেলেও ঠিক এমন নির্দেশনাই দেওয়া আছে।

“In the beginning when God created the Universe; the Earth was non-existent. The raging ocean that covered everything was engulfed in total darkness, and the Soul of God was hovering over the water.”

শুরুতে, ঈশ্বর আকাশ ও পৃথিবী সৃষ্টি করলেন। প্রথমে পৃথিবী সম্পূর্ণ শূন্য ছিলপৃথিবীতে কিছুই ছিল না। অন্ধকারে আবৃত ছিল জলরাশি আর ঈশ্বরের আত্মা সেই জলরাশির উপর দিয়ে ভেসে বেড়াচ্ছিল।

আদিপুস্তক / Genesis 1: (1–2), Holy Bible

 

বিগ ব্যাং এর আগে অন্য কোনও এক প্রক্রিয়ার মাধ্যমে পানি সৃষ্টি হয়েছিল। এটি সুপার স্পেসে বিশাল জলীয় বলের মতো ভাসছিল।

বাইবেল ইঙ্গিত করা হয়েছে যে, মহাবিশ্ব (সামাওয়াত) সেই জলীয়-বলের মধ্যেই তৈরি হয়েছিল।

“Then God commanded: Let there be dome to divide the water and to keep it in two separate places—and it was dome. So, God made a dome, and it separated the water under it from the water above it. He named the dome “Sky”. Evening passed, and morning came that was the second day”

তারপর ঈশ্বর বললেন, জলকে দুভাগ করবার জন্য আকাশমণ্ডলের ব্যবস্থা হোক। তাই ঈশ্বর আকাশমণ্ডলের সৃষ্টি করে জলকে পৃথক করলেন। এক ভাগ জল আকাশমণ্ডলের উপরে আর অন্য ভাগ জল আকাশমণ্ডলের নীচে থাকল। ঈশ্বর আকাশমণ্ডলের নাম দিলেন আকাশ। সন্ধ্যা হল আর তারপর সকাল হল। এটা হল দ্বিতীয় দিন। 

আদিপুস্তক / Genesis 1: (6–8), Holy Bible, GNB]

 

অর্থাৎ, সেই জলীয়-বলের কেন্দ্রে বিগ ব্যাং বিস্ফোরণ হয়েছিল। এতে পানির মধ্যে ধোঁয়া (গ্যাস) তৈরি হয়। ধোঁয়া বিশাল বুদবুদ তৈরি করে। বুদবুদ দেখতে গোলাকার গম্বুজের মতো। বুদবুদ ও গম্বুজ দেখতে একই রকম; তাই একে গম্বুজ বলা হয়েছে।

আমরা জানি, পানিতে বুদবুদ তৈরি হলে তা পানির উপরিভাগে ভেসে ওঠে। কিন্তু বিশাল জলের বল সুপার স্পেসে ভাসছিল-এর উপর বা নিচ ছিল না। অতএব, বুদবুদ (গম্বুজ/ dome) জলের-বলের কেন্দ্রে বিস্ফোরণের গতিতে প্রসারিত হচ্ছিল। প্রসারিত বুদবুদ, ধোঁয়ায় পরিপূর্ণ, আকাশ তৈরি করে। বাইবেল অনুযায়ী- এই আকাশ মানে বর্তমান মহাবিশ্ব।

প্রসারিত গ্যাসের প্রচণ্ড চাপে বিশাল পানির বল ফেটে যায়। বিস্ফোরণে প্রচণ্ড শক্তির গতি অর্জনকারী পানি ছিটকে ধোঁয়া থেকে বহু দূরে সরে যেতে থাকে। আর সেই অকল্পনীয় বিপুল পরিমাণ পানি নেওয়া হলো জান্নাতে। 

বিস্ফোরণে ছিটকে যায় পানি; যা নিয়ে যাওয়া হয় জান্নাতে
ভাসমান জলের বলের মধ্যে বিস্ফোরণ বা বিগ ব্যাং

আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশনের বিজ্ঞানীরা পানি দিয়ে পরীক্ষা করছেন। স্পেসে পানি বের করলেই তা গোলাকার ধারণ করে ভাসতে থাকে।

আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশনের বিজ্ঞানীরা পানি দিয়ে পরীক্ষা করছেন

বাইবেলের আয়াতগুলিতে দুটি পৃথক স্থান’ সম্পর্কে বলেছে। জল ভাগ হয়ে গম্বুজ হয়ে যাক এবং দুটি পৃথক স্থানে তা থাকুক। এই দুটি পৃথক স্থান হতে পারে দুটি মহাবিশ্ব: সামওয়াত এবং জান্নাত (অন্য মহাবিশ্ব)।

পরবর্তীতে সেই উৎস থেকেই পৃথিবীকে পানি সরবরাহ করা হয়েছে। জল বহনকারী উল্কার পতনে পৃথিবীর বিশাল বিশাল সমুদ্র গড়ে উঠেছিল।

যারা কুফুরি করে তারা কি ভেবে দেখেনা, মহাকাশ আর পৃথিবী তো প্রথমে ছিলো ওতপ্রোত জড়িত একটি পিন্ড। তারপর আমরা তাদের পৃথক করে দিয়েছিআর সমস্ত প্রাণীকেই আমরা সৃষ্টি করেছি পানি থেকে। তবু কি তারা বিশ্বাস স্থাপন করবেনা।

[ আল কুরআন ২১:৩০]

 উপরের আয়াতে বলা হলো যে, মহাবিশ্বের প্রাথমিক অবস্থায় ভূমি (ধুলো ও গ্রহাণু) ছিল। হিসাব অনুযায়ী আরেকটি বিগ বাউন্স (Big Bounce) হলে জমিন বা গ্রহসমূহ তৈরি হতে পারে। (ধুলো ও ধোঁয়াকে সংকুচিত করে ছেড়ে দেওয়া- বিগ বাউন্স।)

বিগ বাউন্স থেকে, মহাবিশ্ব একটি সাত-আকাশের-মহাবিশ্ব হিসাবে তৈরি হতে পারে। আকাশ হলো মহাকাশের স্তর বা ঢেউ; পেঁয়াজের খোসার মতো- একটার ভিতরে আরেকটা। আকাশ বস্তুর সুষম বন্টন এবং মহাবিশ্বের সুষম সম্প্রসারণ নিশ্চিত করেছে। প্রচুর পরিমাণ গ্যাস ঘনীভূত হয়ে গ্যালাক্সি তৈরি হতে পারে।

তারপর তিনি মনোনিবেশ করেন আকাশের দিকে। তখন তা ছিলো ধুম্রপুঞ্জ। তিনি আকাশ ও পৃথিবীকে বললেনতোমরা এসোঅস্তিত্ব ধারণ করো ইচ্ছায় বা অনিচ্ছায়। তারা বললো- আমরা অনুগত হয়ে অস্তিত্ব ধারণ করলাম।

তারপর তিনি দুই দিনে আকাশকে সপ্ত আকাশে পরিণত করলেন এবং প্রত্যেক আকাশকে তার বিধান অহি করে দিলেন। দুনিয়ার আকাশকে সুশোভিত করলেন প্রদীপমালা দিয়ে এবং হিফাযতের উদ্দেশ্যে। এ হচ্ছে মহাপরাক্রমশালী সর্বজ্ঞানীর ব্যবস্থাপনা।

 [আল কুরআন ৪১: ৯-১২]


অর্থাৎ, আল্লাহর নির্দেশ পেয়ে আকাশ ফাইন টিউন বা সম্পূর্ণ নিখুঁত মহাকাশ বা মহাবিশ্বে তৈরি হয়ে গেল। এমনকি পৃথিবীর কাছের আকাশের স্তরগুলোও খোদার আদেশে বিভিন্ন স্তরে সজ্জিত হয়ে পৃথিবীকে রক্ষার দায়িত্ব পালন করা শুরু করলো।

তিনি সৃষ্টি করেছেন স্তরে স্তরে সাত আকাশ। দয়াময়রহমানের সৃষ্টিতে তুমি কোনও খুঁত দেখতে পাবেনা। আবার তাকিয়ে দেখোকোনও খুঁত দেখতে পাও কি
[আল কুরআন ৬৭: ৩]

সূর্য হলো দ্বিতীয় প্রজন্মের দীর্ঘস্থায়ী নক্ষত্র। উপরোক্ত ধারণা অনুযায়ী-প্রথম প্রজন্মের নক্ষত্রকে দ্বিতীয় প্রজন্মের নক্ষত্রের জন্য উপাদান তৈরি করার প্রয়োজন ছিল না। বরং, মহাবিশ্ব অল্প সময়ের মধ্যেও তৈরি হতে পারে।

প্রায় ৪.৬ বিলিয়ন বছর আগে সুপারনোভা বিস্ফোরণ হয়। তারপর সিলিকনের চেয়ে ভারী উপাদানগুলি (যেমন লোহা) পৃথিবীতে পাঠানো হয়েছিল। 

ভাসমান পানি

. জান্নাতের অবস্থান:

তোমরা দৌড়ে এসো তোমাদের প্রভুর ক্ষমার দিকে এবং সেই জান্নাতের দিকে যার প্রশস্ততা মহাকাশ ও জমিন-সমূহের মতো; তা প্রস্তুত রাখা হয়েছে মুত্তাকিদের জন্যে।   [আল কুরআন ৩:১৩৩]

তোমরা প্রতিযোগিতা করে দৌড়ে এসো তোমাদের প্রভুর ক্ষমার দিকে আর সেই জান্নাতের দিকে, যার প্রশস্ততা আসমান-সমূহ জমিনের প্রশস্ততার মতো।”  [আল কুরআন ৫৭:২১]

সমান প্রস্থ বা চওড়া দুটি জিনিস/বস্তু একে-অন্যের ভিতরে থাকতে পারে না, ঢুকানো যায় না। অতএবসামাওয়াত ও জান্নাত সম্পূর্ণরূপে পৃথক দুটি মহাবিশ্ব; যা আলাদা স্থানে রয়েছে।

পূর্ববর্তী গ্রন্থ বাইবেলও উদ্ধারের জায়গা হিসাবে একটি পৃথক মহাবিশ্বের কথা বলা হয়েছে।

“Because only a few will be saved, God has created two Universes instead of only one”

কারণ শুধুমাত্র কয়েকজনকে রক্ষা করা হবেঈশ্বর একটির পরিবর্তে দুটি মহাবিশ্ব সৃষ্টি করেছেন।
[2 ESDRAS 7:50, Holy Bible, GNB]


অতএব, পবিত্র কুরআন এবং অন্যান্য সহায়ক বা রেফারেন্স সূত্র অনুসারে (বাইবেল ও হাদিস) ই মহাবিশ্বের বাইরে জান্নাত নামে আরেকটি মহাবিশ্ব রয়েছে। আমাদের কাছে এটির প্রতিষ্ঠিত, প্রমাণিত বৈজ্ঞানিক ভিত্তি নাও থাকতে পারে; তবে যুক্তি-বুদ্ধির ওপর গঠিত এই ধারণাটি চূড়ান্ত মুক্তির স্থান অনুসন্ধানে ব্যাপক সহায়ক। এটি মহাবিশ্বের বিকাশের সঙ্গে জড়িত। কারণ এই সপ্ত-আকাশের মহাবিশ্ব ফের এক বিন্দুতে ফিরে গিয়ে ধ্বংস হবে এবং জাহান্নাম হিসাবে পুনরুত্থান হবে (পরবর্তীতে প্রমাণ করা হবে, ইনশাআল্লাহ)।

এক্ষেত্রে বিজ্ঞানীরা বলেন যে, বিগ ব্যাং এর বাইরে কিছুই নেই, মহাবিশ্বের বাইরে বলতেও কিছু নেই; যখন বিগ ব্যাং হয়েছিল- তখনই সময় তার যাত্রা শুরু হয়েছিলতাঁদের এমন বক্তব্যের কারণ, এ বিষয়ে তাঁদের কাছে কোনও যুক্তি-প্রমাণ নেই এবং তারা কুরআনের তথ্য মানে না।

বিজ্ঞানীরা কোনোভাবেই বুঝতে পারছেন নাকীভাবে একটি মহা-বিস্ফোরণের (বিগ ব্যাং) মাধ্যমে সৃষ্ট অনন্ত অসীম মাহাবিশ্ব এত নিখুঁত হতে পারে। তা তো বিশৃঙ্খল এলোমেলো অগোছালো নিয়ন্ত্রণহীন জগাখিচুরি হওয়ার কথা! অথচ, এই নিখুঁত মহাবিশ্ব (ফাইন টিউনড্‌ ইউনিভার্স) বার বার আল্লাহ্‌র অস্তিত্বই প্রমাণ করে যাচ্ছে। আর, এটাও প্রমাণ করছে যেপবিত্র কুরআন একমাত্র তাঁরই সুস্পষ্ট বাণী!

আর আল্লাহ বলছেন–

তিনি সৃষ্টি করেছেন স্তরে স্তরে সাত আকাশ। দয়াময়রহমানের সৃষ্টিতে তুমি কোনও খুঁত দেখতে পাবেনা। আবার তাকিয়ে দেখো- কোনও খুঁত দেখতে পাও কি?
[আল কুরআন ৬৭: ৩]


৬. জান্নাতের বৃহদাকার কাঠামো

হাদীস অনুসারেজান্নাতের স্তরগুলো আট স্তরে বিভক্ত। দুটি সন্নিহিত স্তরের মধ্যে দূরত্ব দুটি পাশাপাশি আকাশের দূরত্বের মতো। যদি দুটি সংলগ্ন আকাশের মধ্যে একটি শূন্য স্থান (sphere of void) ১৫০ মিলিয়ন আলোকবর্ষ হয়, তাহলে- জান্নাতের দুটি পাশাপাশি স্তরের মধ্যে দূরত্ব হতে পারে ১৫০ মিলিয়ন আলোকবর্ষ!

২য় ও তৃতীয় স্তরের আকাশ বোঝা যায়; মাঝে খালি স্থান- ভয়েড

জান্নাতের বিভিন্ন নাম:- ফিরদাউস (সম্ভবত সর্বোচ্চ স্তর), নাঈম (এটাও হতে পারে সর্বোচ্চ স্তর), মাওয়া, মাকাম, কারার, সালাম, আদান, খুলদ (সম্ভবত সর্বনিম্ন স্তর)।

এই সামওয়াতে (এই মহাবিশ্ব), একটি আকাশের ভিতরে আরেকটি আকাশ রয়েছে। যেভাবে একটি সিদ্ধ ডিমের খোসার ভিতরে থাকে সাদা অংশ, আবার তার ভেতরে থাকে হলুদ অংশ।

Picture13

৬.১: জান্নাতের নারী

পৃথিবীর একজন নারী (আদমের সন্তান) মূলত একজন পুরুষের মতোই মানুষ বা আল্লাহ্‌র প্রতিনিধি। একজন নারী জান্নাতে যাওয়ার পর তার উপযুক্ত এলাকাই পাবেন।

মানুষকে সৃষ্টি করা হয়েছে আল্লাহর প্রতিনিধি হিসেবে। সুতরাং, নর-নারী উভয়ের জন্যই আল-জান্নাত থাকবে।

জান্নাতে নারী পুরুষ একে অপরের উত্তম সঙ্গী হবে, এই দৃষ্টিভঙ্গিই পাওয়া যায় কিতাব থেকে। 

পৃথিবীর নারী-পুরুষ উভয়েই আল্লাহ্‌র প্রতিনিধি। হরমোনের কিছুটা পরিবর্তন করে তাদের শারীরিক পার্থক্য তৈরি করা হয়েছে এবং পৃথিবীতে জীবন-যাপন ও বংশবৃদ্ধির ব্যবস্থা করা হয়েছে।

৭. উপসংহার

আল্লাহ আদম অন্যান্য মানুষকে জান্নাতেই সৃষ্টি করেছিলেন। তাই জোর দিয়েই বলা যায়, মানুষকে জান্নাতে বসবাসের জন্যই সৃষ্টি করা হয়েছে। কিন্তু, আমরা এখন পৃথিবীতে বাস করছি সাময়িক সময়ের জন্য। এজন্যই পৃথিবীকে মানুষের নির্বাসিত জীবনযাপনের জন্য উপযোগী করা হয়েছে।

কিন্তু, পৃথিবী আসলে ততটা ভালো নয়। এখানে মাধ্যাকর্ষণ শক্তি বেশ শক্তিশালীপ্রতিটি মানুষকে জীবনে অন্তত একবার হলেও পিঠের ব্যথায় ভুগতে হয়। অনেক কায়দা-কানুন করে মানুষের খাবার তৈরি করতে হয়। তারপরও নানা রোগ-বালাই ও কোষ্ঠকাঠিন্য দেখা দেয়। অর্থাৎ, আমাদের পাকস্থলি এসব খাবার সহজে হজম করতে চায় না। ডাক্তার ও হাসপাতাল ছাড়া আমরা মোটামুটি অসহায়।

তবে, পৃথিবীর এই ব্যবস্থা সংক্ষিপ্ত পার্থিব নির্বাসিত জীবনের জন্য ঠিকই আছে। কারণ, এখন পর্যন্ত আমরা জানিএই মহাবিশ্বে, মানুষের জন্য উপযুক্ত আর কোনও কোনও গ্রহ নেই। 

সার কথা হলোজান্নাত এই মহাবিশ্ব বা সামাওয়াতের বাইরে অবস্থিত। যা সম্পূর্ণ ভিন্ন একটি মহাবিশ্ব বা মহাজগৎ। সেই কল্পনাতীত জান্নাতই হলো মানুষের আদি বাসস্থান এবং মানুষের কাঙ্ক্ষিত চূড়ান্ত গন্তব্য।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *